Ajker Patrika

মৌসুমের শুরুতেই আলুর বীজের তীব্র সংকট, চাষে অনীহা কৃষকদের

ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ২০: ০৫
মৌসুমের শুরুতেই আলুর বীজের তীব্র সংকট, চাষে অনীহা কৃষকদের

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে মৌসুমের শুরুতেই আলুর বীজের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি, বেসরকারি ও কৃষক পর্যায়ে তিন স্তরেই বেড়েছে আলুর বীজের দাম। চলতি বছর প্রতি কেজি আলুর বীজ সরকারিভাবে ৪৮ দশমিক ৫০ পয়সা থেকে ৫৭ দশমিক ৫০ পয়সা দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯০-১১০ টাকা প্রতি কেজি। বাজারে বীজ আলুর সংকট যত তীব্র হচ্ছে, দাম তত লাফিয়ে বাড়ছে। এতে আলু চাষে অনীহা দেখা দিয়েছে কৃষকদের।

এর আগে সরকারি কোম্পানিগুলো বীজ আলু বিক্রি করছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়, এবার তাদের বিক্রি করতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) গত ২০২১-২২ অর্থবছরে আলু বীজের মূল্য নির্ধারণ করেছিল কেজি প্রতি জাত ভেদে ২২ থেকে ৩২ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাত ভেদে আলু বীজের মূল্য নির্ধারণ করেছিল ৩১ থেকে ৩৯ টাকা। ২০২৩-২৪ সালে (অর্থবছরে) জাত ভেদে আলু বীজের দাম ৪৮ দশমিক ৫০ টাকা থেকে ৫৭ দশমিক ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বেসরকারিভাবে বিএডিসির মূল্যের চেয়ে কেজি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা আলুর বীজ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন বেতদিঘী ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের আলু চাষি আব্দুল মান্নান।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এ বছর ১ হাজার ৯৯৪ হেক্টর জমিতে আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা এবার কিছুতেই পূরণ হবে না বলে সংশ্লিষ্ট উৎপাদনকারীরা আশঙ্কা করছেন। তবে মৌসুমের শুরুতে বাজারে নতুন আলুর চাহিদা থাকায় উপজেলার উঁচু-ডাঙা জমিগুলোতে ৫০ থেকে ৫৫ দিনে উত্তোলনযোগ্য বিভিন্ন হাইব্রিড জাতের আগাম আলুর বীজ বপন শুরু করছেন কিছু কৃষক।

দিনাজপুর কৃষি বিভাগ কার্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, জেলায় এবার চাহিদার মাত্র ৪ শতাংশ সরকারি আলুর বীজ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তাও আবার আনতে হবে অন্য জেলা থেকে। দিনাজপুরের নশিপুর হিমাগারের ধারণক্ষমতা মাত্র ১ হাজার ১০০ টন। আলু বীজের সংকট কাটাতে সিংহভাগ আনতে হবে বাইরের জেলা থেকে। এতে বাড়বে পরিবহন খরচ।

সূত্র আরও জানায়, গোটা জেলায় ৪৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম আলু চাষ হয়ে থাকে। এই ৪৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ৭৫ হাজার ৭৫ টন বীজ আলু প্রয়োজন। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া গেছে ৩ হাজার ৮৬ টন, যা চাহিদার মাত্র ৪ শতাংশ। এ ছাড়া কেজি প্রতি জাত ভেদে আলু বীজের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে ২০ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ২৪ টাকা পর্যন্ত। বিএডিসি আলু বীজ বিভাগ সারা দেশের বীজ আলু সমন্বয় করে জেলা ওয়ারী বরাদ্দ দিয়ে থাকে। কিন্তু ফুলবাড়ীতে সে ধরনের কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।

ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজের সুপারভাইজার মোজাম্মেল হক জানান, এ মৌসুমে আমাদের কোল্ড স্টোরেজে ৭ হাজার ১৫০ টন আলু মজুত ছিল। এর মধ্যে ৩ হাজার ৯২৬ টন আলু ইতিমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। এ কোল্ড স্টোরেজে ফুলবাড়ীসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলা পার্বতীপুর, চিরিরবন্দর, নবাবগঞ্জ ও বিরামপুর, হাকিমপুর উপজেলার কৃষকদের ৩ হাজার ২২৪ টন বীজ আলু মজুত ছিল, যা এখন রোপণের কাজ চলছে। তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। বাজারের চাহিদা মেটাতে আমদানি করতে হচ্ছে বাইরে থেকে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে এ উপজেলায় ১ হাজার ৯১৯ হেক্টর জমিতে ৪৫ হাজার ৯৯৬ টন আলু উৎপাদন হলেও গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছে, ৪১ হাজার ৫৯৫ টন। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ৩ হাজার ৫০১ টন আলু কম উৎপাদন হওয়ায় বাজারে এর তীব্র প্রভাব পড়েছে।

উপজেলার বেশি আলু উৎপাদনকারী শিবনগর ইউনিয়নের পলিশিবনগর, গোপালপুর, রাজারামপুর, নুরপুর, শমশেরনগর, গঙ্গাপ্রসাদ, গোপালপুর, রাজারামপুর, নুরপুর, শমশেরনগরসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক পতিত জমি পড়ে আছে। আলুর বীজের দাম বেশি হওয়ায় ভুট্টা চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকেরা।

উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের পলিশিবনগর গ্রামের কৃষক আশরাফুল ইসলাম জানান, দেড় একর মাটিতে এবার রোমানা, কেরেজ আলু লাগাচ্ছেন। গতবার সাড়ে ৩ একর জমিতে আলু চাষাবাদ করেছিলেন। বীজের দাম বেশি হওয়ায় কম করে লাগিয়ে বাকি জমিতে ভুট্টা লাগাবেন।

খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের আলুচাষি বিপদ চন্দ্র জানান, ১০ দিন আগে জয়পুরহাট জেলার বরতলি থেকে লাল জাতের ১২০ কেজি আলুর বীজ কিনেছেন ৬ হাজার টাকায়। আনতে খরচ হয়েছে ৯০০ টাকা। এখন দাম আরও বেশি।

ওই এলাকার লিটন কুমার দাস ও সঞ্জয় কুমার দাস এবার ১ বিঘা জমিতে আলু লাগাবেন, গতবার লাগিয়েছিলেন ২ বিঘা করে। আরেক কৃষক আনোয়ার হোসেন ২০ শতক জমিতে আলু লাগাবেন। গতবার লাগিয়েছিলেন ১ বিঘা জমিতে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুম্মান আক্তার বলেন, আলুর বীজের দাম কিছুটা বেশি হলেও দাম ভালো পাওয়ায় আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মো. আল কামাহ তমাল বলেন, ‘আমরা আলু নিয়ে বাজার মনিটরিং করছি। তবে আলুর বীজের দামের বিষয়টি জানলাম, এখন সেখানেও মনিটরিং করা হবে।’

জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমাদের বিএডিসি যদি চিঠি দিয়ে বলে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে আলুর বীজ বিক্রি হচ্ছে, তাহলে আমরাও তাদের সহায়তা করব। বাজার নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং করাব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতের অফিসে আগুন নেভাতে গিয়ে কোরআন শরিফ দেখেননি, দাবি ফায়ার সার্ভিসের

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স: রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে আসন নেই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর

দিনাজপুরে নিহত মাইক্রোবাস-আরোহীদের সবাই সরকারি কর্মকর্তা

ফরিদপুরে গাড়ির চাকায় ছিন্নভিন্ন অজ্ঞাত ব্যক্তি, অক্ষত শুধু পায়ের জুতা

নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার বিব্রতকর: উপদেষ্টা ফারুকী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত