Ajker Patrika

১৩ বছর ধরে বন্ধ রাজশাহী পলিটেকনিকের দুই ছাত্রাবাস

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
Thumbnail image

সাড়ে ১৩ বছর ধরে বন্ধ রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের দুটি ছাত্রাবাস। ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি ছাত্রমৈত্রীর পলিটেকনিক শাখার এক নেতা নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রাবাসগুলো বন্ধ করা হয়। এরপর দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও ছাত্রাবাস দুটি খোলা হয়নি। ফলে, আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। 

সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি ছাত্রমৈত্রী নেতা রেজওয়ানুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে সানিকে কুপিয়ে জখম করে ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা। পরে ওই দিন বিকেলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। হামলায় আহত হন পলিটেকনিক শাখার ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি কাজী মোতালেব জুয়েলসহ আরও কয়েকজন নেতা। 

এমন পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদেরও ছাত্রাবাস ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর ২০১০ সালের ২৬ মে ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু শাহ্ নেয়ামতুল্লাহ (রহ.) ছাত্রাবাস, শহীদ মনোয়ার ছাত্রাবাস ও আক্তারুন্নেসা ছাত্রীনিবাস বন্ধই থাকে। ২০১৮ সালের দিকে ছাত্রীনিবাস খুলে দেওয়া হয়। 

তবে এখনো বন্ধ রয়েছে বাকি দুটি ছাত্রাবাস। ২০১২ সালে সানি হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হয়। রায়ে আদালত পলিটেকনিক ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি নিজাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম ওরফে তুষারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এ ছাড়া পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং তিনজনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয় আদালত। 

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে বন্ধ দুইটি ছাত্রাবাস।সূত্রে আরও জানা গেছে, এখানে আটটি বিভাগে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। এর মধ্যে ছাত্রী প্রায় পাঁচ শতাধিক। ছাত্রীনিবাসটিতে এখন ৭৬ জন শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পেয়েছেন। ছেলেদের শাহ্ নেয়ামতুল্লাহ (রহ.) দোতলা ছাত্রাবাসে ১২৮ জন থাকতে পারতেন। আর শহীদ মনোয়ার ছাত্রাবাসে থাকতে পারতেন ১২০ জন। মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা দেওয়া হতো। দীর্ঘদিন ছাত্রাবাস দুটি পড়ে থাকায় পলেস্তারা খসে খসে পড়ে। জানালার গ্রিলে মরিচা পড়ে যায়। ঘুণে খেয়ে নষ্ট হয়ে যায় কাঠের আসবাবপত্র। 

করোনার শুরুতে দুই ছাত্রাবাসে যে অল্প কিছু আসবাবপত্র ভালো পাওয়া যায়, সেগুলো শাহ্ নেয়ামতুল্লাহ ছাত্রাবাসে নিয়ে রাখা হয়। এই ছাত্রাবাসটি এখন চাইলে খোলা যাবে। তবে শহীদ মনোয়ার ছাত্রাবাসে এখন কোনো আসবাবপত্রই নেই। যদিও দুটি ছাত্রাবাসের ভবনই ব্যবহারযোগ্য। এর মধ্যে করোনাকালে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার হিসেবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) শহীদ মনোয়ার ছাত্রাবাস ব্যবহার করেছে। বিজিবি নিজেরাই প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র নিয়ে গিয়েছিল। ব্যবহার শেষে আবার সেসব আসবাবপত্র তারা নিয়ে গেছে। 

পাওয়ার বিভাগের তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী মো. রুবেল বলেন, ‘আমাদের ছাত্রাবাস আছে, কিন্তু সেখানে থাকতে পারি না। আসার পর থেকেই দেখছি ছাত্রাবাস বন্ধ। আমরাও অনেক আশা করে বসে আছি, যে ছাত্রাবাস হয়তো খুলবে। স্যারদের বলি। তারা বলেন এই খুলবে, হবে। কিন্তু ছাত্রাবাসও খোলে না, আমরাও উঠতে পারি না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রাবাস খুলতে নামমাত্র পয়সায় আমরা এখানে থাকতে পারতাম। আমাদের নিরাপত্তাও ভালো হতো। কিন্তু নিরাপত্তার শঙ্কার জন্যই নাকি খোলা হচ্ছে না। এ কারণে মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে আমাদের বাইরের ছাত্রাবাসে থাকতে হচ্ছে।’ 

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুর রশিদ মল্লিক বলেন, ‘চাইলে শাহ্ নেয়ামতুল্লাহ ছাত্রাবাসটা খোলা সম্ভব। সেটা খোলার উপযোগী আছে। শিক্ষার্থীরাও চাচ্ছে যেন ছাত্রাবাস খোলা হয়। কয়েক দিন আগে ছাত্রলীগের নেতারাও এসেছিল এ দাবি নিয়ে। এ অবস্থায় করণীয় নিয়ে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করব।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘শহীদ মনোয়ার ছাত্রাবাস খুলতে হলে সব আসবাবপত্র লাগবে। এগুলো দেওয়ার জন্য কয়েক দফা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছি। সবশেষ গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর আরেকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো সেটার কোনো অগ্রগতি জানতে পারিনি।’ 

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাছিম রেজার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি কল রিসিভ না ধরায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত