Ajker Patrika

পৌরসভা থেকে ব্যক্তিগত গাড়ির তেল নিয়ে ফেঁসে গেলেন সাবেক মেয়র, দুদকের মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
মুক্তার আলী। ছবি: সংগৃহীত
মুক্তার আলী। ছবি: সংগৃহীত

সরকারকে না জানিয়ে ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য জ্বালানি তেল খরচ করে ফেঁসে গেলেন রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভার সাবেক মেয়র মুক্তার আলী। নিয়মবহির্ভূতভাবে পৌর তহবিল থেকে তেল খরচ বাবদ ১৪ লাখ ৫২ হাজার টাকা নেওয়ায় আজ মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ছাড়া ভুয়া কর্মচারী নিয়োগ দেখিয়ে বেতন-ভাতা তুলে নেওয়ায় আরও একটি মামলা করা হয়েছে।

দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ে মামলা দুটি করা হয়। মামলা দুটির বাদী হয়েছেন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমান। আসামি মুক্তার আলী আড়ানী পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।

গত ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা রয়েছে। বর্তমানে তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন।

দুদক জানিয়েছে, আড়ানী পৌরসভায় কোনো সরকারি জিপ গাড়ি ও চালক নেই। তাই মেয়র থাকাকালে তিনি ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার ব্যবহার করতেন। সে গাড়ির জন্য মুক্তার আলী ২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন ৭ লিটার করে জ্বালানি তেলের খরচ নিয়েছেন পৌর তহবিল থেকে। মোট ১ হাজার ৮৬৫ দিনের জন্য ১৩ হাজার ৫৫ লিটার তেল খরচ নেওয়া হয়েছে। প্রতি লিটার তেলের খরচ ধরা হয়েছে ৯৬ টাকা ১০ পয়সা। এতে তিনি পেয়েছেন ১২ লাখ ৫৪ হাজার ৫৮৫ টাকা। এ ছাড়া তিনি ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৫ টাকা অগ্রিম নিয়েছেন। তবে অগ্রিমের বিপরীতে কোনো ভাউচারও দাখিল করেননি বা সমন্বয় করেননি।

দুদক আরও জানিয়েছে, পরিপত্র অনুযায়ী, ব্যক্তিগত গাড়ি অফিসের কাজে ব্যবহার করতে চাইলে তা পৌর পরিষদ ও সরকারকে অবহিত করতে হবে। সে ক্ষেত্রে তিনি প্রতিদিন ৭ লিটার তেল পাবেন। কিন্তু মুক্তার আলী গাড়ি ব্যবহার দেখিয়ে পৌর তহবিল থেকে ১৪ লাখ ৫২ হাজার টাকা গ্রহণ করলেও পৌর পরিষদ কিংবা সরকারকে কিছু জানাননি।

কোনো লগ বইও লিপিবদ্ধ করেননি। পরিপত্র না মেনে জ্বালানি তেলের টাকা নেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়েছে।

অন্যদিকে মুক্তার আলী ২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মেয়াদে পরিচ্ছন্নতা কর্মচারী হিসেবে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নুরুজ্জামান নাইম, শামীম আহাম্মেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, সঞ্জিব কুমার সাহা, আবু সাঈদ নামের পাঁচজনকে নিয়োগ দেখানো হয়। তাঁদের প্রত্যেকের বেতন দেখানো হয় ৯ হাজার টাকা। বাস্তবে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি। কিন্তু তাঁদের বেতন-ভাতা দেখিয়ে ৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা তুলে নেন তৎকালীন মেয়র মুক্তার।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন জানান, ভুয়া নিয়োগ দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে এবং তেলের নামে নিয়ম না মেনে টাকা নিয়ে মুক্তার আলী দণ্ডবিধির ৪০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি আদালতকে অবহিত করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চুরি ঠেকাতে রাতে চাতাল পাহারা, ব্যবসায়ীর রহস্যজনক মৃত্যু

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ভুট্টা ও ধানের বস্তা চুরি ঠেকাতে রাতে নিজের চাতালে পাহারা দিতে গিয়ে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছে এক প্রবীণ ব্যবসায়ীর। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের মথুরাপুর মাস্টারপাড়ার কাদের চাতালে আজ শুক্রবার ভোরে ওই ব্যবসায়ীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত ব্যবসায়ীর নাম খায়রুল ইসলাম (৭২)। তিনি ওই এলাকার আইয়ুব আলীর ছেলে। তিনি চাতালটি ভাড়া নিয়ে ভুট্টা ও ধানের ব্যবসা করতেন।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি গোডাউন থেকে নিয়মিতভাবে ভুট্টা ও ধানের বস্তা চুরি হচ্ছিল। এতে অতিষ্ঠ হয়ে খাইরুল ইসলাম নিজেই চোর ধরার জন্য রাত্রিকালীন পাহারাদারের কাজ শুরু করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে তিনি চাতালে আসেন।

আজ ভোর ৩টা নাগাদ কাদের চাতালের দায়িত্বে থাকা নাইট গার্ড চাতালে একটি মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে অন্যান্য নাইট গার্ডকে খবর দেন। খবর পেয়ে খাইরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে আসেন এবং তাঁকে শনাক্ত করেন। পরে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।

মৃত ব্যবসায়ীর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জানান, খাইরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। তাঁদের ধারণা, চাতালে অবস্থান করার সময় তিনি স্ট্রোক অথবা সুগার (ডায়াবেটিস) কমে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পড়ে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।

রহিমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান হান্নু জানান, খাইরুল ইসলাম সাবেক সুগার মিলে কর্মরত ছিলেন। কয়েক বছর আগে তিনি অবসর নেন। অবসরের পর তিনি সিজনভিত্তিক ধান, গম ও ভুট্টার ব্যবসা করতেন। চেয়ারম্যান নিশ্চিত করেন, তিনি ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার উপপরিদর্শক এমদাদুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করেছি। সুরতহাল রিপোর্টে নিহতের শরীরে কোনো রকম আঘাত বা অস্বাভাবিক কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পরিবারের পক্ষ থেকেও কোনো অভিযোগ নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিদ্যুতায়িত হয়ে বাবা-ছেলের মৃত্যু

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি 
ঘটনাস্থলে লোকজনের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঘটনাস্থলে লোকজনের ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে সেচযন্ত্র চালু করতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে বাবা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের পশ্চিম বাছহাটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

মৃত ব্যক্তিরা হলো মো. শহিদুল ইসলাম (৪০) ও তাঁর ছেলে মো. শিয়াব মিয়া (১৪)।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সর্বানন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জহুরুল ইসলাম। মৃত ব্যক্তিদের স্বজনদের বরাতে তিনি বলেন, ধানখেতে পানি দেওয়ার জন্য সকাল ১০টার দিকে বিদ্যুৎ-চালিত সেচযন্ত্র নিয়ে পুকুরপাড়ে যায় বাবা ও ছেলে। ঘণ্টাখানেক পরে শিয়াবের মা ওই পুকুরপাড়ে যান। তিনি সেখানে ছেলের লাশ দেখতে পেয়ে চিৎকার করেন। পরে স্থানীয় লোকজন এসে শিয়াবের লাশ বাড়িতে নেন। এর কিছুক্ষণ পরে শহিদুল ইসলামের খোঁজে পুকুরপাড়ে আবারও যান তাঁর স্বজনেরা। তখন তাঁর লাশও পুকুরে পাওয়া যায়।

সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল হাকিম আজাদ বলেন, ‘বিদ্যুৎচালিত সেচপাম্পে বিদ্যুতায়িত বাবা ও ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাসর রাত শেষে মিলল বরের ঝুলন্ত লাশ

ফরিদপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ৩০
পিসনাইল গ্রামে যুবকের মৃত্যুর খবরে এলাকাবাসীর ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
পিসনাইল গ্রামে যুবকের মৃত্যুর খবরে এলাকাবাসীর ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় জামাল ফকির (২৮) নামের নববিবাহিত এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে উপজেলার বল্লভদী ইউনিয়নের পিসনাইল গ্রামে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার বিয়ে করে বউ নিয়ে আসেন জামাল ফকির। বাসর রাত শেষে আজ সকালে বসতবাড়ির আধা কিলোমিটার দূরে ফাঁকা মাঠে জামালের লাশ পাওয়া যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে।

ওই নববধূ বলেন, ‘সকালে মানুষের চিৎকার শুনে দরজা খুলতে চাই, দেখি দরজাটা বাইরে থেকে লাগানো। পরে কেউ দরজা খুলে দিলে দেখি, আমার স্বামী ঘরের বাইরে জমির মধ্যে পড়ে আছে।’

মৃত জামালের বড় ভাই জালাল ফকির বলেন, ‘আমার ভাইয়ের মৃত্যুর বিষয়টি খুবই রহস্যজনক। কারও সঙ্গে কোনো শত্রুতা ছিল না। ঠিক কী কারণে এমন ঘটনা ঘটল, বুঝে উঠতে পারছি না।’

সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ওই ছেলে বিয়ে করেন। আজ সকালে বাড়ির পাশে একটি বাঁশের আড়া থেকে তার ঝুলন্ত লাশ দেখতে পায় পরিবার। ধারণা করা হচ্ছে, যুবক আত্মহত্যা করেছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চমেক হাসপাতালে এসি বিস্ফোরণ: দগ্ধ ৩ কর্মচারীর একে একে সবাই চলে গেলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ। ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ভবনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) মেরামতের সময় বিস্ফোরণে দগ্ধ কর্মচারী মো. তানভীরও মারা গেছেন। আজ শুক্রবার দুপুরে চমেক হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তিনি মারা যান।

তানভীর দুর্ঘটনার পর থেকে ১১ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ নিয়ে এসি বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত তিন কর্মচারীর সবাই একে একে মারা গেলেন।

তানভীর চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়া থানার ডিসি রোড এলাকায় থাকতেন। চমেক হাসপাতালে দায়িত্বরত পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক আলাউদ্দিন তালুকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে ১৩ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে চমেক হাসপাতালের একটি সাততলা ভবনের ছাদে এসি মেরামতের সময় সেটি বিস্ফোরিত হয়। এ সময় শওকত ওসমান নামের একজন কর্মচারী ছাদ থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যান। অপর দুজনের মধ্যে মিশকাত ও তানভীর ছাদে দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে পড়ে ছিলেন। পরে তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তির চার ঘণ্টা পর আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রথমে শওকত মারা যান। পরে ১৭ অক্টোবর মিশকাত ও আজ দুপুরে তানভীরও চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা যান। তাঁরা গণপূর্ত বিভাগের অধীনে হাসপাতালের টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কর্মচারীদের সবাই চট্টগ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁদের বয়স ২৮ থেকে ৩২ বছরের মধ্যে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত