Ajker Patrika

এক বছর আগে আইডি হ্যাক, পুলিশ মামলা করতে বললেও করেননি যুগ্ম সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৩, ২২: ৪৬
এক বছর আগে আইডি হ্যাক, পুলিশ মামলা করতে বললেও করেননি যুগ্ম সচিব

স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক এনামুল হক আগেই জানতে পেরেছিলেন, চাকরি দেওয়ার জন্য তাঁর নাম করে টাকা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এক বছর হয়ে গেলেও তিনি এ নিয়ে কোনো মামলা করেননি। পুলিশ কয়েকবার ডেকেও তাঁকে দিয়ে মামলা করাতে পারেনি। নিজের ফেসবুক আইডি ‘বেহাত’ হয়ে গেলেও সরকারের যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এ কর্মকর্তা পদক্ষেপ নেননি। 

তাঁর এ ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। এই ফেসবুক আইডির মাধ্যমেই প্রতারণার অভিযোগে র‍্যাব নওগাঁর ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনকে (৩৮) আটক করে। এনামুল হক নিজেও অংশ নেন এই অভিযানে। পরে র‍্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যু হয়। এনামুলের কথায় মামলা ছাড়াই র‍্যাব জেসমিনকে আটক করেছিল। আটকের পরদিন জেসমিন যখন হাসপাতালে মুমূর্ষু অবস্থায়, তখন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন এনামুল। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, নিজের ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়ে যাওয়ার পরে এনামুল হক নগরীর রাজপাড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন গত বছরের মার্চে। এরপর পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে দেখে, ‘হ্যাক’ করার পর এনামুলের ফেসবুকের মোবাইল নম্বরটি বদলে ফেলা হয়েছে। যে মোবাইল নম্বরটি পরে দেওয়া হয়েছে, সেই সিমটি কেনা হয়েছে একটি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে। এক মাসের মধ্যেই এনামুল হককে এসব জানিয়ে থানায় মামলা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি মামলা করতে রাজি হননি। অন্যদিকে ওই ফেসবুক থেকে প্রতারণা চলতেই থাকে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এনামুল হকের ফেসবুক আইডি থেকে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ভুক্তভোগীরা তাঁর বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন। প্রায় পাঁচ মাস আগে এ ব্যাপারে তদন্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তখন এনামুল হক পুলিশের কাছ থেকে একটি প্রত্যয়ন নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন যে তাঁর ফেসবুক হ্যাক হয়েছে। কিন্তু তখনো এনামুল হক ফেসবুক হ্যাকের ঘটনায় থানায় মামলা করেননি। 

পরে গত অক্টোবরে চাকরির জন্য টাকা দেওয়া ঢাকার এক ভুক্তভোগী নারী এনামুলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলায় রোমানা ফেরদৌস নামের আরেক নারীকে আসামি করা হয়, যাঁর মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করা হতো। ফেসবুক আইডি থেকে পরিচয় দেওয়া হতো, রোমানা জেসমিন যুগ্ম সচিব এনামুল হকের স্ত্রী। ফেসবুক আইডির মাধ্যমে টাকা নেওয়ার কারণে মামলার আসামি হলেও হ্যাকের ঘটনায় তখনো মামলা করেননি এনামুল হক। 

কিন্তু ২২ মার্চ ১৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে জেসমিনকে আটকের পরদিন এনামুল হক রাজপাড়া থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে তিনি বলেছেন, অফিসের কাজে নওগাঁয় যাওয়ার পথে র‍্যাবের টহল দলের সঙ্গে তাঁর হঠাৎ দেখা হয়েছিল। এনামুল হক রাজ মেট্রো-ঘ ১১-০১১৮ নম্বরের একটি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন। নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তার ট্রাভেল হিস্ট্রি লগবুকে উল্লেখ করতে হবে। কিন্তু এনামুল হক তা করেননি। তাঁর সরকারি গাড়ির চালক ইসরাইল জানিয়েছেন, ওই দিন সরকারি কাজে গাড়িসহ এনামুল হককে নিয়ে তিনি নওগাঁয় গিয়েছিলেন কি না, তা মনে নেই। গাড়ির লগবুকে তা লেখা নেই বলেও তিনি জানান। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুগ্ম সচিব এনামুল হক বলেন, ‘গাড়ির লগবুক প্রতিদিন লেখা হয় না। মাস শেষে একবারই ট্রাভেল হিস্ট্রি লেখা হয় লগবুকে।’ এক বছরের বেশি সময় ফেসবুক হ্যাক হয়ে থাকলেও মামলা না করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট করে কোনো বক্তব্য দেননি। 

এদিকে সুলতানা জেসমিনকে আটক থেকে হাসপাতালে ভর্তি এবং লাশ দাফন—সবই হয়েছে র‍্যাবের তত্ত্বাবধানে। দাপ্তরিক সকল কাগজপত্রেই র‍্যাব সদস্যদের নাম রয়েছে। আইনগত প্রক্রিয়ার কারণে কিছু কাজ পুলিশ সম্পন্ন করেছে। আটকের পর জেসমিনকে দুপুরে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এরপর রাত ৯টা ২০ মিনিটে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রথমে রামেক হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় জেসমিনকে। রোগীর রেজিস্টারে লেখা হয়েছে, ‘সুলতানা জেসমিন, কেয়ার অব সাহেদ, গ্রাম-র‍্যাব-৫ ’। তবে জেসমিনের মৃত্যুর পর রেজিস্টার খাতায় জেসমিনের নাম ঠিক রেখে কেয়ার অব মনোয়ার হোসেন, গ্রাম-হাজি মনসুর রোড, খাস নওগাঁ, নওগাঁ সদর লেখা হয়। এই ঠিকানা সংশোধনের তারিখ ২৪/৩/২০২৩। খাতায় লেখা ফোন নম্বরটিও র‍্যাবের একজন নারী সদস্যের। আনসার ব্যাটালিয়ন থেকে আসা ওই নারী র‍্যাবে কর্মরত। 

এদিকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) জেসমিন মারা যাওয়ার পর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাজপাড়া থানায় খবর দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওয়ার্ড মাস্টারের ডেথ রেজিস্টারের খাতায় নাম লেখার সময় জেসমিনের আত্মীয়দের খোঁজ করে কর্তৃপক্ষ। তাঁর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মোবাইল ফোন নম্বরও চাওয়া হয়। কিন্তু তখন জেসমিনের কোনো আত্মীয় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। এ সময় উপস্থিত র‍্যাবের একজন সদস্য একটি মোবাইল নম্বর দেন। জেসমিনের নামের সঙ্গে লেখা ওই নম্বরও র‍্যাবের একজন এসআইয়ের। ডেথ রেজিস্টার থেকে নম্বর নিয়ে কল করা হলে রিসিভ করে নিজের নাম মাসুম বিল্লাহ ও র‍্যাব-৫ কর্মরত এসআই বলে পরিচয় দেন। তবে এসআই মাসুম বলেন, ‘ওই দিন আমি হাসপাতালে যাইনি। কেউ হয়তো আমার নম্বরটা লিখে দিয়েছে।’ 

এ বিষয়ে র‍্যাব-৫ এর রাজশাহীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার বলেন, ‘রামেক হাসপাতালে নেওয়ার সময় জেসমিনের সঙ্গে তাঁর দুলাভাই আমিনুল ছিলেন। তবে ভর্তি থেকে ডেথ রেজিস্টার বা অন্যান্য ক্ষেত্রে জেসমিনের নিকটাত্মীয় কারও মোবাইল নম্বর কেন দেওয়া হয়নি, তা জানি না।’ 

সুলতানা জেসমিনের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের এখনো তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরিতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান কফিল উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘মৃতদেহ থেকে নেওয়া নমুনার পরীক্ষা চলছে। এসবের রিপোর্ট এলে ময়নাতদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রস্তুত করা হবে।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝালকাঠিতে ট্রলির ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

ঝালকাঠি প্রতিনিধি  
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঝালকাঠির নলছিটিতে ট্রলির ধাক্কায় লিমা আক্তার (৩০) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় তা৭র স্বামী মোটরসাইকেলচালক আহত হয়েছেন। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে উপজেলার ভৈরবপাশা ইউনিয়নের লক্ষণকাঠি এলাকায় বরিশাল-ঝালকাঠি মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুল আলম।

নিহত লিমা আক্তার ইশ্বরকাঠি এলাকার ব্যবসায়ী রাজু মল্লিকের স্ত্রী। তাঁদের পাঁচ বছর ও দুই বছর বয়সী দুটি সন্তান রয়েছে।

নিহত লিমার ভাশুর ও স্থানীয় ইউপি সদস্য পারভেজ মল্লিক জানান, বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে করে ঝালকাঠি আসার পথে পেছন দিক থেকে একটি ট্রলি তাঁদের ধাক্কা দেয়। এ সময় ট্রলিটি একটি নৌবাহিনীর গাড়িকেও ধাক্কা দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় লিমাকে উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়ে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আনিস আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত
আনিস আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

সাংবাদিক আনিস আলমগীর এখনো ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে রয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল রোববার সন্ধ্যায় তাঁকে সেখানে ডেকে নেওয়া হয়।

আজ সোমবার সকালে ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান আনিস আলমগীরের ডিবি কার্যালয়ে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

এর আগে গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ডিবি সদস্যরা তাঁকে সেখানে নিয়ে যান। রাজধানীর ধানমন্ডির একটি জিম থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন আনিস আলমগীর।

ডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, আনিস আলমগীর এখনো ডিবি কার্যালয়েই রয়েছেন। তাঁর বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা এখনো জানানো হয়নি।

এদিকে সাংবাদিক আনিস আলমগীর এবং অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনসহ মোট চারজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে তাঁদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্টের ষড়যন্ত্র এবং নিষিদ্ধ সংগঠনকে উসকে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে।

‘জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স’ নামে একটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ এই অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্ত অপর দুজন হলেন মারিয়া কিসপট্টা ও ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজ।

থানায় দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্যেও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুসারীরা বিভিন্ন কৌশলে দেশে অবস্থান করে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা বিনষ্টের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। অভিযুক্তরা এসব কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত।

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ৫ আগস্টের পর থেকে অভিযুক্তরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন টেলিভিশন টক শোতে অংশ নিয়ে নিষিদ্ধ সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচারণা চালাচ্ছেন। এর মাধ্যমে তাঁরা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের অপচেষ্টা করছেন।

এতে আরও বলা হয়, অভিযুক্তদের এসব বক্তব্য ও অনলাইন কার্যক্রমের কারণে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা উসকানি পাচ্ছে। ফলস্বরূপ তারা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র, সহিংসতা এবং অবকাঠামো ধ্বংসের মতো কর্মকাণ্ডে জড়িত হচ্ছে।

উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মোহাম্মদ রফিক আহমেদ গণমাধ্যমকে জানান, এটি সাইবার-সম্পর্কিত একটি ইস্যু। তিনি বলেন, ‘আমরা অভিযোগ গ্রহণ করেছি। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা যাচাই ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা পেলে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে সিঙ্গাপুরে নিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স এখন ঢাকায়

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ২৩
ওসমান হাদিকে সিঙ্গাপুরে নিতে ঢাকায় পৌঁছেছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। ছবি: ফ্লাইটর‍্যাডার২৪
ওসমান হাদিকে সিঙ্গাপুরে নিতে ঢাকায় পৌঁছেছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। ছবি: ফ্লাইটর‍্যাডার২৪

রাজধানীর এয়ারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার জন্য ঢাকায় এসেছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি সিঙ্গাপুর থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন রাগিব সামাদ আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আজ বেলা ১১টা ২২ মিনিটে বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে সড়কপথে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে বিমানবন্দরে নেওয়া হবে এবং সেখান থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হবে।

ওসমান হাদির বড় দুই ভাই—ওমর ফারুক এবং আবু বকর সিদ্দিক—তাঁর সঙ্গে বিদেশ যাওয়ার কথা রয়েছে। দুপুরের মধ্যেই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদিকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের পর সন্ধ্যার দিকে হাদিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন।

এরপর গতকাল রোববার ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, রোববার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জাফর, ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদির মধ্যে এক জরুরি কল কনফারেন্সে হাদিকে সিঙ্গাপুরে পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

পরে প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত দুদিন ধরে ওসমান হাদির চিকিৎসার জন্য সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে। আজ (গতকাল রোববার) এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করা হয়।

প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ও অপরিবর্তিত রয়েছে।

আগামীকাল (আজ সোমবার) দুপুরে ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় মেডিকেল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল এবং ভ্রমণসংক্রান্ত সকল প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাক্সিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে তাঁর চিকিৎসার সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

ওসমান হাদির চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। তার চিকিৎসা প্রক্রিয়া সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া ও প্রার্থনা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঠাকুরগাঁওয়ে অবৈধভাবে সার মজুত: ব্যবসায়ীকে ৭ দিনের কারাদণ্ড, ৭৬৬ বস্তা জব্দ

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
সারগুলো জব্দ করে গুদাম সিলগালা করে দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
সারগুলো জব্দ করে গুদাম সিলগালা করে দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক সার মজুত রাখার অভিযোগে এক কীটনাশক ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমাণ আদালত সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। একই সঙ্গে দুটি গুদাম থেকে ৭৬৬ বস্তা সার জব্দ করা হয়েছে এবং গুদাম দুটি সিলগালা করা হয়েছে।

রোববার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বড় খোঁচাবাড়ি বাজারের পেছনে অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খাইরুল ইসলাম। অভিযানে আব্দুল্লাহ নামের ওই কীটনাশক ব্যবসায়ীর দুটি গুদামে অবৈধভাবে মজুত রাখা বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক সার পাওয়া যায়।

সারগুলো জব্দ করে গুদাম সিলগালা করে দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
সারগুলো জব্দ করে গুদাম সিলগালা করে দেওয়া হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আব্দুল্লাহকে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জব্দ করা ৭৬৬ বস্তা সার গুদামে রেখে সিলগালা করা হয়েছে।

ইউএনও মো. খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। জব্দকৃত সার কিছুদিন পর কৃষি কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে ন্যায্যমূল্যে উন্মুক্ত বাজারে বিক্রি করা হবে। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত