Ajker Patrika

নিখোঁজের পরদিন শীতলক্ষ্যায় ভেসে উঠল দুই শিশুর লাশ 

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নিখোঁজের পরদিন শীতলক্ষ্যায় ভেসে উঠল দুই শিশুর লাশ 

নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে নিখোঁজ দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। আজ সোমবার সকালে নদীর পূর্ব প্রান্তে বন্দর ময়মনসিংহ পট্টি এলাকার মরদেহ দুটি ভাসতে দেখে স্থানীয়রা। পরিবার ও স্থানীয়দের ধারণা—নদীতে গোসল করতে নেমে ডুবে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে তাদের।

গতকাল রোববার থেকে ওই শিশুরা নিখোঁজ ছিল। শিশু দুজন হলো—বন্দর থানার কাজীবাড়ি এলাকার বাবুল কাজীর ছেলে বিল্লাল (৮) ও একই এলাকার আলাউদ্দিন মাঝির ছেলে ইসমাইল (৭)।

স্থানীয়রা বলছে, গতকাল রোববার থেকে তারা নিখোঁজ ছিল। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাদের কোথাও পাওয়া যায়নি। সকালে শীতলক্ষ্যার তীরে দুজনের মরদেহ ভেসে ওঠে। খবর পেয়ে বন্দর ফায়ার সার্ভিসের একটি দল এসে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে।

বন্দর ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ফাইটার আব্দুল্লাহ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সকালে খবর পেয়ে আমরা ও নৌ-পুলিশ যৌথভাবে মরদেহ উদ্ধার করি। পরিবারের ভাষ্য, ছেলে দুজন একসঙ্গেই খেলাধুলা করত। সম্ভবত গোসল করতে গিয়েই তারা ডুবে মারা গেছে। মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। নৌ-পুলিশ পরে বন্দর থানার মাধ্যমে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে।’

এ বিষয়ে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিখোঁজ দুই শিশুর মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলার প্রস্তুতি চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পারিবারিক কলহ: শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া সেই যুবকের মৃত্যু

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি 
অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া যুবক রায়হান মিয়া। ছবি: সংগৃহীত
অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া যুবক রায়হান মিয়া। ছবি: সংগৃহীত

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় পারিবারিক কলহ ও পরকীয়ায় আসক্তির জেরে নিজের শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন দেওয়া যুবক মো. রায়হান মিয়া (২৭) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ভোরের দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে তাঁর মৃত্যু হয়। ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোকলেছুর রহমান মণ্ডল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

নিহত মো. রায়হান মিয়া উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের উত্তর ধোপাডাঙ্গা গ্রামের মো. চান মিয়ার ছেলে। তিনি স্ত্রী আদুরী বেগম ও দুই সন্তান নিয়ে সংসার করতেন।

রায়হান মিয়া দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে জুয়া ও অন্য নারীর প্রতি আসক্ত ছিলেন। দুই মাস আগে স্থানীয় এক নারীর সঙ্গে অবৈধ মেলামেশা করতে গিয়ে তিনি ধরা পড়েন। শাশুড়ির চাপে স্ত্রী আদুরী নিজের গয়না বিক্রি করে সে সময় স্বামীকে ছাড়িয়ে আনেন। এরপর রায়হান আরেক নারীকে বিয়ে করার জন্য স্ত্রীকে চাপ দেন। স্ত্রী রাজি না হলে তাঁদের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয় এবং রায়হান তাঁর স্ত্রীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালান।

অত্যাচার সইতে না পেরে আদুরী বেগম সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়ি চলে যান। গত মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকালের দিকে রায়হান মিয়ার বাবা চান মিয়া বড় শ্যালককে নিয়ে পুত্রবধূ আদুরীকে আনতে শ্বশুরবাড়ি যান। প্রথমে আদুরী আসতে না চাইলেও শ্বশুরের জোরালো চাপে তিনি শর্ত সাপেক্ষে রাজি হন যে রায়হান তাঁকে মারধর করতে পারবেন না এবং জুয়া খেলা বন্ধ করতে হবে।

এই পরিস্থিতিতে মো. রায়হান মিয়া মোবাইল ফোনে বাবাকে হুমকি দেন এবং স্ত্রীকে আনতে নিষেধ করেন। এরপরই ক্ষোভে বেলা ১১টার দিকে তিনি নিজের শরীরে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুন জ্বলতে থাকলে তিনি দ্রুত পুকুরের পানিতে লাফ দেন।

গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় রায়হানকে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে তিনি মারা যান।

মো. রায়হান মিয়ার বাড়িতে গেলে দেখা হয় তাঁর দুলাভাই মো. সবুজ মিয়ার সঙ্গে। তিনি কথা বলতে রাজি হননি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে। পরে দেখা হয় রায়হান মিয়ার কলেজপড়ুয়া বোনের সঙ্গে। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে চটে যান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হাকিম আজাদ বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো কোনো কাগজপত্র পাইনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাতের আঁধারে পুড়ল আটটি দোকান

তালা (সাতক্ষীরা)  প্রতিনিধি
অগ্নিকাণ্ডে আটটি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
অগ্নিকাণ্ডে আটটি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের হাজরাকাটি বাজারে গতকাল বুধবার (২৯ অক্টোবর) দিবাগত গভীর রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আটটি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে মিষ্টির দোকান, চায়ের দোকান, বিচালির (খড়) দোকানসহ আটটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাত আনুমানিক ৩টার দিকে বাজারে আগুন লাগে। খবর পেয়ে তালা ও ডুমুরিয়া ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। টিনের ছাউনি ও কাঠের বেড়ায় তৈরি দোকানগুলো মুহূর্তেই আগুনে পুড়ে যায়।

নৈশপ্রহরী কেরামত শেখ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমরা রাতে ডিউটি করছিলাম। উত্তর দিক থেকে কুকুর ডাকাডাকি করায় আমি সেদিকে যাই। ফিরে এসে দেখি সুরমানের (মিষ্টির দোকানদার) দোকানের পেছন থেকে আগুন জ্বলছে। চিৎকার দিলে লোকজন ছুটে আসে এবং ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেওয়া হয়।’

অগ্নিকাণ্ডে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মিষ্টির দোকানের মালিক সুরমান গাজী। তিনি বলেন, ‘আমার দোকানের সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমি পথে বসে গেলাম।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপা রানী সরকার, তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইনউদ্দিন এবং জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. মাহমুদুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের খোঁজখবর নেন।

তালা থানার ওসি মো. মাইনউদ্দিন বলেন, সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিরল টিউমারে মুখ ঢেকেছে মা-ছেলের, অসহায় পরিবার

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
বিরল রোগী কাজল ও তাঁর মা শাহানা খাতুন। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিরল রোগী কাজল ও তাঁর মা শাহানা খাতুন। ছবি: আজকের পত্রিকা

নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলার অতিথপুর গ্রামের এককোণে জরাজীর্ণ একটি কুঁড়েঘরে বাস করেন কাজল মিয়া (২২) ও তাঁর মা শাহানা খাতুন (৪৫)। মা-ছেলে দুজনই আক্রান্ত এক বিরল ও ভয়াবহ টিউমারে, যা ধীরে ধীরে কেড়ে নিচ্ছে তাঁদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষমতা। সুন্দরের প্রতিচ্ছবি যে মুখ, সেই মুখই এখন কাজলের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জন্মের সময় কাজলের মুখে ছিল ছোট একটি টিউমার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটি এখন বড় হয়ে তাঁর এক চোখ ও মুখ পুরোপুরি ঢেকে ফেলেছে। মুখের নিচে ঝুলে পড়েছে বিশাল মাংসপিণ্ড। খাওয়াদাওয়া করতে কষ্ট হয়, এক চোখে দেখতে পান না। বিকৃত চেহারার কারণে এখন গ্রামের লোকেরা তাঁর সঙ্গে মিশতে চায় না, একাকিত্ব যেন তাঁর নিত্যসঙ্গী।

শুধু কাজল নন, তাঁর মা শাহানা খাতুনও একই রোগে ভুগছেন। গালের পাশ থেকে ঝুলে পড়েছে টিউমার, যা বুক পর্যন্ত বিস্তৃত। শরীরের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গুটি।

দুজনকে নিয়ে দিশেহারা দিনমজুর বাবা মিরাজ আলী। সামান্য মজুরির টাকায় সংসার চালাতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে এই ভয়াবহ রোগের চিকিৎসা করানো তাঁর পক্ষে কল্পনাতীত। দারিদ্র্য আর সমাজের অবহেলায় আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েছে পরিবারটি।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মিরাজ আলীর স্ত্রী শাহানার মুখে বিয়ের আগে থেকেই ছোট টিউমার ছিল। শরীরে ছিল ছোট ছোট গুটি টিউমার। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই টিউমার বড় হয়ে ঝুলে পড়েছে। শরীরজুড়ে দেখা দিয়েছে অসংখ্য টিউমার। দুই ছেলে আর এক মেয়ের মধ্যে মেজ ছেলে কাজলের মুখে শুধু এমন টিউমার দেখা দিয়েছে। অন্যদের শরীরে কোনো টিউমার নেই।

বিরল রোগে আক্রান্ত কাজল মিয়া বলেন, ‘ছোটবেলায় কপালের কাছে ছোট একটা টিউমার হয়েছিল। সেটা বড় হতে হতে এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। এক চোখ টিউমারে ঢেকে যাওয়ায় সেই চোখে আর দেখতে পাই না। মুখ ঢেকে যাওয়ায় কথা বলতে ও খাবার খেতে কষ্ট হয়। এই অবস্থায় কোনো কাজকর্ম করতে পারি না। মানুষের কাছে হাত পেতে যা পাই, তা দিয়ে চলি। টিউমার ভালো হলে কাজ করেই খেতে পারতাম। আমার খুব ইচ্ছা হয় স্বাভাবিকভাবে বাঁচতে। এমন জটিল রোগ হওয়ায় এলাকার কোনো মানুষ আমার সঙ্গে মেশে না। একাই চলতে হয়।’

কাজলের মা শাহানা খাতুন বলেন, ‘আমার দিন তো শেষের দিকে। ছেলেটার তো সামনে সারাজীবন পড়ে রয়েছে। এমন রোগ নিয়ে বাকি জীবন কেমনে কাটাবে। এভাবে টিউমার বাড়তে থাকলে কী করব! জটিল রোগের চিকিৎসা করানোর মতো সাধ্য আমাদের নেই। সরকারি সহায়তায় চিকিৎসা পেলে সে হয়তো স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেত।’

দিনমজুর মিরাজ আলী বলেন, ‘ছেলে আর স্ত্রী দুজনেই অসুস্থ। আমি গরিব মানুষ, কেমন করে ওদের চিকিৎসা করাব বুঝি না। মানুষের কাছে চেয়েচিন্তে যা পাই তা দিই খেতে। তাদের নিয়ে কী করব একমাত্র আল্লাই জানেন।’

প্রতিবেশীরা জানালেন, সরকারি বা বেসরকারি কোনো সহায়তা তাঁরা এখনো পাননি।

প্রতিবেশী জিয়াউর রহমান বলেন, ‘ওদের অবস্থা খুব খারাপ। সরকারি সাহায্য পেলে হয়তো চিকিৎসা সম্ভব হতো। আমাদের সবার উচিত ওদের পাশে দাঁড়ানো।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শচীন দেববর্মনের জন্মভিটায় দুই দিনের মেলা, দাবি পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্সের

দেলোয়ার হোসাইন আকাইদ, কুমিল্লা 
কুমিল্লায় শচীন কর্তার জন্মভিটা। ছবি: আজকের পত্রিকা।
কুমিল্লায় শচীন কর্তার জন্মভিটা। ছবি: আজকের পত্রিকা।

কুমিল্লার দক্ষিণ চর্থা এলাকায় অবস্থিত বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের কালজয়ী সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী শচীন দেববর্মনের জন্মভিটায় আজ (৩০ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে দুই দিনব্যাপী ‘শচীন মেলা’। কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এই মেলায় অংশ নিচ্ছেন স্থানীয় সাংস্কৃতিক কর্মী, শিল্পী, গবেষক ও শিক্ষার্থীরা। শচীনের জন্ম (১ অক্টোবর) ও প্রয়াণ (৩১ অক্টোবর) দিবসকে কেন্দ্র করে এই মেলার আয়োজন করা হয়েছে। দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এই আয়োজনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ত্রিপুরার রাজবংশের নবদ্বীপচন্দ্র দেববর্মনের ঘরে ১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন শচীন দেববর্মন। রাজপরিবারের উত্তরাধিকারের বিরোধ ও রাজনৈতিক কারণে তাঁর বাবা কুমিল্লায় স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন। চর্থার দক্ষিণে প্রায় ৬০ একর জমির ওপর নির্মিত প্রাসাদটিই তাঁর জন্মভিটা হিসেবে পরিচিত। শচীন দেববর্মন ১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর ভারতে মারা যান।

কুমিল্লার গ্রামীণ পরিবেশ, নদীর ঢেউ, ভাটিয়ালি এবং স্থানীয় লোকসংগীতের সঙ্গে তাঁর শৈশবের পরিচয়ই সংগীতজীবনের মূল ভিত্তি স্থাপন করে। ছোটবেলায় স্থানীয় শিল্পীদের সঙ্গে সময় কাটানো, লোকসংগীত সংগ্রহ এবং সাংস্কৃতিক উৎসবের সঙ্গে যুক্ত হওয়া তাঁর সংগীত প্রতিভাকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যায়।

কুমিল্লা জিলা স্কুল ও ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর ১৯২৪ সালে তিনি কলকাতায় যান। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আনুষ্ঠানিক সংগীত শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করে খ্যাতি অর্জন করেন।

১৯২৩ সালে কলকাতা বেতারে তার প্রথম গান রেকর্ড হয়, আর ১৯৩২ সালে প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড প্রকাশিত হয়। এরপর বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রের জন্য সংগীত পরিচালনায় নাম লেখান।

শচীন দেবের সংগীতজীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায় শুরু হয় ১৯৪৪ সালে মুম্বাইয়ে স্থায়ী বসতি গড়ে। হিন্দি চলচ্চিত্রে তাঁর সংগীত পরিচালনা এবং কণ্ঠে অমর গান আজও শ্রোতাদের হৃদয় স্পর্শ করে। ‘শিকারি’, ‘দেবদাস’, ‘সুজাতা’, ‘আরাধনা’, ‘গাইড’ প্রভৃতি চলচ্চিত্রে তাঁর সংগীত পরিচালনা বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়েছে। লতা মঙ্গেশকর, কিশোর কুমার, গীতা দত্তসহ বহু কিংবদন্তি তাঁর সুরে গান গেয়েছেন।

১৯৩৭ সালে তিনি গায়িকা মীরা দেবীকে বিয়ে করেন। তাঁদের সন্তান রাহুল দেববর্মনও ভারতীয় চলচ্চিত্রে খ্যাতিমান সংগীত পরিচালক হন।

দীর্ঘদিন ধরে শচীনের জন্মভিটা ছিল পরিত্যক্ত। পাকিস্তান আমলে এর একটি অংশ সরকারি খামার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। স্বাধীন বাংলাদেশে ২০১৪ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাড়ির একটি অংশ উদ্ধার করা হলেও পূর্ণাঙ্গ সংস্কার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ আজও হয়নি।

বাড়ির স্থাপত্যগত অবস্থা নাজুক। সদর দরজার সঙ্গে ঘরের বারান্দা আকৃতির তিনটি কক্ষ, পূর্ব ও পশ্চিমাংশে আরও ছয়টি কক্ষ এবং পূজার ঘর রয়েছে। তবে পলেস্তারা খসে পড়ছে, দেয়াল ও প্রাচীরে অঙ্কিত আলপনা মুছে যাচ্ছে। বিদ্যুৎ ও ওয়াশব্লকের সমস্যার কারণে সংস্কারহীন ভিটা রাত্রে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।

বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এই বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙে গেছে, ঘরের দরজা ভাঙাচোরা এবং বিদ্যুৎ নেই। অন্ধকার ও ভগ্নদশার কারণে মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। আমি একা বাধা দিতে গেলে হুমকির মুখে পড়ি।’

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম জানান, বাড়িটি সন্ধ্যার পর মাদকসেবী ও জুয়াড়িদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়। যদি বাড়ি সংস্কার ও নিরাপত্তাব্যবস্থা ঠিক থাকে, তাহলে শচীন মেলার আয়োজন আরও সফল হবে এবং এখানে বখাটেদের আনাগোনা কমবে।

দুই দিনব্যাপী শচীন মেলায় আলোচনা সভা, শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং দেশীয় ঐতিহ্যবাহী ১৫টি স্টল থাকবে। অনুষ্ঠানে শচীনভক্ত, শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীরা অংশ নেবেন এবং তাঁর সুরের মাধ্যমে আবেগময় পরিবেশ তৈরি হবে।

সামাজিক সংগঠন ‘ঐতিহ্য কুমিল্লা’র সভাপতি ও শচীন গবেষক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ইমরুল বলেন, ‘উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী শচীন দেববর্মন, যিনি শচীন কর্তা এবং এস ডি বর্মন নামে পরিচিত। তাঁর অবদান আজও বাঙালির হৃদয়ে জীবন্ত। শচীনের বাড়ি পরিত্যক্ত না রেখে দেশের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হলে কুমিল্লা সংগীত ও সংস্কৃতির একটি আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পাবে।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। জাতীয় জাদুঘরের প্রতিনিধিদল বাড়িটি পরিদর্শন করেছে। পরিকল্পনা রয়েছে পূর্ণাঙ্গ জাদুঘর, মুক্তমঞ্চ, গবেষণার কক্ষ ও সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণের। এটি বাস্তবায়িত হলে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত