Ajker Patrika

করোনা ভেবে কাছে যাচ্ছিল না কেউ

প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২১, ২১: ৫০
করোনা ভেবে কাছে যাচ্ছিল না কেউ

রাজশাহী: বৃদ্ধ আফসার উদ্দিন (৭০) অসুস্থ। তিনি অবিবাহিত। চার দিন ধরে একাই বাড়ির বারান্দায় পড়ে ছিলেন। করোনা হয়েছে ভেবে প্রতিবেশীরা কেউ তাঁর পাশে যাননি। আত্মীয়-স্বজনেরাও আসেননি। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসন তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

রাজশাহী মহানগরীর সাগরপাড়া এলাকায় আফসার উদ্দিনের বাড়ি। পুরোনো জরাজীর্ণ বাড়িটিতে একাই থাকতেন বৃদ্ধ আফসার উদ্দিন। গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ও জাতীয় তরুণ সংঘের স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে তাঁর বাড়ি যান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরিফুল হক। এরপর তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

আফসার উদ্দিন এতটাই অসুস্থ ছিলেন যে, যেখানে শুয়েছিলেন সেখানেই মলমূত্র ত্যাগ করেছিলেন। হাসপাতালে নেওয়ার আগে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ও জাতীয় তরুণ সংঘের স্বেচ্ছাসেবকেরা তাঁকে গোসল করান। তখন একজন প্রতিবেশী কাপড় এনে দেন। এরপর আফসার উদ্দিনের করোনার র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টও করা হয়। এতে ফল আসে নেগেটিভ।

রাজশাহীর সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি হিসেবে খুরশীদ আলম নামের একজন চিকিৎসককেও তাঁর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তিনি অক্সিমিটারে আফসারের স্যাচুরেশন পরিমাপ করেন। স্যাচুরেশন স্বাভাবিকের চেয়ে কম পাওয়া যায়। চিকিৎসক জানান, আফসার বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন। তারপর নিরিবিলি চিকিৎসার জন্য তাঁকে পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এ কাজে সহায়তা করেন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ও জাতীয় তরুণ সংঘের স্বেচ্ছাসেবকেরা।

অতিরিক্ত জেলা শরিফুল হক জানান, বৃদ্ধ আফসার উদ্দিন নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন। চার দিন ধরে মসজিদে না যাওয়ায় মুসল্লিরা ভাবেন, তিনি হয়তো অসুস্থ। তাঁরা বাড়িতে গিয়ে দেখেন, সত্যিই তিনি অসুস্থ। কিন্তু করোনা হয়ে থাকতে পারে ভেবে কেউ তাঁর পাশে যেতে সাহস পাননি। জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বিষয়টি জানতে পেরে আফসারকে উদ্ধারের নির্দেশনা দেন।

শরিফুল হক জানান, জেলা প্রশাসক বৃদ্ধ আফসারের দায়িত্ব নিয়েছেন। তাঁর খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আফসার হাসপাতালে থাকা অবস্থায় পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাঁর খোঁজ রাখবেন। আর আফসারের বাড়িটি যেন দখল না হয়ে যায় তার জন্য পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

শনিবার সকালে পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, আফসার উদ্দিন শুয়ে আছেন। তাঁর দেখাশোনার জন্য লোক আছে। ফলমূলসহ নানারকম খাবারও আছে।

আফসার জানালেন, কয়েক দিন ধরেই তিনি অসুস্থ। কাশি থাকার কারণে করোনা ভেবে কেউ কাছে যাননি। প্রতিবেশীদের সহায়তা চেয়েও পাননি। কেউ নেই বলে একাই পড়েছিলেন বাড়িতে। জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল তাঁকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করায় আফসার তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

পবার ইউএনও শিমুল আকতার জানান, আফসার উদ্দিনের দেখাশোনার জন্য লোক রাখা হয়েছে। তাঁর যা যা প্রয়োজন সবকিছুই ব্যবস্থা করা হয়েছে। চিকিৎসায় তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সিলেটে পাথর লুটে জড়িত দুই দলের ৩৫ নেতা

৬৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ডেলটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ফারুকসহ ১৫ জনের নামে মামলা

১ লাখ ৮২২ শিক্ষক নিয়োগ: যোগ্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চলতি সপ্তাহে

‘মুসলিম ফ্রন্টগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করুন, ইন্টেরিম ভেঙে দিন’

‘বউ আমাকে মিথ্যা ভালোবাসত, টাকা না থাকলে ছেড়ে যাবে, তাই মরে গেলাম’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত