Ajker Patrika

জরিমানার পরিমাণ কমানোর দাবিতে অটোচালকদের বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আরএমপি ট্রাফিক বিভাগের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা
আরএমপি ট্রাফিক বিভাগের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা

জরিমানার পরিমাণ কমানোর দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) ট্রাফিক বিভাগের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন অটোরিকশাচালকেরা। তাঁদের অভিযোগ, রাজশাহীতে এখন ট্রাফিক পুলিশ কোনো অটোরিকশা ধরলেই চালকদের জরিমানা গুনতে হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ টাকা। আগে এই জরিমানা ছিল ৩০০ টাকা।

অটোরিকশার চালকেরা বলছেন, এখন যে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে, তা তাঁদের আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। তাই এই জরিমানার টাকা কমানোর দাবি তাঁদের।

জরিমানা কমানোসহ ১১ দফা দাবিতে অটোরিকশাচালকেরা ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার, জেলা প্রশাসক ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। জাতীয়তাবাদী ইজিবাইক শ্রমিক দলের রাজশাহী মহানগর শাখার নেতা-কর্মীরা এসব কর্মসূচি পালন করেন।

চালকেরা বলেন, শহরে এখন দুই শিফটে অটোরিকশা চলে। সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সবুজ রঙের অটোরিকশা চলে। পরের শিফটে চলে মেরুন রঙের অটোরিকশা। গ্রাম থেকে অনেক অটোরিকশা হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসে। কখনো কখনো শহর থেকে বের হওয়ার আগেই শিফট পরিবর্তন হয়ে যায়। এ জন্য তাঁদের গাড়ি জব্দ করে ২ হাজার ৬০০ টাকার মামলা দেওয়া হয়। এর ফলে একজন অটোরিকশাচালকের সারা দিন আয়-উপার্জন বন্ধ থাকে।

তাঁরা আরও জানান, সার্জেন্ট গাড়ি জব্দ করার পরদিন জরিমানার টাকা জমা দেওয়ার পর তাঁরা গাড়ি ফেরত পান। একই কারণে পরবর্তী সময় অটোরিকশা জব্দ হলে তখন জরিমানা বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার টাকা। আর তৃতীয়বারের ক্ষেত্রে জরিমানা হয় সাড়ে সাত হাজার টাকা। এই টাকা জরিমানা দেওয়ার সামর্থ্য অটোরিকশাচালকদের নেই। তাঁরা এ জরিমানা মানেন না।

বিক্ষোভ চলাকালে জাতীয়তাবাদী ইজিবাইক শ্রমিক দলের রাজশাহী মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দীন বলেন, ‘বর্তমান জরিমানা ২ হাজার ৬০০ থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। এটি চালকদের সাপ্তাহিক আয়ের চেয়েও বেশি। এটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলেই এ জরিমানা ছিল ৩০০ টাকা। এখন সেটি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা হতে পারে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে গাড়ি জব্দ হলে তা রেখে দিয়ে ভিক্ষা করতে বসতে হবে।’

সংগঠনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, ‘আমরা মোট ১১ দফা দাবি জানিয়েছি। ১১ দফা দাবি কোনো বাড়তি সুযোগ নয়। এগুলো চালকদের ন্যায্য অধিকার। অযৌক্তিক জরিমানা, গাড়ি ডাম্পিং ও হয়রানির কারণে হাজারো পরিবার আজ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। আমরা চাই, চালকদের জন্য সহনশীল জরিমানা, নির্দিষ্ট পার্কিং এবং নিবন্ধিত গাড়ির সুরক্ষা নিশ্চিত হোক।’

চালকদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—ন্যায্য ভাড়া নির্ধারণ; হালনাগাদ ভাড়ার তালিকা প্রকাশ; অতিরিক্ত যাত্রী তোলার বিরুদ্ধে কার্যকর তদারকি; নির্দিষ্ট পার্কিং ও যাত্রী ওঠানামার স্থান নির্ধারণ; নিবন্ধিত গাড়ির সুরক্ষা ও অনিবন্ধিত গাড়িকে আইনের আওতায় আনা; নকশা অনুযায়ী নিরাপদ গাড়ি উৎপাদনের ব্যবস্থা করা; ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় একক নীতিমালা; টাইম ওভার মামলার পুনর্বিবেচনা এবং চালকদের ট্রাফিক আইন বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও মাসিক সমন্বয় সভা আয়োজন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরএমপির ট্রাফিক বিভাগের উপকমিশনার নূর আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘সফটওয়্যারে অটোমেটিক জরিমানা ধার্য হয়। এটা সেখানে কমানোর সুযোগ নেই। তবে কোনো চালক আমার কাছে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করলে সেটা বিবেচনা করা হয়। বৈধ কাগজপত্র ও লাইসেন্স থাকলে ২ হাজার ৬০০ টাকার জরিমানা আমি ৬৫০ টাকা করে দিই।’

তিনি বলেন, ‘চালকেরা আরও কিছু দাবি জানিয়েছে। সেগুলো ট্রাফিক বিভাগের একার বিষয় না। সিটি করপোরেশনও আছে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে সমন্বিতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...