Ajker Patrika

খায়রুলের হাতে ওয়ালমার্ট, ই-বে আমাজনের ভান্ডার

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১: ০৪
খায়রুলের হাতে ওয়ালমার্ট, ই-বে আমাজনের  ভান্ডার

‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে?’ সেই কবে লিখেছিলেন কুসুমকুমারী দাশ। কবির এই প্রত্যাশা নিশ্চয় পূরণ করেছে অনেক ‘ছেলে’। তবে রাজশাহীর ছেলে খায়রুল আলমকে দেখলে কবি নিশ্চিতভাবে খুশি হতেন। যাঁর একদিন কম্পিউটার কেনারও টাকা ছিল না, তিনি এখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ফোর্বস, দ্য ইকোনমিস্টের ভাষায় ‘ফ্রিল্যান্সিংয়ের জন্য রোল মডেল’। 

খায়রুলের প্রতিষ্ঠান ‘ফ্লিট বাংলাদেশ’। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়ায় প্রধান কার্যালয়। এখানে আছে আরও দুটি অফিস। এ ছাড়া রাজশাহীতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক, নগরীর ফুলতলা, বারোরাস্তার মোড়, উপশহর আর মালদা কলোনিতে আছে একটি করে অফিস। ঢাকায়ও একটা অফিস করার পরিকল্পনা আছে খায়রুলের। সব ঠিক থাকলে আগামী নভেম্বরেই চালু হতে পারে অফিসটি। 

এই সেদিনের কথা
খায়রুল উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেন ২০০৭ সালে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। সুযোগ হয়নি। ঢাকায় গিয়ে ভর্তি হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনার খরচ জোগাতে শুরু করেন টিউশনি। পাশাপাশি খণ্ডকালীন একটা চাকরিও খুঁজতে থাকেন। এরই মধ্যে বাবার মৃত্যু। চাপ বাড়ে খায়রুলের।

২০০৮ সালের মাঝামাঝিতে খায়রুল ফ্রিল্যান্সার ডটকমে কাজ করার কথা ভাবেন। কিন্তু কম্পিউটার নেই। ৮ হাজার টাকা ধার করে কেনেন পুরোনো কম্পিউটার। এ দিয়ে শুরু। ডাটা এন্ট্রি করে চার দিনে আয় হয় ২০০ ডলার। কিন্তু পেমেন্ট পাননি। ফ্রিল্যান্সার ছেড়ে খায়রুল কাজের সন্ধান করেন ওডেক্সে। প্রতি ঘণ্টায় আয় ২৫ সেন্ট।

এভাবে ১৪ হাজার টাকা আয় করে কম্পিউটারের সক্ষমতা বাড়ান খায়রুল। তখন খায়রুলের দৈনন্দিন রুটিন ছিল, সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা ক্যাম্পাস। বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত টিউশনি। তারপর রাত জেগে ফ্রিল্যান্সিং। এরপর ফ্রিল্যান্সিংটা ঠিকঠাক বুঝে নিয়ে টিউশনি ছেড়ে দেন। এভাবে বিবিএ শেষ হয়।

২০১২ সালে খায়রুল যোগ দেন পিএইচপি গ্রুপে। তখনো রাত জেগে চলত ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ। পাশাপাশি এমবিএর পড়াশোনাও। এই সময়ে বরিশালে বদলির আদেশ হলে পিএইচপি ছেড়ে ২০১৩ সালের শেষের দিকে যোগ দেন নিটল মোটরসে। অফিসে যাওয়ার জন্য ঘুম থেকে উঠতে হতো সকাল সাড়ে ৬টায়। ফিরতেন সন্ধ্যায়। আবার রাত ৩টা পর্যন্ত ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ। ঘুমের স্বল্পতা দূর করতে অফিসে যাতায়াতের পথে বাসেই একটু ঘুমিয়ে নিতেন।

এভাবে কেটে যায় প্রায় তিন বছর। ঢাকায় থেকেও এত দিনে এলাকার কিছু তরুণকে ফ্রিল্যান্সিং বুঝিয়ে দিয়েছেন খায়রুল। এবার চাকরি ছাড়ার সাহস করলেন তিনি। সেটা ২০১৮ সালের শুরুর দিক। রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠা করলেন ফ্লিট বাংলাদেশ। এত দিন চাকরি আর ফ্রিল্যান্সিং করে যা সঞ্চয় করেছিলেন, তার সবই বিনিয়োগ করলেন সেখানে। রাজশাহীতে প্রযুক্তির বিকাশের সম্ভাবনা সামনে রেখে যাত্রা শুরু করল ফ্লিট বাংলাদেশ। 

ফ্লিটের কর্মী
ফ্লিট বাংলাদেশ কাজ শুরু করে ১০ জন ডেভেলপারকে নিয়ে। এখন সব মিলিয়ে ৬০০ জন কাজ করেন ফ্লিটে। এর মধ্যে ১৫০ জন স্থায়ী। অন্যরা খণ্ডকালীন। যে যেমন কাজ করেন, তিনি তেমন অর্থ পান। প্রত্যেকেই স্বাবলম্বী। কর্মীদের জন্য বেতনের বাইরে আছে উৎসব ভাতা, বার্ষিক বোনাস, বিভিন্ন সময় দেশ-বিদেশে যাওয়ার সুযোগ। কর্মীর বাবা-মায়ের হজে যাওয়ারও ব্যবস্থা করে ফ্লিট। আর প্রতিদিনের ‘অফিস স্ট্রেস’ কাটাতে ফ্লিটের অফিসেই আছে গানের আড্ডার সুযোগ, আছে খেলাধুলার ব্যবস্থা। 

কী কাজ করে ফ্লিট
ফ্লিট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত দেশে কোনো কাজ করা হয়নি। বিদেশে তিন শতাধিক গ্রাহক তাদের। এই তালিকায় আছে আমাজন, ই-বে, ওয়ালমার্টের মতো বিশ্বখ্যাত সব প্রতিষ্ঠান। আমাজনের ভেন্ডর ম্যানেজমেন্ট, ফুলফিলমেন্ট বাই আমাজন, আমাজন প্রাইভেট লেভেল প্রোডাক্ট, ওয়ালমার্টের স্টোর ম্যানেজমেন্ট এবং ই-বের স্টোর ম্যানেজমেন্টের কাজ করে ফ্লিট বাংলাদেশ। এর বাইরেও ফ্লিটের তৈরি করা বিভিন্ন অ্যাপস ও সফটওয়্যার ব্যবহার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশে। এবার দেশে কাজে নামবে তারা। আপাতত চারটি বিষয়ে কাজ করবে। এগুলো হলো ফিক্স, ফ্লেক্স, ফ্লিপ বাই ডটকম এবং ফ্লিপ সফট। এর মধ্যে ফিক্স দক্ষ মানুষের জন্য তৈরি করবে চাকরির বাজার। ফ্লেক্স প্রযুক্তি কাজ করবে ফেস ডিটেকশনের। 
ফ্লিপ সফট সিটি করপোরেশনের নাগরিক সেবাকে করবে প্রযুক্তিনির্ভর। অত্যাধুনিক এই প্রযুক্তি দেশে প্রথম চালু করবে ফ্লিট। আর ফ্লিপবাই ডটকম হলো একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। রাজশাহী থেকে এর যাত্রা শুরু হবে অচিরেই। ফ্লিট বলছে, ই-কমার্স নিয়ে দেশের ভেতর সমস্যা হয়েছে। আসল ই-কমার্সটা তারা দেখাতে চায়। গত মঙ্গলবার বিকেলে ফ্লিট বাংলাদেশের তৃতীয় বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নতুন এ চারটি শাখার উদ্বোধন ঘোষণা করেন। 

মনের জোরেই জয়
রাজশাহী শহরে হাতছানি ছিল বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক। সেটিকে সামনে রেখেই সাহস পেয়েছিলেন খায়রুল। কিন্তু গতিহীন ইন্টারনেট আর বিদ্যুৎ-বিভ্রাট ভাবিয়েছে তাঁকে। তারপরও সাহস নিয়েই তিনি যাত্রাটা শুরু করেন। এখন বিদ্যুতের বিভ্রাট কমেছে, ইন্টারনেটেও গতি বেড়েছে। মান ধরে রেখে কাজ করে যাওয়ায় খুশি ফ্লিটের গ্রাহকেরা। কাজে খুশি হয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গ্রাহকেরা রাজশাহীতে খায়রুলের প্রতিষ্ঠানে ঘুরে গেছেন। 

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
গত বুধবার বিকেলে ফ্লিট বাংলাদেশের প্রধান কার্যালয়ে বসে খায়রুল বলছিলেন, ‘ফ্লিট বাংলাদেশের শুরুতে সব বিনিয়োগ করে দেওয়ার পর পরিস্থিতি এমন, আমি আমার বাচ্চার দুধ কিনতে পারছিলাম না। ঠিক তখনই একজন ক্লায়েন্ট কাজ দিয়ে ২ হাজার ডলার অগ্রিম দিলেন। এভাবেই ফ্লিট বাংলাদেশের শুরু। পরিশ্রম আর চেষ্টার সমন্বয়ে পরিধিটা বড় হলো।’ খায়রুল জানালেন, ২০২৩ সালের মধ্যে আরও ২ হাজার কর্মী বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। সে লক্ষ্যেই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আশুগঞ্জ সার কারখানায় উৎপাদন চালুর দাবিতে শ্রমিক-কর্মচারীদের বিক্ষোভ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করে আবার উৎপাদন শুরুর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে কারখানার সামনে সার কারখানা শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন এই কর্মসূচি পালন করে।

গত ১ মার্চ আশুগঞ্জ সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃপক্ষ। এর ফলে প্রতিদিন ১ হাজার ১০০ টনের বেশি ইউরিয়া উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা।

আশুগঞ্জ সার কারখানা শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. বজলুর রশিদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন সার কারখানার উপমহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া, শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আবু কাউসার, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হারুনুর রশিদ, সার কারখানা শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদী মো. তানভীর রহমান প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, গুণগত মানসম্পন্ন হওয়ায় আশুগঞ্জ সার কারখানার ইউরিয়ার চাহিদা বেশি। কারখানাটি চালু রাখতে পারলে সরকারের লাভ। কিন্তু একটি কুচক্রী মহল বিদেশ থেকে সার আমদানির মাধ্যমে কমিশন-বাণিজ্য করতে বছরের বেশির ভাগ সময় আশুগঞ্জ সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখে। এতে কারখানাটি দিন দিন অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। অবিলম্বে গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে সার উৎপাদন চালু না করলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধের হুঁশিয়ারি দেন বক্তারা। সমাবেশ শেষে সার কারখানা চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামপুরে বিএনপিতে কোন্দল: যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দুই পক্ষের পৃথক শোভাযাত্রা

এম কে দোলন বিশ্বাস, ইসলামপুর
ইসলামপুরে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ এস এম আব্দুল হালিম। ছবি: আজকের পত্রিকা
ইসলামপুরে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ এস এম আব্দুল হালিম। ছবি: আজকের পত্রিকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশাকে কেন্দ্র করে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা বিএনপিতে অন্তর্কোন্দল বাড়ছে।

দলটির সহযোগী সংগঠন যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও এই দলীয় কোন্দলের ছাপ ধরা পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) যুবদলের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ইসলামপুর উপজেলা ও পৌর যুবদলের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ ও শোভাযাত্রা করা হয়।

সমাবেশ ও শোভাযাত্রায় এক পক্ষে নেতৃত্ব দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মাহমুদ বাবু। অন্য পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের (বিএইচবিএফসি) চেয়ারম্যান এ এস এম আব্দুল হালিম।

যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে গতকাল বিকেলে ৫টার দিকে ইসলামপুর উপজেলা ও পৌর বিএনপির ব্যানারে ইসলামপুর কেন্দ্রীয় অডিটরিয়াম মাঠ থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করেন দলটির একাংশের নেতা-কর্মীরা। শোভাযাত্রাটি পৌর শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে থানা মোড় বটতলা চত্বরে এসে শেষ হয়। সেখানে সমাবেশ করেন নেতা-কর্মীরা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ এস এম আব্দুল হালিম। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি নবী নেওয়াজ খান লোহানী বিপুল, পৌর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জয়নাল আবেদীন সরকার এবং পৌর যুবদলের সভাপতি এনামুল করিম ডেভিড।

এর আগে দুপুরে যুবদলের উপজেলা ও পৌর শাখার আয়োজনে পৌর শহরের সিরাজাবাদ রোডে উপজেলা বিএনপির কার্যালয় থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় দলীয় কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে এক আলোচনা সভা হয়। এতে ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মাহমুদ বাবু।

উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শেখ হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুদুজ্জামান লুলুর সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নবাব, সিনিয়র সহসভাপতি মিজানুর রহমান খান শাহীন, সহসভাপতি এ কে এম শহিদুর রহমান, পৌর বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম ঢালী, গাইবান্ধা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি নাজমুল হাসান ফেরদৌস। এতে উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও পৌর যুবদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।

যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানের নেতৃত্বদানকারী দুই নেতাই আগামী নির্বাচনে জামালপুর-২ ইসলামপুর আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চান। এ ছাড়া মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের ছোট ভাই ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম খান ফরহাদ এবং ছাত্রদল ও যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য, উপজেলা বিএনপির সদস্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী মোহাম্মদ সেলিম মিয়া। তাঁরাও মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আর্কষণ করতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন।

পৃথকভাবে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন প্রসঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এ এস এম আব্দুল হালিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলের কর্মসূচি পালন করতে পারলে ভালো। তবে গণতান্ত্রিক দেশে একটি দলের মধ্যে পৃথক পৃথকভাবে দলীয় কর্মসূচি পালন হতেই পারে।’

ইসলামপুরে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মাহমুদ বাবু। ছবি: আজকের পত্রিকা
ইসলামপুরে যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মাহমুদ বাবু। ছবি: আজকের পত্রিকা

উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য সুলতান মাহমুদ বাবু বলেন, ‘আমি প্রায় চার দশক ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এখানকার বিএনপির নেতৃত্বে দলের পক্ষ থেকে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলের কাজ করতে আমাদের ঘাটতি নেই। সবাই এক ব্যানারে দলের কর্মসূচি পালন করার মধ্যে আনন্দই আলাদা। অনুষ্ঠানে সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু কেউ যদি আলাদাভাবে দলের কর্মসূচি পালন করেন, এ ক্ষেত্রে কী করার থাকে।’

প্রসঙ্গত, দলীয় অন্তর্কোন্দলের মুখে গত ৩ সেপ্টেম্বর উপজেলা ও পৌর বিএনপির ব্যানারে পৃথক সমাবেশ ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়। এতে এক পক্ষে নেতৃত্ব দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি সুলতান মাহমুদ বাবু। অন্য পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ এস এম আব্দুল হালিম। এ ছাড়া আরেকটি পক্ষে নেতৃত্ব দেন ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম খান ফরহাদ। এ নিয়ে ৩ সেপ্টেম্বর আজকের পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে খবর প্রকাশিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে যুবককে সাজা, ভেকু মেশিন জব্দ

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি  
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। ছবি: আজকের পত্রিকা
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় উপজেলা প্রশাসন। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে মো. হৃদয় আহমেদ (২৬) নামের এক যুবককে অর্থদণ্ড ও কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় বালু তোলার কাজে ব্যবহৃত একটি এক্সকাভেটর (ভেকু মেশিন) জব্দ করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত উপজেলার কানিহারী ইউনিয়নের জিলকী বটতলা এলাকায় উপজেলা প্রশাসন এই অভিযান চালায়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন ত্রিশাল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান।

সাজাপ্রাপ্ত হৃদয় জিলকী বটতলা এলাকার মো. হেলাল উদ্দিনের ছেলে। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাঁকে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ অনুযায়ী ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন।

এসি ল্যান্ড মাহবুবুর রহমান বলেন, জনস্বার্থে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে, যাতে পরিবেশ ও নদী রক্ষা করা যায় এবং অবৈধ বালু উত্তোলন সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গোপনে সহপাঠীদের অপ্রীতিকর ছবি তুলে সিনিয়র ভাইকে পাঠাতেন বাকৃবি ছাত্রী

বাকৃবি প্রতিনিধি 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এক ছাত্রীর বিরুদ্ধে গোপনে নারী সহপাঠীদের ছবি তুলে এক সিনিয়র ছাত্রের কাছে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল মঙ্গলবার ওই ছাত্রীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে ডিনের সঙ্গে বৈঠক করেন অভিযোগকারীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত ছাত্রী বাকৃবি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। তিনি তাঁর নারী সহপাঠীদের ঘুমন্ত বা ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি গোপনে মোবাইল ফোনে তুলতেন। তাঁর কাছ থেকে যিনি ছবিগুলো গ্রহণ করতেন, তিনি ওই ছাত্রী যে বিভাগে পড়েন, সেই বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র এবং বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচারার হিসেবে কর্মরত।

ওই ছাত্রী অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা অভিযোগ নিয়ে আমার কাছে আসে। আমরা অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে ছবি আদান-প্রদানের প্রমাণ পাই। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি স্বীকার করেন যে তিনি মেয়েদের বিভিন্ন ছবি তুলতেন এবং তা এক সিনিয়র ভাইয়ের কাছে পাঠাতেন।’ তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মোবাইলটি সিলগালা অবস্থায় ডিন অফিসে সংরক্ষিত রয়েছে। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ ও নিরোধ কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হবে।

অভিযুক্ত সিনিয়র শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি মেয়েটির সঙ্গে দীর্ঘদিন কথা বলেছি। সে যেসব ছবি পাঠিয়েছে, আমি তা সংরক্ষণ করিনি। আমার কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না; তবে আমি আমার কাজের জন্য অনুতপ্ত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যা সিদ্ধান্ত নেবে, আমি তা মেনে নেব।’

অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর সহপাঠীদের ভাষ্য, ইন্টার্নশিপ চলাকালে ওই ছাত্রীর সন্দেহজনক আচরণ লক্ষ করে তাঁরা তাঁকে নজরদারিতে রাখেন। পরে নিশ্চিত হন যে ওই ছাত্রী মেয়েদের ঘুমন্ত বা অপ্রস্তুত অবস্থার ছবি তুলতেন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পর তাঁরা বিভাগীয় শিক্ষকদের অবহিত করেন এবং কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত