Ajker Patrika

মঞ্চে বিপ্লব-শহীদের আর্তনাদ

 রিমন রহমান, রাজশাহী
নাটক ১-নাটক লাশের ইশতেহারের একটি দৃশ্য। রোববার রাতে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনের মঞ্চে। ছবি: মিলন শেখ
নাটক ১-নাটক লাশের ইশতেহারের একটি দৃশ্য। রোববার রাতে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনের মঞ্চে। ছবি: মিলন শেখ

দূরে পড়ে আছে গুলিতে ঝাঁজরা এক তরুণের লাশ। লাঠি হাতে ঠকঠক করে কাছে আসেন এক বৃদ্ধা। লাশের কাছে গিয়ে তিনি বললেন, ‘অয়, অয় রে বাপ, এমন ঘুমাছু কেনে? উঠ, উঠ। উঠ বাজান, বেলা যায়, উঠ। হঠাৎ চমকে উঠে লাশ। চারদিক দেখে প্রশ্ন করে, কে? কে তুমি? শত্রু, না বন্ধু? বৃদ্ধা বলেন, ‘আমারে চিনতি পারলি না বাজান? তোর মা। গর্ভে ধরেছিলাম তোরে।’

নওগাঁ জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনা ঊনমানুষ নাটকের শুরুর দৃশ্য এটি। হত্যাকাণ্ডের শিকার এক সাধারণ মানুষের লাশ নিয়ে নাটকের কাহিনি আবর্তিত। লাশটি পড়ে থাকে, কিন্তু সৎকার হয় না। পচে গলতে শুরু করা লাশের দুর্গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। মহানন্দে লাশটি খেতে চায় শেয়াল-শকুনের দল। লাশটির একমাত্র বাসনা তার বুলেটবিদ্ধ শরীরের সম্মানজনক সমাপ্তি বা অন্তিম সৎকার। শাসক-শোষিতের ব্যবচ্ছেদ এ নাটকের মূল বিষয়।

বিভাগীয় পর্যায়ে মুনীর চৌধুরী প্রথম জাতীয় নাট্যোৎসবের প্রথম দিন রোববার রাতে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। অনেক আগেই মারা যাওয়া মাকে লাশ প্রশ্ন করে, ‘ঘুম ভাঙালে কেনে? কোনো কালে শান্তিতে ঘুমাতে পারিনি। এত আওয়াজ-কেওয়াজ মানুষে মানুষে! এখন কী শান্তির ঘুম!’

মা বলেন, ‘এখনো পইড়ে পইড়ে ঘুমানোর সময় হয়নি রে বাপ! এখনো যে তোর সৎকার হয়নি। বারোটা ছোট্ট বুলেট তোর পিঠ ফুঁড়ে ঢুকে বুক ফেড়ে বারো দিকে বেরিয়ে গেছে। তুই সামনে হয়তো দেখাইছিলি বুকচেতা বড়াই। পেছনে তোরে দেখতেছিল মরণ। এত নড়াই বড়াই কইরি কি লাভ হলো তোর? সেই তো একই পরিণতি।’

লাশ কেঁদে কেঁদে বলে, ‘তাহলে আমি ক্যান মরলাম মা?’ মা বলেন, ‘তা তো জানি নে বাপ! ধর, জন্মিছিস তাই মরছিস। জন্মাইলে মরতি অয়। ঘোড়া মরে, হাতি মরে, বাঘ মরে, শিয়াল মরে, পিপীলিকা মরে, হরিণ মরে, মশা মরে, মাছি মরে, সব মরে। মইরে ভূত হয়্যা যায়।’

এভাবেই নাটকের কাহিনি এগিয়ে যায়। কবরের জন্য একটু মাটি না মেলায় আর্তনাদ করে লাশ বলে, ‘বিরামে মরলেও ভালা ছিল। তখন মরলে তো ঠিকঠাক মাটি হইতো। অহন তো এত বড় পৃথিবীর কোত্থাও একটু মাটি জুটছে না রে মা! আমার জন্য এত্ত বড় পৃথিবীর কোনো জমিন নাই। আমি কি শেয়াল-শকুনের প্যাটেই থাকমু? আসার আগে তর প্যাটে ছিলাম। শ্যাষে যাব শেয়াল-শকুনের প্যাটে। ক্যান আনছিলি দুনিয়ায়? তুইও একটা শেয়াল, তুইও একটা শকুন। তোরা সক্কলে পশু।’ মৃত ছেলের কথা শুনে হু হু করে কাঁদেন বৃদ্ধা।

নাটক ঊনমানুষের একটি দৃশ্য। রোববার রাতে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনের মঞ্চে। ছবি: মিলন শেখ
নাটক ঊনমানুষের একটি দৃশ্য। রোববার রাতে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনের মঞ্চে। ছবি: মিলন শেখ

নাটকটির পাণ্ডুলিপি নির্মাণ করেছেন তামান্না জাহান নেলী। পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় ছিলেন ড. আমির জামান। অভিনয় করেন নিমাই চন্দ্র সরকার, অসীম কুমার মহন্ত, মৃণাল কান্তি সরকার, মাগফুরুল হাসান বিদ্যুৎ, নওরীন আখতার শারমিন, মুনিরা সুলতানা, নাবিলা তাবাচ্ছুম বর্ষা প্রমুখ।

এর আগে সন্ধ্যা থেকে একই মঞ্চে রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনা লাশের ইশতেহার মঞ্চস্থ হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান এই নাটকের মূল উপজীব্য। জুলাই আন্দোলন, হত্যাযজ্ঞ এবং গণমাধ্যমে সংবাদ চেপে রাখার প্রবণতা ফুটিয়ে তোলা হয় এ নাটকে। এতে অভিনয় করেন তন্ময় কুমার, ফজলে রাব্বী সিয়াম, ওয়াসিকুল ইসলাম রমিত, ইফতিখার আদদীন, রাফিয়া ইসলাম তমা, হিমালয় রায়, খন্দকার উমামা নূর, অনন্যা সেন, সাদেক রহমান প্রমুখ।

সন্ধ্যায় প্রধান অতিথি হিসেবে বিভাগীয় পর্যায়ের এ নাট্যোৎসবের উদ্বোধন ঘোষণা করেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) তরফদার মো. আখতার জামীল। সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মহিনুল হাসান।

জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার শাহাদাৎ হোসেনের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার।

আগামী বুধবার পর্যন্ত এই নাট্যোৎসব চলবে। আজ সোমবার জয়পুরহাট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ; আগামীকাল মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জ ও পাবনা এবং বুধবার বগুড়া ও নাটোরের নাটক মঞ্চস্থ হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পানিতে ডুবে প্রাণ গেল মামা-ভাগনের

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে পুকুরে ডুবে শাহবাব মন্ডল (আড়াই বছর) ও আবু তোহা মন্ডল (৩) নামের দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের যাদুরচর নতুন গ্রাম এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

শাহবাব মন্ডল উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ধনারচর নতুন গ্রামের শাহজাহান মন্ডলের ছেলে এবং আবু তোহা মন্ডল একই গ্রা‌মের আবু তালেবের ছেলে। এই দুই শিশু সম্পর্কে মামা-ভাগনে।

পরিবারের বরাত দিয়ে যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী জানান, বুধবার সকালে ওই দুই শিশু তালেব মন্ডলের বাড়িতে খেলা করছিল। এ সময় সবার অজান্তে তারা বাড়ির পা‌শে পুকুরের পানিতে পড়ে যায়। স্বজনেরা পুকুর থে‌কে দুই শিশু‌কে উদ্ধার করে হাসপাতালে নি‌য়ে যান। দা‌য়িত্বরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক একই এলাকার বাসিন্দা ও কুড়িগ্রাম-৪ আসনের বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস‌্য প্রার্থী আজিজুর রহমান ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তি‌নি শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

রৌমারী থানার উপপ‌রিদর্শক শাহ‌নেওয়াজ হো‌সেন ব‌লেন, খবর পে‌য়ে ঘটনাস্থ‌লে পু‌লিশ পাঠা‌নো হ‌য়ে‌ছে। সহকারী ক‌মিশনার (ভূ‌মি) ঘটনাস্থ‌লে গি‌য়ে‌ছেন। দুই শিশুর মৃত‌্যুর ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনি ব‌্যবস্থা নেওয়া হ‌বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ১৩
নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত
নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত

‎রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরে ঝালকাঠি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‎গ্রেপ্তারের বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

‎মামুন বলেন, গৃহকর্মী আয়েশাকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঝালকাঠি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত সোমবার সকালে শাহজাহান রোডের ১৪ তলা একটি আবাসিক ভবনের সপ্তম তলায় লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।

মা-মেয়ে হত্যায় অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মা-মেয়ে হত্যায় অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

গতকাল তাঁদের মরদেহ নাটোরে দাফন করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বাসা থেকে মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ভবনের ভেতরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পর এক নারী স্কুলড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। চার দিন আগে আয়েশা পরিচয় দিয়ে ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেওয়া তরুণী (২০) এই জোড়া খুনে জড়িত বলে সন্দেহ স্বজনদের। ঘটনার পর থেকে ওই তরুণী পলাতক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি 
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে মজিরুলের নেতৃত্বে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে মজিরুলের নেতৃত্বে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জীবন আছে যার, তার মৃত্যু অনিবার্য। মৃত্যুর পর মানুষের শেষ ঠিকানা কবর। মৃতদেহ গোসল করিয়ে কাফন পরানো হয়, জানাজা শেষে তাকে শায়িত করা হয় চিরনিদ্রার ঘরে। এই কবর খোঁড়ার দায়িত্বটি গ্রামের কিছু মানুষ বহু বছর ধরে স্বেচ্ছায়, বিনা পারিশ্রমিকে পালন করে আসছেন, যাঁরা সবার কাছে ‘গোরখোদক’ নামে পরিচিত। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তাঁরা করে থাকেন এই কাজ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গোরখোদকেরা কোনো পারিশ্রমিক নেন না। গ্রামের যে কেউ মারা যাক, নিজেদের ব্যস্ততা ফেলে তাঁরা ছুটে আসেন কবর খুঁড়তে। তাঁদের এই মানবিক কাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গ্রামের লোকেরা দোয়া করেন—আল্লাহ যেন তাদের সুস্থ ও ভালো রাখেন।

দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা গোরখোদক মজিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ৫৫ বছর ধরে কবর খুঁড়ছি। যত দিন সুস্থ থাকব, এই কাজ চালিয়ে যাব। আমাদের গ্রাম ছাড়াও অন্য গ্রাম থেকে কেউ ডাকলে সেখানেও যাই। ছোটবেলায় ওস্তাদের কাছে ডালি ধরেই শিখেছি। গরিব মানুষ, মাঠে কাজ করি; কিন্তু কেউ মারা গেলে দ্বিধা করি না—এই কাজ আমার নেশায় পরিণত হয়েছে।’

মজিরুল আরও জানান, এখন তিনি তরুণদেরও এই কাজ শেখাচ্ছেন।

গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গোরখোদক শাকের আলী বলেন, ‘আমরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করি। কখনো কোনো টাকা নিই না। যেখানেই থাকি, গ্রামের কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে দ্রুত কবর খুঁড়তে চলে আসি।’

গোরখোদক ফুয়াদ হোসেন বলেন, ‘অন্য গ্রাম থেকে ডাক এলেও আমরা যাই। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করি এই কাজ। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

স্থানীয় বাসিন্দা শাজাহান আলী বলেন, ‘কবর খোঁড়া বড় দায়িত্বের কাজ। গ্রামের এসব মানুষ খবর পেলেই দৌড়ে আসে। আমরা তাদের জন্য দোয়া করি।’

মাওলানা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির জন্য কবর খোঁড়া নিঃসন্দেহে সওয়াবের কাজ। হাদিসে এসেছে—যাঁরা কবর খোঁড়েন, আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে কারখানার ফটকের সামনে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকেরা। আন্দোলনের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে সটকে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শিল্প ও থানা-পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসেছেন। আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের সাইটালিয়া গ্রামে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানায় এই ঘটনা ঘটে।

কারখানার নারী শ্রমিক মিনারা আক্তার বলেন, ‘অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করে নাই। এক মাসের বেতন না পেলে আমাদের চলা খুবই কঠিন হয়। আমাদের নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়। আর সেখানে কারখানা কর্তৃপক্ষ দুই মাসের বেতনভাতা বকেয়া রেখেছে। আজ সকালে শ্রমিকেরা জড়ো হলে তারা পালিয়ে যায়।’

মিন্টু নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘এই কারখানায় আমরা তিন বছর ধরে চাকরি করছি। আমাদের বেতনের বাইরে কোনো সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে না। তবু পেটের দায়ে চাকরি করি। দুই মাসের বেতন বকেয়া। আমাদের তো পেট আছে, সন্তান-সংসার আছে। এক মাস দোকান বাকি পরিশোধ করতে না পারলে পরের মাসে আর দোকানি বাকি দেয় না। আমরা কী অবস্থায় আছি, একবার ভাবুন। বেতন পরিশোধ না করে তারা পালিয়ে গেছে।’

আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেহেদী হাসান বলেন, ‘এত দিন ধরে ঋণ করে বলে-কয়ে দোকান থেকে বাকি নিয়ে চলছি। আর পারছি না। এখন দোকান বাকি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতন নিয়ে কমপক্ষে ১০টি তারিখ দিছে। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ করেনি। শেষে আজ বেতন পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু তারা কারখানা ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছে।’

কারখানার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. বুলবুল হাসান বলেন, ‘ব্যাংকের সমস্যার কারণে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। আশা করি, আজকের মধ্যে নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারব।’ বিনা নোটিশে কারখানার ফটক কেন তালাবদ্ধ? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি বলতে পারব না।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাছির আহমদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত