Ajker Patrika

ক্লিনিকের ‘অব্যবস্থাপনায়’ গর্ভে শিশুর মৃত্যু, মালিকসহ তিনজন পুলিশ হেফাজতে

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
ময়মনসিংহ নগরীর হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতাল। ছবি: আজকের পত্রিকা
ময়মনসিংহ নগরীর হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতাল। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহ নগরীর হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারণে মায়ের গর্ভে শিশু মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হলে হাসপাতালের মালিক, ম্যানেজারসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নিয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে এই অভিযান চালিয়েছে কোতোয়ালি মডেল থানা-পুলিশ।

তাঁরা হলেন হাসপাতালের মালিকানার অংশীদার রঞ্জন দে, মো. পাপ্পু এবং ম্যানেজার মজিবুর রহমান। বর্তমানে তাঁরা কোতোয়ালি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। এর আগে ৩ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর ব্রাহ্মপল্লী রোডের হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে গর্ভে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো থানায় এ নিয়ে কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি।

কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলাম জানান, ২ আগস্ট গর্ভবতী রোজীনা আক্তারকে (৪৫) জামালপুর হাসপাতাল থেকে পাঠানো করা হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু রোগী ময়মনসিংহ এলে মো. হান্নান নামের এক দালাল এই রোগীকে ফুসলিয়ে হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে আসেন। কিন্তু তখন ওই হাসপাতালে ডাক্তার না থাকায় রোগী প্রায় আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করে বেরিয়ে যেতে চান। এ সময় হাসপাতালের মালিক পক্ষ লিফট বন্ধ করে দেয়। রোগীকে সিঁড়ি বেয়ে নামাতে গেলে পড়ে যান। এতে গর্ভবতী মায়ের জরায়ুতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয়। পরবর্তী সময় গর্ভেই শিশুটি মারা যায়।

ওসি আরও বলেন, ‘হাসপাতালটিতে ব্যাপক অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তা ছাড়া এই প্রতিষ্ঠানটি অবৈধ। এ কারণে ঘটনাটি জানার পর সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এটি বন্ধের নির্দেশনা জারি করেছে। এ ঘটনায় আমরা হাসপাতালের মালিক, ম্যানেজারসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে রেখেছি। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখনো ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।’

হাসপাতালটির আয়া সুইটি আক্তার বলেন, ‘ওই রোগীকে জামালপুর হাসপাতাল থেকে পাঠানো করা হয় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু এই হাসপাতালের সাবেক ম্যানেজার মো. হান্নান রোগীকে এখানে নিয়ে আসেন। তখন ডাক্তার ছিল না। এ সময় রোগীর মারাত্মক রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। পরে রোগীর স্বজনেরা লিফট বন্ধ থাকায় দ্বিতীয় তলা থেকে রোগীকে হুইলচেয়ারে বসিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নিয়ে বেরিয়ে যান। এ কাজে আমিও তাদের সহযোগিতা করেছি।’

এ বিষয়ে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও হাসপাতালটির মালিক পক্ষের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি সরেজমিন হাসপাতালে গিয়েও দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি।

হাসপাতাল বন্ধের নোটিশ, তদন্ত কমিটি এ ঘটনায় হাসপাতাল বন্ধের নোটিশ জারি করেছেন জেলা সিভিল সার্জন মো. সাইফুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে প্রতিষ্ঠানের নথিপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের লাইসেন্স পাওয়া গেলেও অনেক ত্রুটি রয়েছে। অনেক দিন ধরে এই হাসপাতালটি নিয়মবহির্ভূত পরিচালিত হয়ে আসছিল। যা প্রাইভেট হাসপাতাল পরিচালনার পরিপন্থী।’

এদিকে এ ঘটনার অনুসন্ধানে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন মো. সাইফুল ইসলাম খান। তিনি আরও জানান, ঘটনাটি তদন্তের জন্য ইতিমধ্যে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত হেলথ কেয়ার প্রাইভেট হাসপাতাল বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত কমিটির সদস্যদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত