Ajker Patrika

ইউপি কার্যালয়ে সদস্যদের নাচগানের ভিডিও ভাইরাল, তদন্তে প্রশাসন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
পাঁচন্দর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সদস্যরা নাচগান করার দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত
পাঁচন্দর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সদস্যরা নাচগান করার দৃশ্য। ছবি: সংগৃহীত

ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) কয়েকজন সদস্য একটি কক্ষে বসে আছেন। একজন পুরুষ সদস্য নাচছেন। মাঝে মাঝে পাশে বসে থাকা একজন নারী সদস্যের গায়েও হাত দিচ্ছেন। সামনের টেবিলে একটি বোতল, একটি গ্লাস। গতকাল মঙ্গলবার সামাজিক মাধ্যমে এমন ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি জেলার তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের। এ ঘটনায় এলাকায় সমালোচনা-আলোচনার জন্ম হয়েছে। অনেকের ধারণা, দেশীয় মদ পান করে সদস্যরা এমন নাচানাচিতে মেতে উঠেছেন। এ নিয়ে তদন্তে নেমেছে উপজেলা প্রশাসন। ইউপি চেয়ারম্যান অবশ্য দাবি করছেন, মদপানের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

ইউপি কার্যালয়ে নাচগানের ঘটনাটি ঘটে গত ১৩ আগস্ট। ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় বিএনপি নেতা ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল গাফফার এবং ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাইনুল ইসলাম নাচগানে মেতে আছেন। তাঁদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের পদধারী কয়েকজন ইউপি সদস্যও অংশ নেন। প্রকাশ্যে এমন কর্মকাণ্ডে বিএনপির নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল মালেক বলেন, ‘গাফ্ফার ও মাইনুল প্রায়ই ইউপি কার্যালয়ে মজমা বসিয়ে মদ পান করেন। তাঁদের কর্মকাণ্ডে বিএনপির ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এরা দুজনই বিএনপির কর্মী গাণিউল হত্যা মামলার আসামি। দলের সম্মান রক্ষায় তাঁদের দ্রুত বহিষ্কার করা প্রয়োজন।’

ভিডিওটিতে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও পাঁচন্দর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং আট নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি মাইনুল ইসলামকে নাচানাচি করতে দেখা যায়। আসরে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউপির ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য মাবিয়া বিবি, মহিলা আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সহসভাপতি ও ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নারী সদস্য বেবি আরা এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আরেক আব্দুল গাফফার।

এ বিষয়ে কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি হিসেবে ইউপি সদস্যরা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর কথা। কিন্তু তাঁরা যদি মদ্যপ অবস্থায় নাচগান করেন, তাঁহলে জনগণ আর কোথায় যাবে? আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি চাই।’

নাচানাচির বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য আব্দুল গাফফার বলেন, ‘আমার কোনো দুঃখ নাই, সব সময় সুখ নিয়েই চলি। দুঃখ করলে হার্ট অ্যাটাক কইরে মইরে যাব। খাইয়ে-দাইয়ে আইসে একটা মিম্বার একটা মোবাইলে গান দিয়েছে, আমি একটু নাচিছি। এইটুকুই গো ভাই, এক মিনিটও লয়। এটাই ছড়ায় গেছে। বোতলে সাদা পানি ছিল ভাই। মদটদ কিছু লয়।’

জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বলেন, ‘১৩ আগস্ট আমি ছুটিতে ছিলাম। দায়িত্বে ছিলেন প্যানেল চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। সে মেম্বারদের গোস্ত-ভাত খাওয়ায়। তারপর কেউ ছিল না, খেয়েদেয়ে তারা একটু ডানা লড়ালড়ি করছিল। গাফফার মেম্বার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। এখানে নেশাভান কিছু না। বিষয়টা ভিন্নভাবে প্রচার করা হচ্ছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিয়াকত সালমান বলেন, ভিডিওটি তিনি দেখেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও দেখেছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের জেলার উপপরিচালক তাঁর কাছে জানতে চেয়েছেন। এ জন্য মঙ্গলবার তিনি ইউপি চেয়ারম্যানকে ডেকে জানতে চেয়েছিলেন। আজ বুধবার সদস্যদের ডেকেছেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে একটি প্রতিবেদন পাঠাবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সেতু যেন মৃত্যুফাঁদ

বান্দরবান প্রতিনিধি
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নে ১৩ বছর ধরে ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে সেতুটি। ছবি: আজকের পত্রিকা
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নে ১৩ বছর ধরে ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে সেতুটি। ছবি: আজকের পত্রিকা

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নে ১৩ বছর ধরে ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু। পাহাড়ি ছড়া বেয়ে নেমে আসা বন্যার পানির তোড়ে ২০১২ সালে গর্জনিয়া উত্তর বড়বিল-দক্ষিণ বাইশারী সংযোগ সেতুটি ভেঙে যায়। এর পর থেকে কাঠ-বাঁশের অস্থায়ী সাঁকো দিয়ে চলাচল করছে দুই ইউনিয়নের মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি পুনর্নির্মাণ না হওয়ায় ভোগান্তির শেষ নেই।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, যাতায়াতের সময় অস্থায়ী সাঁকোটি প্রায়ই কেঁপে ওঠে। বৃষ্টি বা পাহাড়ি স্রোত এলে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। এই সাঁকো দিয়েই প্রতিদিন দুই ইউনিয়নের বাসিন্দারা চলাচল করে। বাজার, চিকিৎসা, স্কুল—সবকিছুর জন্য এটি তাঁদের একমাত্র পথ। ২০২৩ সালে এই সাঁকো থেকে পড়ে এক স্কুলছাত্র আহত হয়েছিল।

বাইশারী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. জমির বলেন, ‘১৩ বছর ধরে একটি ব্রিজ কীভাবে পড়ে থাকে, তা আমাদের জানা ছিল না। মানুষের জীবন নিয়ে যেন কারও কোনো ভাবনাই নেই!’

স্থানীয় বাসিন্দা মো. ইউসুফ বলেন, ‘ব্রিজটির দুরবস্থা নিয়ে আমরা বারবার বলেছি, লিখেছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। ব্রিজ না থাকায় আমাদের কৃষিপণ্য বাজারে নিতে সমস্যা হচ্ছে।’

জানা যায়, ১৯৯৬ সালে নির্মিত সেতুটি ধসে যাওয়ার পর একাধিকবার বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন-নিবেদন করলেও এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, ১৩ বছর ধরে তাঁরা চলাচল করছেন ঝুঁকি নিয়ে, কিন্তু এটি পুনর্নির্মাণে এলজিইডি বা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

অন্যদিকে গর্জনিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় বাসিন্দা মো. সিরাজ বলেন, ‘গর্জনিয়া থেকে উৎপাদিত শাকসবজি ও তরিতরকারি বাইশারী বাজারে আনতে ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয়। মাঝেমধ্যে ভাঙা ব্রিজের ওপরের সাঁকো ভেঙে গেলে কয়েক দিনের জন্য আমাদের যাতায়াত বন্ধ থাকে।’

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নে ১৩ বছর ধরে ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে সেতুটি। ছবি: আজকের পত্রিকা
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নে ১৩ বছর ধরে ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে সেতুটি। ছবি: আজকের পত্রিকা

নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. নুরুল কবির বলেন, ‘দুই ইউনিয়নের হাজারো মানুষের যাতায়াতের কী দুর্ভোগ তা আমি জানি। শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। দ্রুত এই ব্রিজ পুনর্নির্মাণ করতে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

গর্জনিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ফিরোজ আহমদ বলেন, ‘অনেকবার বিভিন্ন কর্মকর্তা এসে দেখে গেছেন। সাংবাদিকেরা লেখালেখি করেছেন, কিন্তু ফল হয়নি।’

বাইশারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলম বলেন, ‘ব্রিজটি পুনর্নির্মাণের জন্য আমি বান্দরবান জেলা পরিষদে আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো কোনো অগ্রগতি চোখে পড়েনি।’

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ব্রিজটি ঠিক কোন উপজেলার আওতাধীন তা নিশ্চিত নই। যে উপজেলার অধীনে পড়বে, তাদেরই কাজটি করতে হবে। যদি নাইক্ষ্যংছড়ির অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে আমরা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেতুটি দুই জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় হওয়ায় দায়িত্বের প্রশ্নে প্রশাসনের গাফিলতি চলছে। ফলে বছরের পর বছর অবহেলায় পড়ে আছে সেতুটি; আর মানুষকে পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ।

স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারীর মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী সেতুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই উপজেলা প্রশাসন বসে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে এটি পুনর্নির্মাণ করা প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরগুনায় মধ্যরাতে ফেসবুকে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা

বরগুনা প্রতিনিধি
জেলা ছাত্রলীগের প্যাডে করা একটি বিজ্ঞপ্তি। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
জেলা ছাত্রলীগের প্যাডে করা একটি বিজ্ঞপ্তি। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

নিষিদ্ধ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বরগুনার বেতাগী উপজেলা শাখার নবগঠিত কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের প্যাডে করা একটি বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি আলোচনায় আসে। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১২টার পর সংগঠনটির বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীরা নিজেদের ফেসবুকে নবঘোষিত কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে পোস্ট দেন।

জেলা ছাত্রলীগের প্যাডে প্রকাশিত সেই বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, বেতাগী উপজেলা ছাত্রলীগের চারটি পদে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী এক বছরের জন্য অনুমোদিত এই কমিটিতে স্বাক্ষর করেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল কবির রেজা ও সাধারণ সম্পাদক তৌশিকুর রহমান ইমরান।

নবঘোষিত কমিটিতে সভাপতি হয়েছেন সোহেল আমিন হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক শিফাত সিকদার এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শাওন মৃধা। সহসভাপতি পদে রয়েছেন ১৭ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একজন এবং সহসাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন ৮ জন।

নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের হঠাৎ করে গভীর রাতে নতুন কমিটি ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলের নেতারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লক্ষ্মীপুরে ‘অস্ত্র কারখানার মালিক’ নুর উদ্দিন গ্রেপ্তার

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
গ্রেপ্তারকৃত নুর উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তারকৃত নুর উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জে ওয়ার্কশপের আড়ালে অস্ত্র তৈরির অভিযোগে নুর উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে রাঙামাটি জেলার চন্দ্রঘোনা থানার গহিন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত নুর উদ্দিন জেলার চন্দ্রগঞ্জে অবস্থিত নোহা অটো ট্রেডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়ারপুর ইউনিয়নের জগদীশপুর গ্রামের বাসিন্দা। রাত ১১টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমী।

এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে রায়হান কাজেমী জানান, লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জের দেওপাড়া গ্রামের নুর উদ্দিনের মালিকানাধীন নোহা অটো ট্রেডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের আড়ালে অস্ত্র তৈরি করা হয়। গত ১ ডিসেম্বর গোয়েন্দা পুলিশ ওই কারখানায় অভিযান চালিয়ে একটি দেশীয় তৈরি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামাদি উদ্ধার করে। তবে নুর উদ্দিন পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় তাকে আসামি করে চন্দ্রগঞ্জ থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়।

পরে গত ৭ ডিসেম্বর চন্দ্রগঞ্জ থানা এলাকা সংলগ্ন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়ারপুর ইউনিয়নের জগদীশপুর গ্রামে মুনু মাঝির বাড়ির সফিউল্যার কবরের পাশে ঝোপের ভেতর থেকে পাঁচটি একনলা বন্দুক ও একটি এলজি উদ্ধার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ। ওই অস্ত্রগুলোও নুর উদ্দিনের ওয়ার্কশপে তৈরি করা হয়। তিনি আরও জানান, অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হলো। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

তৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা 
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা
গ্রাফিক্স: আজকের পত্রিকা

যানজটের নগরী ঢাকায় যাতায়াতে কিছুটা স্বস্তি আনা মেট্রোরেলের চলাচল হঠাৎ হঠাৎ থমকে যাচ্ছে। গত প্রায় দেড় বছরে ১০ বার বিঘ্ন ঘটেছে চলাচলে। বিঘ্ন ঘটার বেশির ভাগ কারণই মানবসৃষ্ট। বাকিগুলো বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়াসহ কারিগরি বা যান্ত্রিক ত্রুটি। মানুষের অসচেতনতা আধুনিক এই গণপরিবহন সেবার নিরাপত্তায় বড় হুমকি হয়ে উঠেছে।

মেট্রোরেল পরিচালনাকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সূত্র বলেছে, মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়াসহ বিভিন্ন কারণে যাত্রীসংখ্যা প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মানবসৃষ্ট সমস্যাগুলো অবশ্যই আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে। এ জন্য জনসচেতনতা আরও বাড়াতে হবে। কারণ, মানুষ সচেতন না হলে মেট্রোরেল লাইনের ওপর পুরোপুরি বেড়া দিয়ে ঘেরা সম্ভব নয়। পাশাপাশি আমাদের নজরদারি বা এনফোর্সমেন্ট আরও জোরদার করতে হবে। যান্ত্রিক ত্রুটি স্বাভাবিকভাবে ঘটতেই পারে। কিন্তু বেশি বিঘ্ন ঘটাচ্ছে মানবসৃষ্ট নানা ধরনের সমস্যা।’

ডিএমটিসিএলের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের সব নোটিশ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১০ বার মেট্রোরেল চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৬টির বেশি কারণ মানবসৃষ্ট, বাকিগুলো কারিগরি বা যান্ত্রিক ত্রুটি। মানবসৃষ্ট কারণের মধ্যে রয়েছে মেট্রোরেলের লাইনে কাপড়, ব্যাগ, ড্রোন, বৈদ্যুতিক লাইনে তার নিক্ষেপ এবং ট্রেনের ছাদে ওঠা। এ ছাড়া বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ার কারণে দুবার চলাচল কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেট্রোরেল লাইনে কোনো বস্তু পড়লে বা কোনো ধরনের বাধা শনাক্ত হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ঘটনা এড়াতে এটি মেট্রোরেলের একটি বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা। তবে চলমান অবস্থায় হঠাৎ ট্রেন থেমে যাওয়ায় যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ডিএমটিসিএলের ফেসবুক পেজের পোস্ট বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সর্বশেষ ৩ ডিসেম্বর উত্তরা উত্তর-উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের মাঝপথে মেট্রোলাইনের ওপর কাপড় পড়ে যাওয়ায় ১৫ মিনিট ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখতে হয়। এর তিন দিন আগে ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ সচিবালয় স্টেশনে এক কিশোর ট্রেনের দুটি কোচের মধ্যবর্তী স্থানে উঠে গেলে নিরাপত্তাজনিত কারণে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকে। ২৫ নভেম্বর লাইনে পড়ে থাকা ব্যাগের জন্য ২০ মিনিট চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। ২২ নভেম্বর উত্তরা সেন্টার-উত্তরা দক্ষিণ অংশে লাইনে ড্রোন পড়ে থাকায় কিছু সময় ট্রেন বন্ধ থাকে। ২ নভেম্বর পল্লবী-মিরপুর ১১ ঢালের মাঝে বৈদ্যুতিক লাইনের ওপর বাইরে থেকে তার নিক্ষেপ করা হলে ৩০ মিনিট ট্রেন চলেনি। এসবই মানবসৃষ্ট। এমন অসচেতনতায় চলাচলে বিঘ্ন ঘটনার পাশাপাশি দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করছে।

যান্ত্রিক ত্রুটিও চলাচল বিঘ্নের কারণ

যান্ত্রিক ও প্রযুক্তিগত কারণেও মেট্রোরেল চলাচলে কয়েকবার বিঘ্ন ঘটেছে। এর মধ্যে ২৬ অক্টোবর বিয়ারিং প্যাডে ত্রুটি দেখা দিলে ট্রেন চলাচল থামাতে হয়। ২৮ মে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ট্রেনের দরজায় সমস্যা হলে সন্ধ্যার ব্যস্ত সময়ে ২০ মিনিট চলাচল বন্ধ থাকে। ২৫ জানুয়ারি দুবার বিঘ্ন ঘটে। সেদিন সকালে দরজা বিকল হয়ে ৯টা ২৩ থেকে ৯টা ৪৯ পর্যন্ত সেবা বন্ধ থাকে। সিগন্যালের সমস্যার জন্য আবার বেলা ১টা ৩৩ থেকে ২টা ৬ মিনিট পর্যন্ত চলাচল বন্ধ থাকে। সেদিন ধাপে ধাপে রুট খুলে পুরো নেটওয়ার্ক সন্ধ্যায় স্বাভাবিক হয়।

২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ফার্মগেটে একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়লে ১১ ঘণ্টা ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে। চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফার্মগেটে আবারও ৮০ কেজি ওজনের বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় কয়েক ঘণ্টা পুরো ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে প্রথমে উত্তরা-আগারগাঁও অংশে এবং এর কয়েক ঘণ্টা পর মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করে।

ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, যেসব ঘটনায় মেট্রোরেল চলাচল ব্যাহত হয়েছে, তার অধিকাংশই যাত্রী, পথচারী বা লাইনের আশপাশের মানুষদের সচেতনতা থাকলে এড়ানো যেত। কাপড় বা ব্যাগ লাইনে পড়ে থাকা, ড্রোন ওড়ানো, বৈদ্যুতিক লাইনে বস্তু নিক্ষেপ; এগুলো শুধু ট্রেন চলাচলই ব্যাহত করেনি, যাত্রীদেরও ভোগান্তিতে ফেলেছে। একই সঙ্গে বড় দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

গণপরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন ঘটনা এড়াতে মেট্রো স্টেশন ও লাইনে নজরদারি আরও শক্তিশালী করতে হবে। বহিরাগত বস্তু শনাক্তের সেন্সর ও মনিটরিং বাড়াতে হবে এবং জনসচেতনতা তৈরিতে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এটি মেট্রোর পরিকল্পনাগত ত্রুটি। লাইনে কাপড়, ব্যাগ বা অন্য বস্তু পড়লে দ্রুত শনাক্ত করতে অবজেক্ট ডিটেকশন সেন্সর ও এআই-চালিত সিসিটিভি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। ড্রোন প্রতিরোধে ড্রোন ডিটেকশন রাডার ও জিওফেন্সিং সিস্টেম ব্যবহার করলে অনুমতিহীন ড্রোন লাইনের কাছে এলেই সতর্কতা জারি হবে। বৈদ্যুতিক লাইনের পাশে সুরক্ষা নেট বসালে বাইরে থেকে তার বা বস্তু নিক্ষেপ রোধ করা সম্ভব। অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে দরজার সমস্যা কমাতে দরজা-সেন্সর ও সফটওয়্যার উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যস্ত স্টেশনে রিয়েল-টাইম যাত্রী ব্যবস্থাপনা চালু করা যেতে পারে।

ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘মেট্রোরেল আমাদের সবার সম্পদ, তাই এটি রক্ষার দায়িত্বও সবার। এই সংস্কৃতি এক দিনে তৈরি হয় না। সময়ে সময়ে সচেতনতা ও অভ্যাস গড়ে তুলতেই হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে খুন: অভিযুক্ত গৃহকর্মীর আসল নাম-পরিচয় শনাক্ত

ইতালির লিওনার্দো এসপিএ থেকে জঙ্গি বিমান কিনছে বাংলাদেশ

ভারত যেন হুঁশে থাকে, এবার পাল্টা আঘাত হবে দ্রুত ও মারাত্মক—পাকিস্তানের সিডিএফ হয়েই আসিম মুনিরের গর্জন

দেড় বছরে ১০ বার থমকে গেছে মেট্রোরেল চলাচল

সাবেক সেনা কর্মকর্তার কাছে দুঃখ প্রকাশ করলেন তারেক রহমান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত