Ajker Patrika

ঝরছে গুটি, বিপর্যয়ের শঙ্কা আমের ফলনে

  • খরা আর দাবদাহে আমের গুটি ঝরে পড়ছে।
  • চার জেলায় ৯৬ হাজার ২০০ হেক্টরে আমবাগান রয়েছে।
  • উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ১৩ লাখ টন।
মিজান মাহী, দুর্গাপুর (রাজশাহী)
ঝরছে গুটি, বিপর্যয়ের শঙ্কা আমের ফলনে

চৈত্রের শেষ দিকে এসে খরায় পুড়ছে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলাসহ আশপাশের অঞ্চল। গত এক সপ্তাহে দিনের তাপমাত্রা কখনো ৩৮ আবার সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করছে। রাতে সেই তাপমাত্রা যাচ্ছে নেমে। এতে খরা আর দাবদাহে আমের গুটি পড়ছে ঝরে। ফলে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে। গুটি ঝরে পড়ায় এবার আমের ফলনে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

তবে রাজশাহীর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কর্মকর্তারা বলছেন, ‘একটি বোঁটায় একটি আমই বাম্পার ফলন।’

রাজশাহী অঞ্চল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলায় ৯৬ হাজার ২০০ হেক্টরে আমবাগান রয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে ১৩ লাখ টন। রাজশাহী অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি আমবাগান রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। গত বছর এই অঞ্চলে মোট ১২ লাখ ৭ হাজার ২৬৩ টন আম উৎপাদন হয়।

এদিকে দুর্গাপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে প্রায় ১ হাজার হেক্টরে আমবাগান গড়ে উঠেছে। এতে এই উপজেলায় অন্তত তিন থেকে সাড়ে ৩ শ আমবাগান রয়েছে। আমের ফলন নির্ভর করে মূলত প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর। এবার প্রচুর মুকুল ও গুটি ধরলেও খরায় কিছুটা ঝরে গেছে।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিদুল ইসলাম বলেন, গতকাল মঙ্গলবার রাজশাহীতে দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত এক সপ্তাহে ৩৫ থেকে ৩৯ ডিগ্রির মধ্যেই রয়েছে। সামনে তাপমাত্রা আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।

দুর্গাপুর উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের সুলাইমান শেখ বলেন, খরায় আমের গুটি ঝরে পড়ছে। সেচ ও পানি ছিটিয়েও গুটি ঝরে যাওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না।

পৌর এলাকার দেবীপুর গ্রামের আরেক আম ব্যবসায়ী বদর প্রামাণিক বলেন, তাপমাত্রা খুব বেশি হচ্ছে। গতবার অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে আমবাগান মালিকেরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় আমের বোঁটার রস শুকিয়ে যাচ্ছে। পরে আম হলুদ বর্ণ ধারণ করে গুটি ঝরে পড়ছে।

নওপাড়া গ্রামের আবু কালাম বলেন, ‘১০-১২টি আমবাগান লিজ নেওয়া আছে আমার। প্রায় বাগানের আমগাছে গুটি ঝরে পড়ছে। তাপমাত্রা অব্যাহত থাকলে এ বছর আমের ফলনে বিপর্যয় হবে। এতে আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হবে।’

দুর্গাপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সাহারা শারমিন লাবণী বলেন, খরা ও অনাবৃষ্টি এগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এবার আমগাছগুলোতে ব্যাপকহারে গুটি এসেছে। এখন ভালো ফলনের জন্য বৃষ্টির প্রয়োজন ছিল। আমচাষিদের এ সময় সেচ ও আমের বোঁটায় স্প্রে করে পানি দিতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, একটি বোঁটায় একটি আমই বাম্পার ফলন। একটি মুকুলে প্রচুর গুটি আসে। সবই তো আর টিকে থাকবে না। আর টিকলেও ভালো ফলন হবে না। আম ছোট হবে। তিনি বলেন, এখন গ্রীষ্মকাল। এ সময় তাপমাত্রা বেশি থাকে। চাষিদের আমগাছের গোড়ায় সেচ ও গুটিতে পানি স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

দাবদাহে এ বছর রাজশাহীতে আমের ফলনে বিপর্যয়ের সম্ভাবনা রয়েছে কি না, জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমের ফলন বিপর্যয়ের আপাতত আশঙ্কা দেখছি না।’ বৃষ্টি হলেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফকিরহাটে বাসের চাপায় পথচারী শিশু নিহত

ফকিরহাট (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাগেরহাটের ফকিরহাটে রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগামী বাসের চাপায় মো. সামিরুল ইসলাম (১১) নামের এক শিশু নিহত হয়েছে। খুলনা-মোংলা মহাসড়কের কাটাখালী এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সামিরুল ইসলাম কুমিল্লার হোমনা এলাকার মো. সাইফুল ইসলামের ছেলে। সে তার বাবার সঙ্গে কাটাখালীতে একটি ওয়েল্ডিং ওয়ার্কশপে কাজ করত। সেই সুবাদে তারা কাটাখালী এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছিল।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানায়, রোববার (৯ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সামিরুল ইসলাম বাসা থেকে কাজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়। কাটাখালী এলাকায় এসে মহাসড়ক পার হওয়ার সময় ঢাকাগামী সেতু পরিবহন নামের একটি বাস তাকে চাপা দেয়। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক উত্তম পাল জানান, শিশুটিকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। 

কাটাখালী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাফর আহম্মেদ বলেন, দুর্ঘটনায় নিহত শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘাতক বাসটি আটক করা হয়েছে। তবে চালক ও সহযোগী পালিয়ে গেছেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাগরে বিকল ট্রলার নিয়ে ভাসছিলেন ১৩ জেলে, উদ্ধার করল নৌবাহিনী

কক্সবাজার প্রতিনিধি
উদ্ধার করা ১৩ জেলে। ছবি: সংগৃহীত
উদ্ধার করা ১৩ জেলে। ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূলে বিকল হয়ে ভাসতে থাকা একটি ট্রলারসহ ১৩ জেলেকে উদ্ধার করেছে নৌবাহিনী। আজ রোববার সকালে নৌবাহিনীর এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল শনিবার বিকেলে বঙ্গোপসাগরে টহলের সময় নৌবাহিনীর জাহাজ ‘বানৌজা শহীদ মহিবুল্লাহ’ একটি মাছ ধরার ট্রলার ভাসতে দেখে উদ্ধারে নামে। কুতুবদিয়া দ্বীপের লাইট হাউস থেকে প্রায় ২০ মাইল দূরে গভীর সমুদ্রে ট্রলারটির ইঞ্জিন বিকল হয়। ট্রলারে থাকা জেলেরা নৌবাহিনীর জাহাজ দেখতে পেয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আলো ও হাত দিয়ে সংকেত প্রদর্শন করেন। এ সময় নৌবাহিনীর জাহাজটি সংকেত দেখে বিপদগ্রস্ত জেলে ও ট্রলারের কাছে ছুটে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে নৌবাহিনীর সদস্যরা ট্রলারসহ জেলেদের উদ্ধার করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, উদ্ধারের পরপরই জেলেদের প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ, খাবার ও বিশুদ্ধ পানি দেওয়া হয়। পরে জেলেদের ও ট্রলারটি নিরাপদে তীরে এনে পরিবার ও মালিকপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

জেলেরা জানিয়েছেন, ৬ নভেম্বর থেকে ট্রলারটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে মাঝসমুদ্রে ভাসতে থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নাটোরে পদ্মার চরে বিশেষ অভিযানে আটক ২০, বিপুল দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার

নাটোর প্রতিনিধি 
আটক ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
আটক ব্যক্তিদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার দুর্গম পদ্মার চরাঞ্চল—চর জাজিরা, চর লালপুর এবং চর দিয়ার বাহাদুরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ সাঁড়াশি অভিযানে ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। অভিযানে দুটি আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় ধারালো অস্ত্র ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।

শনিবার দিবাগত রাত থেকে আজ রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ, র‍্যাব, ডিবি এবং এপিবিএনের চার শতাধিক সদস্য যৌথভাবে এই অভিযান পরিচালনা করেন।

আটক ২০ জনের মধ্যে দুজন হ্যাকার, একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি এবং ছয়টি ওয়ারেন্টের আসামি রয়েছেন। এ ছাড়াও আটক ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হত্যা মামলার আসামি এবং দুজন চিহ্নিত মাদক কারবারি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম জানান, চর দিয়ার বাহাদুরপুরের বালুমহালের ছাউনি থেকে দুটি আগ্নেয়াস্ত্র (দেশীয় তৈরি ওয়ান-শুটারগান ও একটি রিভলবার) উদ্ধার করা হয়েছে।

এ ছাড়াও উদ্ধার হওয়া দেশীয় অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে ছয়টি বড় ড্যাগার, ২২টি হাঁসুয়া, চারটি চাকু ও ছোরা, দুটি চাপাতি।

উদ্ধার করা অস্ত্র। ছবি: আজকের পত্রিকা
উদ্ধার করা অস্ত্র। ছবি: আজকের পত্রিকা

অভিযানস্থল থেকে একটি টিউবওয়েল এবং অনেকগুলো বালু বিক্রির রসিদ জব্দ করা হয়।

নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম বলেন, লালপুর উপজেলার চরাঞ্চলে এবং পদ্মা নদীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পুলিশের এই বিশেষ অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‎বিআরটি প্রকল্পের সেতুর নিচে যুবকের মরদেহ

টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গাজীপুরের টঙ্গীতে উড়ালসেতুর নিচে অজ্ঞাতনামা (৩০) এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ‎রোববার সকাল ৯টার দিকে বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের উড়ালসেতুর টঙ্গী স্টেশন রোড অংশের নিচে মরদেহটির সন্ধান মেলে।

‎থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আলী মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরের তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন।

‎স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, রোববার সকালে স্থানীয় লোকজন বিআরটি প্রকল্পের উড়ালসেতুর ৬৮ নম্বর পিলারের পাশে ওই যুবকের মরদেহটি দেখতে পায়। পুলিশকে খবর পাঠালে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এই যুবককে দুর্বৃত্তরা অন্য কোথাও হত্যা করে মরদেহটি সেতুর নিচে ফেলে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।

‎টঙ্গী পশ্চিম থানা-পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুন অর রশিদের ভাষ্য, যুবকের পরিচয় শনাক্তে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যদের খবর পাঠানো হয়েছে। আঙুলের ছাপ নিয়ে পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। মরদেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত