Ajker Patrika

নীলকমল নদীতে ডুবে নিহত দুই শিশুর মরদেহ হস্তান্তর করল বিএসএফ

ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
নীলকমল নদীতে ডুবে নিহত দুই শিশুর মরদেহ হস্তান্তর করল বিএসএফ

টানা তিন দিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তের নীলকমল নদীতে ডুবে নিহত দুই শিশুর মরদেহ হস্তান্তর করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় উপজেলার ধর্মপুর সীমান্তের ৯৪২ এর সাব পিলার ৮ এর কাছে জনৈক এরশাদ আলীর বাড়ির বিপরীতে ভারতের কোচবিহার জেলার সুকারুরকুটি সীমান্তের নারায়ন চন্দ্রের বাড়ির আঙিনায় এ হস্তান্তর কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে গত শুক্রবার ভারত থেকে অবৈধ পথে বাংলাদেশে ফেরার সময় বিএসএফের ধাওয়ায় বাবা-মায়ের সঙ্গে নীলকমল নদী সাঁতরে পার হওয়ার সময় স্রোতের তোড়ে পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয় ওই দম্পতির দুই শিশু। এরপর গত রোববার বিকেল ৩টায় উপজেলার ধর্মপুর সীমান্তের ৯৪৩ নম্বর আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার থেকে ৫০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে নীলকমল নদী থেকে বিএসএফ ওই দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে। এরা হলো—পারভীন (৮) ও সাকিবুর (৪)। নিহতেরা পার্শ্ববর্তী নাগেশ্বরী উপজেলার পশ্চিম সুখাতি গ্রামের রহিচ উদ্দিন (৩৮) ও সামিনা বেগম (৩৫) দম্পতির সন্তান।

হস্তান্তরের সময় বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রামের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (ফুলবাড়ী-নাগেশ্বরী সার্কেল) সুমন রোজা, ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুর রহমান, পরিদর্শক সারোয়ার পারভেজ, ধর্মপুর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ফেরদৌস আলী, রেজাউল ইসলাম, কাশিপুর বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার ফরিদ উদ্দিন, অনন্তপুর বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার আরফিন, নিহতের বাবা রইচ উদ্দিন, মামা সাইফুর রহমান, প্রতিবেশী মজিবর রহমান, গ্ৰামের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য (নাগেশ্বরী উপজেলার সুখাতী ৬ নং ওয়ার্ড) আজিজুল হক, (৪ নং ওয়ার্ড সদস্য) মেছের আলী।

ভারতের পক্ষে সাহেবগঞ্জ থানার ইনচার্জ উপপরিদর্শক এনথনি, ১৯২ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সেওটি-১ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার এস এইচ শংকর কুমার এসি, সুকারুরকুটি অঞ্চলের পঞ্চায়েত প্রধান বিষ্ণু চন্দ্রসহ ৫০ বিএসএফ ও পুলিশ সদস্য।

মরদেহ হস্তান্তর শেষে নিহতদের স্বজনেরা কফিনে করে বাংলাদেশ সীমান্তের এরশাদের বাড়ির সামনের মসজিদ প্রাঙ্গণে নিয়ে আসেন। এ সময় ফুলবাড়ী থানার ওসির নেতৃত্বে মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে নিহতদের বাড়ির এলাকার ইউপি সদস্য আজিজুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে কফিন নিয়ে স্বজনেরা বাড়ি ফেরেন।

নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র দেখাতে না পারায় বিএসএফ শিশু দুটির মরদেহ তাদের নিজেদের হেফাজতে নেয়। তবে তারা বিজিবিকে আশ্বস্ত করে জানায়, মানবিক কারণে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

নিহতের স্বজন ও ইউপি সদস্য আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে কাশিপুর বিজিবির মাধ্যমে প্রতিদিনই বিভিন্ন সময় পরিবারকে জানানো হয়, মরদেহ ফেরত দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী, আমরা লোকজন নিয়ে প্রতিদিনই রাত-দিন অপেক্ষা করে ফিরে আসি। এ কারণে ইউপি সদস্য, নিহতদের বাবা রহিচ উদ্দিন ও মা সামিনা বেগমসহ স্বজনেরা ওই সীমান্তে তিন দিন ধরে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছেন। এক নজর লাশ দেখার জন্য তাঁদের উপস্থিতিতে প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভিড় করেছেন সীমান্তে। তবে স্থানীয় বিজিবি এ ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ।’

দালালের প্রলোভনে পড়ে ভালো মজুরির আশায় ১৬ বছর আগে কাজের সন্ধানে ওই দম্পতি অবৈধ পথে ভারতে যান। সেখানেই তাদের এ দুই সন্তানের জন্ম হয়। দীর্ঘ এ সময় ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের সুলতানপুর এলাকার হাসিহেসা ইটভাটায় কাজ করেন তারা। দাদার ভিটায় ফিরবে বলে সন্তানদের পীড়াপীড়িতে দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য গত শুক্রবার রাতে স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার সেউটি সীমান্ত এলাকায় নিয়ে আসেন। পাচারকারী দালালেরা কাঁটাতারের বেড়া কেটে তাদের নীলকমল নদীর পাড়ে শূন্য রেখায় এনে রাখে। এ সময় বিএসএফের ধাওয়ায় সন্তান নিয়ে নদী সাঁতরে পার হতে গিয়ে এই দম্পতির দুই শিশু ডুবে মারা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের বিপক্ষে সেমির আগেই ধাক্কা খেল অস্ট্রেলিয়া

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

এলপি গ্যাস, তেল, আটাসহ বেশ কিছু পণ্যে ভ্যাট তুলে দিল এনবিআর

চ্যাম্পিয়নস ট্রফি: রিজার্ভ-ডেতেও সেমিফাইনাল না হলে হৃদয়বিদারক সমীকরণ

অমর্ত্য সেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় যা বললেন জামায়াতের আমির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত