Ajker Patrika

দখলে মৃতপ্রায় নদ-নদী, উচ্ছেদের পদক্ষেপ নেই

  • জেলায় নদ-নদীর সংখ্যা ৪৩। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৩০টি বেহাল।
  • দখলদার ১১৬ জন। দখল হয়েছে নদীর প্রায় ১৬ একর।
  • পরিবেশবাদীদের ভাষ্য, দখলদারের সংখ্যা কমপক্ষে হাজার হবে।
সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
আপডেট : ০১ মার্চ ২০২৫, ০৭: ১১
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় নরসুন্দা নদী দখল করে নির্মাণ করা বাগানবাড়ি। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় নরসুন্দা নদী দখল করে নির্মাণ করা বাগানবাড়ি। ছবিটি সম্প্রতি তোলা। আজকের পত্রিকা

ইজমা শোভা জর্দা কোম্পানি। দেশি এই জর্দা কোম্পানির মালিক মঞ্জু মিয়া। তিনি জেলার কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠজন। ২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মঞ্জু মিয়া করিমগঞ্জ উপজেলার জাফরাবাদ ও কাদির জঙ্গল ইউনিয়নের মধ্যবর্তী দেওয়ানগঞ্জ বাজার সেতুর পশ্চিমে নরসুন্দা নদীর মূল গতিপথের দুই-তৃতীয়াংশ দখল করে প্রাচীর তুলে বাগানবাড়ি করেছেন। তিনি জলাধার নিয়ন্ত্রণ আইন এবং কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেননি বলে ক্ষোভ স্থানীয়দের। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয়রা মানববন্ধনও করেছেন। তারপরও মঞ্জু মিয়ার দাপটে প্রশাসন ছিল নির্বাক। দখলমুক্ত হয়নি নদী।

এ বিষয়ে মোবাইল ফোনে মঞ্জু মিয়াকে জিজ্ঞেস করলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি খরিদ করছি এই জায়গা। আমার জায়গায় বিল্ডিং করছি।’

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, সাহেদ মিয়া, রুমেজ আলী, মাইনুল ইসলাম, রমজান আলী, হাবিব মিয়া, রহম আলী, সজল মিয়া, দুলাল মিয়া, ইজ্জত আলীসহ মোট ৪১ জন নরসুন্দা নদীর পাড়ের প্রায় ৮২ শতাংশ জায়গা দখল করেছেন। স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা বলছেন, দখলদারের সংখ্যা কমপক্ষে ৫০০ জন হবে।

এদিকে কটিয়াদী উপজেলার করগাঁও গ্রাম দিয়ে বয়ে যাওয়া অডা শিমুহা নদী করগাঁও মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড ইজারা নিয়েছে জলমহাল হিসেবে। সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম সমিতি পরিচালনা করেন। সম্প্রতি তিনি নদীটিতে বাঁধ দিয়ে সেচে মাছ শিকার করেছেন। এ নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে কেউই ভয়ে মুখ খুলছেন না। বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত আবদুস সালামের সঙ্গে কথা হলে তিনি অস্বীকার করে বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করতাছে। মাটি কাটতাছে। আমি কিন্তু সেচার পক্ষে না। আমি সেচি নাই। আমি জাল দিয়ে মাছ ধরছি।’

কুলিয়ারচর উপজেলায় গিয়ে দেখা যায়, ছয়সূতী ইউনিয়ন দিয়ে বয়ে যাওয়া কালী নদীতে এখন পুরোদমে হয় ধান চাষ ৷ একেবারে বিলীন হয়ে গেছে নদীর অনেকাংশ। স্থানীয় কৃষক মিজানুর রহমান (৬২) বলেন, ‘আমরা ছোটবেলায় দেখেছি, এ নদীতে বড় বড় মালবাহী নৌকা চলাচল করত। তখন প্রথাবনাথ বাজারই ছিল আশপাশের সবচেয়ে বড় বাজার। এখন এই নদীও নাই, বাজারও নাই। এখন এখানে ধান চাষ হয়।’

সরকারি সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জ জেলায় নদ-নদীর সংখ্যা ৪৩। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৩০টি নদ-নদী বেহাল। এগুলোর দখলদার রয়েছে ১১৬ জন। নদ-নদী দখলের পরিমাণ প্রায় ১৬ একর। তবে পরিবেশবাদীদের ভাষ্য, দখলদারের সরকারি হিসাব সঠিক নয়। নদ-নদীর দখলদারের সংখ্যা কমপক্ষে হাজার হবে। দিন দিন নদ-নদীর এমন বেহাল অবস্থা হতে থাকলেও জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের কার্যক্রম চোখে পড়ে না। তাদের কার্যক্রম খাতাপত্রেই সীমাবদ্ধ।

পরিবেশকর্মীরা বলছেন, অস্বীকার করার উপায় নেই, নদ-নদী অবৈধ দখলে প্রভাবশালীরা জড়িত। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে নানা বাধার মুখে পড়তে হয়। নদীর অবৈধ দখল এবং এর স্বাভাবিক গতি ব্যাহত করা ঠেকানোর আইন থাকলেও তার কোনো প্রয়োগ নেই।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, ‘নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যারা দখল করছে, তাদের দ্রুত উচ্ছেদ করা হবে। নদী রক্ষা কমিশনের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কিশোরগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, নদী ‘জীবন্ত সত্তা’—মহামান্য হাইকোর্টের এই ঘোষণাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নদ-নদীগুলো হত্যা করছে, দখল-দূষণ করছে এক শ্রেণির মানুষরূপী পশু। বিভিন্নভাবে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করে, নদীশাসনের নামে নদ-নদীগুলোর প্রাণপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

বাপার সাধারণ সম্পাদক বলেন, শুকনো মৌসুমে এখন বেশির ভাগ নদীতে পানি নেই, ভরা মৌসুমে থাকে না প্রবাহ। নোংরা-ময়লা-আবর্জনায় ভাগাড়ে পরিণত হয়ে নদীগুলো এখন কিশোরগঞ্জবাসীর অভিশাপ হয়ে উঠেছে। এই নদীগুলো রক্ষা করার পথ একটাই—উৎসমুখের অপরিকল্পিত বাঁধ খুলে দেওয়া এবং নদী দখলবাজদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা। এই হীন কর্মকাণ্ডে প্রশাসনের যারা জড়িত, তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘সিএস মূলে নদীর সীমানা নির্ধারণ করে সঠিকভাবে পিলার স্থাপন করতে হবে এবং দখল-দূষণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আংশিক নয়, সম্পূর্ণ নদী খনন করতে হবে। এর আগে নদী খননের কাজে ব্যাপক দুর্নীতির তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমাদের ধারণা, নদী দখলদারের সংখ্যা হাজারখানেক। জেলা প্রশাসনের দেওয়া তালিকা সঠিক নয়। সরেজমিনে তদন্ত করে দখলবাজদের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ করে গণমাধ্যমের সহায়তা নিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেওয়ারও দাবি জানাচ্ছি।’

নদীবিষয়ক পত্রিকা রিভার বাংলার সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘আমরা জানি, ২০১৮ সালে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদনে কিশোরগঞ্জ জেলার নদ-নদীর অবৈধ দখলদারের তালিকা রয়েছে। কিন্তু সে মোতাবেক দখলদার ও দূষণকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি? আমাদের জানামতে হয়নি। নতুন করে দখলদারদের তালিকা তৈরি বা উচ্ছেদও করা হয়নি। আমরা চাই, জেলা নদী রক্ষা কমিটিকে দ্রুত সক্রিয় করে জেলার সব নদ-নদী রক্ষার কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

কিশোরগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মমিন ভূঁইয়া বলেন, ‘সরকার নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার একটা পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা নরসুন্দা নদীকে সিলেক্ট (বাছাই) করছি। নদীটি সার্ভে করার পর কয়েকটা দূষণস্থল চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই দূষণস্থল থেকে আমরা স্যাম্পল (নমুনা) সংগ্রহ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা গবেষণাগারে পাঠিয়েছি। গবেষণাগার থেকে যখন রেজাল্ট আসবে, তখন আমরা ব্যবস্থা নেব।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘কিশোরগঞ্জের নদ-নদীগুলোর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য ড্রেজিংয়ের (খনন) সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চলছে। জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং স্থাপনা; যেগুলো নদীভাঙনের শিকার হয়েছে বা হচ্ছে, সেগুলোতে কীভাবে আমরা প্রতিরক্ষার কাজ বাস্তবায়ন করব, তারও সমীক্ষা হচ্ছে। এই সমীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর এগুলো নিয়ে প্রকল্প প্রণয়ন করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নার্সকে ক্লিনিকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ, চিকিৎসক কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহীতে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ। ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহীতে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীতে বিয়ের আশ্বাসে নার্সকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গতকাল রোববার ওই চিকিৎসককে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। এর আগে তাঁকে নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম আহসান হাবিব (২৯)। তিনি লক্ষ্মীপুর এলাকার আল-আরাফাহ ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আবাসিক চিকিৎসক। তাঁর বাড়ি নওগাঁ জেলায়।

গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। পরে ২৩ সেপ্টেম্বর নগরীর রাজপাড়া থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী।

জানা যায়, নগরীর অন্য একটি বেসরকারি ক্লিনিকের নার্স পদে চাকরি করেন ভুক্তভোগী। ঘটনার দিন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ভুক্তভোগীকে চিকিৎসক আহসান হাবিব নিজের চেম্বারে ডেকে এনে ধর্ষণ করেন।

পরে ভুক্তভোগী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসা ও শারীরিক পরীক্ষা শেষে তিনি মামলা করেন।

জানতে চাইলে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানি না। মামলায় ঘটনাস্থল হিসেবে আমাদের ক্লিনিকের নাম আছে বলে জেনেছি। এরপর সঙ্গে সঙ্গেই আহসান হাবিবকে ক্লিনিক থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।’

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজপাড়া থানার পরিদর্শক আব্দুল আলিম জানান, ঘটনার পর ভুক্তভোগী নার্স রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসা ও শারীরিক পরীক্ষা শেষে তিনি মামলা করেন।

তিনি আরও জানান, মামলা হওয়ার পর গতকাল রোববার আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিন বিকেলেই তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলাটির তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও পাঁচ বছরের শিশু ধর্ষণের দুই মামলায় তিনজনের যাবজ্জীবন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে ১২ বছরের এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীকে ধর্ষণের দায়ে দুই আসামিকে ও রামপুরায় পাঁচ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের দায়ে একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক মো. গোলাম কবীর পৃথক দুই মামলায় এ রায় দেন।

বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীকে ধর্ষণের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন ঘটনাস্থলের বাড়ির ব্যবস্থাপক আব্দুল গাফফার ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু মো. বাচ্চু। রাজধানীর রামপুরায় পাঁচ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত হলেন বাচ্চু মিয়া হাওলাদার।

উভয় মামলায় প্রত্যেক আসামিকে দণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা পরিশোধে ব্যর্থ হলে প্রত্যেককে অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাভোগ করতে হবে বলে রায়ে বলা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী রাশেদুল ইসলাম দুটি মামলার রায়ের বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন।

বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীর মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৬ অক্টোবর ওই বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীর মা-বাবা কর্মস্থলে যান। বেলা ৩টার দিকে আসামিরা যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলের হাশেম রোডের বাসায় ১২ বছরের এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীকে ধর্ষণ করেন। ঘটনার বিষয়ে কাউকে কিছু বললে তাঁরা তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন।

পরে একই বছরের ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টার দিকে আব্দুল গাফফার তাকে ডেকে নিয়ে তার সঙ্গে যেতে বলেন। তখন ভুক্তভোগী তাঁর সঙ্গে না গিয়ে বিষয়টি তার মাকে জানায়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা ১ নভেম্বর যাত্রাবাড়ী থানায় দুজনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে দুজনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের পরিদর্শক তাসলিমা আক্তার। ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। মামলার বিচার চলাকালে ১৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল।

রায়ের সময় আসামি বাচ্চুকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। রায় শেষে তাঁকে সাজা পরোয়ানাসহ কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়। অপর আসামি গাফফার পলাতক থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

অপর দিকে শিশু ধর্ষণ মামলার বিবরণে জানা যায়, ওই শিশুর মা রামপুরা টিভি সেন্টার রোডে একটি গ্যারেজে রান্না করতেন। ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল বেলা ২টার দিকে বাচ্চু মিয়া হাওলাদার শিশুকে দোকান থেকে ঠান্ডা পানি এনে দিতে বলেন। শিশুটি তাঁর কাছে গেলে বাচ্চু মিয়া হাওলাদার তাকে রুমে নিয়ে ধর্ষণ করেন। মেয়ের ফিরে আসতে দেরি হওয়ায় তার মা তাকে খুঁজতে যান। সেখানে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি দেখতে পান তিনি। পরে মেয়েটি মাকে সব খুলে বলে। এ ঘটনায় শিশুটির মা ওই দিনই রামপুরা থানায় মামলা করেন।

মামলাটি তদন্ত করে ওই বছরের ৩১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন রামপুরা থানার উপপরিদর্শক এস এম মুকুল মিয়া। ১৬ নভেম্বর আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। মামলার বিচার চলাকালে ট্রাইব্যুনাল ১৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য নেন।

আসামি বাচ্চু মিয়া হাওলাদারকে রায়ের সময় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। রায় শেষে তাঁকে সাজা পরোয়ানাসহ কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে যুবকের আত্মহত্যা

বালিয়াডাঙ্গী (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি 
শামীম আকতার। ছবি: সংগৃহীত
শামীম আকতার। ছবি: সংগৃহীত

ইতালিপ্রবাসী স্ত্রীকে ভিডিও কলে রেখে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন শামীম আকতার (৪০) নামের এক যুবক। আজ সোমবার উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের কাশিডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

শামীম আকতার ওই গ্রামের পজির উদ্দীনের ছেলে। তিনি স্থানীয় নাট্যমঞ্চে অভিনয়ের কারণে এলাকায় নাট্যকর্মী হিসেবে পরিচিত।

শামীমের ভাই জাপান জানান, ইতালি থেকে ভাবি মোবাইলে জানান যে শামীম ঘরের ভেতর গলায় ফাঁস দেওয়ার চেষ্টা করছে। বাজার থেকে ছুটে আসার আগেই মারা যায় শামীম। দরজা ও জানালার গ্রিল বন্ধ ছিল। পরে দরজা ভেঙে ঘরের ভেতর ঢুকে দেখি ঝুলন্ত অবস্থায় আছে শামীম।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই মাস আগে ৩০ লাখ টাকা খরচ করে ইতালিতে যাওয়ার চেষ্টা করেন শামীম ও তাঁর স্ত্রী মুক্তা আক্তার। ভিসা জটিলতার কারণে স্ত্রী চলে গেলেও স্বামী আটকে যান। চেষ্টা করছিলেন ভিসা জটিলতা কাটিয়ে স্ত্রীর কাছে যাওয়ার।

এ ছাড়া ইতালিতে মুক্তা আক্তার কাজে যোগ দিতে পারেননি। তাঁর ভরণপোষণের জন্য প্রতি মাসে ৭০ হাজার টাকা পাঠাতে হতো। টাকার জন্য খুব চাপে ছিলেন শামীম।

বালিয়াডাঙ্গী টাইগার নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘শামীম সচেতন ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর অভিনয় দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হই। সেই শামীম এমন অঘটন ঘটাবেন। আমরা ভাবতে পারি না। তাঁর মৃত্যুতে সবাই শোকাহত।’

এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী থানার তদন্ত কর্মকর্তা দিবাকর অধিকারী জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদনের কাজ করছে। পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার পর এ বিষয়ে বলা যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজধানীতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ৮ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার
প্রতীকী ছবি

রাজধানীতে ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়ার অভিযোগে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের আট নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত রবি সন্ধ্যা থেকে গতকাল সোমবার পর্যন্ত পৃথক অভিযানে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন ফেনীর দাগনভূঞা থানার আলিপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একরাম হোসেন (২৫), দাগনভূঞা উপজেলা ছাত্রলীগের তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক আদনান পিপুল (২৫), তেজগাঁও কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য মো. আসিবুল হক অর্ণব (২৫), দাগনভূঞার পূর্ব চন্দ্রপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজিব রহিম পলক (২৫), ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজ ছাত্রলীগের সদস্য সাকের আলম (২৪), চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের সদস্য মো. জহুরুল ইসলাম (৪৩), যাত্রাবাড়ী ৬৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোকাররম হোসেন (৪৮) এবং ওয়ারী থানা ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসমিন রহমান (৪৮)।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, রোববার সন্ধ্যায় ডিবি উত্তরা বিভাগের একটি দল মোহাম্মদপুরের কাদেরাবাদ হাউজিং এলাকা থেকে একরাম, আদনান, অর্ণব, সজিব ও সাকেরকে গ্রেপ্তার করে। একই দিন বিকেলে ডিবি রমনা বিভাগ গাবতলী এলাকা থেকে জহুরুল ইসলামকে এবং রাতে ডিবি মতিঝিল বিভাগ যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে মোকাররম হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। বিকেলে টিকাটুলির কে এম দাস লেন এলাকা থেকে ইয়াসমিন রহমানকে গ্রেপ্তার করে ডিবি লালবাগ বিভাগের কোতোয়ালি জোনাল টিম।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা স্বীকার করেছেন যে তাঁরা কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মিছিলসহ সংঘটিত কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন।

ডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হঠাৎ পদত্যাগ করলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার

‘মোন্থা’ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে, আঘাত হানবে কোথায়

দুশ্চিন্তা, হতাশা দূর হবে হাদিসে বর্ণিত এই চার দোয়ায়

গায়ে থুতু পড়া নিয়ে ড্যাফোডিল ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের রাতভর সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ

নির্বাচনে যেতে চায় জাপার একাংশ, কৌশল তুলে ধরবে জাতির সামনে

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত