Ajker Patrika

দাদন ব্যবসায়ীর কাছে ২০ লাখ টাকা ঋণ, গ্রাম ছাড়া যুবক

দুর্গাপুর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
দাদন ব্যবসায়ীর কাছে ২০ লাখ টাকা ঋণ, গ্রাম ছাড়া যুবক

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় দাদন ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছ। ফাঁকা ব্যাংক চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে চড়া সুদে টাকা নিয়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। সুদে-আসলে জমা টাকা পরিশোধ করতে না পেরে অনেকেই ঘর ছাড়া হচ্ছেন।

তেমনি একজন ভুক্তভোগী উপজেলার কিসমত গনকৈড় ইউনিয়নের উজালখলসী গ্রামের শিক্ষিত বেকার যুবক সুমন আলী। দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে সুদের ওপর টাকা নিয়ে সুদে আসলে ২০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ১৭ দিন থেকে গ্রামছাড়া হয়েছেন। তিনি ওই গ্রামের হযরত আলীর ছেলে।

এদিকে সুদের টাকার জন্য সুমনের খোঁজ পেতে মরিয়া হয়ে উঠছেন দাদন ব্যবসায়ীরা। গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় সুমনকে না পেয়ে এখন দাদন ব্যবসায়ীরা তাঁর পরিবারকে চাপ প্রয়োগ ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। এ ঘটনায় সুমনের পরিবার অসহায় জীবনযাপন করছে।

সুমনের বড় ভাই আশরাফুল বলেন, ‘সুমন গ্রাম ছাড়া হওয়ায় দাদন ব্যবসায়ীরা এখন আমাদের পরিবারকে সুদের টাকা পরিশোধের জন্য চাপ প্রয়োগ ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। আমার ছোট ভাই সুমন শিক্ষিত কিন্তু বেকার ছিল। মাস্টার্স পড়াশোনা করছে। পড়াশোনার পাশাপাশি মৎস্য ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। গত ডিসেম্বরে মাসে ব্যবসার কাজে এক দাদন ব্যবসায়ীর কাছে থেকে প্রথমে ১ লাখ টাকা ঋণ নেয়। বিনিময়ে এক সপ্তাহ পর পর ওই দাদন ব্যবসায়ীকে ১ লাখে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা সুদ দিতে হতো। তাঁরা সুমনের কাছে থেকে স্বাক্ষরিত একটি ফাঁকা ব্যাংক চেকও নেন। এরপরই সর্বস্বান্ত হতে থাকে সুমন। ওই দাদন ব্যবসায়ীর টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে আরও প্রায় ৪ থেকে ৫ জন দাদন ব্যবসায়ীর কাছে ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে চড়া সুদের ওপর টাকা নেয় সে। পরে দাদন ব্যবসায়ীদের থেকে নেওয়া সুদের টাকা পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয় সুমন। এভাবে কয়েকটি দাদন ব্যবসায়ীদের সুদের টাকা বাড়তে বাড়তে ২০ লাখ টাকা ঋণ দাড়ায় সুমনের। এতে লিজ নেওয়া তিনটি পুকুরও সে বিক্রি করে দেয়। তারপর বাড়ির ১০ টাকা ভিটে জমিও বিক্রি করে দাদন ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দেয়। তারপরও তাঁর ঋণ পরিশোধ হয়নি। অবশেষে সে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তাঁর স্ত্রী, একটি সন্তান নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছে এখন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুমন পালিয়ে যাওয়ায় এখন দাদন ব্যবসায়ীরা আমাদের পরিবারকে সুদের টাকা পরিশোধ করতে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। গত শনিবার দাদন ব্যবসায়ী ধরমপুর গ্রামের মাসুদের পাঠানো ব্যক্তি আব্দুর রহমান, সুমন গ্রাম ছাড়া হওয়ায় আমাদেরকে সুদের টাকা পরিশোধ করতে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হুমকি দেন। এই আব্দুর রহমানের মাধ্যমে দাদন ব্যবসায়ী মাসুদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ছিলেন সুমন।

ধরমপুর গ্রামের মাসুদ দাদন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক বলেন, এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ওই পরিবার এখনো আমাকে কোনো অভিযোগ দেননি। দাদন ব্যবসা বেআইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দাদন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত