Ajker Patrika

নারায়ণগঞ্জে আরেক ‘বদি’ এস কে সজিব

আমানুর রহমান রনি, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে ফিরে
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০: ০১
নারায়ণগঞ্জে আরেক ‘বদি’ এস কে সজিব

পুরো নাম নাজমুর রহমান সজিব। তবে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয় অনেকের কাছে তাঁর পরিচয় এস কে সজিব নামে। এস কে সজিব নামটি রয়েছে জেলা পুলিশের করা মাদক কারবারিদের তালিকায়। মাদকের কারবার ছাড়াও বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সোনারগাঁ থানায় তাঁর বিরুদ্ধে যে সাতটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে, সেগুলোর তিনটিই মাদকের।

এস কে সজিবকে ‘নারায়ণগঞ্জের বদি’ আখ্যা দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৩ (সোনারগাঁ) আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা। তাঁর অভিযোগ, এস কে সজিবের কারণে তিনি চেষ্টা করেও এলাকা থেকে মাদক নির্মূল করতে পারেননি। এলাকার কেউ কেউ বলেন, ‘এস কে’ সাংকেতিক শব্দ লেখা থাকা ইয়াবা বিক্রির কারণেই সজিবের নামের সঙ্গে ‘এস কে’ জুড়ে গেছে।

তবে মাদকের কারবার এবং ‘এস কে’ লেখা ইয়াবা বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নাজমুর রহমান সজিব। তাঁর দাবি, বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। সব মামলাই মীমাংসা করে ফেলেছেন।

নাজমুর রহমান সজিবের বাড়ি সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের গুহাট্টায়। তিনি মোগরাপাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। তাঁর বাবা মৃত চান মিয়া। তাঁদের আদি বাড়ি ছিল ওই ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়িচিনিস গ্রামে। তাঁদের বংশের পদবি ব্যাপারি।

মোগরাপাড়ার ওপর দিয়ে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। মিয়ানমার থেকে আসা নিষিদ্ধ মাদক ইয়াবা বড়ির চালান এই মহাসড়ক দিয়েই সোনারগাঁসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা ও রাজধানী ঢাকায় যায়। পরে ছড়িয়ে পড়ে দেশের অন্যান্য এলাকায়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, কক্সবাজারসহ সীমান্তবর্তী অন্যান্য জেলা থেকে বিভিন্ন মাদক সোনারগাঁয় ঢুকছে। সোনারগাঁর অন্যতম মাদক কারবারি এস কে সজিব। ইয়াবার গায়ে ‘ওয়াই ডব্লিউ’, ‘এক্স ওয়াই’, ‘এক্স এক্স’, ‘এম’, ‘টি’, ‘ওকে’ এবং ‘এস কে’ ইত্যাদি সাংকেতিক শব্দ লেখা থাকে। শুরুতে সোনারগাঁয় ‘এস কে’ লেখা ইয়াবা বিক্রি হতো।

গত সোমবার মোগরাপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় গিয়ে এস কে সজিবের বিরুদ্ধে মাদক কারবারের অভিযোগ পাওয়া যায়। এলাকার বেশ কয়েকজন এই অভিযোগ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সজিবের এক স্বজন বলেন, ‘সোনারগাঁয় শুরুতে অর্থাৎ ২০১০ সালের দিকে আসা ইয়াবার গায়ে ‘এস কে’ লেখা থাকত। সেগুলো সজিব বিক্রি করতেন। এ কারণে তখন থেকে তাঁর নামের সঙ্গে ‘এস কে’ জুড়ে গিয়ে ‘এস কে সজিব’ হয়ে গেছে।

পুলিশের সূত্র জানায়, গত বছরের শেষ দিকে নারায়ণগঞ্জের সাতটি থানার মাদক কারবারিদের তালিকা করা হয়। ওই তালিকায় সোনারগাঁ থানার ১৭ মাদক কারবারির মধ্যে অন্যতম এস কে সজিব। তাঁর বিরুদ্ধে সোনারগাঁ থানায় মাদকসহ বিভিন্ন অভিযোগে সাতটি মামলা রয়েছে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশ এবং র‍্যাব-১১-এর কর্মকর্তারাও এস কে সজিবের বিরুদ্ধে মাদক কারবারের অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি এলাকায় সবকিছুতেই সফল। কিন্তু এস কে সজিবের কারণে মাদক নির্মূল করতে পারিনি। আমি একবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে এ বিষয়ে বলেছি। যারা মাদক ছড়ায়, তাদের বিষয়ে জানিয়েছি, কিন্তু কাজ হয়নি। আমি এস কে সজিবকে “নারায়ণগঞ্জের বদি” বলি। তারপরও তাঁকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না।’ 
জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, সজিবের বংশের সবাই বিএনপি করেন। সজিব ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে মাদক, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে মামলা রয়েছে।

এলাকাবাসী বলেন, এস কে সজিবের সহযোগীদের মধ্যে রয়েছেন মাহবুবুর রহমান রক্সি, রনি, হৃদয়, মোহাম্মদ আল সুজনসহ কয়েকজন। সোনারগাঁ থানার পুলিশ বলেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ইভ টিজিং, চৈতি গার্মেন্টসের কাভার্ড ভ্যানে ডাকাতি, ছিনতাই, মাদক কারবার, জায়গা দখল এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।

সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মহসিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এস কে সজিবের প্রকৃত নাম নাজমুর রহমান সজিব। তাঁর বিরুদ্ধে মাদক কারবার, সহিংসতাসহ কয়েকটি মামলা রয়েছে। আমরা তাঁর বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। মাদক কারবারিদের নতুন তালিকা তৈরি করছি।’

সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে মোগরাপাড়ার আফিয়া ফিলিং স্টেশনে আরমান শরীফ হত্যা মামলায় বাদীপক্ষ যে ৯ জন আসামির নাম পুলিশকে দিয়েছিল, তাঁদের মধ্যে এস কে সজিবের নামও ছিল। তবে অভিযোগপত্রে তাঁর নাম নেই। এ নিয়ে হতাশ আরমানের পরিবার। আরমানের মা রওশন আরা মিরু সোমবার মোগরাপাড়ার দমদমার বাড়িতে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হত্যার সঙ্গে সোহাগ রনি, কিলার কোরবান, মাদক ব্যবসায়ী এস কে সজিব জড়িত। কিন্তু সজিবকে মামলা থেকে বাদ দিয়েছে পুলিশ। এর পর থেকে আমরা আতঙ্কে আছি।’

আরমান হত্যা মামলার আইনজীবী মাছুদা বেগম শম্পা বলেন, এস কে সজিবকে বাদ দেওয়ায় তাঁরা অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন।

সোনারগাঁ থানা সূত্র জানায়, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সালের মার্চ, ২০১৩ সালের জুন এবং ১৪ নভেম্বর চারটি হত্যাচেষ্টার মামলা হয় সজিবের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি মাদকের মামলা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি মামলা তদন্তাধীন। মোগরাপাড়া চৌরাস্তার ফুটপাতের দোকানে, বালুর ট্রাক ও ঘাটে চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোনারগাঁয়ের আওয়ামী লীগের এক নেতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রভাবশালী স্থানীয় একজন নেতার আশীর্বাদপুষ্ট এস কে সজিব। এলাকায় তিনি ‘নারায়ণগঞ্জের বদি’ নামে বেশি পরিচিত।

অভিযোগ রয়েছে, এস কে সজিব তাঁর সৎভাই জাকিরের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী-সন্তানকে বাড়িছাড়া করেন। এর প্রতিকার পেতে জাকিরের স্ত্রী থানা ও র‍্যাবে অভিযোগ করেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে যুবলীগ নেতা সজিব বলেন, ‘অভিযোগ সত্য নয়। আমি রাজনীতি করি। আমার কিছু শত্রু রয়েছে। তাঁরা এসব অভিযোগ করেছেন। কয়েকটা মামলা ছিল। বাদীদের সঙ্গে বসে মীমাংসা করেছি। বর্তমানে একটি মামলাও নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমার ভাই জাকির মারা যাওয়ার পর অন্য ভাইদের সঙ্গে ভাবির ঝামেলা হয়েছিল, পরে আমি ভাবিকে ডেকে মীমাংসা করে দিয়েছি। তিনি যতটুকু জায়গা পেতেন, তা আমি বিক্রি করে দিয়েছি। এখন ভাবির সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক।’

এলাকার লোকজন আপনার নাম এস কে সজিব বলেন কেন, এ প্রশ্নে সজিব বলেন, ‘তাঁদের কাছেই এ বিষয়ে প্রশ্ন করুন। আমার নাম নাজমুর রহমান সজিব। এ নামেই আমি পরিচিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাপের অবশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় নারীকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা

এনসিপিকে ‘নাস্তিকদের সংগঠন’ বলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মুফতি আমিনীর নাতি

সোনার বড় দরপতন, একলাফে ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা কমল ভরিতে

নারায়ণগঞ্জে ইট দিয়ে থেঁতলে যুবককে হত্যার ভিডিও ভাইরাল, গ্রেপ্তার ৩

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের সভাপতি মনোনয়নের প্রজ্ঞাপন স্থগিত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মব সৃষ্টি করে নারীর টাকা-চেইন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ছাত্রদল নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে

বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি 
এআই দিয়ে তৈরি প্রতীকী ছবি
এআই দিয়ে তৈরি প্রতীকী ছবি

নাটোরের বড়াইগ্রামে ফুল কুমারী গোমেজ (৪৬) নামের এক নারীর বাড়িতে মব সৃষ্টি করে টাকা ও সোনার চেইন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। বুধবার দিবাগত রাতে ওই নারী বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে বড়াইগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর আগে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার দিঘইর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। ফুল কুমারী গোমেজ দিঘইর গ্রামের মৃত করনেলিউস গোমেজের স্ত্রী।

অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার চরগোবিন্দপুর গ্রামের গোলজার হোসেনের ছেলে নিসান হাসান (২২), কুশমাইল গ্রামের আজিমুদ্দিনের ছেলে নয়ন হোসেন (২৩) সরাবাড়িয়া গ্রামের ইউসুব আলীর ছেলে কামরুল ইসলাম (২০) ও ময়লাল আলীর ছেলে হৃদয় হাসান (২১)। তাঁদের মধ্যে নিসান হাসান জোনাইল ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি এবং অন্যরা কর্মী হিসেবে পরিচিত।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর আগে ওই নারীর স্বামী মারা গেছেন। একমাত্র মেয়ে ঢাকায় লেখাপড়া করেন। বাড়িতে ওই নারী একাই বসবাস করেন। মঙ্গলবার রাতে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বাড়িতে এসে দরজা খুলতে বলেন। দরজা খুলতে না চাইলে তাঁরা ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘরে আগুন দিয়ে মারার হুমকি দেন। পরে ঘরের দরজা খুলে দিলে তাঁরা ঘরে প্রবেশ করে তল্লাশি চালান। এ সময় বিছানার নিচ থেকে ৫ হাজার টাকা ও ওই নারীর গলা থেকে সোনার চেইন নিয়ে চলে যান।

ফুল কুমারী গোমেজ বলেন, ‘আমি বারবার অনুরোধ করার পরও তারা আমার কথা শোনে না। তারা আমার বিরুদ্ধে অপবাদ দিয়ে মব সৃষ্টি করে টাকা ও স্বর্ণ নিয়ে গেল। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।’

অভিযুক্ত নিসান হাসান বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে আমার জানা নাই। তবে ওই মহিলা মদ তৈরি করেন। ধারণা করছি, আমরা বাধা দেওয়ার কারণে এই ধরনের অভিযোগ করেছেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে চরগোবিন্দপুর গ্রামের এক ব্যক্তি বলেন, নিসান হাসান হত্যা মামলার আসামি। তবে তিনি এখন জামিনে আছেন। তাঁর বাবা গোলজার হোসেন ধর্ষণচেষ্টা মামলার আসামি হিসেবে জেলহাজতে রয়েছেন।

বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ার হোসেন বলেন, ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থ্যা গ্রহণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাপের অবশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় নারীকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা

এনসিপিকে ‘নাস্তিকদের সংগঠন’ বলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মুফতি আমিনীর নাতি

সোনার বড় দরপতন, একলাফে ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা কমল ভরিতে

নারায়ণগঞ্জে ইট দিয়ে থেঁতলে যুবককে হত্যার ভিডিও ভাইরাল, গ্রেপ্তার ৩

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের সভাপতি মনোনয়নের প্রজ্ঞাপন স্থগিত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাছের অঙ্গের কেজি কোটি টাকা

  • পিটুইটারি গ্লান্ড মাছের প্রজননক্ষমতা বাড়ায়।
  • ৩৫টি দেশে মাছের এ প্রাকৃতিক হরমোনের চাহিদা রয়েছে।
মো. জাহিদ হাসান, যশোর 
পিটুইটারি গ্লান্ড মেডিসিনযুক্ত ছোট বোতলে সংরক্ষণ করে রাখা হয়।
পিটুইটারি গ্লান্ড মেডিসিনযুক্ত ছোট বোতলে সংরক্ষণ করে রাখা হয়।

যশোর শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড মাছবাজারে এক দশকের বেশি সময় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কাটাকুটি করে আসছেন বিল্লাল হোসেন সানি। দীর্ঘদিন মাছ কাটার কাজ করলেও মাথার ভেতরে থাকা ছোট্ট মুক্তাসদৃশ দানা কী সেটা কখনো ভাবেননি। বছর চারেক আগে স্থানীয় একটি সংস্থার মাধ্যমে সাদা এই দানার গুরুত্ব বুঝতে পেরে এখন প্রতিনিয়ত করছেন সংরক্ষণ।

সানির মতো যশোর শহরের মাছের বাজারগুলোতে মাছের মাথার ভেতরের এই সাদা দানাটি মাছের উচ্ছিষ্ট বস্তু হিসেবেই ফেলে দিতেন। এখন মাছ কেটেকুটে দেওয়ার পরই মাছের মাথা থেকে এই দানা সংগ্রহ করে রাখছেন বঁটিওয়ালা। মূলত মাছের মাথার ভেতরে থাকা ছোট্ট এই দানার নাম ‘পিটুইটারি গ্লান্ড’, যা মাছের প্রজননক্ষমতা বাড়িয়ে বছরে তিন থেকে চারবার ডিম ছাড়তে সহায়তা করে।

বিল্লাল হোসেন সানি জানান, সব মাছের মাথায় একটি করে পিটুইটারি গ্লান্ড থাকে। তবে সব ধরনের মাছ থেকে তিনি সেটা সংগ্রহ করেন না। কার্পজাতীয় মাছ থেকে সংগ্রহ করেন।

সানি বলেন, ‘মাথা থেকে পিটুইটারি গ্লান্ডটি মেডিসিনযুক্ত ছোট বোতলে সংরক্ষণ করি। প্রতি সপ্তাহে কোম্পানির এজেন্টরা এসে টাকা দিয়ে সেগুলো নিয়ে যান। প্রতি পিছ চার থেকে পাঁচ টাকা দেয়।’ তিনি জানান, মাছ কাটার পরে এটা থেকে তাঁদের বাড়তি আয় হয়। দিনে ৩০ থেকে ৫০ পিছ পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাড়তি আয়ের জোগান হওয়ায় বাজারে প্রায় সব বঁটিওয়ালাই পিটুইটারি গ্লান্ড সংরক্ষণ করছেন বলে জানান তিনি।

সম্প্রতি শহরের বড় বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মাছের আঁশ ছাড়িয়ে মাছ পিছ করে কেটে দেওয়ার জন্য বঁটি নিয়ে বাজারে বসেছেন কয়েক ব্যক্তি। ক্রেতারা খুচরা মাছ কিনে তাঁদের কাছে দিলে তাঁরা আঁশ ছাড়িয়ে পিছ করে কেটে দিচ্ছেন। প্রত্যেকের বঁটির পাশে রাসায়নিক ভর্তি ছোট ছোট দু-একটি কাচের বোতল রাখা আছে। মাছ কাটার সময় কার্পজাতীয় মাছ যেমন রুই, কাতলা, সিলভার, মৃগেলসহ বিভিন্ন মাছের মাথার ভেতর থেকে ছোট একটি দানা (পিজি) সংগ্রহ করে বোতলে সংরক্ষণ করছেন তাঁরা।

মৎস্য বিভাগ ও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হ্যাচারির পুকুরে প্রজননের সময় মা ও পুরুষ মাছের দেহে নির্দিষ্ট মাত্রায় পিজি সিরিঞ্জের মাধ্যমে পুশ করা হয়। এতে মাছের দেহে উত্তেজনা আসে। এ সময় মাছের প্রজনন হয়। প্রাকৃতিক এ হরমোন ব্যবহারে মাছের জীবনচক্রে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। মাছের প্রজননের প্রধান নিয়ামক এই হরমোন রপ্তানি করে দেশে বিদেশি মুদ্রা আনছেন উদ্যোক্তারা। মৎস্য অঞ্চল যশোর-সাতক্ষীরায় এই হরমোন নিয়ে কাজ করে আলোড়ন তৈরি করেছেন যশোরের মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী। প্রথম দিকে কাঁচা পিটুইটারি গ্লান্ড সংগ্রহ করলেও আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে শুরু করেন সংরক্ষণের। তাই শহরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্সে একটি ভবন ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলেন ল্যাবরেটরি। নাম দিয়েছেন ইউনাইটেড এগ্রো ফিশারিজ। এখানে বাছাই শেষে অ্যালকোহল থেকে আলাদা করে গ্লান্ড শুকানো হয় ড্রাইং মেশিনে। ময়েশ্চার টেস্টসহ নানা পরীক্ষা শেষে বোতলজাত করে পাঠানো হয় দেশি-বিদেশি হ্যাচারিতে।

জেলার বিভিন্ন বাজার থেকে একইভাবে প্রাকৃতিক এই হরমোন সংগ্রহ করেন তাঁরা।

রপ্তানির পাশাপাশি ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলার হ্যাচারিতে এ হরমোনের পিজি পাঠায় ইউনাইটেড এগ্রো। বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, ইরান, ইরাকসহ ৩৫টি দেশে মাছের এ প্রাকৃতিক হরমোনের চাহিদা রয়েছে বলে জানান লিয়াকত আলী। তিনি বলেন, ‘বছরে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা মূল্যের পিজি দেশে-বিদেশে সরবরাহ করি। প্রতি গ্রাম পিজি বর্তমানে ৮০ মার্কিন ডলারে রপ্তানি হয়।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনিরুল মামুন বলেন, কৃত্রিম প্রজননের জন্য দেশ-বিদেশের হ্যাচারিতে হরমোন বিক্রি হচ্ছে কোটি টাকার ওপরে। এ থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আনা সম্ভব। দেশের চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদন বাড়াতে বঁটিওয়ালাসহ উদ্যাক্তাদের প্রশিক্ষণসহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাপের অবশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় নারীকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা

এনসিপিকে ‘নাস্তিকদের সংগঠন’ বলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মুফতি আমিনীর নাতি

সোনার বড় দরপতন, একলাফে ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা কমল ভরিতে

নারায়ণগঞ্জে ইট দিয়ে থেঁতলে যুবককে হত্যার ভিডিও ভাইরাল, গ্রেপ্তার ৩

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের সভাপতি মনোনয়নের প্রজ্ঞাপন স্থগিত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সৈয়দপুর থানায় জব্দ মোটরসাইকেল বাইরে বিক্রির চেষ্টা, প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

নীলফামারী প্রতিনিধি
জব্দ করা মোটরসাইকেল। ছবি: আজকের পত্রিকা
জব্দ করা মোটরসাইকেল। ছবি: আজকের পত্রিকা

নীলফামারীর সৈয়দপুরে মাদক কারবারি দম্পতিসহ জব্দ করা একটি মোটরসাইকেল ছয় মাস পর থানার বাইরে নিয়ে বিক্রির চেষ্টা করা হয়। পরে মোটরসাইকেলের প্রকৃত মালিকের স্বজনদের সহায়তায় সেটি উদ্ধার করে ফের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বুধবার (২২ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ এলাকার পশ্চিমপাড়া থেকে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় জনমনে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ মে শহরের কয়ানিজপাড়ার ফারুক হোসেন ও মুক্তা বানু দম্পতির বাড়িতে যৌথ বাহিনী অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে মাদকদ্রব্যসহ দুটি মোবাইল ফোন, নগদ অর্থ ও একটি মোটরসাইকেল জব্দ করে পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয় মাদক ব্যবসায়ী দম্পতিকে। ঘটনার ১৪৬ দিন পর বুধবার (২২ অক্টোবর) রাতে জব্দ করা মোটরসাইকেলটি থানার বাইরে বিক্রির চেষ্টা করে একটি চক্র। এ সময় মোটরসাইকেলের মালিকের স্বজনেরা যৌথ বাহিনীর অভিযানে জব্দ করা মোটরসাইকেল হিসেবে চিহ্নিত করেন।

এ বিষয়ে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার মুক্তার ভাই আতিক হাসান বলেন, ‘আমার বোন ও তার স্বামীকে যৌথ বাহিনী মাদকসহ আটক করে। তখন তাদের মোটরসাইকেলটি জব্দ করে থানায় নেওয়া হয়। বুধবার রাতে একজন ফোনে জানায়, মোটরসাইকেলটি থানার প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে মতির মোড়ে বিক্রি করার চেষ্টা হচ্ছে। আমি গিয়ে কাগজপত্র মিলিয়ে দেখি সেটি আমার বোনজামাইয়ের। এরপর পুলিশকে খবর দিলে তারা এসে মোটরসাইকেলটি থানায় নিয়ে যায়।’

স্থানীয় বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যৌথ বাহিনী ওই দম্পতিকে মাদকসহ আটক করে এবং মোটরসাইকেলটি জব্দ করে নিয়ে যায়। কিন্তু থানার মালখানায় মোটরসাইকেলটি থাকার কথা। পরে সেটি থানার বাইরে পাওয়া গেল, এটা প্রশাসনের দুর্বলতা ছাড়া কিছু নয়।’

এ বিষয়ে সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাপের অবশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় নারীকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা

এনসিপিকে ‘নাস্তিকদের সংগঠন’ বলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মুফতি আমিনীর নাতি

সোনার বড় দরপতন, একলাফে ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা কমল ভরিতে

নারায়ণগঞ্জে ইট দিয়ে থেঁতলে যুবককে হত্যার ভিডিও ভাইরাল, গ্রেপ্তার ৩

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের সভাপতি মনোনয়নের প্রজ্ঞাপন স্থগিত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ককটেল বিস্ফোরণে যুবক নিহত

ঢামেক প্রতিবেদক
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ২৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ (২০) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় জাহিদকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে হাসপাতালের চিকিৎসক আজ বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ভোরে বন্ধুরা ওই যুবককে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে।

এদিকে মোহাম্মদপুর থানার ডিউটি অফিসার মো. আতিকুর রহমান জুয়েল জানান, ভোরে খবর আসে, জেনেভা ক্যাম্পে দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। এরপর দ্রুত ঘটনাস্থলে একটি টিম পাঠানো হয়। তবে ততক্ষণে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়। সেখানে গিয়ে পুলিশ জানতে পারে, ঘটনাটিতে একজন আহত হয়েছেন। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। তবে আহত ব্যক্তির বিষয়ে বিস্তারিত কেউ বলতে পারেনি।

অপর দিকে হাসপাতালে নিহত জাহিদের বোনজামাই মো. উজ্জ্বল জানান, জাহিদ কল্যাণপুরে তাঁর দোকানে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করতেন। তাঁর বাসা জেনেভা ক্যাম্পে। বাবার নাম ইরান। রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রাস্তায় যান। এ সময় দুই গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যান জাহিদ। তখন তাঁর পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরিত হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাঁকে দ্রুত ট্রমা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জাহিদকে মৃত ঘোষণা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাপের অবশিষ্ট কফি ড্রেনে ঢেলে দেওয়ায় নারীকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা

এনসিপিকে ‘নাস্তিকদের সংগঠন’ বলে আমাকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে: মুফতি আমিনীর নাতি

সোনার বড় দরপতন, একলাফে ৮ হাজার ৩৮৬ টাকা কমল ভরিতে

নারায়ণগঞ্জে ইট দিয়ে থেঁতলে যুবককে হত্যার ভিডিও ভাইরাল, গ্রেপ্তার ৩

এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তাদের সভাপতি মনোনয়নের প্রজ্ঞাপন স্থগিত

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত