Ajker Patrika

দেওয়ানগঞ্জে মৎস্যজীবীদের তালিকায় ব্যাপক অনিয়ম, সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত প্রকৃত জেলেরা

ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি  
দেওয়ানগঞ্জে মৎস্যজীবীদের তালিকায় ব্যাপক অনিয়ম, সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত প্রকৃত জেলেরা

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় সরকারি সহায়তা দিতে মৎস্যজীবীদের তালিকা প্রণয়নে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিধি মোতাবেক তালিকা না হওয়ায় অনেক প্রকৃত মৎস্যজীবী সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে, মৎস্যজীবী নয় এমন সচ্ছল ব্যক্তিদের নামও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকে।

উপজেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেওয়ানগঞ্জে দুই ধরনের জেলে রয়েছে। খণ্ডকালীন জেলে ও স্থায়ী জেলে। ৪ হাজার ৬৩৮ জন মৎস্যজীবী রয়েছেন। এর মধ্যে নিবন্ধিত ৪ হাজার ৮৪ জন। বাকি ৫৫৪ জন নিবন্ধিত নন। মৃত্যু, বাড়ি স্থানান্তরসহ বিভিন্ন ত্রুটির কারণে ৫৫৪ মৎস্যজীবীর নাম সুবিধাভোগী হিসেবে নিবন্ধিত হয়নি। নিবন্ধিত মৎস্যজীবীর মধ্যে উপজেলার চরআম খাওয়া ইউনিয়নে ৩২৫ জন, ডাংধরায় ৮৮৯, পাররামরামপুরে ৪৯৩, হাতিভাঙ্গায় ১১০, বাহাদুরাবাদে ৮৮৮, চিকাজানীতে ৫৭১, ঢুকাইবাড়ীতে ২৬২, সদরে ২১৯ জন এবং পৌর শহরে ৩৪৭ জন।

জানা যায়, ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন মা মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা থাকায় নিবন্ধিত প্রতিটি মৎস্যজীবী পরিবারকে সরকারিভাবে ২৫ কেজি চাল সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের নাম বাদ পড়েছে এবং মৎস্যজীবী নয়, এমন পরিবার প্রধানের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পে অসহায় জেলে পরিবারকে গরু (বকনা বাছুর) সহায়তা দিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০টি, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪০, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫০ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩২টি মৎস্যজীবী পরিবারকে গরু সহায়তা দেওয়া হয়। এসব গরু বিতরণে জেলেদের তালিকা তৈরিসহ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন জেলেরা।

প্রকল্পে বলা হয়েছে, সুফলভোগীদের মাঝে অক্ষত, স্বাস্থ্যবান ও দেশি প্রজাতির গরু বিতরণ করতে হবে। ৭ থেকে ১০ মাস বয়সী ৪০ থেকে ৫০ কেজি ওজনের বিতরণকৃত বকনা বাছুরের প্রতিটির মূল্য হবে ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু তা মানা হয়নি বলে অভিযোগ জেলেদের।

স্থানীয় মৎস্যজীবী আকবর আলী বলেন, ‘যাঁরা জেলে নন, তাঁদেরও সরকারি অনুদানের চাল দেওয়া হয়। কিন্তু অনেক প্রকৃত জেলের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়নি।’

মৎস্যজীবী একাব্বর আলী বলেন, ‘আমার বসতভিটা নেই। রাস্তার ধারে সরকারি জমিতে ঘর তুলে আছি। মাছ ধরে সংসার চলাই। কিন্তু আমার নাম নিবন্ধিত হয়নি। আমাকে সরকারি কোনো সহায়তা দেয়নি। পরিবার নিয়ে কষ্টে আছি।’

জেলে নুরজল মিয়া বলেন, ‘মাছ ধরেই সংসার চালাই। কিন্তু সরকারিভাবে আমার কোনো সহায়তা নাই। জমাজমি নেই। বসতভিটা নেই। অনেককে গরু দেওয়া হয়েছে। আমি একটি গরু চেয়েছিলাম, কিন্তু দেওয়া হয়নি। অনেক সচ্ছল জেলে পরিবারের প্রধানও গরু পেয়েছে।’

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, ‘জেলেদের নাম আমরা তালিকাভুক্ত করিনি। ২০০৭-০৮ সালের দিকে ওই নামগুলো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ওই সময় তালিকাভুক্ত করার পর কিছু জেলে মৃত্যুবরণ করেছেন, আবার বিভিন্ন ত্রুটির কারণে ৫৫৪ জেলেকে সহায়তার কার্ড দেওয়া হয়নি। ওই তালিকা ধরেই আমরা এখনো সহায়তা দিয়ে থাকি। সরকার যদি সুযোগ দেয়, তখন বাদ পড়া জেলেদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। গরু বিতরণে কোনো অনিয়ম করা হয়নি।’

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আতাউর রহমান বলেন, ‘প্রকৃত মৎস্যজীবীর নাম সুবিধাভোগীর তালিকা থেকে বাদ পড়েছে কি না, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়া মৎস্যজীবীদের মাঝে সরকারি অনুদান বিতরণে অনিয়ম হয়ে থাকলে সেটাও দেখব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত