Ajker Patrika

এন ইসলামিয়া একাডেমি কলেজ: আয়া থেকে হলেন প্রভাষক

  • ২২ পদে নিয়োগে কয়েক কোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।
  • ৫ আগস্টের পর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বেশির ভাগ নিয়োগ দেখানো হয়েছে ২০০৪ ও ২০১৬ সালে।
ইলিয়াস আহমেদ, ময়মনসিংহ  
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১৯: ৪৯
নজরুল ইসলাম ও হোসনে আরা। ছবি: সংগৃহীত
নজরুল ইসলাম ও হোসনে আরা। ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের তারাকান্দা এন ইসলামিয়া একাডেমি কলেজের আয়া (পরিচারিকা) হোসনে আরাকে একই কলেজে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে এলাকাজুড়ে সমালোচনা হলে ৬ মাস ধরে কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন হোসনে আরা। এ ছাড়া গত ৫ আগস্টের পর হোসনে আরাসহ আরও ২২টি পদে নিয়োগ দিয়ে অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

জানা গেছে, ২০০০ সালে জরাজীর্ণ টিনের ঘরে ময়মনসিংহের তারাকান্দায় প্রতিষ্ঠিত হয় কলেজটি। ২০১৬ সালে মান্থলি পেমেন্ট অর্ডারভুক্ত (এমপিও) হয়। ৫ আগস্টের পর প্রতিষ্ঠানটিকে ঘিরে হঠাৎ আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক ও স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক থাকার সুযোগ নিয়ে অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ৫ আগস্টের পর ২২ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। যাঁদের নিয়োগ দেখানো হয়েছে ২০০৪ এবং ২০১৬ সালে। নিয়োগ দিতে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা করে নিয়েছেন অধ্যক্ষ। বর্তমানে যাঁরা শিক্ষার্থীবিহীন বিভিন্ন সাবজেক্টে নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁরা অধ্যক্ষকে টাকা ফেরতের জন্য চাপ দিচ্ছেন।

অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠা অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম শিক্ষাসনদ জালিয়াতির মাধ্যমে কলেজের আয়া হোসনে আরাকে সংস্কৃতি বিষয়ের প্রভাষক, শিক্ষার্থী নেই তবুও ইতিহাসে পড়াশোনা করা এনামূল কবীরকে পালির প্রভাষক, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করা আকরামুল ইসলামকে খাদ্য ও পুষ্টির প্রভাষক, সমাজকর্ম নিয়ে পড়াশোনা করা মাকসুদা বেগমকে গার্হস্থ্য অর্থনীতির প্রভাষক, মো. রাজন মিয়াকে চারু ও কারুকলার প্রভাষক, আলী মতুর্জাকে গৃহ ও পারিবারিক জীবন ব্যবস্থাপনার প্রভাষক, উচ্চমাধ্যমিক পাস করা নুরুজ্জামানকে শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে প্রভাষক, তানজিনা আক্তারকে ভূগোলের প্রভাষক, আশরাফুন নাহারকে সমাজবিজ্ঞানের প্রভাষক, ময়মনসিংহের মহাবিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি সম্পন্ন করা এনামুল হককে নাট্যকলার প্রভাষক, একই কলেজ থেকে ডিগ্রি সম্পন্ন করা রাসেল মিয়াকে সংগীতের প্রভাষক, ২০১৩-১৪ সেশনে দর্শনে মাস্টার্স করা আকলিমা আক্তারকে মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রভাষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করা রফিকুল ইসলামকে মনোবিজ্ঞানের প্রভাষক, ইসলামের স্টাডিজে পড়াশোনা করা রহিম উদ্দিনকে আরবির প্রভাষক করা হয়েছে। প্রাণিবিদ্যা বিষয় না থাকলেও ল্যাব সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে নিলুফা আক্তারকে। এ ছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে অফিস সহকারী নিয়োগ এবং একই প্রভাষককে দুই বিষয়ে নিয়োগ দেখিয়ে ২২ জনের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা বাণিজ্য করেছেন অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম।

সম্প্রতি অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে জানতে কলেজটিতে গেলে অধ্যক্ষের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ জানান শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিজা আক্তার কারিনা বলেন, ‘শুনেছি হোসনে আরা প্রভাষক হয়েছেন। কয়েক দিন আগেও যিনি আমাদের বেঞ্চ, টেবিল, রুম পরিষ্কারসহ অন্যান্য কাজ করতেন, তাঁর নিয়োগ কীভাবে হলো। তাঁকে আমরা কীভাবে ম্যাডাম ডাকব আপনারাই বলুন। সংস্কৃতির প্রভাষক হওয়ার পর থেকে তিনি আর কলেজে আসছেন না।’

এমপিওর অনলাইন কপি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করা আকরামুল ইসলাম শুধু খাদ্য ও পুষ্টির প্রভাষক নন, তিনি শিল্পকলা এবং কারুশিল্পরও প্রভাষক। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালে কম্পিউটার প্রদর্শক হিসেবে নিয়োগ পাই। পরে সেটি পরিবর্তন করে অধ্যক্ষ স্যার আমাকে শিল্পকলা এবং কারুশিল্পে এমপিওভুক্ত করেন। বিষয়টি পছন্দ না হওয়ায় খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ে সর্বশেষ প্রভাষক হিসেবে সুযোগ পাই।’

ইসলামিক স্টাডিজে পড়াশোনা করে আরবির প্রভাষক হওয়া রহিম উদ্দিন বলেন, ‘আরবি বিষয়েও আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে। একটি কোর্স করেছিলাম তাই প্রভাষক হয়েছি।’ কত টাকার বিনিময়ে জাল সনদে প্রভাষক হয়েছেন, এমন প্রশ্নে চোখে টলমল পানি নিয়ে বলেন, ‘টাকা তো কিছু খরচ হয়েছে।’

আয়া থেকে জাল সনদে সংস্কৃতির প্রভাষক হওয়া হোসনে আরা সমালোচনার মধ্যে পড়ে কলেজে যাচ্ছেন না। তাঁর গ্রামের বাড়ি শাহবাজপুরে গেলেও তিনি দেখা করেননি। নাম না বলে তাঁর ষাটোর্ধ্ব মা বলেন, ‘জমি বিক্রি করে মেয়েটা শিক্ষক হইচে। এখন তার নাকি অনেক সমস্যা চলছে। স্যাররা নাকি ঢাকায় দৌড়াইতেছে। কী জানি হয়, বুঝতে পারতেছি না।’

কলেজে গিয়ে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাংলা ক্লাস করাতে দেখা যায় প্রভাষক শহীদুল ইসলামকে। হোসনে আরার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘কলেজটির প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে আমি রয়েছি। শিক্ষক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে হীনম্মন্যতায় ভুগছি। কারণ এই কলেজে আয়াও প্রভাষক, আমিও প্রভাষক।’ ইংরেজির প্রভাষক তোফায়েল আহমেদ সবুজ বলেন, ‘অন্য নিয়োগ কীভাবে হয়েছে না হয়েছে কখনো জানতে চাইনি। কিন্তু আয়াকে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে কলেজটিকে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

নিয়োগপ্রক্রিয়া যথাযথভাবে হয়েছে জানিয়ে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘যে যে বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সবারই বোর্ড কর্তৃক অনুমোদন রয়েছে। শিক্ষার্থী না থাকলেও হয়ে যাবে। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন।’ পালি, খাদ্য ও পুষ্টি, চারু ও কারুকলা, নাট্যকলা এবং সংগীতে যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন, তাঁরা জাল সনদ ব্যবহার করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তাঁদের কাগজপত্র সব ঠিকঠাক রয়েছে।’

১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা নিয়ে প্রত্যেককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কলেজে সবাই আর্থিকভাবে সহযোগিতা করেছে। তবে নিয়োগ বাবদ কোনো টাকা নেওয়া হয়নি। একটি পক্ষ আমাকে বিপদে ফেলতে এসব প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে।’

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ময়মনসিংহের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘অভিযোগের ভিত্তিতে আজিজুল হক, মাকসুদা বেগম, মো. রাজন, আশরাফুন নাহার, আকলিমা আক্তার এই পাঁচজনের এমপিও স্থগিত করা হয়েছে। ৫ আগস্টের পর যোগদান করেই এ পদক্ষেপ নিয়েছি। বিষয়গুলো গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, যাঁরা অসৎ উপায়ে চাকরি নিয়েছেন, তাঁদের একজনও টিকতে পারবেন না।’ তিনি আরও বলেন, অবৈধ নিয়োগে অধ্যক্ষের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাঁর শাস্তি নিশ্চিতেও সুপারিশ পাঠানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

সেই ইউএনও, তাঁর বাবা-মা ও চাচা-চাচির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

শিশু সাজিদের বাঁচার আশা নেই, বন্ধ করা হয়েছে অক্সিজেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঢাকায় মা-মেয়ে খুন: আগের চুরির সূত্র ধরেই গ্রেপ্তার হন আয়েশা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আয়েশা আক্তার
আয়েশা আক্তার

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যাকাণ্ডের আসামি গৃহকর্মী আয়েশা আক্তার গ্রেপ্তার হয়েছেন পাঁচ মাস আগের এক জিডিতে উল্লেখ থাকা গলায় পোড়া দাগের তথ্যের সূত্র ধরে। আয়েশার পরিচয় লুকানোর চেষ্টার কারণে সূত্রহীন ছিল পুলিশ। শেষ পর্যন্ত গলায় পোড়া দাগের তথ্যের সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডের দুদিন পর গত বুধবার দুপুরে ঝালকাঠির নলছিটি থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে তাঁকে। গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁর স্বামী রাব্বীও।

মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ এই জোড়া খুনের মামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার গৃহকর্মী আয়েশাকে ৬ দিন ও তাঁর স্বামীকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে।

মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি ১৪ তলা ভবনের সপ্তম তলার নিজেদের ফ্ল্যাটে গত সোমবার সকালে খুন হন গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তাঁর একমাত্র সন্তান নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)। এ ঘটনায় সেদিন রাতে গৃহকর্মী আয়েশাকে একমাত্র আসামি করে মোহাম্মদপুর থানায় হত্যা মামলা করেন নিহত লায়লার স্বামী স্কুলশিক্ষক আ জ ম আজিজুল ইসলাম। খুনের মাত্র চার দিন আগে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ওই বাসায় কাজ নিয়েছিলেন আয়েশা।

পুলিশের সূত্র জানায়, ঘটনার পর ভবনের সিসি ক্যামেরা ফুটেজে সোমবার সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বোরকা পরে আয়েশার ভবনে প্রবেশ এবং সকাল ৯টার পর স্কুলড্রেস ও মাস্ক পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে একজনের বের হওয়ার তথ্য মেলে। তবে তাঁর মুখ ছিল ঢাকা। আয়েশার মোবাইল নম্বর, ছবি, চেহারার বর্ণনা, ঠিকানা—কিছুই ছিল না পুলিশের কাছে। ফলে তদন্তের শুরুতেই অন্ধকারে হাতড়াতে হয়েছে।

তদন্তকারীরা জানান, আয়েশার চুরির অভ্যাস নতুন নয়। এর আগে জুলাইয়ে কাছাকাছি আরেকটি বাসায় ৮ হাজার টাকা চুরির ঘটনায় গৃহকর্মীর বিরুদ্ধে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছিল মোহাম্মদপুর থানায়। সেখানে অভিযুক্তের গলায় পোড়া দাগ থাকার তথ্য ছিল।

ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানান, আগের একটি জিডির নথি ঘেঁটে পুলিশ জানতে পারে জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় এমন এক গৃহকর্মীর নাম আয়েশা, যাঁর গলায় পোড়া দাগ রয়েছে। সেখান থেকেই পাওয়া যায় একটি পুরোনো মোবাইল নম্বর, যার সূত্রে সামনে আসে রাব্বী নামের একজন যুবক। তাঁর দেওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখা যায়, রাব্বীর স্ত্রীই আয়েশা, যিনি গৃহকর্মীর কাজ করেন এবং জেনেভা ক্যাম্পের ভাড়া বাসায় থাকেন। এই সূত্র ধরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিশ্চিত হয় পুলিশ।

পুলিশ জানায়, আয়েশা ও রাব্বীর সম্ভাব্য অবস্থান ধরে সাভারের হেমায়েতপুর, পটুয়াখালীর দুমকী হয়ে শেষ পর্যন্ত ঝালকাঠির নলছিটিতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উদ্ধার হয় ওই বাসা থেকে খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ।

তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। বাসায় কাজ শুরুর দ্বিতীয় দিনে তিনি ২ হাজার টাকা চুরি করেন। এ নিয়ে গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে তাঁর তর্ক-বিতর্ক হয়; তাঁকে পুলিশের দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। চতুর্থ দিন কাজে যাওয়ার সময় তিনি সঙ্গে করে একটি সুইচ গিয়ার চাকু নেন। চুরির বিষয়টি নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তিনি লায়লা আফরোজকে ছুরিকাঘাত করেন। নাফিসা এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে নিজের রক্তাক্ত পোশাক বদলে নাফিসার স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে বেরিয়ে যান আয়েশা। এরপর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে পোশাক পাল্টে সাভারের দিকে যান। পথে সিঙ্গাইর সেতু থেকে ফেলে দেন রক্তমাখা কাপড় ও চুরি করা মোবাইল।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান বলেন, ঘটনার সময় নাফিসা ঘুমাচ্ছিল। ধস্তাধস্তির শব্দে জেগে উঠে নিরাপত্তাকর্মীকে জানাতে ইন্টারকম ধরতেই তাকে আক্রমণ করেন আয়েশা।

পুলিশের ধারণা, কেবল ২ হাজার টাকার বিষয় নয়, আগে থেকেই আয়েশার চুরির পরিকল্পনা ছিল। ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় জোড়া খুন করেছেন।

পুলিশ বলছে, আয়েশার স্বামী রাব্বীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাঁকে পালাতে সহায়তা করার অভিযোগে। গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি এবং বিশ্বাসযোগ্য দু-একজনের যোগাযোগ নম্বর সংরক্ষণের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ।

এদিকে গতকাল আয়েশা ও রাব্বীকে এই হত্যা মামলায় আদালতে হাজির করে মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক মো. সহিদুল ওসমান মাসুম প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম শুনানি শেষে আয়েশার ৬ দিন ও তাঁর স্বামীর ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আদালতে তাঁদের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

আদালতের সহকারী পিপি হারুন-অর-রশিদ রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, গৃহকর্মী আয়েশা খুনের সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। তবে খুনের মূল রহস্য কী, তা খুঁজে বের করতে এবং এ ঘটনার পেছনে আরও কেউ জড়িত রয়েছে কি না, তা উদ্ঘাটনের জন্য তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন। রাব্বীও এই ঘটনায় জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

সেই ইউএনও, তাঁর বাবা-মা ও চাচা-চাচির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

শিশু সাজিদের বাঁচার আশা নেই, বন্ধ করা হয়েছে অক্সিজেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সব চেষ্টা—আকুতি বিফলে, মায়ের কোলে মৃত সাজিদ

  • দুই বছরের শিশু সাজিদ গর্তে পড়ে যায় বুধবার দুপুরে।
  • উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাজিদকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ৩৫
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীর তানোরে শিশু সাজিদ যে গর্তে পড়ে গিয়েছিল, সেই গর্তের গভীরতা ছিল ৩০-৩৫ ফুট। এমনটা বলা হচ্ছিল এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৪৫ ফুট পর্যন্ত খোঁড়া হয়। তখনো মেলে না সাজিদের সন্ধান। তবে থামেনি উদ্ধারকাজ। অবশেষে রাত ৯টার দিকে তার সন্ধান মেলে। ৩২ ঘণ্টা পর সাজিদের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস।

গত বুধবার তানোর উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়া গ্রামে গভীর নলকূপের জন্য খনন করা ওই গর্তে পড়ে যায় সাজিদ। এরপর বেলা ২টা ৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল উদ্ধার অভিযান শুরু করে। অভিযানে একে একে যোগ দেয় আটটি ইউনিট। উদ্ধারকাজ শেষে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘রাত ৯টায় শিশুটিকে আমরা উদ্ধার করেছি। পরে শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে চিকিৎসকেরা জানাবেন।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথেও ফায়ার সার্ভিস আশা করেছিল, সাজিদ বেঁচে আছে। তবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার খবর আসে, সে আর বেঁচে নেই।

সাজিদ যে গর্তে পড়ে গিয়েছিল, সেটির ব্যাসার্ধ ছিল ৮ ইঞ্চি। সরু গর্তে অক্সিজেন পাঠানো সম্ভব না হওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয় অক্সিজেন সরবরাহ। এতে খানিকটা হতাশ হয়ে পড়েন উদ্ধারকর্মীরা। তবে আশার আলো নিভে গেলেও কয়েক হাজার মানুষ অপেক্ষা করে ঘটনাস্থলে।

গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে সাংবাদিকদের সামনে এসে চোখের ভাষা লুকোতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স বিভাগের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। জানান, গর্তে ক্যামেরা নামিয়ে দেখেছেন—৩০ ফুটের পর জমে আছে মাটি আর খড়ের স্তূপ। স্থানীয়রা শিশুটিকে তোলার চেষ্টা করতে গিয়ে অজান্তেই সেসব ঠেলে দিয়েছেন ভেতরে।

শিশু সাজিদের বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার কোয়েলহাট পূর্বপাড়ায়। বাবা রাকিবুল ইসলাম, মা রুনা খাতুন। সন্তানটিকে একবার দেখা, বুকে জড়িয়ে ধরার আশায় ছিলেন তাঁরা। সাজিদের মা রুনা খাতুন দুপুরে ঘরে বসে ছিলেন। বললেন, ‘কছির উদ্দিন তিন জায়গা খুঁড়েছিল...দুই বছর ধরে গর্ত বন্ধ না করে রেখেছিল। কেন রেখেছিল? আমি তার বিচার চাই...কছিরের শাস্তি চাই।’

শিশুটি যে গর্তে পড়ে গেছে, সেটিসহ পাশে একই জায়গায় আরও দুই জায়গায় গভীর নলকূপের জন্য গর্ত করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও জমির মালিক কছির উদ্দিন। পানি না পেয়ে সব গর্তই খোলা ফেলে রেখেছিলেন দুই বছর ধরে। আর সেই অবহেলার বলি হলো দুই বছরের সাজিদ। লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, গর্তটি খোঁড়া হয়েছিল ৯০ ফুট পর্যন্ত।

এত গভীরতা পর্যন্ত খনন করতে হয়নি ফায়ার সার্ভিসকে। রাত ৯টায় উদ্ধারকাজ শেষ হয়। শেষ হয় শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান। সাজিদের সন্ধান মিলল ঠিকই। তবে মৃত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

সেই ইউএনও, তাঁর বাবা-মা ও চাচা-চাচির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

শিশু সাজিদের বাঁচার আশা নেই, বন্ধ করা হয়েছে অক্সিজেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে ঘরে আগুন দিলেন যুবক

 টঙ্গিবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ) প্রতিনিধি
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক যুবক নিজেদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক যুবক নিজেদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলায় মাদক সেবনের জন্য টাকা চেয়ে না পেয়ে ক্ষোভে এক যুবক নিজেদের ঘরে আগুন দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তাঁর নাম মহসিন মাদবর (২৬)। আজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপজেলার কাঠাদিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত মহসিন মাদক সেবনের জন্য বাবার কাছে টাকা দাবি করে আসছিলেন। ঘটনার দিন তিনি আবারও টাকা চান। বাবা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে নিজের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন মহসিন। স্থানীয়রা দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও ঘরের বেশ কিছু আসবাব পুড়ে যায়।

মহসিন মাদবর ওই গ্রামের হোসেন মাদবরের ছেলে। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে আসে। মহসিনকে আটকের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

টঙ্গিবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, মাদকাসক্ত এক যুবক মাদকের টাকার জন্য নিজেদের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। স্থানীয়দের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। তাঁকে পাওয়া যায়নি, তবে আটকের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

সেই ইউএনও, তাঁর বাবা-মা ও চাচা-চাচির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

শিশু সাজিদের বাঁচার আশা নেই, বন্ধ করা হয়েছে অক্সিজেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজধানীর লালবাগে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন

ঢামেক প্রতিবেদক
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর লালবাগ চৌরাস্তায় ছুরিকাঘাতে রিয়াদ (৩০) নামের এক যুবক খুন হয়েছেন। আজ ‎বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাত সোয়া ৮টার দিকে পথচারীরা ওই যুবককে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

‎হাসপাতালে পথচারী মো. ফাহিম বলেন, ‘সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে লালবাগ চৌরাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিল ওই যুবক। দেখতে পেয়ে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে এলে মারা যান। তাঁর পিঠে ছুরিকাঘাত রয়েছে। কে বা কারা তাঁকে ছুরিকাঘাত করেছে, তা জানতে পারি নাই।’

হাসপাতালে নিহতের মা নাসিমা বেগম জানান, তাঁদের বাড়ি মুন্সিগঞ্জে। বর্তমানে লালবাগ শহীদনগর ৮ নম্বর গলিতে থাকেন। তাঁর ছেলে রিয়াদ আগে চকবাজারে একটি জুতার কারখানায় কাজ করত। বর্তমানে বেকার ছিল। তিন বছর আগে বিয়ে করে রিয়াদ। বেশ কিছুদিন ধরে রিয়াদের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার এক ছেলে নিয়ে ইসলামবাগ তার বাবার বাসায় থাকত। এক বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে রিয়াদ ছিল ছোট। তার বাবার নাম আব্দুস সালাম।

নাসিমা বেগম বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে বাসা থেকে বের হয় রিয়াদ। এর কিছুক্ষণ পর মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে পারি, কে বা কারা রিয়াদকে ছুরি মেরেছে। পরে ঢাকা মেডিকেলে এসে রিয়াদের লাশ দেখতে পাই।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ওই যুবকের পিঠে ছুরিকাঘাত রয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। ঘটনাটি লালবাগ থানায় অবগত করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিজির সঙ্গে তর্ক: অব্যাহতির ৪ দিনের মাথায় পুনর্বহাল ময়মনসিংহের চিকিৎসক

রাশেদ খানের পদত্যাগ চেয়ে গণঅধিকারের উচ্চতর পরিষদ সদস্যের অনাস্থা

সেই ইউএনও, তাঁর বাবা-মা ও চাচা-চাচির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ৩ গর্ত, শাস্তি চান সাজিদের মা

শিশু সাজিদের বাঁচার আশা নেই, বন্ধ করা হয়েছে অক্সিজেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত