Ajker Patrika

ভেঙে ফেলা হচ্ছে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য

জাককানইবি প্রতিনিধি 
আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫, ১৮: ০৩
ভেঙে ফেলা হচ্ছে জাককানইবির ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য। ছবি: সংগৃহীত
ভেঙে ফেলা হচ্ছে জাককানইবির ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাককানইবি) স্থাপিত ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে উদ্বোধন হওয়া এই ভাস্কর্য কবির একটি গানের নামানুসারে তৈরি হয় এবং এটি স্থাপন করা হয় বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদ এবং পুরোনো কলা অনুষদ ভবনের মাঝখানের পুকুরপাড়ে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ পুকুরগুলোর সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে নির্মিত হয় ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্যটি। তবে গত ৫ আগস্ট প্রশাসনিক পটপরিবর্তনের পর বিক্ষুব্ধ জনতা ভাস্কর্যটির দুটি হাতের আঙুল ভেঙে দেয়। এরপর থেকে প্রশাসনিকভাবে এটি ভেঙে ফেলার দাবি ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন প্রশাসন গতকাল মঙ্গলবার ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু করে।

জানা গেছে, প্রতিহিংসার জেরে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সৌমিত্র শেখরের নির্দেশে সবুজ গাছপালায় ঘেরা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত একটি ঘর ভেঙে সেখানে নির্মাণ করা হয় ‘অঞ্জলি লহ মোর’ ভাস্কর্য। আগের পরিকল্পনা পরিবর্তন করে তৎকালীন উপাচার্য নিজে পরিকল্পনা করে এটি নির্মাণ করেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে সৌমিত্র শেখরের পদত্যাগের পর থেকে ভাস্কর্যটির বিরোধিতা করে আসছিলেন অনেকে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিবাদের মুখে ভাস্কর্যটি ভেঙে ফেলা হয়।

এলজিইউডি বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘এখানে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে আছে ডিপিডি হাফিজ আর পরিকল্পনা দপ্তর। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুর থেকে শুরু করে রাস্তা, নালা, ভবন—উনারা নিজে হাতে বারবার সৃষ্টি করলেন আবার ধ্বংস করলেন। প্রতিবার ভিসি হিসেবে নতুন মাস্টার এলে মাস্টারপ্ল্যান চেঞ্জ হয়।’

মেহেদী হাসান আরও বলেন, ‘কিন্তু আমার মনে হয়, ‘‘অঞ্জলি লহ মোর’’-এর ক্ষেত্রে এসব কোনো দিকই বিবেচনা করা হয়নি। অনেকে দেখছি, নজরুলের গানের সঙ্গে ভাস্কর্যটির সামঞ্জস্য খুঁজতে চাচ্ছেন। কিন্তু এটা কি হতে পারে না যে ভাস্কর্যটি টিকিয়ে রাখার জন্যই এর নাম ‘‘অঞ্জলি লহ মোর’’ দেওয়া হয়েছিল?’

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সৌখিন আহমেদ বলেন, ‘পুরোনো কলা ও বিজ্ঞান ভবনের মাঝখানে আগে একটি পুকুরঘাট ছিল, যেখানে বসার ব্যবস্থা ছিল। তা ভেঙে সৌমিত্র শেখর তাঁর সময়কালে তৈরি করেন ‘‘অঞ্জলি লহ মোর’’ নামের ম্যুরালটি। নজরুলের কর্ম তুলে ধরার প্রয়াস ছিল এটি। মৃদুস্বরে গান বাজানোর ব্যবস্থাও থাকার কথা, জানামতে তারও বাজেট হয়েছিল। এখন ছুটির সময়ে শিক্ষার্থীরা না থাকায় ম্যুরালটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অলিখিত নিয়ম হলো, ছুটির সময়েই সেই কাজগুলো করে ফেলা, যেটাতে শিক্ষার্থীরা দ্বিমত জানাতে পারে। এই ম্যুরাল ভাঙার ফলে নজরুলের কর্ম-প্রচারণার প্রয়াস যেমন খণ্ডিত হয়েছে, তেমনি জনগণের কষ্টার্জিত অর্থের অপচয়ও প্রমাণিত হলো।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান পরিকল্পনা দপ্তরের পরিচালক হাফিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

পরিকল্পনা দপ্তরের পরিচালক প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘অঞ্জলি লহ মোর ভাস্কর্যটি শিক্ষার্থীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভাঙা হয়েছে। এ ছাড়া তৎকালীন উপাচার্যের সময় এই পুকুরে একটি ভাসমান ঘর ছিল, যা ড্রাম ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল। পরে ড্রামগুলো ফুটো হয়ে যাওয়ায় এবং পুকুর সংস্কারের জন্য ঘরটি ভেঙে ফেলা হয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালনকারী কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী বলেন, এ বিষয়ে অনেক আগেই ডিনরাসহ সবাইকে নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সম্ভবত সেই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই কাজটি হচ্ছে। তখন অনেক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড হয়েছিল, কেউ কেউ ভাস্কর্যটি নিয়ে তীব্রভাবে আপত্তি জানিয়েছিল। ফলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, দেশের প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী, নৃত্যপরিচালক, নৃত্য প্রশিক্ষক ও অভিনেত্রী মুনমুন আহমেদের হাতের ছবি থেকে ম্যুরালটি তৈরি করেছিলেন ভাস্কর্যবিদ মনিন্দ্র পাল। মুনমুন আহমেদ নিজেই বিষয়টি জানিয়েছেন এক ফেসবুক পোস্টে। একজন নারী দুহাত সংযুক্ত করে অঞ্জলি দিচ্ছে, ম্যুরালটি সেই ভাবনা বহন করত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত