Ajker Patrika

পর্যটকে মুখরিত ত্রিশালের চেচুয়া–গলহর বিল

সাইফুল আলম তুহিন, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) 
পানিতে নেমে লাল শাপলা তুলছেন কয়েকজন পর্যটক। ছবি: আজকের পত্রিকা
পানিতে নেমে লাল শাপলা তুলছেন কয়েকজন পর্যটক। ছবি: আজকের পত্রিকা

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের চেচুয়া-গলহর বিল প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের এক অনন্য ভান্ডার। পাশাপাশি অবস্থিত এ দুটি বিলে বর্ষার পানিতে যত দূর চোখ যায়, লাল শাপলার রক্তিম আভায় ঢেকে যায় চারদিক। এর মাঝে সাদা আর বেগুনি শাপলার সৌন্দর্য যেন দর্শনার্থীদের বাড়তি আনন্দ উপহার দেয়।

প্রতিদিনই হাজারো ভ্রমণপিপাসু ছুটে আসছেন এই বিলে। শাপলার স্পর্শ নেওয়া, পানিতে নেমে ফুল তুলে ছবি তোলা কিংবা নৌকায় ভেসে ফুলের রাজ্যে ঘুরে বেড়ানো—সব মিলিয়ে দর্শনার্থীরা উপভোগ করছেন ভিন্ন রকম আনন্দ। তবে অতিরিক্ত ফুল ছেঁড়ায় বিলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে বলে স্থানীয় সচেতন মহল নিয়ন্ত্রণ আরোপের দাবি তুলেছে।

ভ্রমণপিপাসুদের অভিজ্ঞতা

শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে দর্শনার্থীদের ভোগান্তিও কম নয়। কাদামাখা আইল ধরে অনেকটা পথ হাঁটতে হয়, আবার কাছ থেকে শাপলা দেখতে অনেকেই নেমে পড়েন পানিতে। জামাকাপড় ভিজে গেলেও প্রকৃতির টানে কেউ পিছু হটেন না। অনেকে নৌকায় চড়ে ঘুরতে পছন্দ করেন, তবে বাড়তি ভাড়া গুনতে হয় বলে দর্শনার্থীদের মাঝে অসন্তোষও রয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিজ মাহমুদ সাদিক বলেন, ‘ফুলের সৌন্দর্য আমার কাছে সব সময়ই ভালো লাগে। কাছাকাছি দূরত্বে শাপলা ফুলের বিশাল সমাহার দেখে আমি অভিভূত। শত শত মানুষকে একসঙ্গে এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেখে সত্যিই ভালো লাগছে।’

গুজব থেকে জনপ্রিয়তা

কয়েক বছর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক গুজবের সূত্র ধরে দেশজুড়ে পরিচিত হয় চেচুয়া বিল। প্রচার হয়েছিল—এই বিলে নাকি রয়েছে রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা। খবরে বিশ্বাস করে হাজারো মানুষ ভিড় জমায় এখানে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপজেলা প্রশাসনকে মাইকিং, প্রচারণা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পর্যন্ত নামাতে হয়। অবশেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

পানিতে নেমে লাল শাপলা তুলছেন কয়েকজন পর্যটক। ছবি: আজকের পত্রিকা
পানিতে নেমে লাল শাপলা তুলছেন কয়েকজন পর্যটক। ছবি: আজকের পত্রিকা

সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র

বর্তমানে চেচুয়া-গলহর বিল কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই জনপ্রিয়। স্থানীয়ভাবে শাপলা তোলা নিষিদ্ধ থাকলেও তা মানছেন না অনেকেই। এলাকাবাসী নিজেরাও দর্শনার্থীদের সহযোগিতা করছেন। ফলে ধীরে ধীরে এটি সম্ভাবনাময় পর্যটনকেন্দ্রে রূপ নিচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা কাজী মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমরা চাই এই এলাকা একটি স্থায়ী পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হোক। এ জন্য প্রয়োজন ফুল সংরক্ষণ, অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ন্ত্রণ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রশাসন সহযোগিতা করলে কাজটি আরও সহজ হবে।’

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারি বলেন, ‘চেচুয়ার শাপলা বিল এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে এই জমি সম্পূর্ণ ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়ায় সরকারিভাবে এখানে পর্যটনকেন্দ্র করা সম্ভব নয়। তবু দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও ফুল সংরক্ষণে গ্রাম পুলিশ মোতায়েনের বিষয়টি বিবেচনায় আনা হবে।’

কীভাবে যাবেন

ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ড থেকে বালিপাড়া রোডে অটোভ্যানে ঠাকুরবাড়ি মোড় (ভাড়া ১০ টাকা) পর্যন্ত যেতে হবে। সেখান থেকে হেঁটে বা ভ্যানে করে সহজেই পৌঁছানো যায় চেচুয়া বিলে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত