Ajker Patrika

রূপের মাধুর্যে অনিন্দ্য কনকচূড়া

মহিউদ্দিন রানা, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) 
আপডেট : ২৪ মে ২০২৪, ১৫: ১৯
Thumbnail image

গ্রীষ্মের তপ্ত রোদে জ্যৈষ্ঠের আকাশ থেকে যেন দিনভর অগ্নি ঝরে। পিচঢালা সড়ক থেকেও বেরোয় উত্তাপ। ত্রাহি অবস্থায় একটু জিরিয়ে নিতে গাছের ছায়ায় দাঁড়ায় ক্লান্ত পথিক। তখন তাঁর চোখ আটকে যায় ফুলের রূপের বাহারে। রোদের আলোয় সেই রূপ যেন উছলে পড়ছে প্রকৃতিতে। নাম তার কনকচূড়া। সেই কনকচূড়ার রূপের মাধুর্যে নিমেষেই দূর হয়ে যায় পথিকের ক্লান্তি।

নয়নাভিরাম এই ফুলের দেখা মিলেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে। ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের পাশেই চরহোসেনপুর এলাকায় একটি কনকচূড়া ফুলের গাছ দেখা যায়। ওই পথে চলাচলকারীকে উষ্ণ অভ্যর্থনা দিতেই সবুজের মাঝে ডানা মেলে, সৌন্দর্য বিলিয়ে, নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে কনকচূড়া গাছ। মানুষ হয়তো এমন সৌন্দর্য দেখবে বলে পথে নামে না, নামে জীবন-জীবিকার তাগিদে। কিন্তু কনকচূড়া তার রূপ এমনভাবে মেলে ধরেছে, তা উপভোগ না করার সাধ্য কার।

প্রকৃতির মাঝে মুগ্ধতা ছড়ানোর পাশাপাশি কনকচূড়া ফুলের মৃদু সুগন্ধি ও উজ্জ্বল রং দূরবাহী হওয়ায় গাছের শাখায় শাখায় মৌমাছি ও প্রজাপতিরা এসে ভিড় করে। এ ছাড়া কনকচূড়া গাছের ফুল শেষ হতে না হতেই ফল ধরা শুরু করে। ফল দেখতে গোলাকৃতি ও তামাটে। কনকচূড়া পাতার নিশ্ছিদ্র বুনন ও প্রস্ফুটনের কারণে এই গাছের সৌন্দর্যে নিসর্গপ্রেমীদের মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। ডালে ডালে ছড়িয়ে থাকার পাশাপাশি গাছের নিচেও পড়ে আছে অসংখ্য কনকচূড়া।

গাছে ফোটা কনকচূড়াস্থানীয় বাসিন্দা মো. জাহিদ হাসান নামের এক প্রকৃতিপ্রেমী বলেন, ‘এই পথ দিয়ে যাতায়াতের সময় বেশ কয়েক দিন ধরে মনোমুগ্ধকর ফুলগাছটি চোখে পড়ছে। প্রথমে এটির নাম জানতাম না। একপর্যায়ে ফুলের ছবি তুলে গুগলের সাহায্যে ফুলের নাম জানতে পারি।’

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বনরাজ হর্টি কালচার নার্সারির পরিচালক মো. মহরম আলী বলেন, ‘কনকচূড়া অনেক অনেক উঁচু এলাকায় প্রাকৃতিকভাবেই হয়। তবে আমাদের এই অঞ্চলে খুব একটা চোখে পড়ে না। আমরা প্রয়োজন অনুসারে নার্সারিতে এই গাছের চারা উৎপন্ন করি। রুচিশীল প্রকৃতিপ্রেমীরা এই গাছ কিনে নিয়ে বাড়ির আঙিনায় লাগান।’

গাছে ফোটা কনকচূড়াবাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির আজকের পত্রিকাকে বলেন, কনকচূড়ার আদি নিবাস শ্রীলঙ্কা, আন্দামান, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া। জ্যৈষ্ঠের শুরু থেকে বর্ষাকাল পর্যন্ত এই ফুল-ফলের দেখা মেলে। বিভিন্ন দিক থেকে কনকচূড়া হলো কৃষ্ণচূড়ার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। তবে কৃষ্ণচূড়া গাছের ডালপালা নমনীয় হলেও এই গাছের ডালপালা ঊর্ধ্বমুখী। এই গাছের পাতা ছোট, সরু, রুক্ষ ও কালচে সবুজ। ফুলের রং গাঢ়-হলুদ ও সুরভিময়, পাপড়ি পাঁচটি। বিরাট দ্বিপক্ষল পাতা, শাখায়িত দীর্ঘ হলুদ পুষ্পমঞ্জরি এবং চ্যাপ্টা তামাটে ফলের প্রাচুর্য দিয়ে কনকচূড়া চেনা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত