Ajker Patrika

দৌলতপুরে প্রাণিসম্পদ কার্যালয়: ১১ পদের ৯টি শূন্য, দুজনের একজন ছুটিতে, ভোগান্তি

দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ৫৯
দৌলতপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ও পশু হাসপাতাল। ছবি: আজকের পত্রিকা
দৌলতপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ও পশু হাসপাতাল। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ও পশু হাসপাতাল চরম জনবলের সংকটে ভুগছে। ফলে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার খামারি ও কয়েক লাখ কৃষক মারাত্মক বিপাকে পড়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে জনবলের সংকটে থাকা এই কার্যালয়ের অবস্থা আরও নাজুক আকার ধারণ করেছে মাসখানেক আগে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বদলি হওয়ার পর।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ১১টি পদে কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র একজন ড্রেসার ও একজন উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (প্রাণিস্বাস্থ্য)। বাকি ৯টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। তার মধ্যে একমাত্র উপসহকারী কর্মকর্তা বর্তমানে অসুস্থতার কারণে ছুটিতে থাকায় কার্যত পুরো অফিসের কার্যক্রম অচল হয়ে পড়েছে।

মাসখানেক আগে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বদলি হওয়ায় দৌলতপুরের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পার্শ্ববর্তী মিরপুর উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে। কিন্তু নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করায় দৌলতপুরে নিয়মিত উপস্থিত হওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। ফলে স্থানীয় খামারিরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরামর্শ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

প্রায় ৮ লাখ মানুষের বসবাসের এই বৃহৎ উপজেলায় সাড়ে ৩ লাখের বেশি গবাদিপশু ও ১০ লাখের বেশি হাঁস-মুরগি রয়েছে। কৃষি ও পশুপালন এখানকার মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতার অন্যতম উৎস। কিন্তু চিকিৎসকের সংকটে পশুগুলো সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না। এতে খামারিরা বাধ্য হচ্ছেন গ্রাম্য পশু চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে। ফলে পশু মৃত্যুর হার ও খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

দপ্তর সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে দৌলতপুরে প্রকল্পভিত্তিক আরও পাঁচজন কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছেন। তবে তাঁদের নিয়োগের মেয়াদ চলতি বছরের শেষ দিকে ও ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি নাগাদ শেষ হবে। এর মধ্যে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের চারজন এবং উন্নত জাতের ঘাস চাষ প্রকল্পের একজন দায়িত্বে রয়েছেন।

দৌলতপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ও পশু হাসপাতাল। ছবি: আজকের পত্রিকা
দৌলতপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় ও পশু হাসপাতাল। ছবি: আজকের পত্রিকা

হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের সাদিপুর এলাকার এনএসআর অ্যাগ্রো ফার্ম অ্যান্ড ফিশারিজের দায়িত্বপ্রাপ্ত নাইম ইসলাম বলেন, ‘উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে জনবলের সংকটের কারণে আমরা সঠিক সময়ে পশুগুলোর চিকিৎসা করাতে পারি না। এখন তো কোনো স্থায়ী ডাক্তার নেই। ডাকলেও আসেন না, এলেও টাকা দাবি করেন। তাই বাধ্য হয়ে গ্রামের পশু চিকিৎসকদের দ্বারস্থ হচ্ছি। আমাদের খামারে ৮০টির মতো গরু-মহিষ রয়েছে। তাদের সেবা দেওয়া এখন খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।’

একই অভিযোগ করেন পশুপালক দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘তিন দিন ধরে আমার দুটি গরু অসুস্থ। হাসপাতালে কোনো ডাক্তার না থাকায় গ্রামের চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে। এতে পশুর মৃত্যুঝুঁকি থেকে যাচ্ছে, কিন্তু আমরা নিরুপায়।’

মিরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ও দৌলতপুরের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত আব্দুল্লাহিল কাফি বলেন, ‘বর্তমানে দৌলতপুর উপজেলায় মাত্র দুজন দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া প্রকল্পের অধীনে আরও পাঁচজন আছেন। আমরা নিয়মিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে আসছি। সংকটের কারণে খামারি ও চাষিরা সঠিক সেবা পাচ্ছেন না। অনেকে গ্রাম্য চিকিৎসকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।’

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আল মামুন হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘জেলার প্রায় সব উপজেলায় জনবলের সংকট রয়েছে। তবে দৌলতপুরের পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। সেখানে বর্তমানে কোনো সার্জন বা স্থায়ী কর্মকর্তা নেই। মিরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কাজ করছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ধানুড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়: চার বছরে ১০৬ শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহ

গুরুদাসপুর (নাটোর) সংবাদদাতা
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

নাটোরের গুরুদাসপুরে ধানুড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে বাল্যবিবাহের কারণে ছাত্রী ঝরে পড়ার প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। বিদ্যালয়ের তথ্যমতে, গত চার বছরে এই বিদ্যালয়ের ১০৬ ছাত্রী বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে। সর্বশেষ এসএসসি পরীক্ষায়ও অনুপস্থিত ২৬ শিক্ষার্থীর বেশির ভাগের ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের তথ্য পাওয়া গেছে। এতে শিক্ষার্থী-সংকটে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

চাপিলা ইউনিয়নের এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর বলেন, গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের আর্থিক অবস্থা খারাপ। অভাব-অজ্ঞতার কারণে অভিভাবকেরা কম বয়সী মেয়েদের গোপনে বিয়ে দিচ্ছেন। নানা উদ্যোগ নিয়েও বাল্যবিবাহ রোধ সম্ভব হচ্ছে না।

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, শিক্ষার্থী ধরে রাখতে ২০১৭ সাল থেকে নিজস্ব পরিবহন সেবা চালু করা হয়। এর আগে ২০০০ সালে চালু করা হয় ‘মিড ডে মিল’ কার্যক্রম। তবে আর্থিক সংকটের কারণে গত জানুয়ারি থেকে দুপুরের খাবার কার্যক্রমটি বন্ধ রয়েছে।

বিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয় ২০৩ ছাত্রী। এর মধ্যে অষ্টম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশনের পরই বাল্যবিবাহের কারণে ৮০ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এসএসসি পরীক্ষার ১৬ জন পরীক্ষার্থী বাল্যবিবাহের শিকার হয়। চলতি বছর ২৫ জন ছাত্রী ফরম পূরণ করলেও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি ১০ জন; তারাও বাল্যবিবাহের শিকার বলে নিশ্চিত করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

প্রধান শিক্ষক জানান, চাপিলা ইউনিয়নের ধানুড়া ছাড়াও শ্যামপুর, চন্দ্রপুর, পুঠিমারী ও ওয়াপদা বাজার এলাকার শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়টিতে পড়ে। শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বাড়াতে সপ্তাহে ১ কেজি চাল ও ২০ টাকা করে নিয়ে ‘মিড ডে মিল’ চালানো হতো। বাকি খরচ শিক্ষকেরা বহন করতেন।

মো. আলমগীর বলেন, ‘অভিভাবকদের নিয়ে সচেতনতা সভা করেছি, এলাকাভিত্তিক শিক্ষকও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে কিংবা দূরের আত্মীয়দের বাসায় নিয়ে গিয়ে মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছেন অভিভাবকেরা। এতে বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থী-সংকটে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।’

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা আফরোজ বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মিড ডে মিল চালু রাখার বিষয়টিও বিবেচনায় আনা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আগারগাঁওয়ে সরকারি কোয়ার্টারে গ্যাস বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৭ জন দগ্ধ

ঢামেক প্রতিবেদক
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৩১
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সরকারি কোয়ার্টারে গ্যাসলাইন লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে একই পরিবারের সাতজন দগ্ধ হয়েছেন। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।

আজ শনিবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে আগারগাঁও পাকা মার্কেট সড়ক এলাকার সরকারি কোয়ার্টারে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

দগ্ধ ব্যক্তিরা হলেন শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার মো. আব্দুল জলিল মিয়া (৫০), তাঁর স্ত্রী আরনেজা বেগম (৪০), ছেলে আসিফ (১৯), সাকিব (১৬), আসিফের স্ত্রী মনিরা (১৭) ও নাতনি ইভা (৬) ও ইশা (৬)।

এই ঘটনায় প্রতিবেশী ফিরোজুল আলম (৩৫) ২১ শতাংশ দগ্ধ হয়েছেন। তাঁকে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।

তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে আসা দগ্ধ জলিল মিয়ার মেয়ের স্বামী মো. আরফান মিয়া জানান, রাতে টিনশেড বাসায় পাশাপাশি কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন পরিবারটির সাত সদস্য। ভোরের দিকে তাঁর শাশুড়ি আরনেজা বেগম রান্না করতে যান। দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালাতেই বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। এতে সাতজনই পুড়ে যান। আরফান ও তাঁর স্ত্রী জনিভা আক্তার পাশের কক্ষে ছিলেন। তাঁর দুই মেয়ে ইভা ও ইশা নানার কক্ষে ছিল। আসিফের স্ত্রী মনিরা আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

তিনি জানান, তাঁদের চিৎকারে প্রতিবেশীরাও ছুটে আসেন। দগ্ধ ব্যক্তিদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বাসায় গ্যাস লিকেজ থেকে এই আগুনের ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে দগ্ধ আসিফ জানান, আগারগাঁও সরকারি কোয়ার্টারের বাসায় তাঁরা ভাড়া থাকেন। দেড় মাস ধরে ঘরে গ্যাসের গন্ধ পাচ্ছিলেন। বাড়িওয়ালাকে বারবার বললেও কোনো প্রতিকার পাননি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন হারুনুর রশীদ জানান, জলিলের ১২ শতাংশ, আরনেজার ১০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। অন্যদের হাত-পা দগ্ধ হয়েছে। এ ছাড়া আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীর হাত-পা দগ্ধ হয়েছে। তাঁকে চিকিৎসা দিয়ে গাইনি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে। জলিল ও আরনেজা বেগমকে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অবজারভেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

স্বপ্নের দেশে যাত্রা: এক মাস ধরে যোগাযোগ বন্ধ, অবশেষে বাড়িতে এল নৌকাডুবির খবর

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ৩৪
আহাজারি করছেন নিখোঁজ নিশাতের স্বজনেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আহাজারি করছেন নিখোঁজ নিশাতের স্বজনেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্বপ্নের দেশ ইতালির উদ্দেশে লিবিয়া থেকে রওনা দেওয়ার পর নিখোঁজ হন মাদারীপুর জেলার শিবচরের বেশ কয়েকজন যুবক। এক মাস নিখোঁজ থাকার পর গত বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) খবর এসেছে, নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ তাঁরা। এই যুবকদের একজন নিশাত মাতুব্বর।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়িতে খবর এল নিশাতসহ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী ট্রলারটি ডুবে গেছে ভূমধ্যসাগরে। বেশির ভাগই সমুদ্রে ডুবে নিখোঁজ। এমন খবর বাড়িতে পৌঁছানোর পর শোকের ছায়া নেমে এসেছে বাড়িতে। শুধু নিশাতই নন, মাদারীপুর জেলার শিবচরের বিভিন্ন এলাকার আরও তিন যুবকের খোঁজ নেই অনেক দিন ধরে। একই দালালের মাধ্যমে লিবিয়া থেকে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে রওনা হয়েছিলেন তাঁরা।

শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে উপজেলার বহেরাতলা দক্ষিণ ইউনিয়নের সিঙ্গাপুর বাজার-সংলগ্ন নিখোঁজ নিশাতের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে স্বজনদের আহাজারি। চলছে মায়ের বিলাপ। বাড়িভর্তি আশপাশের লোকজন, আত্মীয়স্বজন। ছয় মাসের সন্তান কোলে নিয়ে নির্বাক স্ত্রী মেহেনাজ। নিখোঁজ নিশাত বহেরাতলা দক্ষিণ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাবিনা বেগম ও আব্দুল লতিফ মাতুব্বর দম্পতির একমাত্র সন্তান।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় কুদ্দুস দালালের মাধ্যমে গত ৩ অক্টোবর ঘর ছাড়েন নিশাত। প্রথমে সৌদি আরব যান। সেখানে ওমরাহ করেন। পরে সৌদি থেকে কুয়েত হয়ে মিসর পৌঁছান নিশাত। মিসর থেকে লিবিয়া। পুরো প্রক্রিয়ায় ইতালি যেতে ২২ লাখ টাকার চুক্তি হয় কুদ্দুসের সঙ্গে। এই কুদ্দুসের মাধ্যমে শিবচরের বিভিন্ন এলাকার আরও অর্ধডজন যুবক ইতালি যাওয়ার জন্য লিবিয়া গিয়ে নিখোঁজ রয়েছেন।

নিখোঁজ নিশাতের শ্বশুর মিজান মোল্লা বলেন, ‘২২ লাখ টাকায় লিবিয়া দিয়ে ইতালি পাঠাবে বলে কুদ্দুস টাকা নেয়। আমরা সব টাকা অগ্রিম দিয়েছি। প্রথমে সৌদি নেয়। সেখান থেকে কয়েক দেশ ঘুরিয়ে লিবিয়া নেয়। নভেম্বর মাসের ১০ তারিখে গেম (সাগর পাড়ি দিতে ট্রলারে ওঠে) দেয়। এরপর আর যোগাযোগ নাই। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দালাল কুদ্দুস জানায়, ট্রলার ডুবে গেছে। বেশির ভাগের কোনো খোঁজ নাই!’

নিখোঁজ নিশাত মাতুব্বর। ছবি: সংগৃহীত
নিখোঁজ নিশাত মাতুব্বর। ছবি: সংগৃহীত

নিশাতের মা আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘কুদ্দুস দালাল আরও ১০ লাখ টাকা চাইছে। আমরা বলেছি, আমার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করাই দেও। ওরা দেয়নি। এক মাস যোগাযোগ নাই। এখন জানাইছে, গেমের ট্রলার ডুবে গেছে সাগরে। বেশির ভাগই নিখোঁজ। জানি না আমার নিশাতের কী হইছে! আমার ছেলেরে ফেরত চাই!’

নিখোঁজ নিশাতের স্ত্রী মেহেনাজ বলেন, ‘লিবিয়া যাওয়ার পর নিশাতের মোবাইল নিয়ে যায় দালালের লোকজন। পরে অন্যের মোবাইল দিয়ে যোগাযোগ করত। ১০ নভেম্বর দুপুরে গেম দেয়। গেম দেওয়ার আগে আরেকজনের মোবাইল থেকে ভয়েস পাঠায়, ‘ঠিকমতো পৌঁছানোর পর জানাব’। এর পর থেকে আর যোগাযোগ নাই! বৃহস্পতিবার খবর আসে, গেমের ট্রলার ডুবে গেছে। বেশির ভাগই নিখোঁজ। আমরা জানি না, নিশাত বেঁচে আছে কি না। কোনো খোঁজ নাই।’

নিশাত ছাড়াও নিখোঁজ রয়েছেন বাঁশকান্দি ইউনিয়নের ফারহান খান রোমান (২৪), শেখপুরের মুন্সীকান্দি এলাকার মুন্না। এ ছাড়াও শিবচর পৌর এলাকার আরও দুই যুবক নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।

শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম বলেন, ‘এর আগে লিবিয়ায় আটকে রেখে তিন যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিও গ্রেপ্তার হয়েছে। তবে এই নিখোঁজের বিষয়ে এখনো কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাটহাজারীতে বৈঠকে ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি 
নিহত রবিউল ইসলাম ওরফে বাবু। ছবি: সংগৃহীত
নিহত রবিউল ইসলাম ওরফে বাবু। ছবি: সংগৃহীত

হাটহাজারীতে বিয়ের সামাজিক বৈঠকে (পানসল্লা) ছুরিকাঘাতে মো. রবিউল ইসলাম ওরফে বাবু (৪০) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও দুজন। শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ৮টার দিকে উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়ন এলাকার মুছা সওদাগরের বাড়িতে এই ঘটনা ঘটে।

নিহত রবিউল ইসলাম মুছা সওদাগর বাড়ির মুক্তিযোদ্ধা জহুরুল হক কোম্পানির বড় ছেলে। তিনি নাজিরহাট ঘাট স্টেশন এলাকার ব্যবসায়ী ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে মুছা সওদাগরের বাড়িতে একটি বিয়ের প্রস্তুতিমূলক সামাজিক বৈঠক (পানসল্লা) চলছিল। এ সময় বৈঠকে রবিউল ইসলামের সঙ্গে একই বাড়ির জসিমের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে জসিম ঘর থেকে চাকু এনে বাবুর গলায় আঘাত করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই রবিউল ইসলামের মৃত্যু হয়।

ছুরিকাঘাতের সময় উপস্থিত রবিউল ইসলাম বাবুর ভাই ইমরুল হোসেন বাচ্চু (৩৫) ও চাচাতো ভাই ইমন (২১) বাবুকে উদ্ধার করতে গেলে জসিম তাঁদেরকেও চাকু দিয়ে আঘাত করেন। আহত দুজনকে নাজিরহাট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন জসিমকে আটক করে হাটহাজারী মডেল থানা-পুলিশকে জানায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে।

হাটহাজারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনজুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি এখন ঘটনাস্থলে আছি। স্থানীয় উত্তেজিত জনতার কারণে এখন পর্যন্ত জসিমকে হেফাজতে নেওয়া সম্ভব হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত