Ajker Patrika

হাজং ভাষা টিকিয়ে রাখতে কলেজছাত্র অন্তরের চেষ্টা

সাইফুল আরিফ জুয়েল, নেত্রকোনা
আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩: ২৬
হাজং ভাষা টিকিয়ে রাখতে কলেজছাত্র অন্তরের চেষ্টা

পাহাড়ি অঞ্চলের হাজং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে বসেছে। এই ভাষা টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অন্তর হাজং। বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে নিজের গোত্রের বিভিন্ন বয়সীদের হাজং ভাষা শেখাচ্ছেন তিনি। 

অন্তর হাজংয়ের বাড়ি নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নের গারো পাহাড়ি অঞ্চল খুজিগড়া গ্রামে। তাঁর বাবা রহিন্দ্র হাজং ও মা হিন্দুবালা হাজং দিনমজুরের কাজ করেন। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সবার ছোট অন্তর। তিনি ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজে ব্যবস্থাপনা বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষ বর্ষে পড়াশোনা করছেন। 

হাজং ভাষা রক্ষায় অন্তর ছুটছেন নেত্রকোনা, শেরপুর ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামে। শতাধিক গ্রামে তিনি হাজং ভাষা শেখানোর চেষ্টা করছেন। দিনমজুর মা-বাবার সন্তান অন্তর শিক্ষার্থী পড়ানোর আয়েই হাজং ভাষা রক্ষার ব্যয় নির্বাহ করছেন। অন্তর হাজংয়ের ভাষা টিকিয়ে রাখার চেষ্টাকে প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলছেন শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা। 

হাজংদের পাশাপাশি আরেকটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী গারোর মানুষেরা নিজেদের ভাষায় লেখাপড়াতেও এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু হাজংদের সবাই বাংলা ভাষায় নির্ভরশীল হতে হতে মায়ের মুখের ভাষাকেই ভুলতে বসেছে। বিষয়টি প্রায় পাঁচ বছর আগে অন্তরকে আলোড়িত করে। সেই থেকে প্রতিজ্ঞা করে নেমে পড়েন নিজেদের ভাষার বিস্তারে। প্রথমে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বগাউড়া, গোপালপুর, ছনগড়া, আড়াপাড়া, বিজয়পুর, লক্ষ্মীপুর, ভবানীপুরসহ সীমান্তঘেঁষা গ্রামগুলোতে হাজং ভাষার চর্চা করানো শুরু করেন। 

কখনো বাড়ির উঠানে, কখনো গাছের নিচে, যখন যেখানে সুবিধা সেখানেই গ্রামের শিশু থেকে সব বয়সীদের হাজং ভাষা রপ্ত করানোর কাজ করেন অন্তর। এভাবেই তিনি নেত্রকোনা, শেরপুর ও সুনামগঞ্জের ১০১টি গ্রামের ২০ হাজার হাজং নৃগোষ্ঠীর মানুষের কাছে যেতে থাকেন। হাজং ভাষায় নিজস্ব বর্ণ না থাকায় বয়োবৃদ্ধদের কাছ থেকে ভাষা সংগ্রহ করেই হাজংভাষা রক্ষার সংগ্রাম করে চলেছেন তিনি। 

দুর্গাপুর উপজেলা সদর থেকে বিজয়পুর হয়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত লাগোয়া গারো পাহাড়ের ঢালুতে খুজিগড়া গ্রাম। গত রোববার এই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে হাজং জনজাতির ছেলে, মেয়ে, গৃহিণী থেকে বিভিন্ন বয়সী ২০ থেকে ২২ জন বাড়ির উঠানে বসে হাজং ভাষা চর্চা করছেন। কখনো গল্পের ছলে, কখনো কেউ হাজং ভাষায় গীত করছেন, গান করছেন, কেউবা কবিতা পড়ছেন। বাকিরা শুনছেন। শেষে গীত, কবিতা, গান, গল্পে থাকা হাজং ভাষার শব্দগুলো নিয়ে চলছে আলোচনা। 

কথা হয় হাজং অধ্যুষিত খুজিগড়া গ্রামের বাসিন্দা গৃহিণী নিত্যমনি হাজংয়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের মায়েরা নিজেরা নিজেরা হাজং ভাষাতেই কথা বলত। দাদিদের কাছেও শুনেছি। আমরাও কিছু কিছু বলতাম। কিন্তু এখনতো বাংলাতেই কথা বলি। আমাদের সন্তানেরাও বাংলাতেই সব সময় কথা বলে। অন্তর হাজং ৫ বছর ধরে আমাদের গ্রামে সব বয়সীদেরই বাড়ির উঠানে সবাইকে জড়ো করে হাজং ভাষার চর্চা করিয়ে আসছেন। আমরাও শিখতেছি।’ 

খুজিগড়া গ্রামের দিনমজুর রত্না হাজং বলেন, ‘মনের কথা পুরোপুরি বুঝিয়ে বলতে গেলে নিজের মায়ের ভাষাতেই বুঝিয়ে বলা যায়। অন্য ভাষাতে ততটা দরদ দিয়া বোঝানো যায় না। অন্তর ভালো কাজ করতেছে। আমরা শিখতেছি। শিশুরাও শিখতেছে।’ 

কলেজ শিক্ষার্থী মেয়ে পুষ্পাঞ্জলি হাজংকে নিয়ে নিজেদের ভাষা চর্চায় যোগ দেন বেসরকারি চাকরিজীবী বেনতা হাজং। বেনতা বলেন, ‘মা ও মেয়ে একসঙ্গে শিখছি। অন্তর এলাকার বয়স্ক মানুষের কাছ থেকে হাজং ভাষার বিভিন্ন শব্দ সংগ্রহ করেছেন। তিনি আমাদের এই শব্দগুলো গল্পের ছলে বলতে বলতে শেখাচ্ছেন। তবে এভাবে কত দিন চলবে। আমদের ভাষার বর্ণ দরকার। নইলে টেকানো যাবে না। অন্তর নিজে থেকে যে উদ্যোগটা নিয়েছেন এটাকে এগিয়ে নিতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।’ 

কলেজ শিক্ষার্থী সুস্মিতা হাজং বলেন, ‘অনেক পাখি, বিভিন্ন খাবার, খেলা, পশুসহ আমাদের জীবন চলার সংস্কৃতিগত ভাষার অনেক শব্দ শিখতেছি অন্তর হাজংয়ের আয়োজনের ভাষা চর্চা থেকে। তিনি সপ্তাহে আমাদের গ্রামে দুদিন চর্চা করান। ভালোই লাগে। সবাই একসঙ্গে বসে গল্প করতে শিখি। নিজের মায়ের ভাষাতে কথা বলার আনন্দই আলাদা।’ 

ভবানীপুরের অনিতা হাজং বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অন্য জনজাতির মানুষের ভাষা সংরক্ষণে সরকার যেমন উদ্যোগ নিয়ে পাঠ্যপুস্তক করে প্রাক প্রাথমিকে পড়ানোর ব্যবস্থা করেছে। তেমনি আমাদের ভাষার জন্যও উদ্যোগ নিতে হবে।’ 

হাজং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষকে নিজেদের ভাষা শিক্ষা দিচ্ছেন অন্তর হাজং। ছবি: আজকের পত্রিকাএ বিষয়ে অন্তর হাজং বলেন, ‘নিজস্ব ভাষা রক্ষায় পাখি, বিভিন্ন খাবার, সংস্কৃতির বিষয়ে হাজং ভাষায় বলা শব্দগুলোকে সবার সঙ্গে পরিচিত করার মাধ্যমেই চলছে এই ভাষা চর্চা।’

হাজং অধ্যুষিত বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে ভাষা চর্চা করানোর কথা জানিয়ে হাজং যুবক অন্তর বলেন, ‘গত ৫ বছরে ৩ জেলার ১০১টি গ্রামে গিয়েছি। এখনো যাচ্ছি। কিন্তু আমি একা এত গ্রামে যত দিন যাওয়া প্রয়োজন তা যেতে পারছি না। বারবার তাদেরকে নিয়ে বসা দরকার। কিন্তু ততটা পারছি না। আমার পরিবার দরিদ্র, দিনের রোজগারে দিন চলে। এত টাকা-পয়সাও নাই। তবে আমি আমার সাধ্যমতো ভবিষ্যতেও এই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।’ গবেষণার মাধ্যমে বর্ণ তৈরি করে হাজং ভাষা রক্ষায় সরকারের উদ্যোগ দাবি করেন অন্তর। 

শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, হারাতে বসা ভাষা রক্ষায় অন্তর হাজংয়ের উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘অন্তর হাজং যে তাদের ভাষাটা ধরে রাখতে কাজ করতেছে এটা প্রশংসনীয়। যদিও তার ভালো ইনকাম সোর্স নাই। একজন শিক্ষার্থী হয়েও নিজ উদ্যোগে কাজ করে যাচ্ছে। এটা আসলে অসাধারণ। অন্তর হাজংকে ধন্যবাদ জানাই।’ 

মিজানুর রহমান খান আরও বলেন, ‘আশা করছি অন্তরের মাধ্যমে হাজং ভাষাটা একটা পর্যায়ে আসবে। একটা পর্যায়ে হয়তো সরকারও উদ্যোগ নেবে। ইতিমধ্যে কয়েকটি ভাষার স্বরলিপির আলোকে বইও তৈরি করা হয়েছে। তা পাঠ্যবই হিসেবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এলাকায় পাঠদানে ব্যবহৃত হচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এলাকায় তাঁদেরই জনজাতির শিক্ষক থাকেন। তাঁদের মাধ্যমেই আপাতত পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সড়কের ওপর রাখা ধানে দুর্ঘটনা, কুলাউড়ায় দুই চাচাতো ভাই নিহত

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সড়কের ওপর রাখা ধানে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুই চাচাতো ভাই নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়নের তালতলা এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. গিয়াস উদ্দিন (৫৫) ও তাঁর চাচাতো ভাই জালাল আহমদ (৪৫)। তাঁরা দুজনই শরীফপুর ইউনিয়নের তেলিবিল (তালতলা) গ্রামের বাসিন্দা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মোটরসাইকেলে করে বটতলা বাজারে যাচ্ছিলেন গিয়াস ও জালাল। তালতলা এলাকায় সড়কের ওপর জমি থেকে কাটা ধানের গাদা রাখা ছিল। এতে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনে থেকে আসা একটি ব্যাটারিচালিত টমটমের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। দুই ভাই গুরুতর আহত হন। স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. লোকমান আহমদ বলেন, একই পরিবারের দুই সদস্যের মৃত্যুতে গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

কুলাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামান মোল্যা বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

স্থানীয় সচেতন নাগরিকেরা জানান, আমন মৌসুমে ধান কাটার সময় বিভিন্ন সড়কে ধান ও খড় রাখা সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কুয়াশায় খড় পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়ে। এ বিষয়ে প্রশাসন বা স্থানীয়ভাবে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় অনেকেই প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নরসিংদীতে সংঘাত বন্ধে বিশেষ কম্বিং অপারেশন চালানো হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

নরসিংদী প্রতিনিধি
আজ সকালে নরসিংদী পুলিশ লাইনস পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে নরসিংদী পুলিশ লাইনস পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর চরাঞ্চলে চলমান সংঘাত, দখলবাজি ও সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশেষ কম্বিং অপারেশন চালানো হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে নরসিংদী পুলিশ লাইনস পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এই তথ্য জানান।

পরিদর্শনকালে তিনি পুলিশ লাইনসে বৃক্ষরোপণ করেন এবং হাসপাতাল, রেশন স্টোর, রান্নাঘর, খাবারের মান, পুকুর, প্রশিক্ষণের মাঠসহ বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে দেখেন। সামগ্রিক পরিস্থিতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। এ সময় নরসিংদীর পুলিশ সুপারসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘নরসিংদীতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা এখন রায়পুরা উপজেলা। চরাঞ্চলে সন্ত্রাসীদের আড্ডা, আধিপত্য বিস্তার ও অবৈধ অস্ত্রের বিস্তার উদ্বেগজনক। যত দ্রুত সম্ভব কম্বিং অপারেশন চালিয়ে সব সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

রায়পুরার চরাঞ্চলে দীর্ঘদিনের সংঘাত মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার চরাঞ্চলকে সন্ত্রাসমুক্ত করে স্বাভাবিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে সমন্বিত অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা মনে করেন, ঘোষিত বিশেষ কম্বিং অপারেশন বাস্তবায়িত হলে বহুদিনের সশস্ত্র সংঘাত, গোলাগুলি ও সন্ত্রাসী তৎপরতার অবসান ঘটবে এবং নরসিংদীর চরাঞ্চলে শান্তি ফিরে আসবে।

পরে দুপুর ১২টার দিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জেলা কারাগার পরিদর্শন করেন। বেলা ২টায় তিনি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অংশ নেন, যেখানে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, কৃষি উৎপাদন, সার-বীজ সরবরাহ ও সেচ ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাদকসেবী ও বখাটের উৎপাতে অতিষ্ঠ শহরবাসী, প্রতিকার চাইলেন পুলিশ সুপারের কাছে

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
মোহনগঞ্জ থানা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মোহনগঞ্জ থানা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাদকে ছেয়ে গেছে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পৌর শহর। দিনরাত চলে মাদকসেবী ও বখাটেদের উৎপাত। এতে অতিষ্ঠ শহরবাসী। এ ছাড়া শহরের একাধিক স্থানে চলে অসামাজিক কার্যকলাপ। এসব স্থানে মাদকসেবীদের আড্ডা বসে। প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় এসব অসামাজিক কার্যকলাপ দীর্ঘদিন ধরে চললেও স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এসব বন্ধে শহরের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে এবার পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছেন।

শহরের ৮০ জন বাসিন্দা স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগপত্র গত রোববার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এর অনুলিপি জেলা প্রশাসক, সংশ্লিষ্ট থানার ওসি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরেও পাঠানো হয়েছে।

আজ বুধবার জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) হাফিজুল ইসলাম বলেন, এসব ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ মিলে যৌথ অভিযান পরিচালনা করলে আশানুরূপ ফল আসবে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য থানা-পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, পৌর শহরে মাদকসেবীর সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। মাদকের টাকা জোগাড় করতে তরুণেরা অপরাধে জড়াচ্ছেন। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীরাও মাদকে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মোহনগঞ্জ থানার ওসির দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুজ্জামান বলেন, দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমেনা খাতুন বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সঙ্গে কথা বলব। যৌথভাবে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা প্রশাসক মো. সাইফুর রহমান বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট ইউএনওর সঙ্গে কথা বলেছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পানিতে ডুবে প্রাণ গেল মামা-ভাগনের

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে পুকুরে ডুবে শাহবাব মন্ডল (আড়াই বছর) ও আবু তোহা মন্ডল (৩) নামের দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের যাদুরচর নতুন গ্রাম এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

শাহবাব মন্ডল উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ধনারচর নতুন গ্রামের শাহজাহান মন্ডলের ছেলে এবং আবু তোহা মন্ডল একই গ্রা‌মের আবু তালেবের ছেলে। এই দুই শিশু সম্পর্কে মামা-ভাগনে।

পরিবারের বরাত দিয়ে যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী জানান, বুধবার সকালে ওই দুই শিশু তালেব মন্ডলের বাড়িতে খেলা করছিল। এ সময় সবার অজান্তে তারা বাড়ির পা‌শে পুকুরের পানিতে পড়ে যায়। স্বজনেরা পুকুর থে‌কে দুই শিশু‌কে উদ্ধার করে হাসপাতালে নি‌য়ে যান। দা‌য়িত্বরত চিকিৎসক তাঁদের মৃত ঘোষণা করেন।

খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক একই এলাকার বাসিন্দা ও কুড়িগ্রাম-৪ আসনের বিএনপির মনোনীত সংসদ সদস‌্য প্রার্থী আজিজুর রহমান ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তি‌নি শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

রৌমারী থানার উপপ‌রিদর্শক শাহ‌নেওয়াজ হো‌সেন ব‌লেন, খবর পে‌য়ে ঘটনাস্থ‌লে পু‌লিশ পাঠা‌নো হ‌য়ে‌ছে। সহকারী ক‌মিশনার (ভূ‌মি) ঘটনাস্থ‌লে গি‌য়ে‌ছেন। দুই শিশুর মৃত‌্যুর ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনি ব‌্যবস্থা নেওয়া হ‌বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত