Ajker Patrika

স্ত্রী-সন্তানদের হত্যার পর আত্মহত্যা: ধারদেনা করে চল্লিশা করল পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮: ২৮
চল্লিশায় শনিবার দুপুরের খাবার খান সমাজের আমন্ত্রিত প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা
চল্লিশায় শনিবার দুপুরের খাবার খান সমাজের আমন্ত্রিত প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঋণের বোঝা টানতে টানতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন রাজশাহীর পবা উপজেলার বামনশিকড় গ্রামের মিনারুল ইসলাম (৩৫)। তাই স্ত্রী মনিরা খাতুন (৩০), ছেলে মাহিম (১৪) ও মেয়ে মিথিলাকে (৩) হত্যার পর নিজেও আত্মহত্যা করেন। গত ১৪ আগস্ট দিবাগত রাতে এমন ঘটনা ঘটান তিনি। হৃদয়বিদারক এই ঘটনায় মর্মাহত হন সারা দেশের মানুষ।

মিনারুল চিরকুটে লিখে গিয়েছেন, ‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে।’ সেই মিনারুল এবং তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের জন্য চল্লিশা খাওয়ালেন তাঁর পরিবার। তা-ও আবার ধারদেনা করে। শনিবার দুপুরে বামনশিকড় গ্রামের বাড়িতেই এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়। চল্লিশায় দুপুরের খাবার খান সমাজের আমন্ত্রিত প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ। জমি বিক্রি করে এই ঋণ শোধ করবেন বলে জানিয়েছেন মিনারুলের বাবা রুস্তম আলী।

শনিবার দুপুরে বামনশিকড় গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ভ্যানে চড়ে দূরের গ্রাম থেকে আসছেন আত্মীয়স্বজনেরা। আসছেন পুরো গ্রামের মানুষও। রুস্তম আলীর বাড়ির সামনে ও পেছনে দুটি প্যান্ডেল করা হয়েছে। প্যান্ডেলে বসে তাঁরা খাচ্ছেন। ভাতের সঙ্গে ছিল ডাল ও মুড়িঘণ্ট। রুস্তম আলী ঘুরে ঘুরে সবকিছু দেখছিলেন। এর এক ফাঁকেই কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

রুস্তম আলী বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানকে কেউ চল্লিশা বলে। কেউ বলে ফয়তা। সমাজের মানুষকে নিয়ে এটা করতে হয়। বাপ-দাদার আমল থেকেই দেখে আসছি। আমিও মনের আবেগে করলাম। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী করে। আমি গরিব মানুষ, মাংস করতে পারিনি। মাছ দিয়ে মুড়িঘণ্ট আর ডাল করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আশপাশের মানুষজন বলছিল চারজন মরার কারণে বাড়িটা ভারী ভারী লাগছিল। ছোট ছিলেপিলেরা ভয় পাচ্ছিল। অনুষ্ঠানটা করলাম যাতে ভয় ভাঙে। বাড়ি যেন পাতলা হয়। এ কারণে দুপুরে দোয়া হয়েছে। তারপর খাওয়াদাওয়া। প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হলো। আত্মীয়স্বজন ও সমাজের মিলিয়ে ১ হাজার ২০০ মানুষের আয়োজন করা হয়েছিল।’

টাকা জোগাড় হলো কীভাবে জানতে চাইলে রুস্তম আলী বললেন, ‘সবই ধারদেনা। আমার তো জমানো টাকা নাই।’ শোধ করবেন কীভাবে, এ প্রশ্নে বললেন, ‘১৫-১৬ কাঠা জমি আছে। এক কাঠা বেচব, বেচে ধার শোধ করব। তা ছাড়া তো আর কোনো উপায় নাই।’

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাঈদ আলী মুর্শেদ বলেন, ‘ইসলামের দৃষ্টিতে এটা নাই। কিন্তু কেউ মারা গেলে এটা করতে হয়। এটা আমাদের এলাকার রেওয়াজ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাবশালী ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ গ্রেপ্তার

বিহার নির্বাচন: লড়বেন না প্রশান্ত কিশোর, ‘নিশ্চিত পরাজয়’ দেখছেন বিজেপি জোটের

জুলাই সনদে স্বাক্ষর নিয়ে শেষ মুহূর্তে এসে অনিশ্চয়তা, সন্ধ্যায় ‘অতি জরুরি’ বৈঠক

ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ক্রিপ্টো কেলেঙ্কারি, ১৪ বিলিয়ন ডলারের কয়েন জব্দ

প্রাপ্তবয়স্কদের কনটেন্ট চালু করছে চ্যাটজিপিটি, শিশুদের নিরাপত্তা কোথায়

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত