Ajker Patrika

আত্মহত্যা করতে যাওয়া দোলা আজ স্বাবলম্বী

  • পরপর দুই ছেলেকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন দোলা।
  • ছিল শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনও। তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী, মাদারীপুর
জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত পেছনে ফেলে নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা ফ্যাশন হাউসে কাপড় সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত রহিমা আরা দোলা। সম্প্রতি মাদারীপুর সদরের পাগদী এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত পেছনে ফেলে নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করা ফ্যাশন হাউসে কাপড় সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত রহিমা আরা দোলা। সম্প্রতি মাদারীপুর সদরের পাগদী এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

অভাব আর শ্বশুরবাড়ির নির্যাতনের শিকার হয়েও রহিমা আরা দোলা স্বপ্ন দেখতেন ভালোভাবে বেঁচে থাকার। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় সন্তান হারানোর পর বেঁচে থাকার সেই ইচ্ছেটাও মরে যায়। তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। সেই মনোবল হারানো দোলা আজ অনেক নারীর অনুপ্রেরণা। তিনটি জামার ডিজাইন করে ২০ হাজার টাকা নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন। একটু একটু করে গড়ে তুলেছেন দোলা ফ্যাশন হাউস ও পারলার ব্যবসা। সেখানে কাজ করছেন সাত নারী। দেড় শতাধিক নারীকে দিয়েছেন সেলাই প্রশিক্ষণ।

অদম্য ইচ্ছাশক্তি, আত্মবিশ্বাস ও মনোবল কাজে লাগিয়ে আজ রহিমা আরা দোলা সমাজের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। গত বছর পেয়েছেন জয়িতা পুরস্কারও। শুধু দোলাই নন, এমন অদম্য ইচ্ছাশক্তি দিয়ে দেশের বহু নারী আজ স্বাবলম্বী। এই প্রেক্ষাপটে আজ ৮ মার্চ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে বিশ্ব নারী দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘অধিকার, সমতা, ক্ষমতায়ন, নারী ও কন্যার উন্নয়ন’।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নোয়াখালীর জয়নাল আবেদিনের মেয়ে রহিমা আরা দোলা (৩৮) তাঁর মাকে হারান ১৪ বছর বয়সে। ২০০১ সালে মাদারীপুর সদরের পাগদী এলাকার আবদুল ওহাব বেপারীর ছেলে কামাল বেপারীর (৪৫) সঙ্গে তাঁর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। ওই বছর দোলার বাবাও মারা যান। বিয়ের পর থেকেই শ্বশুরবাড়িতে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। মুখ বুজে সব সহ্য করেছেন। দিন চলে যাচ্ছিল স্বামী ও একমাত্র ছেলে রাতুলকে নিয়ে। তাঁর স্বামী কামাল বেপারী একটি ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তাপ্রহরী।

২০১১ সালে আট বছরে পা দিয়েছিল ছেলে রাতুল। একদিন ছেলেকে নিয়ে আত্মীয়ের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন দোলা। বাড়ির কাছাকাছি এসে দোলার হাত থেকে ছুটে অটোবাইকের নিচে পড়ে রাতুল মারা যায়। ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন দোলা। কোনোভাবেই ছেলের এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছিলেন না। এদিকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন ছেলের মৃত্যুর জন্য দোলাকেই দায়ী করতে থাকে। এতে আরও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। একটা সময় আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। দ্বিতীয় সন্তান গর্ভে আসার পর কিছুটা স্বস্তি আসে জীবনে। জন্মের পর ধরা পড়ে ছেলে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত। অভাবের সংসারে শুরু হয় আবার ছোটাছুটি। ছেলের চিকিৎসায় টাকাপয়সা সব শেষ হয়ে যায়। এমনকি শেষ সম্বল বিয়ের গয়নাও বিক্রি করে ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগাড় করেন। তবু ছেলেকে বাঁচাতে পারেননি দোলা। শেষ সময়ে টাকার অভাবে চিকিৎসকও দেখাতে পারেননি। দ্বিতীয় ছেলের মৃত্যু তাঁকে একেবারের শেষ করে দেয়। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন। আবারও আত্মাহত্যার চিন্তা মাথায় আসে। ঠিক ওই সময়ই যুব উন্নয়নে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ নেন দোলা। টেইলার্স, বুটিক, ব্লক ও বাটিকের কাজ শেখেন। পাশাপাশি পারলারের কাজও শেখেন।

এর আগে ২০০৮ সালে ৫ হাজার টাকায় একটি ছাগল কিনেছিলেন দোলা। সেই ছাগল বড় করে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন তিনি। সেই ২০ হাজার টাকা দিয়ে সেলাই মেশিন ও কিছু কাপড় কেনেন। তিনটি জামার ডিজাইন করেন। সেই ডিজাইন আশপাশের মানুষের পছন্দ হয়। শুরু হয় তাঁর নতুন করে পথচলা। মাদারীপুর শহরের পাগদী এলাকায় স্বামীর টিনের ঘরের বারান্দায় গড়ে তোলেন দোলা ফ্যাশন হাউস ও পারলার ব্যবসা। টিনের বেড়া ও মাটির ফ্লোরের বারান্দায় বেড়া দিয়ে এক পাশে পারলার, অন্য পাশে টেইলার্স, হাতের সেলাই ও থ্রি-পিস বিক্রির কাজ শুরু করেন। একটু একটু করে ব্যবসা বড় হতে থাকে। ২০১৫ সাল থেকে ব্যবসায় সফলতা দেখতে শুরু করেন।

দোলার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি মাদারীপুরের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে দেড় শতাধিক নারীকে সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। বর্তমানে তাঁর ডিজাইন করা ও বিভিন্ন সেলাই নকশার কাজ করেন সাতজন নারী। সেলাইয়ের পাশাপাশি সুই-সুতা ও পারলারের কাজ করে মাসে ৫০ হাজার টাকার মতো আয় করেন দোলা। গত বছর তিনি মাদারীপুর মহিলা অধিদপ্তর থেকে জয়িতা পুরস্কার পেয়েছেন। আছে সাত বছরের একটি ছেলেসন্তান। তার নাম তায়েব। স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে সে।

দোলা বলেন, ‘সন্তানের মৃত্যুর পর তিনবার আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম। এমন অবস্থা হয়েছিল যেন প্রতি মুহূর্তে মনে হতো, আমি কেন এখনো বেঁচে আছি। একদিকে পরপর দুই সন্তানের মৃত্যু, অন্যদিকে শ্বশুরবাড়ির নির্যাতন। তার মধ্যে আবার অভাবের সংসার। সব মিলিয়ে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম। হঠাৎ একজনের পরামর্শে যুব উন্নয়ন থেকে টেইলারিংয়ের প্রশিক্ষণ নিই। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।’

পাগদী এলাকার ইতি বলেন, ‘দোলা আপার কাছ থেকে প্রথমে কাজ শিখেছি। তিনি বিভিন্ন ডিজাইন করে দেন। সেগুলো তাঁর কাছে থেকে নিয়ে, নিজের বাড়িতে বসেই সুই-সুতা দিয়ে নকশা করে দিই। তারপর সেই কাজ দোলা আপাকে বুঝিয়ে দিলে তিনি কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক দেন। এতে আমাদের সংসারের কিছুটা আয়ও হয়।’

মাদারীপুরের স্থানীয় সংগঠন জাগো উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ফারজানা আক্তার মুন্নি বলেন, দোলা নিজ চেষ্টায় অল্পদিনেই স্বাবলম্বী হতে পেরেছেন। তাঁর মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে নিজেই পোশাকের ডিজাইন করে স্থানীয়দের মধ্যে সাড়া জাগাতে পেরেছেন।

মাদারীপুর মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক নাজনীন আফরোজ বলেন, ‘যাঁরা জয়িতা পুরস্কার পান, তাঁদের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পেছনে একটা গল্প থাকে, যার থেকে অন্য নারীরা উৎসাহ পান। তেমনি একজন রহিমা আরা দোলা। তাঁর মতো নারীরা আমাদের সমাজের সফলতার জ্বলন্ত উদাহরণ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

ফুটবলে নব্বইয়ের দশকের উন্মাদনা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি: আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কার্তিকের কুয়াশায় কুড়িগ্রামে শীতের আগমনী বার্তা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
গতকাল সকালে কুড়িগ্রাম শহরের রেলস্টেশন এলাকায় কুয়াশাচ্ছন্ন অবস্থা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল সকালে কুড়িগ্রাম শহরের রেলস্টেশন এলাকায় কুয়াশাচ্ছন্ন অবস্থা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কার্তিকের শুরুতেই কুড়িগ্রামে শীতের আগমনী বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। পৌষ আসতে এখনো প্রায় দুই মাস বাকি থাকলেও প্রতি রাতে জেলাজুড়ে কুয়াশার স্পষ্ট উপস্থিতি শীতের আগমনকে ত্বরান্বিত করছে। দিনে সূর্যের দাপুটে উপস্থিতি থাকলেও রাতের আবহাওয়া কুয়াশার চাদরের দখলে যেতে শুরু করেছে। জানান দিচ্ছে শীত এল বলে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জানায়, জেলায় মধ্য অক্টোবর থেকে শীতের আগমনী বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। দিন-রাতের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে এসেছে। শনিবার (২৫ অক্টোবর) দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বোচ্চ ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত এক সপ্তাহে জেলায় সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা ২৩ ডিগ্রি এবং সর্বোচ্চ ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর একটু আগেই শীতের আগমন হচ্ছে। সন্ধ্যার পর কুয়াশা পড়ছে। গাছের পাতা, ফসল ও ঘাস কিংবা খোলা আকাশের নিচে থাকা মোটরসাইকেল বা অন্য কোনো বস্তুতে পড়ে থাকা কুয়াশার ফোঁটা জানান দিচ্ছে শীতের আগমন। রাতের বেলা গাছের পাতা গড়িয়ে কুয়াশা ঘরের টিনের চালে পড়ছে টিপটিপ শব্দে। ভোরবেলা কুয়াশাচ্ছন্ন থাকছে চারপাশ। তবে সে তুলনায় শীতানুভূতি নেই। এখনো বৈদ্যুতিক পাখা ছাড়তে হচ্ছে বাসিন্দাদের। যদিও ইতিমধ্যে বাজারে ও সড়কের পাশের দোকানগুলোতে শীতের কাপড়ের পসরা সাজানো শুরু হয়েছে। যেন শীতকে বরণের প্রস্তুতি।

বিকেল হতেই শহরের বিভিন্ন মোড়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়ে নানা রকম শীতের পিঠা তৈরি শুরু করেছেন। ভাপা পিঠার সঙ্গে চলছে চিতই পিঠা বিক্রি।

কুড়িগ্রাম শহরের বাসিন্দা মুকুল বলেন, এ বছর একটু আগাম কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। রাতে ঘরের বাইরে শীত অনুভূত হচ্ছে। সড়কে গাড়ি চালালে কুয়াশার কুণ্ডলীর কারণে পথ চলতে সমস্যা হচ্ছে। জেলায় ইতিমধ্যে শীত শুরু হয়েছে। তবে ঠান্ডা তুলনামূলক কম।

কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে সকালের কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলে সকালের কুয়াশা। ছবি: আজকের পত্রিকা

উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের তীরবর্তী রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর বলেন, ‘রাতে ভালোই কুয়াশা পড়া শুরু হইছে। এখনো সেই অর্থে ঠান্ডা লাগে না। তবে বোঝা যাচ্ছে যে ঠান্ডা শুরু হচ্ছে।’

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ আল-আমিন মাসুদ বলেন, ‘আজ (শনিবার) সকালে সড়কপথে চলার সময় কুড়িগ্রামের রাজারহাটে কুয়াশার মাত্রা দেখে মনে হয়েছে যেন পৌষ মাস শুরু হয়েছে। তবে দিনে গরম, কিন্তু রাতের তাপমাত্রা কমছে। এ সময় শিশুদের সুরক্ষায় বাড়তি যত্ন নেওয়া উচিত। রাতে বৈদ্যুতিক পাখার গতি কমিয়ে রাখাসহ শিশুদের বাইরে নিয়ে গেলে ধুলাবালু ও ঠান্ডা এড়িয়ে চলতে হবে।’

রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, দিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমছে। ইতিমধ্যে শীত শুরু হয়েছে। মধ্য নভেম্বর থেকে তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

ফুটবলে নব্বইয়ের দশকের উন্মাদনা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি: আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

স্কুলভ্যানকে বাঁশবোঝাই ট্রাকের ধাক্কা, দুই শিশু ও ভ্যানচালক নিহত

পাবনা প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ০৬
পাবনায় ট্রাকচাপায় তিনজন নিহত হয়। রোববার সকালে পাবনা সদরের ডাঙ্গাবাড়িয়া এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
পাবনায় ট্রাকচাপায় তিনজন নিহত হয়। রোববার সকালে পাবনা সদরের ডাঙ্গাবাড়িয়া এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

‎পাবনায় বাঁশবোঝাই ট্রাকের চাপায় দুই স্কুলশিক্ষার্থীসহ তিনজন নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় আরও দুজন গুরুতর আহত হয়েছে। ‎রোববার (২৬ অক্টোবর) সকাল ৭টার দিকে পাবনা সদর উপজেলার গয়েশপুর ইউনিয়নের বাঙ্গাবাড়িয়া এলাকায় ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ‎নিহত ব্যক্তিরা হলো পাবনা কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তাসমিয়া আক্তার, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আবু তোহা ও ভ্যানের চালক আকরাম হোসেন।

‎মাধপুর হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ‎

‎‎জানা গেছে, সকাল ৭টার দিকে ৮-১০ জন শিক্ষার্থী ভ্যানগাড়িতে করে পাবনার জালালপুর এলাকার ক্যাডেট কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজে যাওয়ার পথে ঢাকা থেকে পাবনাগামী একটি বাঁশবোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই ছাত্র-ছাত্রী ও ভ্যানচালক নিহত হয়। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছে আরও দুজন পথচারী। স্থানীয় বাসিন্দারা মাধপুর হাইওয়ে থানা-পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করে। ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। মহাসড়কে যান চলাচল সাময়িক বন্ধ রয়েছে।

ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভ্যানের ড্রাইভারসহ তিনজন নিহত ও চায়ের দোকানে থাকা দুই ব্যক্তি আহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।‎

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

ফুটবলে নব্বইয়ের দশকের উন্মাদনা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি: আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সিরাজদিখানে ১৪৩ দিনে কোরআন মুখস্থ করল ৯ বছরের শিশু আরফান

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
মোহাম্মদ আরফান হোসাইন। ছবি: সংগৃহীত
মোহাম্মদ আরফান হোসাইন। ছবি: সংগৃহীত

অভূতপূর্ব এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কুচিয়ামোড়া গ্রামের ৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ আরফান হোসাইন। মাত্র ১৪৩ দিনে পুরো পবিত্র কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে সে। আরফানের এই অসাধারণ সাফল্যে পরিবার, শিক্ষক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আনন্দ ও গর্বের আবহ বিরাজ করছে।

আরফান বর্তমানে ইসলামপুর কামিল কওমি মাদ্রাসার ছাত্র। এর আগে সে কুচিয়ামোড়া দারুন্নাজাত মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করেছে। অল্প বয়সে এমন সাফল্য অর্জন করে স্থানীয়ভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

আরফান কেয়াইন ইউনিয়নের কুচিয়ামোড়া গ্রামের বিশিষ্ট আলেম ও শিক্ষক হাফেজ আব্দুল্লাহ আল মাসরুরের (লাভু হুজুর) ছেলে। লাভু হুজুর বর্তমানে কুচিয়ামোড়া দারুন্নাজাত মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ এবং কুচিয়ামোড়া মিত্রপাড়া বাইতুন নূর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিন ভাইবোনের মধ্যে আরফান সবার ছোট। মাত্র ১৪৩ দিনে সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্থ করে সে তার পরিবারসহ পুরো এলাকাকে গর্বিত করেছে।

ইসলামপুর কামিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক ফখরুদ্দীন রাজি বলেন, ‘আরফান আমাদের মাদ্রাসার গর্ব। ১৪৩ দিনে কোরআন মুখস্থ করা আমাদের মাদ্রাসার ইতিহাসে এই প্রথম। এটি এক বিরল দৃষ্টান্ত। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

ফুটবলে নব্বইয়ের দশকের উন্মাদনা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি: আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাবিতে ঘাসকাটা যন্ত্রের ব্লেড ঢুকে গেল যুবকের মাথায়

জাবি প্রতিনিধি 
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ০৮
হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে আহত যুবককে। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে আহত যুবককে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ঘাস কাটার যন্ত্র (মেশিন) ভেঙে ব্লেড ছিটকে মাথায় ঢুকে সুমন মিয়া (২৬) নামের এক যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা এবং জাবি স্পোর্টস ক্লাব আয়োজিত তিন দিনব্যাপী নাইট ফুটবল টুর্নামেন্ট উপলক্ষে বরাদ্দ স্টলে কাঁকড়া ফ্রাই বিক্রি করতেন।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ঘটনার পরপরই তাঁকে প্রথমে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট একাধিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৩ অক্টোবর থেকে জাবি স্পোর্টস ক্লাবের ব্যবস্থাপনায় তিন দিনব্যাপী নাইট ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হয়। শনিবার ছিল খেলার শেষ দিন। টুর্নামেন্টে ক্লাবের সভাপতি আরশাদ হাবিব বিশালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এক বন্ধু একটি স্টল বরাদ্দ নেন, যেখানে সুমন মিয়া ও জাবির এক হোটেল কর্মচারী কাজ করতেন।

এদিকে বিশালের অনুরোধে অনানুষ্ঠানিকভাবে মাঠ প্রস্তুতের কাজ করতেন শারীরিক শিক্ষা অফিসের কর্মচারী আবুল হোসেন। গতকাল শেষ দিন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে এসে মাঠ প্রস্তুতের কাজ শেষে হাতে সময় থাকায় মেশিন দিয়ে ঘাস কাটা শুরু করেন তিনি। ঘাস কাটার সময় মেশিনের ব্লেড মাটিতে থাকা একটি ইটে লেগে ভেঙে যায়। ব্লেডের সেই অংশ ছিটকে গিয়ে পাশের স্টলে দাঁড়িয়ে থাকা সুমন মিয়ার মাথায় ঢোকে।

সুমন মিয়ার পাশের স্টলে পিঠার দোকান ছিল নাদিয়া মীম নামের সিটি ইউনিভার্সিটির সাবেক এক শিক্ষার্থীর। নাদিয়া বলেন, সুমন স্টলে দাঁড়ানো অবস্থায় ব্লেড ছিটকে এসে লাগার সঙ্গে সঙ্গে ঢলে পড়ে যান। প্রথমে ভয়ে কেউ তাকে উঠায়নি। পরে বিশাল এসে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য মোটরসাইকেলে উঠিয়ে দেন।

কর্মচারী আবুল হোসেন বলেন, ‘হাতে একটু সময় থাকায় ঘাস কাটছিলাম। মেশিনে ইট লেগে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটবে, এটা ভাবতে পারছি না।’

শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক নাসরিন বেগম বলেন, ‘আজ ছুটির দিন থাকায় আমি অফিসে ছিলাম না। আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীরাও ছুটিতে ছিল। তবে জাবি স্পোর্টস ক্লাবের নাইট ফুটবল টুর্নামেন্ট চলমান থাকায় তিনি সেখানে ছিলেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত আহত ব্যক্তিকে এনাম মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাই। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। রাত ১টার দিকে তার অপারেশন শুরু হয়।’

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আহত সুমনের মাথায় অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত নন। ৭২ ঘণ্টা অবজারভেশনে থাকবেন তিনি। নিবিড় পরিচর্যার পরামর্শ থাকলেও এখন পর্যন্ত তার ব্যবস্থা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

ফুটবলে নব্বইয়ের দশকের উন্মাদনা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি: আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত