Ajker Patrika

কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ছাত্রীকে পরীক্ষায় অকৃতকার্য করায় আটক শিক্ষক

নাটোর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২৪, ২০: ৩০
কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ছাত্রীকে পরীক্ষায় অকৃতকার্য করায় আটক শিক্ষক

নাটোরে কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে পরীক্ষায় অকৃতকার্য করার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকের বিরুদ্ধে। আজ সোমবার দুপুরে কলেজে উপস্থিত হয়ে ওই ছাত্রী লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে ওই শিক্ষককে হেফাজতে নিয়েছে সেনাবাহিনী।

অভিযুক্ত সেলিম রেজা (৩৭) নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা (এনএস) সরকারি কলেজের শিক্ষক। তিনি বাংলা বিভাগের প্রভাষক। সেলিম রেজার মোবাইল ফোন থেকে ওই ছাত্রীকে পাঠানো আপত্তিকর লিখিত কথোপকথন পাওয়া গেছে।

লিখিত অভিযোগে জানানো হয়, অভিযুক্ত শিক্ষক সেলিম রেজা কলেজের অদূরে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে প্রাইভেট পড়াতেন। তিন মাস আগে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী সেখানে পড়ার সময় সেলিম রেজা তাকে কুপ্রস্তাব দেন। তিনি রাজি না হওয়ায় ক্লাসের পরীক্ষায় অকৃতকার্য করার হুমকিও দেন। সম্প্রতি প্রকাশিত একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় বাংলা বিষয়ে অকৃতকার্য হন ওই ছাত্রী। এ নিয়ে সেলিম রেজার সঙ্গে ওই ছাত্রী দেখা করলে তাকে বাসায় ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে বলেন তিনি।

গতকাল রোববার প্রাইভেট কোচিংয়ে দেখা করতে গেলে সেলিম রেজা তাকে আবারও কুপ্রস্তাব দেন ও শ্লীলতাহানি করেন। এতে দ্রুত ওই ছাত্রী কোচিং ত্যাগ করে চলে আসে। আজ সোমবার সকালে লিখিত অভিযোগ নিয়ে কলেজে গেলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন তা গ্রহণ করেন। খবর পেয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কলেজে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে তারা সেলিম রেজাকে তাদের হাতে তুলে দিতে বলে। পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশঙ্কায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সেনাবাহিনীর সদস্যদের জানান। পরে সেনাবাহিনী এসে তাঁকে হেফাজতে নেয়।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন বলেন, শিক্ষক সেলিম রেজার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগটি নেওয়া হয়েছে। অভিযোগটি তদন্ত করা হবে। আপাতত তাঁকে সেনা হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান ঘটনার জানান, বিষয়টি সেনাবাহিনী দেখছে। তবে ভুক্তভোগী ছাত্রী থানায় এখনো লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পিস্তল দিয়ে বাবলার পিঠে এলোপাতাড়ি গুলি করে মুহূর্তেই সটকে পড়ে মুখোশধারীরা

গত সেপ্টেম্বরেই বিয়ে করেন, বিএনপি নেতার পাশে গুলিতে নিহত কে এই বাবলা

পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটিতে মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনা: প্রেস সচিব

সাবেক সেনাসদস্যকে ‘হানি ট্র‍্যাপে’ ফেলে চার লাখ টাকা আদায়, গ্রেপ্তার ২

সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এস আলমের লোকজনও এখন নমিনেশন পাচ্ছে: কর্নেল অলি

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
গতকাল রাতে বরমা কলেজ মাঠে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন এলডিপি সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ (বীর বিক্রম)। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল রাতে বরমা কলেজ মাঠে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন এলডিপি সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ (বীর বিক্রম)। ছবি: আজকের পত্রিকা

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ (বীর বিক্রম) বলেছেন, ‘হাসিনা বাংলাদেশটাকে শেষ করে দিয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখনো হাসিনার লোকজন সক্রিয় রয়েছে। কেউ এস আলমের মাধ্যমে, কেউ অন্যভাবে। ইদানীং শুনতেছি, এস আলমের লোকজনকেও নমিনেশন দেওয়া হচ্ছে। এটা আমার কথা না, জনগণের কথা। আমিও তাদের সঙ্গে একমত।’ গতকাল বুধবার (৫ নভেম্বর) রাতে চন্দনাইশ উপজেলা গণতান্ত্রিক স্বেচ্ছাসেবক দলের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে স্থানীয় বরমা কলেজ মাঠে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ আরও বলেন, ‘দেশের অবস্থা ভালো না। সবকিছুর দাম হু হু করে বাড়ছে। কারণ, হাসিনা বাংলাদেশে কিছুই রাখে নাই। ১৩৪ বিলিয়ন ডলার লুট করে নিয়ে গেছে। এ টাকা যদি বাংলাদেশে থাকত, তাহলে দেশ আজ পৃথিবীর অন্যতম ধনী দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে। কিছুই রাখে নাই। সব নিয়ে গেছে হাসিনা।’

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে অলি আহমদ বলেন, ‘আপনি হেলাফেলা করে দেশ পরিচালনা করলে হবে না। লটারি মন্ত্রীদেরকে নিয়ে আপনি দেশ চালাতে পারবেন না। এ রকম লটারি মন্ত্রী দিয়ে একটা দেশ পরিচালনা করা যায়, তা আমার ৬০ বছরের জীবনে আমি শুনি নাই।’ তিনি তাচ্ছিল্য করে বলেন, ‘অবশ্য লটারি মন্ত্রী দিয়ে দেশ পরিচালনার জন্য তিনি আরেকটা নোবেল পুরস্কারও পেতে পারেন। কারণ, তিনি এর আগে মাইক্রোক্রেডিটের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘মানুষের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করুন। সাধারণ মানুষ এখন অসহায়।’

কর্নেল অলি বলেন, ‘দেশের অবস্থা ভালো না। রক্তপাত হচ্ছে। বিএনপির নমিনেশন নিয়েও গোলাগুলি হয়েছে, মারামারি হয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশ একটা অশান্ত পরিবেশের মধ্যে আছে। বিভিন্ন কারণে এই অশান্ত পরিবেশ। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখল, তদবির ইত্যাদি নানামাত্রিক সমস্যায় মানুষ এখন কাহিল। এগুলো সমাধান হওয়া দরকার। গরিবদের ওপর জুলুম করা চলবে না। সরকারের দায়িত্ব এগুলোর সমাধান করা।’

সভায় সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক স্বেচ্ছাসেবক দল চন্দনাইশ উপজেলার সভাপতি জসিম উদ্দীন। সাধারণ সম্পাদক মো. মোরশেদ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা এলডিপির সভাপতি শিল্পপতি এম এয়াকুব আলী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পিস্তল দিয়ে বাবলার পিঠে এলোপাতাড়ি গুলি করে মুহূর্তেই সটকে পড়ে মুখোশধারীরা

গত সেপ্টেম্বরেই বিয়ে করেন, বিএনপি নেতার পাশে গুলিতে নিহত কে এই বাবলা

পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটিতে মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনা: প্রেস সচিব

সাবেক সেনাসদস্যকে ‘হানি ট্র‍্যাপে’ ফেলে চার লাখ টাকা আদায়, গ্রেপ্তার ২

সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চট্টগ্রামে বিএনপি নেতার গণসংযোগে গুলির ঘটনা দুই সন্ত্রাসীর বিরোধে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ২৯
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে বিএনপির নির্বাচনী গণসংযোগে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণে সরোয়ার হোসেন বাবলা (৪৩) নিহতের ঘটনাটি রাজনৈতিক কারণে ঘটেনি। দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারের পুরোনো বিরোধের জেরে ঘটেছে বলে দাবি পুলিশের। আর নিহত ব্যক্তির পরিবারের দাবি, দীর্ঘ পরিকল্পনা করে বাবলাকে হত্যা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ জানান, হামলায় টার্গেট ছিলেন বাবলা। চট্টগ্রাম-৮ আসনের বিএনপি প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর ওপর হামলার উদ্দেশ্য ছিল না।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলীর খন্দকারপাড়া এলাকায় চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী ও চান্দগাঁও) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এবং চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগের সময় এই গুলিবর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। এ সময় এরশাদ উল্লাহ স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে প্রচারপত্র বিলি করছিলেন। হঠাৎ এক যুবক কর্মীদের ভিড়ে ঢুকে খুব কাছ থেকে বাবলার ঘাড়ে গুলি করে। পরপর সাত-আটটি গুলিতে ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়েন বাবলা।

গুলিতে আহত হন এরশাদ উল্লাহ, স্বেচ্ছাসেবক দলের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের যুগ্ম আহ্বায়ক ইরফানুল হক (শান্ত), বিএনপি কর্মী আমিনুল হক ও মুর্তজা হক। তাঁদের নগরের এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালটির চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ইরফানুলের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া এরশাদ উল্লাহর পেটে ছররা গুলি লাগে, তবে তিনি শঙ্কামুক্ত।

গতকাল রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে, হামলার টার্গেট ছিলেন বাবলা। তাঁর সঙ্গে বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এই দ্বন্দ্ব থেকেই হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত।

পুলিশ জানায়, বাবলার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্র, হত্যা ও চুরি-ডাকাতিসহ ১৫টি মামলা রয়েছে। তিনি একাধিকবার জেল খেটেছেন। গত মার্চেও বাকলিয়া এক্সেস রোডে তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়, তখন দুজন নিহত হন।

দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের বিরোধে ঘটনাটি ঘটলেও নির্বাচনের আগে এমন সন্ত্রাসী হামলা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মনে করছে পুলিশ। এসব কথা জানিয়ে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, ‘সামনে বিএনপি-জামায়াতসহ যেকোনো দল জনসভা বা গণসংযোগের অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে পুলিশকে জানাতে হবে। আমরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেব।’

হাসিব আজিজ আরও বলেন, হামলার ঘটনায় প্রাথমিকভাবে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। হামলাকারীদের শনাক্তে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হবে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বাবলা এক মাস আগে বিয়ে করেছিলেন। বিয়েতে বিএনপি নেতা এরশাদ উল্লাহসহ কয়েকজন স্থানীয় নেতা ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে তিনি বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হতে শুরু করেন।

স্থানীয় ব্যক্তিদের মতে, বাবলা রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় এলাকায় প্রভাব বিস্তারের লড়াইয়ে যুক্ত ছিলেন।

বায়েজিদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, ‘ঘটনাটি রাজনৈতিক নয় বলে আমরা নিশ্চিত। এটি বাবলা ও ছোট সাজ্জাদ গ্রুপের বিরোধেরই পরিণতি। জড়িতদের শনাক্তে একাধিক টিম কাজ করছে।’

বাবলার পরিবারের সদস্যদের দাবি, পরিকল্পিতভাবে হত্যার ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। এ জন্য বহুবার বাবলাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।

নিহত বাবলার ভাই আজিজ হোসেন দাবি করেন, ‘ছোট সাজ্জাদের লোকজনই পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইকে হত্যা করেছে। অনেক দিন ধরেই ওরা হুমকি দিচ্ছিল—“যা খেয়ে নে, সময় খুব কম।” আমরা ভেবেছিলাম এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগে কোনো বিপদ হবে না, কিন্তু ওরা সুযোগ নিয়েছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গুলি চালানো যুবকেরা গণসংযোগে আসা কর্মীদের সঙ্গেই মিশে ছিল। তারা একটি মাইক্রোবাসে করে এসে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

তবে বিএনপির দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে দলীয় কোনো সম্পর্ক নেই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘গণসংযোগে শত শত মানুষ অংশ নিয়েছিল। বাবলার সঙ্গে অন্য সন্ত্রাসী দলের বিরোধের জেরেই হামলা হয়েছে। সরকারপক্ষ এই ঘটনাকে রাজনৈতিক রং দিতে চাইলে তা হবে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পিস্তল দিয়ে বাবলার পিঠে এলোপাতাড়ি গুলি করে মুহূর্তেই সটকে পড়ে মুখোশধারীরা

গত সেপ্টেম্বরেই বিয়ে করেন, বিএনপি নেতার পাশে গুলিতে নিহত কে এই বাবলা

পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটিতে মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনা: প্রেস সচিব

সাবেক সেনাসদস্যকে ‘হানি ট্র‍্যাপে’ ফেলে চার লাখ টাকা আদায়, গ্রেপ্তার ২

সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চট্টগ্রামে নবীন-প্রবীণের মিশেলে বিএনপির মনোনয়ন: বহিষ্কৃতরাও পেলেন টিকিট

সবুর শুভ, চট্টগ্রাম    
চট্টগ্রামে নবীন-প্রবীণের মিশেলে বিএনপির মনোনয়ন: বহিষ্কৃতরাও পেলেন টিকিট

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে ২৩৭ জনের মনোনয়ন ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে ১০টিতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। তবে বাকি ছয় আসনে কারা দলের প্রার্থী হচ্ছেন, তা এখনো পরিষ্কার করা হয়নি, যা নিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

ঘোষিত ১০টি আসনে নবীন ও প্রবীণ নেতাদের সমন্বয় ঘটানো হয়েছে। যদিও জোটবদ্ধ নির্বাচনের সম্ভাবনা থাকায় ১৬টি আসনেই ভোটের দরজা খোলা রাখা হয়েছে, কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় অনেক ত্যাগী নেতা মনোনয়ন থেকে ছিটকে গেছেন। অন্যদিকে বিতর্কিত কাজের কারণে বহিষ্কৃত নেতারা যেমন মনোনয়ন পেয়েছেন, তেমনি গুরুকে টপকে শিষ্যও পেয়েছেন মনোনয়ন। রাজনীতিবিদ বাবার নামডাকের ওপর ভর করে কয়েকজনের কপাল খুললেও মনোনয়ন না পাওয়ায় ভাঁজ পড়েছে কয়েকজনের।

চট্টগ্রামে ঘোষিত মনোনয়নপ্রাপ্তদের মধ্যে পাঁচজন নবীন ও পাঁচ প্রবীণ প্রার্থী রয়েছেন। যেসব আসনে বিএনপি প্রবীণের ওপর আস্থা রেখেছে, সেগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়তলী-হালিশহর-খুলশী) আসনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন, চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও-পাঁচলাইশ ও বায়েজিদ (আংশিক) আসনে নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম ও চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সরওয়ার জামাল নিজাম। এর মধ্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তিনবার এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরশাদ উল্লাহ ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে হেরে যান। নুরুল আমিন ও এনামুল হক এনাম ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন বিএনপির। সরওয়ার জামাল নিজাম ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। এ ছাড়া তিনবার এমপি হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন।

এ বিষয়ে সরওয়ার জামাল নিজাম বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ নেতারা আমাদের মনোনয়ন উপহার দিয়েছেন। আমি বিপুল ভোটে ধানের শীষ প্রতীককে বিজয়ী করে বিএনপিকে এই আসন উপহার দেব ইনশা আল্লাহ।’

এরশাদ উল্লাহ বলেন, ‘এই মনোনয়ন আমার একার না, এটা চট্টগ্রাম-৮ আসনের সকল নেতা-কর্মী এবং যাদের ত্যাগ আছে তাদের সকলের মনোনয়ন। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আসনটি আমি চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনকে উপহার দিতে চাই।’

এদিকে পাঁচ নবীনের ওপর আস্থা রাখা আসনগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম-২ (ফটিছড়িতে) আসনে উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার আলমগীর, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড ও চসিকের ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ড) আসনে উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী সালাউদ্দিন, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পাকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনের মাঠে তাঁরা নতুন মুখ।

এই বিষয়ে সরওয়ার আলমগীর বলেন, ‘শুরু থেকে ফটিকছড়ির মাটি ও মানুষের রাজনীতি করে আসছি। ফটিকছড়িতে তৃণমূলের বিজয় হয়েছে।’

কে হাসবে ৬ আসনে

চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ), চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান), চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি ও বাকলিয়া), চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর, পতেঙ্গা, ডবলমুরিং, ইপিজেড ও সদরঘাট), চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-দোহাজারী) এবং চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া আংশিক) আসনে দলের কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-৯ আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানের নাম গত সোমবার (৩ নভেম্বর) ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে আবার স্থগিত করা হয়।

এই বিষয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবের রহমান শামীম জানান, চট্টগ্রাম-১৪ আসনটি জোটের জন্য রাখা হয়েছে। বাকি আসনগুলোতে দ্বিতীয় ধাপে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।

মনোনয়ন দৌড়ে পিছিয়ে ত্যাগীরা

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে আলোচিত চেয়ারম্যান লিয়াকত আলীর কপালে মনোনয়ন জোটেনি। আওয়ামী লীগের আমলে মামলায় জর্জরিত এই চেয়ারম্যান মাটি কামড়ে পড়েছিলেন এলাকায়। তৃণমূলে তাঁর শক্ত অবস্থানও রয়েছে। ৩৪টি মামলা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে মনোনয়নবঞ্চিত হন প্রয়াত সাবেক হুইপ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা। আওয়ামী লীগ আমলে জঙ্গি তকমা পেয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের তরুণ আইনজীবী ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা। রিমান্ডে তাঁকে অকথ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছিল বলে জানান ব্যারিস্টার শাকিলা। ১০ মাসের কারাজীবন পারিবারিক ও রাজনৈতিক জীবনকে পুরোই ওলটপালট করে দিয়েছিল। ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট শাকিলা ফারজানাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

শাকিলা ফারজানা বলেন, ‘জেলজীবনে আমি অমানবিক নির্যাতন সহ্য করেছি, যা অবর্ণনীয়।’

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনটি মূলত: প্রয়াত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পারিবারিক আসন হিসেবে পরিচিত। রাউজানে ওই পরিবারের অবদান এখনো মনে করেন অনেকে। তা ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। তাঁর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে করা হয় গুম। এই আসনের সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীও (প্রয়াত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই) ওই সময় দেশত্যাগে বাধ্য হন। এলাকায় তাঁদের প্রভাব-প্রতিপত্তি রয়েছে বেশ। তিনি মনোনয়ন পাননি। এই আসনে আছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার। উভয়ের মধ্যে দলীয় গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বের কারণে গত ১৩ মাসে লাশ পড়েছে ১৩টি।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে মনোনয়ন না পাওয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আসলাম চৌধুরীর জন্ম থেকে জ্বলছি অবস্থা। দলের জন্য ত্যাগীদের প্রথম কাতারের সদস্য তিনি। ২০১৬ সালের ১৬ মে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে আসলাম চৌধুরীকে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে ৭৬টি রাজনৈতিক মামলা হয়। ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট আট বছর তিন মাস কারাভোগ করে বের হওয়া আসলাম চৌধুরী তৃণমূলের নেতা হিসেবে এলাকায় নিজেকে প্রতিস্থাপন করেছেন।

শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য বহিষ্কার ও মনোনয়ন

২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পটিয়ার এনামুল হক এনামকে শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিল। স্থগিত করা হয়েছিল প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পর্যায়ের পদ। একই বছর ২৫ ডিসেম্বর এক চিঠিতে জেলা বিএনপি ওই দুই নেতার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে দলীয় পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

এর মধ্যে এনামুল হক এনাম বিএনপির মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন। আবু সুফিয়ানের মনোনয়ন ঘোষণা করার পর আবার স্থগিত রাখা হয়েছে। একইভাবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও মিরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। ২৪ অক্টোবর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়। এর আগে গত ২৯ জুলাই নুরুল আমিন চেয়ারম্যানকে বহিষ্কার করা হয়। সেই নুরুল আমিন চেয়ারম্যানও বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন।

এ বিষয়ে এনামুল হক এনাম বলেন, ‘দল যখন যেই সিদ্ধান্ত দেয় তা শিরোধার্য। এবার পটিয়া আসন বিএনপির ঝুলিতে দিতে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করব।’

গুরু বঞ্চিত মনোনয়ন শিষ্যের

সীতাকুণ্ড তথা উত্তর জেলা বিএনপির রাজনীতিতে গুরু-শিষ্য হিসেবে পরিচিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা লায়ন আসলাম চৌধুরী ও উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী সালাউদ্দিন। কিন্তু মনোনয়নবঞ্চিত আসলাম চৌধুরীকে ছাপিয়ে বিএনপি মনোনয়ন ঘোষণা করেছে শিষ্য কাজী সালাউদ্দিনকে সামনে রেখে।

এই বিষয়ে কাজী সালাউদ্দিন বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন আমার ওপর আস্থা রেখেছেন। আমি সীতাকুণ্ড আসন বিএনপিকে উপহার দিয়ে সেই আস্থার প্রতিদান দিতে চাই।’

বড় ভাইয়ের শুভকামনা

চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর দুই ছেলের মধ্যে মনোনয়ন কে পাচ্ছেন, তা নিয়ে ছিল বেশ উৎকণ্ঠা। এলাকায় এ নিয়ে আলোচনা ছিল। পরে বিএনপির ঘোষিত মনোনয়নে ছোট ছেলে মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পাকে নিশ্চিত করা হয়। এতে বঞ্চিত বড় ছেলে ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম চৌধুরী আলমগীর ছোট ভাইকে বুকে জড়িয়ে ধরে শুভকামনা জানান।

জোটগত ভোট

জোটগতভাবে নির্বাচন করলে চট্টগ্রাম-১৪ আসনটি (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া আংশিক) শরীক দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এলডিপি) ছেড়ে দেবে বিএনপি। তাই এই আসনে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি বলে জানা গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পিস্তল দিয়ে বাবলার পিঠে এলোপাতাড়ি গুলি করে মুহূর্তেই সটকে পড়ে মুখোশধারীরা

গত সেপ্টেম্বরেই বিয়ে করেন, বিএনপি নেতার পাশে গুলিতে নিহত কে এই বাবলা

পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটিতে মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনা: প্রেস সচিব

সাবেক সেনাসদস্যকে ‘হানি ট্র‍্যাপে’ ফেলে চার লাখ টাকা আদায়, গ্রেপ্তার ২

সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

শেষতক বাঁচতে না পারা ‘সন্ত্রাসী’ বাবলার উত্থান যেভাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ৩০
স্ত্রীর সঙ্গে নিহত সরওয়ার হোসেন বাবলা। ছবি: সংগৃহীত
স্ত্রীর সঙ্গে নিহত সরওয়ার হোসেন বাবলা। ছবি: সংগৃহীত

সরোয়ার হোসেন বাবলা। গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম নগরীর চালিতাতলী হাজির পোল এলাকায় চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী ও চান্দগাঁও) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী এবং চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগের সময় পেছন থেকে গুলিতে মৃত্যু হয় তাঁর।

দীর্ঘদিন চট্টগ্রামের ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন বাবলা। ১৫টির বেশি মামলা তাঁর নামের পাশে। অনেকবার জেলও খেটেছেন। গত বছরের ২৭ জুলাই শেষবারের মতো গ্রেপ্তার হন তিনি। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর জামিনে বের হয়ে নামের পাশ থেকে সন্ত্রাসী তকমা সরাতে রাজনীতিতে মনোযোগ দেন বাবলা। চট্টগ্রাম বিএনপির নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে থাকেন।

বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে জুড়তে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের হয়ে রাজনৈতিক প্রচারণা অনুষ্ঠান, খেলাধুলার আয়োজন করতে থাকেন বাবলা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ-সংক্রান্ত পোস্ট দিতেন নিয়মিত। এমনকি মাদকের বিরুদ্ধে তাঁর কয়েকটি পোস্ট দেখা যায়।

নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালা মুন্সির বাড়ির খন্দকারপাড়ার আব্দুল কাদেরের ছেলে বাবলা। আর্থিক অনটনে চালিতাতলী হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া তাঁর। স্ত্রী, মা-বাবা এবং পাঁচ ভাই ও দুই বোন নিয়ে বাবলার পরিবার। গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিয়ের পিঁড়িতে বসেন ৪৩ বছর বয়সী বাবলা।

বাবলার পিতা আব্দুল কাদের বলেন, ‘আমার ছেলে ঠিকভাবে বাঁচতে চেয়েছিল। কিন্তু তাঁকে বাঁচতে দেওয়া হলো না। আমার ছেলেকে হত্যাকারীরা কয়েকবার মারতে চেয়েছিল এর আগে।’

ভাইদের মধ্যে সবার ছোট মো. আজিজ বলেন, ‘আমার ভাইকে এলাকাতে হত্যা করার পরিকল্পনা আগেই প্রকাশ করেছিল হত্যাকারীরা। সবার সামনে সেটা বাস্তবায়ন করেছে তারা। আমার ভাইয়ের ওপর পরপর গুলি করার পরও চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়নি। তারা দাঁড়িয়েই ছিল। আমাদের করার কিছু ছিল না। আজকে ভাইকে মেরেছে, কাল আমাকে মারবে। কে থামাবে তাদের। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলতে কিছু আছে?’

আজিজ আরও দাবি করেন, তিন বছর আগে বাবলা জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। এরপরও পুলিশসহ একটি চক্র তাঁকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে বিভিন্নভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা চালায়।

চট্টগ্রামের আরেক সন্ত্রাসী সাজ্জাদের সঙ্গে তাঁর ভাইয়ের পূর্বশত্রুতা রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

প্রায় দেড় দশক আগে চট্টগ্রামে বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রমে আলোচনায় আসে বাবলা ও তাঁর বন্ধু ম্যাক্সনের নাম। সে সময় তাঁরা পরিচিত ছিলেন শিবির ‘ক্যাডার’ সাজ্জাদ হোসেন খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে। সাজ্জাদ চট্টগ্রামের আট খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। তাঁর স্ত্রী ভারতীয় (পাঞ্জাবের) হওয়ার সুবাদে তিনি সেখানে অবস্থানের সুযোগ পান।

২০১১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নগরীর প্রবর্তক মোড়ে একটি রোগ নির্ণয়কেন্দ্র থেকে ১১ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় আলোচনায় আসেন বাবলা। একই বছরের ৬ জুলাই বায়েজিদ এলাকা থেকে তাঁকে একে-৪৭ রাইফেল, পিস্তল, এলজি ও গুলিসহ আটক করে পুলিশ। যদিও ওই অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। অনেকে দাবি করেন, পদোন্নতির জন্য পুলিশ ওই অস্ত্র উদ্ধার দেখায়।

জেলে থাকা অবস্থায় বাবলার সঙ্গে সাজ্জাদের সম্পর্কের অবনতি হয়। জেল থেকে বেরিয়ে সাজ্জাদের অনুপস্থিতিতে বায়েজিদসহ আশপাশ এলাকা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ ওঠে বাবলা ও ম্যাক্সনের বিরুদ্ধে। অস্ত্র মামলায় জামিন পেয়ে ২০১৭ সালের ৩১ আগস্ট কাতারে চলে যান বাবলা।

২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কাতার থেকে দেশে ফিরলে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। পরদিন তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নগরের বায়েজিদ খানাধীন খোন্দকারপাড়া এলাকা থেকে একে-২২, এলজি ও বিপুল পরিমাণ গুলি উদ্ধার করার কথা জানায় পুলিশ।

বাবলার পরিবারের দেওয়া তথ্যমতে, চালিতাতলী শিবির অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় সে সময় মহিম নামের একজন বড় ভাইয়ের সঙ্গে চলাফেরা করতেন বাবলা। শিবির ক্যাডার ও আট খুনের মামলার আসামি সাজ্জাদের হয়ে কাজ করতেন মহিম। মহিমের সঙ্গে চলাফেরা করায় তাঁকে শিবিরের কর্মী বলা হতো। বাবলা কখনো শিবিরের কোনো পদে ছিলেন না বলে দাবি করে তাঁর পরিবার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পিস্তল দিয়ে বাবলার পিঠে এলোপাতাড়ি গুলি করে মুহূর্তেই সটকে পড়ে মুখোশধারীরা

গত সেপ্টেম্বরেই বিয়ে করেন, বিএনপি নেতার পাশে গুলিতে নিহত কে এই বাবলা

পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটিতে মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনা: প্রেস সচিব

সাবেক সেনাসদস্যকে ‘হানি ট্র‍্যাপে’ ফেলে চার লাখ টাকা আদায়, গ্রেপ্তার ২

সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৪০ টাকা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত