Ajker Patrika

রংপুরে গবাদিপশুর চিকিৎসা মিলছে না জনবলসংকটে

  • বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মাঠপর্যায়ের খামারি ও পশু পালনকারীরা।
  • বেশি মূল্যে ভুয়া ওষুধ কিনে পড়েন বিপদে।
  • অনেকে ভুল চিকিৎসায় হারান মূল্যবান পশু।
শিপুল ইসলাম, রংপুর 
রংপুরে গবাদিপশুর চিকিৎসা মিলছে না জনবলসংকটে

রংপুর জেলার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের আওতাধীন ৮টি উপজেলায় জনবলসংকট চরমে। এতে ঠিকমতো গবাদি পশুর চিকিৎসা পাচ্ছে না খামারিরা।

নিয়মানুযায়ী প্রতিটি উপজেলায় ১১টি পদের জন্য একজন করে মোট ৮৮ জন জনবল থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত ৫২ জন। তাঁদের মধ্যে আবার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা প্রেষণে ঢাকায় অবস্থান করছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর সদরে ৩ জন, বদরগঞ্জে ৪ জন, পীরগঞ্জে ৫ জন, পীরগাছায় ৫ জন, কাউনিয়া ৬ জন, মিঠাপুকুর ৪ জন, গঙ্গাচড়ায় ৫ জন, তারাগঞ্জ ৪ জনের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। কর্মরত কর্মকর্তারা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা।

তারাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কে এম ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, ‘আমার এখানে ৪টি পদ খালি। এর মধ্যে তিনটিই গুরুত্বপূর্ণ। একজন একাধিক পদের দায়িত্ব পালন করায় সেবা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে। এতে খামারি ও পশু পালনকারীরা রাগ-অভিমান করছেন। পদগুলো পূরণ হলে নির্বিঘ্ন সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া যাবে। শূন্য পদের বিপরীতে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।’

জনবলসংকটের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মাঠপর্যায়ের খামারি ও পশু পালনকারীরা। খামারিরা জানান, পশুর অসুখ-বিসুখে সময়মতো সরকারি সেবা না পাওয়ায় গ্রাম্য চিকিৎসকদের হাতে পড়ে প্রতারিত হচ্ছেন। কেউ কেউ বেশি মূল্যে ভুয়া ওষুধ কিনে বিপদে পড়ছেন। আবার অনেকে ভুল চিকিৎসায় মূল্যবান পশু হারাচ্ছেন।

জানতে চাইলে রংপুর ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার লতিফুর রহমান মিলন বলেন, রংপুর জেলার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে জনবলসংকট শুধু প্রশাসনিক সমস্যা নয়, এটি একটি গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র পশু খামারিদের টিকে থাকার প্রশ্ন। সময়মতো পদগুলো পূরণ না হলে খামারি পর্যায়ে সেবা ব্যাহত হতেই থাকবে, যা কৃষিনির্ভর এই অঞ্চলের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামের খামারি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গরু অসুস্থ হলে ভেটেরিনারি অফিসে ফোন করলে বলে লোক নেই। বাধ্য হয়ে গ্রাম্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই। অসাধু চিকিৎসকেরা বেশি টাকা নেয়। অনেক সময় ভুল ওষুধে গরু মরে যায়।’

একই অভিযোগ করেন তারাগঞ্জের গৃহিণী রাহেলা বেগম। তিনি বলেন, ‘আমার গাভি বাচ্চা প্রসবের সময় জটিলতায় পড়ে। সরকারি ডাক্তার পাইনি। পরে স্থানীয় ডাক্তারকে ডেকে এনেছিলাম। গাভিটি মারা গেছে।’

তারাগঞ্জ উপজেলার উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ) ফিরোজ হোসেন বলেন, তিনজনের কাজ এখন একজনকে করতে হয়। প্রতিদিন দু-তিনটি ইউনিয়ন ঘুরতে হয়। এত কাজ করা অসম্ভব হয়ে যাচ্ছে।

পীরগঞ্জ উপজেলার ভেটেরিনারি সার্জন মিজানুর রহমান বলেন, ‘১১ পদে ৬ জন থাকলেও দুজন প্রেষণে অন্যত্র। বর্তমানে চারজন আছি। জনবল কম থাকায় টিকা কর্মসূচি, এআই (কৃত্রিম প্রজনন), রোগ নির্ণয়—সব একসঙ্গে সামাল দিতে হয়।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আবু ছাঈদ বলেন, ‘আমরা বারবার ঢাকায় চিঠি পাঠিয়েছি। রংপুরে যখনই কেউ আসেন, তাঁদেরও বলি। কিন্তু লোকবল পাচ্ছি না। তবে শিগগির পদ পূরণের আশ্বাস দিয়েছে মন্ত্রণালয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিমানবন্দরের প্রকল্পে ‘অসম’ চুক্তি, স্বার্থের সংঘাতে জড়িয়েছেন ঢাকায় ইউএই রাষ্ট্রদূত

বন্ধুর সঙ্গে স্ত্রীর গোপন সম্পর্ক, ধর্ষণের অভিযোগ স্বামীর

তালগাছ কেটে শতাধিক বাবুইছানা হত্যা: প্রধান আসামি মোবারেক গ্রেপ্তার

বিমানবন্দরে ব্যাগের মধ্যে গুলির ম্যাগাজিন, যে ব্যাখ্যা দিলেন উপদেষ্টা আসিফ

এনবিআর আন্দোলনের ৬ নেতার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামছে দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত