Ajker Patrika

আ.লীগের আমলে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষানবিশ এএসপিদের কুচকাওয়াজ স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫: ২৫
আ.লীগের আমলে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষানবিশ এএসপিদের কুচকাওয়াজ স্থগিত

রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে অনুষ্ঠিতব্য শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি) প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত করা হয়েছে। আজ রোববার সকাল ১০টায় একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে ৪০তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া এই সহকারী পুলিশ সুপারদের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ ও প্যারেড পরিদর্শন করার কথা ছিল। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য তিনি সারদা পুলিশ একাডেমিতে গতকাল শনিবার রাতেই আসেন। 

এ ছাড়া পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম এবং র‍্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম শহিদুর রহমানসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আজ রোববার সকালের কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়ার জন্য শনিবার রাতে সারদায় পুলিশ একাডেমিতে অবস্থান করছিলেন। তবে শনিবার রাতে জানানো হয়, অনিবার্য কারণবশত শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত করা হয়েছে। 

সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান স্থগিত করার এ রকম ঘটনা প্রথমবারের মতো ঘটল। অনুষ্ঠান উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন ছিল। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি ও গণমাধ্যমকর্মীদের আমন্ত্রণপত্র বিতরণ করা হয়। 

জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সল হাসান বলেন, কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে কোনো আমন্ত্রণপত্র দেওয়া হয়নি। আমন্ত্রণপত্র বিতরণ করা হয়েছে স্থানীয়ভাবে। তাই কুচকাওয়াজ না হওয়ার বিষয়টি রাতে স্থানীয়ভাবে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। 

একই ধরনের তথ্য জানিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেন, অনিবার্য কারণবশত রোববারের অনুষ্ঠানটি স্থগিত করা হয়েছে। 

সাধারণত বিসিএসের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে পুলিশ ক্যাডারের কর্মকর্তারা সারদার পুলিশ একাডেমিতে এক বছরের মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাঁদের এই প্রশিক্ষণ শেষ হয় এবং তাঁরা মাঠপর্যায়ে কাজের সুযোগ পান। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৪০তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল। ব্যাচে অন্তত ৬২ জন ছাত্রলীগ নেতা নিয়োগ পান বলে অভিযোগ উঠেছে। 

গতকাল শনিবার ফেসবুকে এমন অভিযোগ তুলে ধরেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে পুলিশ একাডেমির পক্ষ থেকে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যানের কথাও ফেসবুকে জানান সালাউদ্দিন আম্মার। 

আমন্ত্রণপত্রের ছবিতে লাল ক্রস এঁকে দিয়ে ক্যাপশনে সালাউদ্দিন আম্মার লেখেন, ‘দাওয়াতটা স্বজ্ঞানে প্রত্যাখ্যান করছি। কারণ, এই ৬২ জন এএসপি হাসিনার আমলে নির্বাচিত হয়েছেন। আর কত চুলচেরা বিশ্লেষণ করে বিসিএস (পুলিশ)-এ নিয়োগ হতো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ব্যক্তি আমার জায়গা থেকে তাই প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার পক্ষপাতী নই। তাদের ব্যাপারে তদন্ত হয়েছে কি না।’ 

সালাউদ্দিন আম্মার ফেসবুকে আরও লেখেন, ‘পুলিশ বাহিনীতে এখনো কোনো সংস্কার হয়নি। অপরাধীরা এখনো ধরা পড়েনি। তাই আমি শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের বৈধতা দিতে পারি না। দাওয়াত কার্ডটা নিয়ে আপনাদের কাছে দেখানোর উদ্দেশ্য ছিল মামলার যে নাম-ঠিকানায় দাওয়াত পাঠাইছে এটা দেখানো। আমি নিতান্তই একজন নগণ্য মানুষ, কিন্তু আমার এথিক্স স্পষ্ট, আমার শহীদ ভাই আলী রায়হান, সাকিব আঞ্জুমসহ সবার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমি সরকারি কোনো দাওয়াত গ্রহণ করব না।’ 

ফেসবুক পোস্টের এক মন্তব্যে সালাউদ্দিন আম্মার লেখেন, ‘আওয়ামী লীগ শাসনামলে নিয়োগপ্রাপ্ত (৪০তম বিসিএসে) ৬২ জন ছাত্রলীগের ক্যাডার এএসপি হিসেবে রোববার প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করতে যাচ্ছেন।’ 

সালাউদ্দিন আম্মার পোস্টে লেখেন, ‘আগামীকালের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমাকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল। আমরা জানতে পারি, কোনো রকম তদন্ত ছাড়াই আওয়ামী লীগের দোসরদের এএসপি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের ভাইদের মৃত্যুর মিছিল এখনো চলছেই। এমতাবস্থায় এই দোসরদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া মানে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা। তাই আমি অনুষ্ঠানের একজন আমন্ত্রিত অতিথি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হিসেবে এই অনুষ্ঠান প্রত্যাখ্যান করলাম।’ 

এরপর প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত হলে ফেসবুকে আরেকটি স্ট্যাটাস দেন সালাউদ্দিন আম্মার। সেখানে তিনি লেখেন, ‘প্রোগ্রাম কেনসেল করেছে পুলিশ একাডেমি সারদা। গত কয়েক দিন ধরে চলা অনুষ্ঠান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা গতকাল থেকেই রাজশাহীতে থাকার পরও মাত্র জানাল কেনসেল করা হয়েছে। কিছু বুঝলেন? আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের আমরা কখনো গ্রহণ করব না। তদন্ত হোক, পরে যোগ্য ব্যক্তি নিয়োগ পাক।’ 

এর আগে গতকাল দুপুরে রাজশাহীতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ১ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তর পরিদর্শনে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মেধার বাইরে নিয়োগ পাওয়া বিসিএস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের গত ১৫ বছর ধরে নিয়োগ হয়েছে। কিছু মেধার ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছেন, কিন্তু যাঁরা দলীয় বিবেচনায় চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পানিতে ডুবে প্রাণ গেল মামা-ভাগনের

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে পুকুরে ডুবে শাহবাব মন্ডল (আড়াই বছর) ও আবু তোহা মন্ডল (৩) নামের দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের যাদুরচর নতুন গ্রাম এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

শাহবাব মন্ডল উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ধনারচর নতুন গ্রামের শাহজাহান মন্ডলের ছেলে এবং আবু তোহা মন্ডল একই গ্রা‌মের আবু তালেবের ছেলে। এই দুই শিশু সম্পর্কে মামা-ভাগনে।

পরিবারের বরাত দিয়ে যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী জানান, বুধবার সকালে ওই দুই শিশু তালেব মন্ডলের বাড়িতে খেলা করছিল। এ সময় সবার অজান্তে তারা বাড়ির পা‌শে পুকুরের পানিতে পড়ে যায়। স্বজনেরা পুকুর থে‌কে দুই শিশু‌কে উদ্ধার করে হাসপাতালে নি‌য়ে যান। দা‌য়িত্বরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক একই এলাকার বাসিন্দা ও কুড়িগ্রাম-৪ আসনের বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস‌্য প্রার্থী আজিজুর রহমান ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তি‌নি শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

রৌমারী থানার উপপ‌রিদর্শক শাহ‌নেওয়াজ হো‌সেন ব‌লেন, খবর পে‌য়ে ঘটনাস্থ‌লে পু‌লিশ পাঠা‌নো হ‌য়ে‌ছে। সহকারী ক‌মিশনার (ভূ‌মি) ঘটনাস্থ‌লে গি‌য়ে‌ছেন। দুই শিশুর মৃত‌্যুর ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনি ব‌্যবস্থা নেওয়া হ‌বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৫৭
নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত
নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত

‎রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরে ঝালকাঠি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‎গ্রেপ্তারের বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

‎মামুন বলেন, গৃহকর্মী আয়েশাকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঝালকাঠি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত সোমবার সকালে শাহজাহান রোডের ১৪ তলা একটি আবাসিক ভবনের সপ্তম তলায় লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।

মা-মেয়ে হত্যায় অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মা-মেয়ে হত্যায় অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

গতকাল তাঁদের মরদেহ নাটোরে দাফন করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বাসা থেকে মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিস খোয়া যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ভবনের ভেতরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পর এক নারী স্কুলড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। চার দিন আগে আয়েশা পরিচয় দিয়ে ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেওয়া তরুণী (২০) এই জোড়া খুনে জড়িত বলে সন্দেহ স্বজনদের। ঘটনার পর থেকে ওই তরুণী পলাতক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি 
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে মজিরুলের নেতৃত্বে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে মজিরুলের নেতৃত্বে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জীবন আছে যার, তার মৃত্যু অনিবার্য। মৃত্যুর পর মানুষের শেষ ঠিকানা কবর। মৃতদেহ গোসল করিয়ে কাফন পরানো হয়, জানাজা শেষে তাকে শায়িত করা হয় চিরনিদ্রার ঘরে। এই কবর খোঁড়ার দায়িত্বটি গ্রামের কিছু মানুষ বহু বছর ধরে স্বেচ্ছায়, বিনা পারিশ্রমিকে পালন করে আসছেন, যাঁরা সবার কাছে ‘গোরখোদক’ নামে পরিচিত। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তাঁরা করে থাকেন এই কাজ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গোরখোদকেরা কোনো পারিশ্রমিক নেন না। গ্রামের যে কেউ মারা যাক, নিজেদের ব্যস্ততা ফেলে তাঁরা ছুটে আসেন কবর খুঁড়তে। তাঁদের এই মানবিক কাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গ্রামের লোকেরা দোয়া করেন—আল্লাহ যেন তাদের সুস্থ ও ভালো রাখেন।

দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা গোরখোদক মজিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ৫৫ বছর ধরে কবর খুঁড়ছি। যত দিন সুস্থ থাকব, এই কাজ চালিয়ে যাব। আমাদের গ্রাম ছাড়াও অন্য গ্রাম থেকে কেউ ডাকলে সেখানেও যাই। ছোটবেলায় ওস্তাদের কাছে ডালি ধরেই শিখেছি। গরিব মানুষ, মাঠে কাজ করি; কিন্তু কেউ মারা গেলে দ্বিধা করি না—এই কাজ আমার নেশায় পরিণত হয়েছে।’

মজিরুল আরও জানান, এখন তিনি তরুণদেরও এই কাজ শেখাচ্ছেন।

গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গোরখোদক শাকের আলী বলেন, ‘আমরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করি। কখনো কোনো টাকা নিই না। যেখানেই থাকি, গ্রামের কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে দ্রুত কবর খুঁড়তে চলে আসি।’

গোরখোদক ফুয়াদ হোসেন বলেন, ‘অন্য গ্রাম থেকে ডাক এলেও আমরা যাই। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করি এই কাজ। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

স্থানীয় বাসিন্দা শাজাহান আলী বলেন, ‘কবর খোঁড়া বড় দায়িত্বের কাজ। গ্রামের এসব মানুষ খবর পেলেই দৌড়ে আসে। আমরা তাদের জন্য দোয়া করি।’

মাওলানা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির জন্য কবর খোঁড়া নিঃসন্দেহে সওয়াবের কাজ। হাদিসে এসেছে—যাঁরা কবর খোঁড়েন, আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে কারখানার ফটকের সামনে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকেরা। আন্দোলনের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে সটকে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শিল্প ও থানা-পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসেছেন। আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের সাইটালিয়া গ্রামে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানায় এই ঘটনা ঘটে।

কারখানার নারী শ্রমিক মিনারা আক্তার বলেন, ‘অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করে নাই। এক মাসের বেতন না পেলে আমাদের চলা খুবই কঠিন হয়। আমাদের নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়। আর সেখানে কারখানা কর্তৃপক্ষ দুই মাসের বেতনভাতা বকেয়া রেখেছে। আজ সকালে শ্রমিকেরা জড়ো হলে তারা পালিয়ে যায়।’

মিন্টু নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘এই কারখানায় আমরা তিন বছর ধরে চাকরি করছি। আমাদের বেতনের বাইরে কোনো সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে না। তবু পেটের দায়ে চাকরি করি। দুই মাসের বেতন বকেয়া। আমাদের তো পেট আছে, সন্তান-সংসার আছে। এক মাস দোকান বাকি পরিশোধ করতে না পারলে পরের মাসে আর দোকানি বাকি দেয় না। আমরা কী অবস্থায় আছি, একবার ভাবুন। বেতন পরিশোধ না করে তারা পালিয়ে গেছে।’

আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেহেদী হাসান বলেন, ‘এত দিন ধরে ঋণ করে বলে-কয়ে দোকান থেকে বাকি নিয়ে চলছি। আর পারছি না। এখন দোকান বাকি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতন নিয়ে কমপক্ষে ১০টি তারিখ দিছে। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ করেনি। শেষে আজ বেতন পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু তারা কারখানা ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছে।’

কারখানার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. বুলবুল হাসান বলেন, ‘ব্যাংকের সমস্যার কারণে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। আশা করি, আজকের মধ্যে নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারব।’ বিনা নোটিশে কারখানার ফটক কেন তালাবদ্ধ? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি বলতে পারব না।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাছির আহমদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত