Ajker Patrika

পাবনায় মুক্তিযোদ্ধার নাম মুছে স্টেডিয়াম-সুইমিংপুলে নতুন ফলক, ক্ষোভের সৃষ্টি

পাবনা প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ মে ২০২৫, ২১: ৪১
পাবনায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম মুছে স্টেডিয়াম-সুইমিংপুলের নতুন সাইনবোর্ড। ছবি রোববার বিকেলে তোলা।
পাবনায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম মুছে স্টেডিয়াম-সুইমিংপুলের নতুন সাইনবোর্ড। ছবি রোববার বিকেলে তোলা।

পাবনায় ক্রীড়া স্থাপনা থেকে জেলার দুই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। ৬ মে শহীদ অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে জেলা স্টেডিয়াম, পাবনা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল সুইমিংপুলের নাম পরিবর্তন করে পাবনা জেলা সুইমিংপুল রাখা হয়েছে।

এ ঘটনায় বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবার ও সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রাতারাতি এসব স্থাপনার নাম পরিবর্তন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার অপচেষ্টা বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা নাম বাদ দেওয়া নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই পরিবর্তনের সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কোনো প্রস্তাবনাও পাঠানো হয়নি। আমরা কেবল ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আদেশ অবিলম্বে বাস্তবায়নের নির্দেশনা পালন করেছি মাত্র।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে পাঠানো যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক পত্রে জানা যায়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ দেশের বিভিন্ন জেলার স্টেডিয়াম ও সুইমিংপুলের নাম একযোগে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এতে পাবনার শহীদ আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে জেলা স্টেডিয়াম ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল সুইমিং পুলের নাম পরিবর্তন করে পাবনা জেলা সুইমিংপুল করা হয়েছে। গত ২৩ মার্চ নেওয়া মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকরের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ওই পত্রে।

এদিকে ক্রীড়া স্থাপনা থেকে জেলার নেতৃস্থানীয় দুই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম বাদ দেওয়ায় প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝড় বইছে। এ সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যসহ জেলার সর্বস্তরের মানুষ।

এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বলেন, ‘অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন মুক্তিযুদ্ধে দেশের প্রথম শহীদ এমপি। স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে তিন দিন নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

পাবনায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম মুছে স্টেডিয়াম-সুইমিংপুলের নতুন সাইনবোর্ড। ছবি রোববার বিকেলে তোলা।
পাবনায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম মুছে স্টেডিয়াম-সুইমিংপুলের নতুন সাইনবোর্ড। ছবি রোববার বিকেলে তোলা।

‘মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান ইতিহাস থেকে মোছা অসম্ভব। আর রফিকুল ইসলাম বকুল দুঃসাহসী ছাত্রনেতা, রণাঙ্গনের যোদ্ধা। বারবার নির্বাচিত এমপি। এদের নাম মুছে ফেলে সরকার কী প্রমাণ করতে চাইছে? মুক্তিযোদ্ধাদের নাম মুছে দিলেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস হারিয়ে যাবে না। এই অন্যায়ের জবাব একদিন জাতিকে দিতে হবে।’

পাবনার সাংস্কৃতিক সংগঠক হাসান মাহমুদ বলেন, ‘কয়েক দিন আগে মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের নামে এডওয়ার্ড কলেজে ছাত্রীনিবাসের নাম পরিবর্তন করা হলো। সে নিয়ে বলা হলো, পাবনায় এ নায়িকার অবদান কি বা এটা-সেটা প্রশ্ন।

‘কিন্তু শহীদ অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিনের ক্ষেত্রে কী বলবেন? কেন স্টেডিয়াম থেকে তাঁর নাম মুছে দেওয়া হলো? এভাবে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের অসম্মানিত করা আগামীর জন্য কোনো ভালো বার্তা বহন করে না। এটি চরম নিন্দনীয় কাজ।’

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা শাওন হোসাইন বলেন, ‘একাত্তর আমাদের শেকড় ও চব্বিশ আমাদের অস্তিত্ব। এর কোনোটাকেই অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কিন্তু ৫ আগস্টের পর ’২৪ এবং ’৭১-কে মুখোমুখি দাঁড় করানোর একটা ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে।

‘এর অংশ হিসেবে অপ্রয়োজনীয়ভাবে শহীদ আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামের নাম বদলে দেওয়া হয়েছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে পূর্বের নাম বহালের দাবি জানাই।’

শহীদ আমিন উদ্দিনের সন্তান সদরুল আরেফিন বলেন, ‘সরকার-রাষ্ট্র পুরোপুরি মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করছে। আমার বাবা না হয় মুক্তিযুদ্ধের সময় আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের বীরশ্রেষ্ঠরা তো রাজনীতি করতেন না। তাঁরা বীরশ্রেষ্ঠদের নামের স্টেডিয়ামেও পরিবর্তন এনেছে? এই সরকারকে আমার কিছুই বলার নেই।’

শহীদ আমিন উদ্দিনের নাতনি বিএনপির মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল বলেন, ‘শহীদ আমিন উদ্দিনের মুক্তিযুদ্ধে ত্যাগ অবদানের কথা সবাই জানে। তাঁর নাম পরিবর্তনের এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত নিন্দনীয় ও আপত্তিকর। নাম পরিবর্তনের এই রাজনীতি নোংরা সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা বহন করে। ফ্যাসিবাদের সময়টার বাইরেও বাংলাদেশের ইতিহাস আছে। নাম পরিবর্তন করে তা মুছে ফেলা যাবে না।’

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নূর মোহাম্মদ মাসুম বগা বলেন, ‘শহীদ আমিন উদ্দিন পাবনার গর্ব। আমাদের প্রেরণা। মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুল পাবনায় স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনকারী ও গণমানুষের নেতা। বিএনপির সভাপতি হলেও দলমত-নির্বিশেষে সবার কাছেই তিনি নিজ গুণে প্রিয় মানুষ ছিলেন। বিএনপির এমপি হিসেবে মৃত্যুবরণ করা এই বীর যোদ্ধার রাজনৈতিক শিষ্য হিসেবে আমি এই ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। আশা করি, শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে সরকার এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে।’

মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম বকুলের সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধা বেবী ইসলাম বলেন, ‘নাম পরিবর্তন করে ইতিহাস মোছা যায় না। মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না।’

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (২০ মে) পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের সুচিত্রা সেন ছাত্রীনিবাস নাম পরিবর্তন করে ‘জুলাই ৩৬’ ছাত্রীনিবাস নামকরণ করা হয়। এই নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন অনেকে। জেলার সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সাধারণ নাগরিকেরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পানিতে ডুবে প্রাণ গেল মামা-ভাগনের

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে পুকুরে ডুবে শাহবাব মন্ডল (আড়াই বছর) ও আবু তোহা মন্ডল (৩) নামের দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের যাদুরচর নতুন গ্রাম এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

শাহবাব মন্ডল উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ধনারচর নতুন গ্রামের শাহজাহান মন্ডলের ছেলে এবং আবু তোহা মন্ডল একই গ্রা‌মের আবু তালেবের ছেলে। এই দুই শিশু সম্পর্কে মামা-ভাগনে।

পরিবারের বরাত দিয়ে যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী জানান, বুধবার সকালে ওই দুই শিশু তালেব মন্ডলের বাড়িতে খেলা করছিল। এ সময় সবার অজান্তে তারা বাড়ির পা‌শে পুকুরের পানিতে পড়ে যায়। স্বজনেরা পুকুর থে‌কে দুই শিশু‌কে উদ্ধার করে হাসপাতালে নি‌য়ে যান। দা‌য়িত্বরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক একই এলাকার বাসিন্দা ও কুড়িগ্রাম-৪ আসনের বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস‌্য প্রার্থী আজিজুর রহমান ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তি‌নি শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

রৌমারী থানার উপপ‌রিদর্শক শাহ‌নেওয়াজ হো‌সেন ব‌লেন, খবর পে‌য়ে ঘটনাস্থ‌লে পু‌লিশ পাঠা‌নো হ‌য়ে‌ছে। সহকারী ক‌মিশনার (ভূ‌মি) ঘটনাস্থ‌লে গি‌য়ে‌ছেন। দুই শিশুর মৃত‌্যুর ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনি ব‌্যবস্থা নেওয়া হ‌বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী আয়েশা ঝালকাঠিতে গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪: ০৪
নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত
নিহত লায়লা আফরোজ ও নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ। ছবি: সংগৃহীত

‎রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার দুপুরে ঝালকাঠি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‎গ্রেপ্তারের বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন তেজগাঁও বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন।

‎মামুন বলেন, গৃহকর্মী আয়েশাকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঝালকাঠি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত সোমবার সকালে শাহজাহান রোডের ১৪ তলা একটি আবাসিক ভবনের সপ্তম তলায় লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।

মা-মেয়ে হত্যায় অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মা-মেয়ে হত্যায় অভিযুক্ত গৃহকর্মী আয়েশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

গতকাল তাঁদের মরদেহ নাটোরে দাফন করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বাসা থেকে মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিস খোয়া যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ভবনের ভেতরের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, হত্যাকাণ্ডের পর এক নারী স্কুলড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন। চার দিন আগে আয়েশা পরিচয় দিয়ে ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেওয়া তরুণী (২০) এই জোড়া খুনে জড়িত বলে সন্দেহ স্বজনদের। ঘটনার পর থেকে ওই তরুণী পলাতক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৫০ বছর ধরে কবর খুঁড়ছেন মজিরুল, নিঃস্বার্থ সেবায় গাংনীর গোরখোদকেরা

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি 
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে মজিরুলের নেতৃত্বে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে মজিরুলের নেতৃত্বে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জীবন আছে যার, তার মৃত্যু অনিবার্য। মৃত্যুর পর মানুষের শেষ ঠিকানা কবর। মৃতদেহ গোসল করিয়ে কাফন পরানো হয়, জানাজা শেষে তাকে শায়িত করা হয় চিরনিদ্রার ঘরে। এই কবর খোঁড়ার দায়িত্বটি গ্রামের কিছু মানুষ বহু বছর ধরে স্বেচ্ছায়, বিনা পারিশ্রমিকে পালন করে আসছেন, যাঁরা সবার কাছে ‘গোরখোদক’ নামে পরিচিত। আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তাঁরা করে থাকেন এই কাজ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গোরখোদকেরা কোনো পারিশ্রমিক নেন না। গ্রামের যে কেউ মারা যাক, নিজেদের ব্যস্ততা ফেলে তাঁরা ছুটে আসেন কবর খুঁড়তে। তাঁদের এই মানবিক কাজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গ্রামের লোকেরা দোয়া করেন—আল্লাহ যেন তাদের সুস্থ ও ভালো রাখেন।

দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা গোরখোদক মজিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ৫৫ বছর ধরে কবর খুঁড়ছি। যত দিন সুস্থ থাকব, এই কাজ চালিয়ে যাব। আমাদের গ্রাম ছাড়াও অন্য গ্রাম থেকে কেউ ডাকলে সেখানেও যাই। ছোটবেলায় ওস্তাদের কাছে ডালি ধরেই শিখেছি। গরিব মানুষ, মাঠে কাজ করি; কিন্তু কেউ মারা গেলে দ্বিধা করি না—এই কাজ আমার নেশায় পরিণত হয়েছে।’

মজিরুল আরও জানান, এখন তিনি তরুণদেরও এই কাজ শেখাচ্ছেন।

গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাংনী উপজেলার দেবীপুর গ্রামে কবর খোঁড়া হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গোরখোদক শাকের আলী বলেন, ‘আমরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করি। কখনো কোনো টাকা নিই না। যেখানেই থাকি, গ্রামের কারও মৃত্যুর সংবাদ শুনলে দ্রুত কবর খুঁড়তে চলে আসি।’

গোরখোদক ফুয়াদ হোসেন বলেন, ‘অন্য গ্রাম থেকে ডাক এলেও আমরা যাই। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করি এই কাজ। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’

স্থানীয় বাসিন্দা শাজাহান আলী বলেন, ‘কবর খোঁড়া বড় দায়িত্বের কাজ। গ্রামের এসব মানুষ খবর পেলেই দৌড়ে আসে। আমরা তাদের জন্য দোয়া করি।’

মাওলানা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির জন্য কবর খোঁড়া নিঃসন্দেহে সওয়াবের কাজ। হাদিসে এসেছে—যাঁরা কবর খোঁড়েন, আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ, ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের শ্রীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে কারখানার ফটকের সামনে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকেরা। আন্দোলনের মুখে কারখানা কর্তৃপক্ষ প্রধান ফটক তালাবদ্ধ করে সটকে পড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে শিল্প ও থানা-পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসেছেন। আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের সাইটালিয়া গ্রামে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানায় এই ঘটনা ঘটে।

কারখানার নারী শ্রমিক মিনারা আক্তার বলেন, ‘অক্টোবর ও নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করে নাই। এক মাসের বেতন না পেলে আমাদের চলা খুবই কঠিন হয়। আমাদের নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়। আর সেখানে কারখানা কর্তৃপক্ষ দুই মাসের বেতনভাতা বকেয়া রেখেছে। আজ সকালে শ্রমিকেরা জড়ো হলে তারা পালিয়ে যায়।’

মিন্টু নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘এই কারখানায় আমরা তিন বছর ধরে চাকরি করছি। আমাদের বেতনের বাইরে কোনো সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে না। তবু পেটের দায়ে চাকরি করি। দুই মাসের বেতন বকেয়া। আমাদের তো পেট আছে, সন্তান-সংসার আছে। এক মাস দোকান বাকি পরিশোধ করতে না পারলে পরের মাসে আর দোকানি বাকি দেয় না। আমরা কী অবস্থায় আছি, একবার ভাবুন। বেতন পরিশোধ না করে তারা পালিয়ে গেছে।’

আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে ক্যাটেক্স ফ্যাশন ক্লোথিং লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেহেদী হাসান বলেন, ‘এত দিন ধরে ঋণ করে বলে-কয়ে দোকান থেকে বাকি নিয়ে চলছি। আর পারছি না। এখন দোকান বাকি দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতন নিয়ে কমপক্ষে ১০টি তারিখ দিছে। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ করেনি। শেষে আজ বেতন পরিশোধের কথা ছিল। কিন্তু তারা কারখানা ফটকে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে গেছে।’

কারখানার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. বুলবুল হাসান বলেন, ‘ব্যাংকের সমস্যার কারণে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। আশা করি, আজকের মধ্যে নভেম্বর মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারব।’ বিনা নোটিশে কারখানার ফটক কেন তালাবদ্ধ? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমি বলতে পারব না।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাছির আহমদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত