Ajker Patrika

খুলনায় শিকারিদের দৌরাত্ম্যে ঝুঁকিতে পরিযায়ী পাখির বিচরণ

হিরামন মন্ডল সাগর, বটিয়াঘাটা (খুলনা)
আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪৯
শিকারির হাতে ধরা পড়া পরিযায়ী পাখি। সম্প্রতি খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের বারোআরিয়া এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিকারির হাতে ধরা পড়া পরিযায়ী পাখি। সম্প্রতি খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের বারোআরিয়া এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের হিমেল হাওয়া বইতে শুরু করেছে। আর শীত পড়তেই এ দেশের জলাশয়, খাল-বিল ও ধানখেতে ভিড় জমাতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখির দল। কিন্তু পাখি শিকারি চক্রের দৌরাত্ম্যে পরিযায়ী পাখির বিচরণ হুমকিতে পড়েছে।

শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা, দাকোপ, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা, রূপসা, দিঘলিয়া, তেরখাদা, কয়রাসহ দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে পরিযায়ী পাখির আগমন শুরু হয়েছে। আর এসব অঞ্চলের সক্রিয় হয়ে উঠেছে পাখি শিকারি চক্র। মাঠ, খাল-বিল ধানখেতে রাত-দিন ফাঁদ পাতছে তারা। পাখি ধরতে নানা রকম অপকৌশল তৈরি করছে পাখি শিকারিরা। তারা পাখির ডাক ও সুর নকল করতে সক্ষম এমন বিশেষ যন্ত্র তৈরি করে তা পাখি আকর্ষণের ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করছে। ধানখেতে বসে বিভিন্ন পাখির ডাকের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাঁশি বাজাচ্ছে তারা। এতে উড়ন্ত পাখি বিভ্রান্ত হয়ে আকাশ থেকে নিচে নেমে আসে এবং ফাঁদে আটকা পড়ে। শিকারিরা নাইলনের সুতা দিয়ে ছোট-বড় করে ধানখেতে ও ধানের ওপরে বিছিয়ে রাখছে। এতে ধানখেতে উড়ে আসা পাখি সুতায় আটকা পড়ছে। কেঁচো দিয়ে, বড়শি পেতে, কোচ মেরে এবং কারেন্ট জাল পেতে পাখি শিকার করছে অসাধু শিকারিরা। মোবাইল ফোনে পাখির ডাক রেকর্ড করে বাজায়। পাখিরা এই ডাক শুনে শিকারিদের কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করতে থাকে। তখন শিকারিরা পাখি ধরে ফেলে।

বিভিন্ন উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে গোপনে পরিযায়ী পাখি বেচাকেনা চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিকারি চক্রের কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন, শীতের শুরুতেই পাখি ধরা শুরু হয়েছে। তবে এবার পাখির সংখ্যা তুলনামূলক কম হওয়ায় দাম অনেক বেশি। জলকচু, ডঙ্কুর, আলতি, বয়া, নীলপরী, কাম, হাঁস পাখি, কড়াসহ বহু নাম না জানা পরিযায়ী পাখি ধরা হচ্ছে। এর মধ্যে ডঙ্কুর ৪০০ টাকা, জল কচু ৩০০, হাঁস পাখি ৩০০ থেকে ৪০০, আলতি ৬০ টাকা, কাম পাখি এক হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে।

জানা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলার শিবনগর, বান্দা, নোয়াকাটি, মাদারতলা, কাঞ্চননগর, বানিয়াখালী, শরাফপুর, জাবড়া, কাঁঠালতলা, বাজারসহ বিভিন্ন এলাকা এই পাখি বিক্রি হচ্ছে। বটিয়াঘাটা উপজেলার সুন্দরমহল, কৈয়া, উত্তর-দক্ষিণ শৈলমারী, ফুলতলা, গঙ্গারামপুর, আমিরপুর, বিরাট, পুটিমারি, তেঁতুলতলা, হাটবাটিসহ ইত্যাদি স্থানে পাখি বেচাকেনা হয়ে থাকে। পাইকগাছা উপজেলার লতা, সোলাদানা, মুনকিয়া, আলোকদ্বীপ, জামতলা, কাঠামারি, দারুণমল্লিক, সৈয়দখালী, নৈয়াই, গেওয়াবুনিয়া, জিরবুনিয়া, দেলুটি ও আশপাশের হাটবাজারে পাখি বিক্রি হয়ে থাকে।

দাকোপ উপজেলার চালনা বৌমার গাছতলা, বটবুনিয়া, সালতা, বাজুয়া, লাউডোব, লক্ষ্মীখোলা, গড়খালী, কামিনী বাঁশিসহ বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে মোবাইল ফোনে অর্ডার নিয়ে পাখি বিক্রি করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, পাখি শিকারিদের রয়েছে একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক। বিভিন্ন পাখি শিকারি মোবাইল ফোনে অর্ডার নেয় এবং বড় অঙ্কের টাকার বিনিময় গ্রাম থেকে শহরে পাখি সরবরাহ করে থাকে।

স্থানীয় পাখি শিকারি বাবলু, মনি, আক্তারুল ইসলাম, নয়নসহ আরও অনেকে বলেন, পাখি শিকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও এটি বিক্রি করে ভালো টাকা পান তাঁরা। তাই পাখি শিকার করেন তাঁরা।

বটিয়াঘাটা উপজেলা পাখি সংরক্ষণ পরিষদ ও পাখি সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য অলকেশ কুমার সরকার বলেন, ‘পাখি শিকারিদের ধরতে আমরা রাতে ধানখেতে পাহারা দিই। দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে আমরা পাখির সংরক্ষণসহ অবাধে পাখি শিকার রোধে কাজ করে আসছি। থানা-পুলিশের সহযোগিতায় আমরা আমাদের এই কর্মকাণ্ড চলমান রেখেছি।’

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি সভাপতি আলকামা রমিন বলেন, একসময় বিশ্ববিদ্যালয় পাখি সংরক্ষণ ও গবেষণা নিয়ে একটি সংগঠন কাজ করত। কিন্তু এখন আর তাদের সেই অ্যাক্টিভিটি নেই।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ খুলনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল বলেন, পরিযায়ী পাখিসহ দেশীয় পাখি সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, গণসচেতনতামূলক সভা, মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ। পাখি শিকারের ফাঁদ ও জাল কাটা হচ্ছে। গোপন তথ্য প্রদানকারী নিয়োগ করা হয়েছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও হাট-বাজারে বন্য প্রাণী উদ্ধার অভিযান করা হচ্ছে। অপরাধ উদ্‌ঘাটনে (তথ্য প্রদানকারী) পুরস্কার বিধিমালা ২০২০ অনুযায়ী তথ্য দানকারীকে পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘অতিথি পাখি শিকার করা আইনের চোখে অপরাধ। শাস্তি হিসেবে কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয়ই হতে পারে। বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী তফসিল ১ ও ২-এ উল্লেখিত কোনো পরিযায়ী পাখি শিকার করলে প্রথমবার সর্বোচ্চ এক বছর কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে। একই অপরাধ আমার দ্বিতীয়বার করলে সর্বোচ্চ দুই বছর কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

স্থগিতাদেশ তুলে ব্রাকসুর নতুন রোডম্যাপ প্রকাশ

বেরোবি সংবাদদাতা
স্থগিতাদেশ তুলে ব্রাকসুর নতুন রোডম্যাপ প্রকাশ

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (ব্রাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের স্থগিতাদেশ তুলে নতুন রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে ব্রাকসু নির্বাচন কমিশন। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) রাত ৯টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মো. শাহজামানসহ সকল কমিশনারের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। এ ছাড়াও এক‌ই সময়ে সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে যৌথ বিবৃতিও দেয় কমিশন।

নতুন রোডম্যাপ অনুযায়ী, ৪ ও ৭ ডিসেম্বর প্রাথমিক তালিকা সম্পর্কে প্রার্থীদের আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি এবং ৭ ডিসেম্বর বেলা ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ, ৮ ও ৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বিতরণ ও দাখিল (ডোপ টেস্টের রিপোর্টসহ), ১০ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই ও প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ, ১১ ডিসেম্বর প্রাথমিক তালিকা সম্পর্কে প্রার্থীদের আপত্তি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি এবং ২৪ ডিসেম্বর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ শেষে ভোট গণনা এবং গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করা হবে‌।

ব্রাকসুর সকল কমিশনারের স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে মনোনয়নপত্র বিতরণ কার্যক্রম চলমান থাকাকালে ভোটার তালিকায় উল্লেখযোগ্য অসংগতি শনাক্ত হ‌ওয়ায় নির্বাচন কমিশন নীতিগত কারণে নির্বাচনী কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল। নির্বাচন কমিশন আগেও জানিয়েছে, এখনো স্পষ্ট বলছে, নির্বাচন-সংক্রান্ত যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি, গ্রুপ বা পক্ষের চাপ বা প্রভাব ছিল না এবং এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, অসত্য ও বিভ্রান্তিকর।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ, স্বশাসিত ও স্বতন্ত্র কমিশন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও আইনি মানসম্মত নির্বাচন আয়োজন করা কমিশনের প্রধান দায়িত্ব। ভুল ভোটার তালিকার ভিত্তিতে নির্বাচন পরিচালনা করলে নির্বাচনপ্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার ঝুঁকি ছিল, তাই প্রয়োজনীয় সংশোধন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনী কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছিল।

কোনো পক্ষ, সংগঠন বা ব্যক্তির স্বার্থে কমিশন কখনোই কাজ করেনি এবং পরবর্তী সময়েও করবে না। কমিশন শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি, ব্রাকসু ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচনের গঠনতন্ত্র, নির্বাচন নীতিমালা ও তথ্যভিত্তিক বাস্তব পরিস্থিতির আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। শিক্ষার্থীদের কাছে আহ্বান—গুজব, অপপ্রচার ও ভুল তথ্য পরিহার করে দায়িত্বশীল আচরণ করুন। ভোটার তালিকা সংশোধন কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন হ‌ওয়ামাত্রই নির্বাচন কমিশন পরবর্তী নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেছে। সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশন সব সময় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

উল্লেখ্য, এর আগে ১ ডিসেম্বর বিকেলে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের ভোটার তালিকায় অসংগতি থাকার কারণ দেখিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য কার্যক্রম স্থগিত করেছিল নির্বাচন কমিশন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ছিনতাই ও হত্যাচেষ্টার মামলায় চাটমোহর মহিলা দলের দুই নেত্রী গ্রেপ্তার

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি 
গ্রেপ্তার দুই নেত্রী। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তার দুই নেত্রী। ছবি: সংগৃহীত

পাবনার চাটমোহরে ছিনতাই ও হত্যাচেষ্টা মামলার পলাতক আসামি হিসেবে উপজেলা মহিলা দলের বহিষ্কৃত দুই নেত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে চাটমোহর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মহিলা দল চাটমোহর উপজেলা শাখার সিনিয়র সহসভাপতি (বহিষ্কৃত), পৌরসভার মধ্য শালিখা মহল্লার মৃত কোবাদ হোসেনের মেয়ে বুড়ি সরকার (৪২) এবং একই কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (বহিষ্কৃত), পৌরসভার বালুচর মহল্লার বিএনপি নেতা সেলিম রেজার স্ত্রী রহিমা রেজা (৪৫)।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, চাটমোহর উপজেলা মহিলা দলের বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তামান্না আজিজা স্বর্ণা গত ২৩ আগস্ট বিকেল ৫টার দিকে পৌরসভার আফ্রাতপাড়া এলাকায় বিএনপির কর্মসূচিতে অংশ নিতে গেলে পূর্ববিরোধের জেরে রহিমা রেজা ও বুড়ি সরকার দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালান। এতে স্বর্ণা আহত হন। পরে তিনি একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে ছিনতাই ও হত্যাচেষ্টার মামলা করেন।

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনজুরুল আলম বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত পলাতক আসামি রহিমা রেজা ও বুড়ি সরকারকে পৃথক অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তাঁদের আদালতের মাধ্যমে পাবনা জেলা কারাগারে পাঠানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালে যুবকের লাশ হাসপাতালে রেখে পলায়ন, শরীরে পোড়া দাগ, গ্রেপ্তার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বরিশালে যুবকের লাশ হাসপাতালে রেখে পলায়ন, শরীরে পোড়া দাগ, গ্রেপ্তার ৩

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল (শেবাচিম) কলেজ হাসপাতালে যুবকের মরদেহ রেখে পালিয়ে যান চার তরুণ-তরুণী। বুধবার কোতোয়ালি মডেল থানা-পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এর আগে নগরীর ভাটারখাল এলাকার জেলা পরিষদ মার্কেটের একটি কক্ষে মো. বেল্লাল (২৮) নামের ওই যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশ জানায়, নিহত বেল্লাল বরিশাল সদর উপজেলার পশ্চিম চর আইচা গ্রামের শাহ আলমের ছেলে। তিনি ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতেন। নিহত বেল্লালের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। বেল্লালের বাবা শাহ আলম পাঁচজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন চরমোনাই ইউনিয়নের গিলাতলী গ্রামের সিরাজ হাওলাদারের ছেলে রনি হাওলাদার (২৮), মায়া চৌধুরী (২৬) ও সাদিয়া (২৪)। পলাতক দুজন হলেন পলাশপুর বস্তির রিপন রানা এবং চরবাড়িয়া ইউনিয়নের সবুজ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে মার্কেটের তৃতীয় তলা থেকে বেল্লালের লাশ সিঁড়ি বেয়ে নামাচ্ছিলেন এক যুবকসহ চার তরুণ-তরুণী। পরে তাঁরা লাশ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রেখে সরে পড়েন। ঘটনাটি জানাজানি হলে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।

ভাটারখাল এলাকার বাসিন্দা মো. টিপু বলেন, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন আলোর ভাড়া করা একটি রুমে প্রতিদিন কয়েকজন মদ্যপান করতেন। মঙ্গলবার রাতে মদ্যপানের একপর্যায়ে বেল্লালকে বেধড়ক মারধর করা হয়। মারধরে তাঁর মৃত্যু হলে লাশ সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যান তাঁরা।

নিহত ব্যক্তির বাবা শাহ আলম বলেন, ‘আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া হোক।’

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। বেল্লালের শরীরে মারধর ও পোড়ার স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে। তদন্ত চলছে।’

শেবাচিম হাসপাতালের মর্গ-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বেল্লালের শরীরে পোড়া দাগ আছে। মনে হচ্ছে, তাঁকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে অর্থ দাবি: রাজনগরে দুজন ভুয়া সাংবাদিক আটক

রাজনগর (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
আটক দুই ভুয়া সাংবাদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
আটক দুই ভুয়া সাংবাদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে স্থানীয় লোকজন। বুধবার সন্ধ্যায় মনসুরনগর ইউনিয়ন থেকে তাঁদের আটক করে পরে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

সূত্র জানায়, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার রাজনগর গ্রামের মিরাজ উদ্দিনের ছেলে আরিফুর রহমান (২৮) এবং গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার দক্ষিণ কোটালীপাড়া গ্রামের রুকন উদ্দীনের ছেলে তরিকুল ইসলাম (৩৬) নিজেদের একটি জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিক পরিচয় দিতেন। বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে দেখা করে খোঁজখবর নেওয়ার নাম করে তাঁরা আর্থিক সুবিধা চাইছিলেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চেয়ারম্যানদের সন্দেহ হলে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের গতিবিধি নজরদারিতে রাখা হয়। পরে মনসুরনগর ইউনিয়নে সুযোগ পেয়ে স্থানীয় লোকজন দুজনকে আটক করে।

খবর পেয়ে রাজনগর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের থানায় নিয়ে যায়।

রাজনগর থানার এএসআই হৃদয় বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। দোষী প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত