Ajker Patrika

বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতায় দরকার সাংবিধানিকভাবে শক্তিশালী বিচার বিভাগ: প্রধান বিচারপতি

রাবি প্রতিনিধি  
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রতিষ্ঠার ৭২ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন উপলক্ষে সভায় অতিথিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রতিষ্ঠার ৭২ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন উপলক্ষে সভায় অতিথিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগের প্রতিষ্ঠার ৭২ বছর পূর্তি উদ্‌যাপন করা হয়েছে। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হয় দিনব্যাপী এই আয়োজন। উদ্বোধন করেন দেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

উদ্বোধনের পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে একটি বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে অংশ নেন দেশ-বিদেশ থেকে আসা বিভাগের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

শোভাযাত্রা শেষে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘আইন কেবল নিয়মের সমষ্টি নয়; বরং এটি জাতির নৈতিক বিবেকের প্রতিফলন। ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্র দৃঢ় হয়, আর ন্যায় ব্যর্থ হলে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে।’

জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘মানবতা যখন অবিচার ও অমানবিক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভয়াবহ পরিণতি প্রত্যক্ষ করে, তখনই মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা মানবজাতিকে নতুন এক নৈতিক চেতনার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘রাষ্ট্র যখন নাগরিকদের মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, তাদের কণ্ঠরোধ করে, তখন ন্যায়ের জন্য লড়াই করা নৈতিকভাবে অপরিহার্য হয়ে পড়ে। জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী নতুন বাস্তবতার আমরা এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে প্রশাসনিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ, নৈতিকভাবে সাহসী ও সাংবিধানিকভাবে শক্তিশালী বিচার বিভাগ বিনির্মাণ করতে হবে।’

ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘২০২৫ সালের সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশকে মন্ত্রিসভা কর্তৃক যে “নীতিগত অনুমোদন” দেওয়া হয়েছে, তা একটি সুপরিকল্পিত বহুপাক্ষিক চেষ্টার ফল। গত ১৫ মাসে প্রধান বিচারপতির কার্যালয় ও সরকারের নির্বাহী শাখার মধ্যে কৌশলগত সহযোগিতার ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে। এখন থেকে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন, বার কাউন্সিল, বিচারক ও আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের দায়িত্ব হলো, এই কাঠামোগত রূপান্তরের টেকসই বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। আমাদের সবার মধ্যে পারস্পরিক দায়বদ্ধতা, যুক্তিনিষ্ঠতা এবং সহযোগিতার মনোভাব থাকতে হবে—এগুলোই বিচার বিভাগের স্বায়ত্তশাসনকে টেকসই করবে।’

আয়োজকেরা জানান, সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের আইন শিক্ষায় অসামান্য অবদান রেখে চলেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ। গৌরবময় এ যাত্রাকে স্মরণীয় করে রাখতে আয়োজন করা হয়েছে বৃহৎ পুনর্মিলনী। এতে বিভাগের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা একত্র হয়ে অতীতের স্মৃতিচারণা ও আনন্দ ভাগাভাগি করেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। এ ছাড়া উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্ট ডিভিশনের ২৯ জন বিচারপতি, বিভিন্ন জেলার জেলা ও দায়রা জজ, আইনজীবীসহ প্রায় তিন হাজার প্রাক্তন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...