Ajker Patrika

বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

হারুনূর রশিদ, রায়পুরা (নরসিংদী)
বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

আজ ২০ আগস্ট বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের ৫৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী। মুক্তিযুদ্ধে অসীম সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত করে। তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাহমুদাবাদে ম্যুরাল স্থাপন, সড়ক ও গ্রামের নামকরণ এবং ২০০৮ সালে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর।

দিবসটি পালনে বুধবার (২০ আগস্ট) বিকেলে রায়পুরায় স্থানীয় উদ্যোগে আলোচনা সভা, দোয়া ও মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ভৈরবে এসে মুক্তিকামী যুবকদের সংগঠিত করেন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানের করাচির মাসরুর বিমানঘাঁটি থেকে তিনি প্রশিক্ষণার্থী রশিদ মিনহাজের কাছ থেকে একটি টি-৩৩ প্রশিক্ষণ বিমান ছিনিয়ে নিয়ে মুক্তাঞ্চলে আসার চেষ্টা করেছিলেন। তবে ভারত সীমান্ত থেকে মাত্র ৩৫ মাইল দূরে থাট্টা এলাকায় বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। পরে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় অর্ধ মাইল দূরে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

১৯৪১ সালের ২৯ নভেম্বর ঢাকার আগাসাদেক রোডে জন্মগ্রহণ করেন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান। পড়াশোনা শুরু করেন ঢাকার কলেজিয়েট স্কুলে এবং পরে ভর্তি হন পাকিস্তানের সারগোদা এয়ার ফোর্স পাবলিক স্কুলে। ১৯৬১ সালে তিনি যোগ দেন পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে।

১৯৬৩ সালে রিসালপুর পিএএফ কলেজ থেকে পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশনপ্রাপ্ত হন। পরবর্তীতে করাচির মৌরিপুর (বর্তমান মাসরুর) এয়ারবেজের ২ নম্বর স্কোয়াড্রনে জেনারেল ডিউটি পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পান। তিনি ছিলেন একমাত্র বাঙালি পাইলট, যিনি ইরানের রানী ফারাহ দিবার সম্মানে আয়োজিত পেশোয়ারের বিমান মহড়ায় অংশ নেন।

শহীদ হওয়ার পর পাকিস্তান সরকার তার মরদেহ করাচির মাসরুর বেসের চতুর্থ শ্রেণির কবরস্থানে সমাহিত করে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর, ২০০৬ সালের ২৪ জুন তার দেহাবশেষ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়। পরদিন ২৫ জুন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পুনঃদাফন করা হয়। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের বীরত্বগাথা আজও সমগ্র জাতির কাছে গৌরব ও অনুপ্রেরণার প্রতীক হয়ে আছে।

মতিউর

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার রামনগর (বর্তমান বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর নগর) গ্রামে কেটেছে এই বীরের শৈশবকাল। পরে গ্রামের নামকরণও হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর নগর। তার স্মৃতিকে ধরে রাখতে রামনগর হাইস্কুলের পাশে ২০০৮ সালের ৩১ মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয় ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘর।’ তবে দীর্ঘ ১৬ বছর পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি প্রতিষ্ঠানটি।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, পাঠাগারে চার হাজারের বেশি বই থাকলেও যাদুঘরে নেই শহীদ মতিউর রহমানের কোনো ব্যবহারিক স্মৃতিচিহ্ন। গ্রন্থাগারের পাঠকসংখ্যাও সীমিত। ভবনটি স্কুল প্রাচীরের ভেতরে হওয়ায় সাধারণ দর্শনার্থীরা প্রবেশে অসুবিধায় পড়েন।

স্থানীয়রা বলছেন, যথাযথ উদ্যোগ ও সরকারি মনোযোগ পেলে এই গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে।

মতিউরের-বাড়ি

স্থানীয় পাঠক ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমাদের গ্রামের গর্ব বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের নানা বিষয় নিয়ে বই পড়ার সুযোগ মিলছে ঠিকই, তবে যাদুঘরে তার কোনো স্মৃতি না থাকায় হতাশ লাগে।’

লাইব্রেরিয়ান বিউটি আক্তার বলেন, ‘এখানে বর্তমানে ৪ হাজার ২০০ বই রয়েছে। প্রতিদিন ২০-২৫ জন পাঠক আসেন। কিন্তু ২০০৮ সালের পর নতুন বই আসেনি। ভবনের ভেতরে বৃষ্টির পানি জমে দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেশির ভাগ ইলেকট্রিক বাতিও নষ্ট।’

রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুদ বলেন, গ্রন্থাগার ও স্মৃতি যাদুঘরটি জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করা হবে।

মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ইউএনও মাসুদ রানা বলেন, ‘দিবসটি পালনে সরকারি নির্দেশনা না থাকলেও বিকেলে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে অংশ নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত