Ajker Patrika

৪ বছর ধরে পড়ে আছে ২ কোটি টাকার ঈশ্বরদী মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৩, ১৭: ২০
৪ বছর ধরে পড়ে আছে ২ কোটি টাকার ঈশ্বরদী মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি উদ্বোধন হয়েছে ৪ বছর পার হয়েছে। ১ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার ৩১০ টাকা ব্যয়ে নির্মিত তিনতলা এ ভবনটি এখনো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি। অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকায় নান্দনিক ভবনটি ক্রমেই জৌলুশ হারাচ্ছে। ভবনটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিচতলায় ও দ্বিতীয় তলায় যে দোকানগুলো করা হয়েছে সেগুলোও এখন পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। শুধু বিশেষ দিবসে কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

দেশের অন্য এলাকার মতো এ উপজেলায় বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের নির্বাচন না হওয়ায় কোনো কমিটি নেই। ফলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের দায়িত্বে রয়েছেন ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৪ সালে। তিন বছর পর পর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও নয় বছর ধরে কোনো নির্বাচন হয় না। দীর্ঘদিন নির্বাচন বন্ধ থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা হতাশ। অপর দিকে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটিও বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করতে পারছে না।

ঈশ্বরদী উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ সড়কের দক্ষিণ প্রান্তে ২০১৭ সালের মার্চ মাসে এই মুক্তিযোদ্ধা ভবন কমপ্লেক্সের নির্মাণ শুরু হয়। নির্মাণ শেষে ২০১৯ সালে অক্টোবরে এ কমপ্লেক্সটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ঈশ্বরদী কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়। এ বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনা সফরকালে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনসহ জেলার অনেকগুলো প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে এই ভবনটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। ঈশ্বরদী উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ১ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার ৩১০ টাকা ব্যয়ে কমপ্লেক্সটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেছে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ভবনটি নির্মাণের জন্য এ সময় ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছিল ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ১০ শতক জমির ওপর নির্মিত চারতলা ভিত্তির তিনতলা কমপ্লেক্স ভবনের সম্মুখে রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে দোকানঘর। তৃতীয় তলায় মুক্তিযোদ্ধাদের অফিস, হলরুম বা মিলনায়তন, টয়লেট, লাইব্রেরি ও মিউজিয়াম রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নান্দনিক নকশায় নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে প্রবেশের প্রধান ফটকে তালা দেওয়া। ভবনের বাইরের অংশে কিছু ময়লা জমে আছে। ভবনের সামনের অংশে রয়েছে একটি কারখানা যার কারণে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের সৌন্দর্য আড়াল পড়েছে।

বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের কার্যালয়টি মূলত শহরে স্টেশন রোডের থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। এখানেই মুক্তিযোদ্ধারা এসে সব সময় বসেন এবং বিভিন্ন আলোচনা করে থাকেন। বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার অভিমত, বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ভবনটি শহরের একপাশে হওয়ার কারণে অনেকেই সেখানে যেতে চান না। তবে কমপ্লেক্সের দোকানঘরগুলো সঠিকভাবে বরাদ্দ হলে ভবনটিতে হয়তো প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসত।

বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম মিন্টু বলেন, ‘আমাদের তো নির্বাচিত কমিটি নেই। নির্বাচিত কমিটি থাকলে এসব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হতো। বর্তমানে সভাপতির দায়িত্বে আছেন ইউএনও। তিনি বিষয়গুলো দেখভাল করছেন।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা চান্না মন্ডল বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বিশেষ উপহার। তাঁকে এ জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। ভবনটি বাণিজ্যিকভাবে চালু হলে মুক্তিযোদ্ধারা উপকৃত হবেন।

বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জানান, সিঁড়ি বেয়ে এ কমপ্লেক্সের তিনতলা কক্ষে যেতে তাঁদের ভীষণ কষ্ট হয়। লিফটের ব্যবস্থা করলে তাঁরা সহজে যাতায়াত করতে পারেন।

ইউএনও সুবীর কুমার দাস বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটির দোকানঘরগুলো বাণিজ্যিকভাবে চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু যাঁদের জন্য নতুন ভবনটি করা হয়েছে, তাঁদের অনেকেই আসছেন না। মূলত ভবনটি শহর থেকে কিছুটা নির্জন স্থানে হওয়ায় অনেকেই এখানে আসতে চান না। বীর মুক্তিযোদ্ধারা বয়সে প্রবীণ। তাঁরা শহরের অফিসে বসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। তাঁদের এমন সমস্যার কথা আমাকে বলেছেন। তবে চেষ্টা করছি, ভবনের দোকানঘরগুলো বাণিজ্যিকভাবে বরাদ্দের জন্য। ইতিমধ্যে সেগুলো বরাদ্দ নেওয়ার জন্য কেউ কেউ যোগাযোগ করেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনা করে ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদির ওপর হামলাকারীরা সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছে কি না—তা শতভাগ নিশ্চিত নয় বিজিবি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা

বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ঢাকায় শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলি বর্ষণকারী ব্যক্তিরা ময়মনসিংহ সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে পালিয়েছে কি না—তা এখনো শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

সোমবার ময়মনসিংহ নগরীর খাগডহর বিজিবি ক্যাম্পে তিনি আরও জানান, শুক্রবার ৯টার মধ্যে বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশনায় সম্ভাব্য পাচারের রুটগুলো চিহ্নিত করে টহল এবং চেকপোস্ট বসানো হয় সীমান্তের অধিকাংশ স্থানে। পরদিন অর্থাৎ শনিবারে পুলিশ এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। ঢাকা থেকে আগত পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বিজিবি ময়মনসিংহ সেক্টর কমান্ডারের নিয়মিত যোগাযোগ এবং অপারেশন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আলোচনায় দুটি স্থানে একসঙ্গে অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। সন্দেহভাজন হিসেবে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে অবস্থানরত ফিলিপ স্নালকে আটকের পরিকল্পনা করা হয়। পুলিশের আরেকটি টিম হালুয়াঘাট এলাকায় অপারেশনের প্ল্যান করে। হালুয়াঘাটে অপারেশনের বিষয়ে বিজিবির সোর্স এবং অন্যান্য বিষয়ে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করেছে। অপর দিকে নালিতাবাড়ীর বারোমারি এলাকায় অপারেশন পরিচালিত হয় বিজিবির নেতৃত্বে এবং ঢাকা হতে আগত ও হালুয়াঘাট থানার পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে। কিন্তু ফিলিপকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী ডেলটা চিরান, শ্বশুর ইয়ারসন রংডি এবং মানব পাচারকারী লুইস লেংমিঞ্জাকে আটক করা হয়। তাদের বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেলও উদ্ধার করা হয়।’

তাঁদের পরিবারের তিনজনসহ এ পর্যন্ত বিজিবি চারজনকে আটক করেছে। এঁদের মধ্যে সোমবার সকালে মানব পাচারকারী বেঞ্জামিন চিরামকে আটক করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরগুনায় স্বামীকে গলা টিপে হত্যা, স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিক আটক

বরগুনা প্রতিনিধি
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত

বরগুনার বামনা উপজেলায় পরকীয়া প্রেমের জেরে এক প্রবাসফেরত স্বামীকে গলা টিপে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আব্দুল জলিল (৪৫)। তিনি উপজেলার রামনা ইউনিয়নের ঘোপখালী গ্রামের বাসিন্দা।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫) ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিক আলামিনকে (৩০) আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুজনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে আব্দুল জলিলের নিজ বাড়িতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর ধরে একই এলাকার আবু খতিবের ছেলে আলামিন নিহতের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে নাজমা বেগমের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় ১৫ দিন আগে প্রবাস থেকে বাড়িতে ফিরে স্ত্রীর সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন আব্দুল জলিল।

অভিযোগ রয়েছে, রোববার বিকেলে স্ত্রী ও ওই গৃহকর্মী মিলে ঘুমন্ত অবস্থায় আব্দুল জলিলকে গলা টিপে হত্যা করেন।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে বামনা থানায় নিয়ে যায়। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের স্ত্রী ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিককে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা দুজনই হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলা দায়েরের পর আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মহান বিজয় দিবসে মেট্রোরেল সাময়িক বন্ধ থাকবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আগামী ১৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) মেট্রোরেল চলাচল সাময়িক বন্ধ থাকবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় প্যারাজাম্প অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে প্যারাট্রুপারদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ডিএমটিসিএল ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছে, আগামী ১৬ ডিসেম্বর দুপুর ১১টা ৫০ মিনিট হতে ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত, অর্থাৎ মোট ৪০ মিনিটের জন্য মেট্রোরেল চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।

ডিএমটিসিএল সাময়িক অসুবিধার জন্য যাত্রীসাধারণের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। যাত্রীদের এই সময়সূচি মেনে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয়মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত

বাসায় আটকে রেখে ইডেন কলেজের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গায়ক নোবেলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর ডেমরা থানার উপপরিদর্শক এসআই মুরাদ হোসেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) ইলামনি আজ সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আগামী ২৮ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্রটি উপস্থাপন করা হবে। পরে এ সংক্রান্ত মামলা বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে।

নোবেলের আইনজীবী মোসতাক আহমেদ জানান, এই ধর্ষণ মামলার বাদীকে বিয়ে করেছেন নোবেল। তাঁরা সংসার করছেন।

গত ১৯ মে নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন ইডেন কলেজের ওই ছাত্রী। নোবেলকে গ্রেপ্তার করার পর কারাগারে পাঠানো হলে বিয়ের শর্তে তিনি জামিন পান। ১৯ জুন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বসে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে নোবেল ওই ছাত্রীকে বিয়ে করেন।

এই মামলায় অভিযোগ করা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ছাত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় নোবেলের। এরপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নোবেল তাঁর স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ছাত্রীকে ডেমরার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে আটকে রাখেন, মোবাইল ফোন ও টাকা কেড়ে নেন। এরপর ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করেন। কথামতো না চললে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ও দেখান।

অভিযোগে বলা হয়, ওই তরুণীকে ছয় মাস ধরে ডেমরার ওই বাসায় আটকে রাখা হয়, মারধর করা হতো প্রায়ই। দু-তিন জনের সহায়তায় বাদীকে চুল ধরে টেনেহিঁচড়ে একটি কক্ষে আটকে রাখেন নোবেল। ওই ঘটনার ভিডিও ছড়ালে বাদীর বাবা-মা তাঁকে চিনতে পারেন। এরপর পরিবার পুলিশের সহায়তায় তাঁকে ১৯ মে উদ্ধার করে এবং পুলিশ নোবেলকে গ্রেপ্তার করে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নোবেল বাদীকে আটক রেখে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে রাখেন। বাসায় না থাকলে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। নোবেল নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে তাঁকে মারপিট করেছেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, বাদীর অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামি নোবেল জামিনে আছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে আরও বলেছেন, বাদীকে মারধর ও ধর্ষণে আসামিকে আরও কয়েকজন সহযোগিতা করেছেন। তবে তাঁদের নাম-ঠিকানা উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে তাঁদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা সম্ভব হলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

এখন কী হবে:

নোবেলের আইনজীবী বলেছেন, নোবেল মামলার বাদীকে বিয়ে করে সংসার করছেন। তাই এই অভিযোগপত্রে নোবেলের কোনো সমস্যা হবে না। বিচারিক ট্রাইব্যুনালে বাদী আপসনামা দেওয়ার পর মামলা নিষ্পত্তি হবে। খালাস পাবেন নোবেল।

উল্লেখ্য, ভারতের সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান ‘সা রে গা মা’ দিয়ে পরিচিতি পান এই গায়ক। এর আগে মাদকে আসক্ত হয়ে সংগীত ছেড়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও শ্রোতাদের সামনে হাজির হন। সেবার নোবেল জানিয়েছিলেন, তিনি আর কখনো দর্শকদের হতাশ করবেন না। সব অতীত পেছনে ফেলে নিয়মিত গান উপহার দেবেন।

কিন্তু ২০২৩ সালে অগ্রিম টাকা নিয়ে গান গাইতে না যাওয়ায় প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল থানায় নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়। জানা যায়, ওই বছর ১৬ মে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ২০১৬-এর অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়ার প্রতারণায় অভিযোগে আটক হয়েছিলেন। সে সময় একদিন রিমান্ডেও ছিলেন এই গায়ক। পরে আপসের মাধ্যমে ওই মামলা থেকে অব্যাহতিও পান নোবেল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত