Ajker Patrika

ইউএনওকে ফাঁসাতে গিয়ে কৃষকলীগ নেতা নিজেই ফাঁসলেন

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
ইউএনওকে ফাঁসাতে গিয়ে কৃষকলীগ নেতা নিজেই ফাঁসলেন

নেত্রকোনার মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আলম মিয়াকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফাঁসলেন নূরুল আলম কামাল মণ্ডল নামে এক কৃষক লীগ নেতা।

ওই কৃষক লীগ নেতা প্রতিবেশী খায়রুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে ইউএনওর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ দেন জেলা প্রশাসকের কাছে। পরে ওই অভিযোগের সূত্রে গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে এলাকায় শুরু হয় তোলপাড়।

প্রতারণা করে তাঁর নাম ব্যবহার করে মিথ্যা অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরে খায়রুল ইসলাম চট্টগ্রাম থেকে সম্প্রতি এলাকায় এসেছেন। খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন তাঁর নাম ব্যবহার করে কৃষক লীগ নেতা নূরুল আলম কামাল মণ্ডল ইউএনওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় ওই কৃষক লীগ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেন খায়রুল ইসলাম।

আজ শনিবার (৫ অক্টোবর) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস।

ভুক্তভোগী খায়রুল ইসলাম নেত্রকোনার মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের মৃত সুলতু মিয়ার ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে পরিবারসহ বসবাস করেন এবং সেখানেই দিনমজুরের কাজ করেন।

অভিযুক্ত নূরুল আলম কামাল মণ্ডল মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামের মাওলানা আব্দুল মন্নাফের ছেলে। কামাল মণ্ডল মদন উপজেলা কৃষক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত।

স্থানীয় লোকজন ও লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জলমহাল থেকে রাজস্ব আত্মসাতের কথা উল্লেখ করে গত ৪ সেপ্টেম্বর মদনের ইউএনওর বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন গোবিন্দশ্রী গ্রামের খায়রুল ইসলাম। কিন্তু খায়রুল ইসলাম কয়েক বছর ধরে জীবিকার তাগিদে পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামে বসবাস করছেন। ইউএনওর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। খায়রুল ইসলাম নিরক্ষর মানুষ। তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্রে টিপসহি থাকলেও অভিযোগে খায়রুল ইসলামের স্বাক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় সমালোচনার সৃষ্টি হলে খায়রুল ইসলামের সঙ্গে স্থানীয় সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক নেতা–কর্মীরা যোগাযোগ করলে তিনি চট্টগ্রাম থেকে মদন আসেন। পরে জানতে পারেন তার নাম ঠিকানা ব্যবহার করে কৃষক লীগ নেতা গোবিন্দশ্রী গ্রামের প্রতিবেশী নূরুল আলম কামাল মণ্ডল ইউএনওর বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগটি দায়ের করেন। প্রতারণা করে হয়রানি করার জন্য কামালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে গত ২ অক্টোবর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন খায়রুল ইসলাম।

খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামে দিনমজুরির কাজ করে সংসার চালাই। ৬ মাস আগে একবার বাড়িতে এসেছিলাম। এর পরে আর বাড়ি আসা হয়নি। এখন আমার নাম ঠিকানা ব্যবহার করে ইউএনও স্যারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি তো ইউএনও স্যারকে চিনি না। জীবনে কখনো তাঁকে দেখিনি। আমি জীবনে ডিসি স্যারের অফিসে যাইনি। বাড়িতে এসে জানতে পারলাম প্রতিবেশী কৃষক লীগ নেতা কামাল মণ্ডল আমার নাম ব্যবহার করে ডিসি অফিসে অভিযোগ করেছে। ওই ভুয়া অভিযোগপত্রে দেখলাম আমার স্বাক্ষর রয়েছে। অথচ আমি নিরক্ষর মানুষ, ভোটার আইডিতেও টিপসই দিয়েছি। তাই এই ঘটনায় জড়িত কামাল মণ্ডলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ডিসি মহোদয়ের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। যেন এমন প্রতারণা করার সাহস আর কেউ না করে।’

গোবিন্দশ্রী গ্রামের মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘কৃষক লীগ নেতা কামাল মণ্ডল দলীয় প্রভাবে এলাকার খাল দখল ও খাস জমি দখল করে বিক্রি করেছে। সব সময় এলাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরি করে রাখে। প্রভাব টিকিয়ে রাখতে কয়েক মাস আগে সে সাংবাদিকের কার্ড নিয়েছে। খায়রুল ইসলামের মতো একজন নিরীহ মানুষের নাম ব্যবহার করে ইউএনওর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করার প্রতিবাদ জানাই।’

অভিযুক্ত কৃষক লীগ নেতা কে এইচ এম নূরুল আলম কামাল জানান, ‘অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এটা কাঁদা ছোড়াছুড়ি ছাড়া আর কিছু নয়।’

মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহ আলম মিয়া জানান, ‘গত মাসে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার খবর শুনেছি। আমি কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে অবশ্যই আমার বিরুদ্ধে যথাযথ নেবেন। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কেউ এ কাজ করে থাকলে তদন্তের মাধ্যমে তা বের হয়ে আসুক। অপরাধী যেই হোক তার বিরুদ্ধে যেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস জানান, ‘দুটো অভিযোগই পেয়েছি। তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে শিশুকে গলা কেটে হত্যা, সহপাঠী আটক

নোয়াখালী প্রতিনিধি
বাটরা আল মাদ্রাসাতুল ইসলামিয়া মখযানুল উলুম মাদ্রাসা। ছবি: সংগৃহীত
বাটরা আল মাদ্রাসাতুল ইসলামিয়া মখযানুল উলুম মাদ্রাসা। ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার চাষিরহাট ইউনিয়নে মাথায় টুপি পরাকে কেন্দ্র করে নাজিম উদ্দিন (১৩) নামের এক মাদ্রাসা ছাত্রকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তারই সহপাঠীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত আবু সায়েদকে (১৫) আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার বাটরা আল মাদ্রাসাতুল ইসলামিয়া মখযানুল উলুম মাদ্রাসায় ঘুমের মধ্যে ছুরি দিয়ে গলা কেটে নাজিমকে হত্যা করা হয়।

নিহত নাজিম উদ্দিন ওই উপজেলার চাষিরহাট ইউনিয়নের জাহানাবাদ গ্রামের ওবায়দুল্যার ছেলে।

পুলিশ জানায়, নাজিম ও সায়েদ ওই মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের ছাত্র। এর মধ্যে নাজিম ২২ পারা কোরআন মুখস্থ শেষ করে এবং সায়েদ ২৩ পারা শেষ করে। গত ১০-১৫ দিন আগে টুপি পরাকে কেন্দ্র করে নাজিম ও সায়েদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে হুজুর দুজনের মধ্যে বিবাদ মীমাংসা করে দেন। কিন্তু সায়েদের মধ্যে রাগ থেকে যায়। তাই সে বাজার থেকে কিছুদিন আগে ৩০০ টাকা দিয়ে একটি নতুন ছুরি কিনে নিয়ে আসে এবং নাজিমকে হত্যার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে। রোববার রাতে নাজিম ঘুমিয়ে পড়লে ঘুমের মধ্যে তার গলা কেটে তাকে হত্যা করে সায়েদ। গোঙানি শুনতে পেয়ে হুজুর ও অন্য ছাত্ররা জেগে যায়। পরে ছুরিসহ সায়েদকে আটক করা হয়।

সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আবু সায়েদকে আটক করে। সোমবার ক্রাইমসিনের প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থলে গিয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মেট্রোরেল বন্ধের প্রভাব, সকাল থেকেই রাজধানীতে তীব্র যানজট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সকালে যানজটে অফিসগামী মানুষ বিপাকে পড়েন। ছবি: ফেসবুক
সকালে যানজটে অফিসগামী মানুষ বিপাকে পড়েন। ছবি: ফেসবুক

রাজধানী ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় মেট্রো লাইনের একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে দুর্ঘটনায় এক পথচারী নিহত ঘটনায় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। এর মধ্যে আজ সোমবার সকাল থেকে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) লাইন মেরামত শুরু করে। এর ফলে খেজুরবাগান থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সড়ক আংশিকভাবে বন্ধ হওয়ায় ওই এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

গতকাল রোববার পথচারী নিহতের ঘটনার পর মেরামতের কাজ শুরু হলে সকাল থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, রেইনবো, বিজয় সরণি, উড়োজাহাজ মোড় এবং আগারগাঁও এলাকায় গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা যায়। অফিস সময়ে এসব রাস্তায় যানজটের কারণে সাধারণ যাত্রী ও অফিসগামী মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন।

তেজগাঁও ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, মেট্রোরেলের আংশিক বন্ধ থাকার কারণে সাধারণ যাত্রী বিভিন্ন ধরনের বিকল্প যানবাহনে রওনা হচ্ছেন। ফলে রাস্তায় গাড়ির চাপ বেড়ে যানজটের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ ছাড়া রেইনবো ক্রসিং এলাকায় একটি বড় লরি নষ্ট হয়ে পড়ায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থেকে নামা যান চলাচল ব্যাহত হয়।

অন্যদিকে, যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে লেক রোড এলাকায় হেঁটে, পিকআপ ও ট্রাকযোগে বিপুলসংখ্যক লোক সমাগম হওয়ায় ওই সড়কেও যানজটের সৃষ্টি হয়।

জনগণের ভোগান্তি কমাতে ট্রাফিক তেজগাঁও বিভাগ মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পশ্চিম পাশে বিকল্প ডাইভারশন চালু করে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা যানজট নিরসনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলে জানিয়েছে বিভাগটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল স্বাভাবিক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানী ফার্মগেটে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে এক পথচারী নিহতের পর বন্ধ থাকা মেট্রোরেল সেবা আজ সোমবার সকাল ১১টা থেকে পুনরায় চালু হয়েছে। উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল এখন নিরবচ্ছিন্নভাবে চলাচল করছে।

আজ ঢাকা ম্যাস টারজেট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

ডিএমটিসিএল এক বিবৃতিতে জানায়, ‘মেট্রোরেলের সম্মানিত যাত্রী সাধারণের জ্ঞাতার্থে জানানো যাচ্ছে যে, সকাল ১১টা থেকে উত্তরা উত্তর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল সেবা নিরবচ্ছিন্নভাবে পুনরায় চালু করা হয়েছে। সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’

এর আগে রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের ৪৩৩ নম্বর পিয়ার থেকে একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে আবুল কালাম (৩৫) নামের এক পথচারীর মৃত্যু হয় এবং দু’জন আহত হন। এ ঘটনার পর নিরাপত্তার স্বার্থে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

দীর্ঘ প্রায় তিন ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর বিকেল ৩টার দিকে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সীমিত পরিসরে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। পরে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে মতিঝিল থেকে শাহবাগ পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু করা হয়।

তবে বিজয় সরণি থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত অংশে মেরামত কাজ চলমান থাকায় গতকাল দুপুর থেকে ওই অংশে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। আজ সকালেই মেরামত কাজ শেষ হওয়ার পর পুরো রুটে সেবা স্বাভাবিক করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নেছারাবাদের ৩টি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু এখন ‘মৃত্যুফাঁদ’

নেছারাবাদ (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
সাগরকান্দা, শশিদ ও জিনুহার তিনটি গ্রামের মানুষ চলাচল করে এই পুল দিয়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাগরকান্দা, শশিদ ও জিনুহার তিনটি গ্রামের মানুষ চলাচল করে এই পুল দিয়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের সাগরকান্দা বাজার হয়ে নাথপাড়া থেকে জিনুহার এবং দুর্গাকাঠি রাস্তার খালের ওপর থাকা লোহার ভিমের স্লিপারের তিনটি সেতু (পুল) বর্তমানে ‘মৃত্যুফাঁদে’ পরিণত হয়েছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোর ওপর সুপারিগাছ ও বাঁশের হাতল দিয়ে কোনোভাবে পারাপার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এমন ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে চলে বিদ্যালয়ের ছোট ছোট শিক্ষার্থীরাও। ছবি: আজকের পত্রিকা
এমন ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়ে চলে বিদ্যালয়ের ছোট ছোট শিক্ষার্থীরাও। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন তিনটি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে সাগরকান্দা স্কুলের পরের নাথপাড়ার প্রথম সেতুটি। তবে এ বিষয়ে জনপ্রতিনিধিদের কোনো মাথাব্যথা নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় যুগ আগে এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত এই তিনটি সেতু সাগরকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশের তিন গ্রামের মানুষের প্রধান যোগাযোগমাধ্যম। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সেতুগুলো নড়বড়ে হয়ে পড়েছিল। কয়েক বছর আগে বন্যায় গাছ পড়ে নাথপাড়া প্রথম সেতুটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এম কে সবুর তালুকদার সেতুটি মেরামতের কথা বলে এর লোহার ভিম, অ্যাঙ্গেল ও স্লিপারগুলো খুলে নিয়ে যান। কিন্তু এরপর আর মেরামতের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। একই কারণে বাকি দুটি সেতুও সংস্কারের অভাবে বেওয়ারিশ অবস্থায় পড়ে আছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. মজিবুর রহমান মৃধা বলেন, ‘এই রাস্তার সবচেয়ে ভয়াবহ পুল নাথপাড়ার প্রথমটি। পুলের অবস্থা এত খারাপ যে বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারে না, অসুস্থ মানুষ হাসপাতালে নিতে পারি না। চেয়ারম্যানরা মেরামতের নামে লোহার ভিম খুলে নিয়ে গেছে, তারপর আর কেউ খোঁজ নেয়নি। একই অবস্থায় বাকি দুটি পুল রয়েছে।’

আরেক বাসিন্দা মো. জিয়া উদ্দিন তৌহিদ বলেন, ‘এই রাস্তাটি তিনটি গ্রামের মানুষের একমাত্র যোগাযোগ পথ। এখানে তিনটি মন্দির ও একটি স্কুল আছে। পুল না থাকায় আমরা প্রতিদিন মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করি।’

উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, সাগরকান্দা বাজার থেকে এক কিলোমিটার কার্পেটিং সড়ক এবং এ তিনটি সেতু নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছিল। কাজটি মেসার্স ইফতি ইটিসিএল নামের প্রতিষ্ঠানের নামে টেন্ডার হয়, যার মালিক সাবেক সংসদ সদস্যের ভাই মিরাজুল ইসলাম। কিন্তু দুর্নীতির মামলায় ঠিকাদারের লাইসেন্স জটিলতা দেখা দিলে প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন ব্যাপারী বলেন, ‘টেন্ডার হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু মামলার কারণে কাজ হয়নি। পুলের লোহার ভিম ও অ্যাঙ্গেল কারা খুলে নিয়ে গেছে, তা আমার জানা নেই।’

সাবেক চেয়ারম্যান এম কে সবুর তালুকদারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

উপজেলা এলজিইডি অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী বিকাশ চন্দ বলেন, ‘কোটি টাকার ওপরে টেন্ডার হয়েছিল। পরে ঠিকাদারি লাইসেন্সের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে পুনরায় বিবেচনা করা হবে।’

স্থানীয়দের জোর দাবি, দ্রুত সেতুগুলো পুনর্নির্মাণ না হলে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে এবং তিনটি গ্রামের যোগাযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত