Ajker Patrika

হঠাৎ সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ, ফ্রিজে নষ্ট হওয়ার ভয়ে কোরবানির দেড় মণ মাংস রান্না করলেন রমজান

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২১ জুন ২০২৪, ১৯: ৫০
হঠাৎ সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ, ফ্রিজে নষ্ট হওয়ার ভয়ে কোরবানির দেড় মণ মাংস রান্না করলেন রমজান

রমজান আলীর বাড়িতে ফ্রিজভর্তি কোরবানির মাংস। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে গেল। আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বিদ্যুৎ এলই না। রমজান আলী খোঁজ নিয়ে জানতে পারলেন, এলাকায় যে সৌরবিদ্যুতের প্ল্যান্ট ছিল, তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ আর আসবেই না। তাই দুপুরের পর থেকে বাড়ির নারীরা ফ্রিজ থেকে প্রায় দেড় মণ মাংস বের করে রান্না শুরু করেন। 

রমজান আলীর বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের চর কানাপাড়া গ্রামে। পদ্মা নদীর ডান তীরে ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া এই ইউনিয়ন সৌরবিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়েছিল প্রায় ৯ বছর আগে। সরকারের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডের (ইডকল) কারিগরি সহযোগিতায় চর আষাড়িয়াদহে সৌরবিদ্যুতের প্ল্যান্ট স্থাপন করেছিল বেসরকারি সংস্থা আভা। প্ল্যান্টটির নাম দেওয়া হয়েছিল আভা মিনি-গ্রীড প্রজেক্ট। কোনো ঘোষণা ছাড়াই গতকাল এই গ্রিডটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 

চর কানাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রমজান আলী বলেন, ‘প্রথম দিকে ২৪ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। বছর দু-এক থেকে শুধু দুপুরে জোহরের নামাজের সময় ১ ঘণ্টা, আসরের নামাজের সময় ৩০ মিনিট, মাগরিবের নামাজের সময় থেকে রাত ১০টা, রাত ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ দেওয়া হতো। এতে কোনো রকমে ফ্রিজটা চলত। কাল থেকে একেবারেই বন্ধ। ফ্রিজের ভেতর প্রায় ৬০ কেজি মাংস ছিল। এগুলো বের করে রান্না করা হচ্ছে। খাওয়া যাবে কি না জানি না।’ 

আভার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুর্গম চরাঞ্চলের ঘরে ঘরে সৌরবিদ্যুৎ দিতে ২০১৫ সালের ৬ নভেম্বর এই প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়। এরপর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের আষাড়িয়াদহসহ পানিপার, ভুবনপাড়া, কানপাড়া, হনুমন্তনগর ও নওশেরা গ্রামের প্রায় ১ হাজার ৩০০ পরিবারকে সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। প্রিপেইড মিটারে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য গ্রাহককে দিতে হতো ৩০ টাকা। এরপরও লোকসান হচ্ছিল বলে আভার দাবি। 

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারের টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) এই প্ল্যান্ট স্থাপনে প্রণোদনাও দেয়। আর কারিগরি সহায়তা করে সরকারের আরেক সংস্থা ইডকল। এই সংস্থাটি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে সমীক্ষাও করেছিল। প্রতিষ্ঠানটি বলেছিল, প্ল্যান্টটি চালালে প্রতি মাসে ১৫ লাখ টাকা করে লাভ করতে পারবে আভা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত লাভের মুখ দেখা যায়নি। 

এই প্ল্যান্টে মোট ৫৯৪টি সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপন করা আছে। এগুলোর বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বলা হয়েছিল ১৪৮ দশমিক ৫০ কিলোওয়াট। প্যানেলের কার্যক্ষমতা কমে বর্তমানে মাত্র ৬০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছিল। এই বিদ্যুতে প্রায় ১ হাজার ৩০০ মিটারে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছিল না। এ কারণে গতকাল এই গ্রিডটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 

চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সিদ্দিকুর রহমানের গ্রামেই এই গ্রিডটি স্থাপন করা হয়।গতকাল দুপুরে এই ইউপি সদস্যকে কল করা হলে তিনি ধরেননি। পরে সিদ্দিকুর রহমান নিজেই ফোন করে বলেন, ‘বাড়িতে বিদ্যুৎ নেই বলে প্রতিবেশীর নিজস্ব সৌরবিদ্যুতে মোবাইল চার্জ দিয়েছিলাম। হঠাৎ করে ঈদের পর এভাবে বিদ্যুতের প্ল্যান্ট বন্ধ করে দেওয়া ঠিক হয়নি। ফ্রিজের কোরবানির মাংস বের করে রান্না করতে হচ্ছে। চরের বেশির ভাগ মোবাইল চার্জের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। ফ্রিজ-টিভিগুলোর এখন কী হবে কেউ জানে না। প্রায় পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বাড়িতে বাড়িতে মিটার নিতে হয়েছে। সেটাও এখন লস।’ 

জানা গেছে, আভা মিনি-গ্রীড প্রজেক্টের প্ল্যান্ট ব্যবস্থাপক হিসেবে শুরু থেকেই কর্মরত ছিলেন মিল্লাত হোসেন। এ ছাড়া আরও দুজন কর্মচারী সেখানে থাকতেন। গতকাল মিল্লাত হোসেন এই চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে প্ল্যান্ট বন্ধ করে চলে আসেন। যোগাযোগ করা হলে মিল্লাত হোসেন বলেন, ‘চাহিদা ১২০ কিলোওয়াটের। আর আমরা সরবরাহ করতে পারছিলাম মাত্র ৬০ কিলোওয়াট। সে কারণে প্ল্যান্ট বন্ধ করে চলে এসেছি।’ 

আভা মিনি-গ্রীড প্রজেক্টআভার মহাব্যবস্থাপক শালেউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘চাকরি ছাড়তে হলে অন্তত এক মাস আগে জানাতে হবে। তাহলে কর্তৃপক্ষ সেখানে নতুন লোক দেবে এবং কার্যক্রম চালু রাখবে। কিন্তু মিল্লাত চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েই প্ল্যান্ট বন্ধ করে চলে এসেছেন।’ 

তিনি বলেন, ‘চাহিদামতো বিদ্যুৎ দিতে না পারার কারণে লোকজন মন্দ কথা বলতেন। তাই হয়তো মিল্লাত চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।’ 

শালেউদ্দীন আহমেদ আরও বলেন, ‘এই প্ল্যান্টটি আসলে চালানো সম্ভব না। ২৪ ঘণ্টার ভেতরে ছয়-সাত ঘণ্টা বিদ্যুৎ দিয়েও প্রতি মাসে প্রায় এক লাখ টাকা লোকসান হচ্ছিল। অথচ কার্যক্রম শুরুর আগে ইডকল যাদের দিয়ে সমীক্ষা করিয়েছিল, তারা বলেছিল মাসে ১৫ লাখ টাকা লাভ হবে। লাভ তো দূরের কথা, পরিবেশবান্ধব এই প্ল্যান্টে সৌরবিদ্যুৎ ছাড়াও ডিজেল দিয়ে জেনারেটর চালিয়েও চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায়নি। বিষয়টি স্রেডা এবং ইডকলও জানে।’ 

তিনি বলেন, ‘সবকিছু পর্যালোচনা করে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রায় দুই বছর আগে নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) সঙ্গে আভার চুক্তি হয়েছে। কথা ছিল, সাবমেরিন কেব্‌লের মাধ্যমে নেসকো পদ্মার ওপারের চরে বিদ্যুৎ নিয়ে যাবে। তারপর তারাই চরবাসীকে চাহিদামতো বিদ্যুৎ দেবে। আর সৌর প্ল্যান্টে যেটুকু বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে সেটা আভা নেসকোর কাছে বিক্রি করবে। কথা ছিল, এই চুক্তির ছয় মাসের মধ্যে নেসকো তাদের কার্যক্রম শুরু করবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত নেসকো কার্যক্রম শুরু করেনি।’ 

গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল বলেন, ‘কালকেই আমি শুনেছি যে আভা তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে। এতে চরের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। দ্রুত যেন এই প্ল্যান্ট চালু করা হয় তার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। সাবমেরিন কেব্‌লের মাধ্যমে যদি বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে সেটাও যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে করা হয়। তা না হলে চরের জীবন-জীবিকা আবার থমকে যাবে।’ 

নেসকোর নির্বাহী পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং) মোহাম্মদ শহীদ হোসেন বলেন, ‘সৌরবিদ্যুৎ স্থায়ী সমাধান নয়। এটি যুগ যুগ চলবেও না। দুর্গম অঞ্চলে বিদ্যুৎ দিতে সরকারের অগ্রাধিকার ছিল বলে নেসকো বিনা মূল্যেই আভাকে নানা সহযোগিতা করেছে। কিন্তু নদী পার করে সাব-মেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ নিয়ে যাওয়া সহজ কাজ নয়। আভার সঙ্গে এ রকম কোন চুক্তিও ছিল না। আভা সৌর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিলে আমাকে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তারপর দেখি কী করা যায়!’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা, গৃহকর্মী পলাতক, দারোয়ান পুলিশ হেফাজতে

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লীবলিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি— আসিফের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

খুলনার কমিশনার, ১৩ এসপিসহ পুলিশের ২২ কর্মকর্তাকে বদলি

জাতীয় পার্টিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা আছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দল মনোনয়ন দিল পটুয়াখালী-১, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ঘোষণা দিলেন পটুয়াখালী-৪ আসনে

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পটুয়াখালী-১ আসনের মনোনীত প্রার্থী মুফতি হাবিবুর রহমান তাঁর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পটুয়াখালী-৪ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

তবে তিনি কোন রাজনৈতিক দল থেকে নির্বাচন করবেন, তা এখনো নিশ্চিত করেননি।

আজ সোমবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় পটুয়াখালীর কলাপাড়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন কলাপাড়া উপজেলা কমিটি থেকে অব্যাহতি পাওয়া জেড এম কাওসার, মাওলানা মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মো. আসাদুজ্জামান ইউসুফসহ মুফতি হাবিবুর রহমানের অনুসারীরা।

প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণার মাধ্যমে পটুয়াখালী-১ ও ৪ আসনে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

লিখিত বক্তব্যে হাবিবুর রহমান জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাঁর ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও আমির পটুয়াখালী-১ আসনে নির্বাচন করার জন্য নির্ধারণ করে দেন। এ কারণে তিনি প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং স্ট্রোক করে তিনি বুঝতে পারেন, এই অঞ্চল ছেড়ে যাওয়ায় তাঁর হৃদয়ের রক্তনালি ছিঁড়ে গেছে। তাই তিনি ফিরে এসেছেন।

হাবিবুর রহমান আরও জানান, তিনি এমপি নির্বাচিত হতে পারলে এলাকার মানুষের পাশে থাকবেন এবং আগামী দিনে তিনি এই অঞ্চলের চাঁদাবাজ, দখলবাজ, দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে রুখে দাঁড়াবেন। বর্তমানে যেভাবে তিনি সাধারণ জীবন যাপন করছেন, এরচেয়ে বেশি বিলাসী জীবন যাপন করবেন না, গাড়ি হবে না, বাড়ি হবে না, তিনি যা আছেন, তা-ই থাকবেন।

এর আগে বিকেলে তিনি শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে কলাপাড়া পৌর শহরে শোডাউন দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা, গৃহকর্মী পলাতক, দারোয়ান পুলিশ হেফাজতে

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লীবলিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি— আসিফের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

খুলনার কমিশনার, ১৩ এসপিসহ পুলিশের ২২ কর্মকর্তাকে বদলি

জাতীয় পার্টিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা আছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চট্টগ্রামে অপহরণ মামলায় বন্দী ৭ বছরের শিশুকে আদালতের আদেশে মুক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম নগরীতে অপহরণ মামলায় গাজীপুরে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বন্দী সাত বছরের এক শিশুকে আদালতের আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার (৮ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. হাসানুল ইসলাম এই আদেশ দেন।

আদেশে আরও উল্লেখ করা হয়, মুক্তির আদেশপ্রাপ্ত সাত বছর বয়সী শিশুটির বাবা জীবিকা নির্বাহের জন্য বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে ব্যস্ত আর মা কারাগারে। শিশুটির আর কোনো অভিভাবক না থাকায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখার অনুমতি দেওয়া হলো।

এর আগে গত শুক্রবার নগরের ষোলোশহর এলাকায় চার বছরের এক শিশুকে অপহরণের অভিযোগে সাত বছরের ওই শিশুর বিরুদ্ধে মামলার পর তাকে হেফাজতে নেয় পাঁচলাইশ থানা-পুলিশ।

এরপর আদালতে পাঠালে ওই দিন শিশুটিকে গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে (বালক) পাঠানোর আদেশ দেন।

সাত বছরের শিশুর বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা নিয়ে নানা সমালোচনা ওঠায় চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা শিশুটির জামিন প্রার্থনা করেন।

পরে আজ চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজের নির্দেশে শিশুটিকে গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

ইতিপূর্বেও চট্টগ্রামে হাটহাজারীতে সাত বছরের এক শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা হয়েছিল উল্লেখ করে ঘটনার সঙ্গে যাঁদের গাফিলতি রয়েছে, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করেন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের (বিএইচআরএফ) মহাসচিব অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান।

শিশু আইন, ২০১৩-এর ৪৪(১) ধারামতে, ৯ বছরের নিচে শিশুকে কোনো অবস্থায় গ্রেপ্তার বা ক্ষেত্রমতে আটক রাখা যাবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা, গৃহকর্মী পলাতক, দারোয়ান পুলিশ হেফাজতে

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লীবলিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি— আসিফের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

খুলনার কমিশনার, ১৩ এসপিসহ পুলিশের ২২ কর্মকর্তাকে বদলি

জাতীয় পার্টিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা আছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: বোরকা পরে ঢুকে স্কুলড্রেসে বেরিয়ে যান একজন, গৃহকর্মী বলে সন্দেহ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ২৪
ছবি: সিসি টিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া
ছবি: সিসি টিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আজ সোমবার সকালে নিজ বাসায় মা ও মেয়েকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। নিহত দুজন হলেন লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর মেয়ে নাফিসা নাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)। মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের আমেনাস ড্রিম নামের একটি ১৪ তলা ভবনের সপ্তম তলায় এই জোড়া খুন হয়েছে।

সিসিটিভি ফুটেজে খুনের আগে ওই বাসায় বোরকা পরে গৃহকর্মী আয়েশাকে (২০) ঢুকতে এবং প্রায় দেড় ঘণ্টা পর স্কুলড্রেস ও মাস্ক পরে পিঠে একটি ব্যাগ নিয়ে বের হতে দেখা গেছে। পুলিশ ও ভবনটির অন্য বাসিন্দাদের সন্দেহ, চার দিন আগে নিয়োগ দেওয়া গৃহকর্মীই এই হত্যার সঙ্গে জড়িত। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক।

পুলিশ ও স্বজনেরা জানান, নিহত লায়লা আফরোজ গৃহিণী। নাফিসা মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণিতে পড়ত। নাফিসার বাবা এ জেড এম আজিজুল ইসলাম পলাশ উত্তরার সানবিমস স্কুলের শিক্ষক। স্ত্রী ও একমাত্র মেয়েকে নিয়ে তিনি প্রায় ১৩ বছর নিজস্ব ওই ফ্ল্যাটে থাকছেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি নাটোরে।

স্বজনেরা জানান, আজিজুল ইসলাম সকালে স্কুলের উদ্দেশে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বাসায় ফিরে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে প্রথমে দরজার পাশে মেয়ের রক্তাক্ত মরদেহ দেখেন। পরে রান্নাঘরে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় স্ত্রীকে পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁর চিৎকারে আশপাশের বাসিন্দারা আসেন। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লায়লা আফরোজকে উদ্ধার করে। নাফিসার মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

ভবনটির একাধিক সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ বলছে, সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরে ওই বাসায় ঢোকেন গৃহকর্মী আয়েশা। ৯টা ৩৬ মিনিটে স্কুলড্রেস ও মাস্ক পরে তিনি পিঠে একটি ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যান। স্কুলড্রেসটি ছিল নিহত নাফিসার। ওই বাসা থেকে পুলিশ দুটি ছুরি উদ্ধার করেছে। খুনি হত্যার পর বাসার বাথরুম ব্যবহার করেছে, এমন আলামত পাওয়া গেছে।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বিকেলে আজকের পত্রিকাকে বলেন, এখন পর্যন্ত খুনের ঘটনায় গৃহকর্মীর জড়িত থাকার বিষয়ে সন্দেহ করা হচ্ছে। ঘটনার আগে-পরে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে ওই বাসায় একজন তরুণীকেই আসা-যাওয়া করতে দেখা গেছে। আশপাশে আরও কেউ ছিল কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। বাড়িটি রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের পাশে। দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, সপ্তম তলায় লিফটের সামনে থেকে আজিজুল ইসলামের বাসার দরজা পর্যন্ত ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। দরজা থেকে বাসার ভেতরে মেঝেজুড়ে রক্ত।

তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বাসায় ধস্তাধস্তির আলামত এবং মেঝে ও দেয়ালে রক্তের দাগ রয়েছে। আলমারি ও ভ্যানিটি ব্যাগ তছনছ অবস্থায় রয়েছে। বাসা থেকে কিছু খোয়া গিয়ে থাকতে পারে। প্রথমে লায়লা আফরোজকে এবং পরে তাঁর মেয়ে নাফিসাকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। বাসার ইন্টারকমের তারও ছেঁড়া দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ইন্টারকমে ফোন দেওয়ার সময় হত্যাকারী তার ছিঁড়ে ফেলেছে। খুনের পর বাসাতেই খুনি পোশাক পাল্টে রক্তমাখা কাপড় ব্যাগের ভেতরে নিয়ে বেরিয়ে যায়।

ঢাকার মোহাম্মদপুরে নিজের বাসায় খুন হয়েছেন লায়লা আফরোজ এবং তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়ে নাফিসা নাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: পরিবারের সৌজন্যে
ঢাকার মোহাম্মদপুরে নিজের বাসায় খুন হয়েছেন লায়লা আফরোজ এবং তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়ে নাফিসা নাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: পরিবারের সৌজন্যে

নিহত লায়লা আফরোজের ভাই ইমদাদুল ইসলাম জানান, তাঁর দুলাভাই আজিজুল বাসায় ফিরে প্রথমে দরজায় নক করে সাড়াশব্দ পাননি, পরে দেখেন দরজা খোলা। ভেতরে ঢুকে দরজার পাশে তিনি নাফিসার রক্তাক্ত দেহ এবং একটু দূরে রান্নাঘরে স্ত্রীর রক্তাক্ত দেহ দেখেন। তাঁর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এলে মেয়ে বেঁচে আছে ধারণা করে প্রতিবেশীদের সহায়তায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পুলিশ বাসা থেকে লায়লার লাশ উদ্ধার করে।

মরদেহ দুটির সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায় পুলিশ। দুজনের শরীরের একাধিক স্থানে এলোমেলো ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

ভবনটির ম্যানেজার মো. আয়ুব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই পরিবার বাড়ির দারোয়ান খালেককে গৃহকর্মী দিতে বলেছিলেন। চার দিন আগে বোরকা পরা এক তরুণী গেটে এসে কাজের খোঁজ করলে দারোয়ান সপ্তম তলার ওই বাসায় পাঠিয়েছিলেন। তাঁরা তরুণীর সঙ্গে কথা বলে কাজে রেখেছিলেন। তাঁদের নিজস্ব ফ্ল্যাট। পরিবারে তিনজন। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আজিজুল ইসলাম ফোন দিলে ওপরে গিয়ে ঘটনা বুঝতে পারেন।

নিহত লায়লাদের স্বজনেরা জানান, গৃহকর্মী আয়েশা তাঁর গ্রামের বাড়ি রংপুরে এবং বাবা-মা আগুনে পুড়ে মারা গেছেন, তাঁর শরীরেও পোড়ার ক্ষত রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, জেনেভা ক্যাম্পে চাচা-চাচির সঙ্গে থাকেন। স্থায়ী গৃহকর্মী না হওয়ায় তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র রাখা হয়নি।

দারোয়ান খালেককে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তিনি পুলিশকে বলেছেন, চার দিন আগে বাসায় কাজের জন্য আসায় ওই তরুণীকে শিক্ষকের ফ্ল্যাটে পাঠিয়েছিলেন। তরুণী তাঁর পূর্বপরিচিত নন। ওই বাসায় কাজ করতেন বলে আজ সকাল ৭টার পর তরুণী আসায় তিনি ভেতরে ঢুকতে দেন। তবে বের হওয়ার সময় স্কুলড্রেস ও মাস্ক পরা থাকায় এবং কাঁধে ব্যাগ থাকায় তিনি তরুণীকে চিনতে পারেননি।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার জুয়েল রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে কিছু তথ্য পেয়েছি। সেসব যাচাই-বাছাই চলছে। পলাতক গৃহকর্মী তরুণীকে গ্রেপ্তার করতে পারলেই ঘটনার রহস্য জানা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা, গৃহকর্মী পলাতক, দারোয়ান পুলিশ হেফাজতে

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লীবলিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি— আসিফের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

খুলনার কমিশনার, ১৩ এসপিসহ পুলিশের ২২ কর্মকর্তাকে বদলি

জাতীয় পার্টিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা আছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আয়ে ২ কোটি টাকার গরমিল, সাবেক মন্ত্রীর এপিএস নুর খানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মোহাম্মদ নুর খানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় মামলা হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

আজ সোমবার (৮ ডিসেম্বর) দুদকের উপসহকারী পরিচালক আবু মোহাম্মদ আনোয়ারুল মাসুদ বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২-এ মামলাটি করেন।

মামলায় বলা হয়, আসামি ২ কোটি ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ২৮৪ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন ও দখলে রেখেছেন; যা তাঁর বৈধ আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংতিপূর্ণ। একই সঙ্গে তিনি দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৮২ লাখ ৬৭ হাজার ৮৯৩ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন।

এ বিষয়ে মামলার বাদী দুদকের উপসহকারী পরিচালক আবু মোহাম্মদ আনোয়ারুল মাসুদ জানান,

ঘটনার সময়কাল ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত। দুদকের অনুমোদন সাপেক্ষে মামলাটি করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা, গৃহকর্মী পলাতক, দারোয়ান পুলিশ হেফাজতে

ওমর সানী ‘নারীশাসিত’ পুরুষ ও ‘ক্লীবলিঙ্গের মতো’ মানুষ, কিন্তু ভাইকে আমি ভালোবাসি— আসিফের মন্তব্যে সমালোচনার ঝড়

খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স কাল আসছে না

খুলনার কমিশনার, ১৩ এসপিসহ পুলিশের ২২ কর্মকর্তাকে বদলি

জাতীয় পার্টিকে বাধা দেওয়া হচ্ছে না, নিজেদের মধ্যেই ঝামেলা আছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত