Ajker Patrika

৭ দিনে মারা গেছে ৩ নবজাতক, বেঁচে থাকা শিশুর চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব পরিবার

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬: ২৫
Thumbnail image

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের হাসান আলী ও রজনী খাতুন দম্পতির সংসারে গত ১ জানুয়ারি চার সন্তানের জন্ম হয়। এই খবরে পরিবারের সবাই ছিল আনন্দে আত্মহারা। কিন্তু সেই আনন্দ মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে বিষাদে পরিণত হয়। একে একে মারা যায় তিন সন্তান। অপর সন্তান বেঁচে থাকলেও তার চিকিৎসায় বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করতে হয়। তাতে দেনার ভারে জর্জরিত হয়ে পড়েন হাসান। একদিকে তিন সন্তানের মৃত্যু, অন্যদিকে টাকার চাপে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন তাঁরা।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার খলিশাকুণ্ডি গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নানের মেয়ে রজনী খাতুনের সঙ্গে তিন বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে হাসান আলীর।

হাসান আলী বলেন, ‘পরপর দুবার অকাল গর্ভপাত হয় রজনীর। পরের বছর আবার গর্ভধারণ করে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, রজনীর গর্ভে রয়েছে চার সন্তান। এই সংবাদ শোনার পর স্বজনেরা ছিল উচ্ছ্বসিত। ঢাকার কয়েকটি হাসপাতালে দেখানো হয় রজনীকে। তাতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। ধারদেনা করে চিকিৎসা করাতে হয়।’

হাসান আলী আরও বলেন, ‘গত ১ জানুয়ারি রজনীর কোলজুড়ে আসে তিন ছেলে ও এক মেয়ে। নাম রাখা হয় রেজওয়ান, রাইয়ান, রাফসান ও সুমাইয়া। ওই রাতেই সুমাইয়া মারা যায়। ৭ জানুয়ারি মারা যায় রাইয়ান ও রাফসান। সন্তান প্রসবের আনন্দ নিমেষেই বিষাদে পরিণত হয়। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসা চলতে থাকে রেজওয়ানের। এক সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে অনেক কিছুই বিক্রি করতে হয়। এখন রেজওয়ান একটু সুস্থ। স্ত্রীরও চিকিৎসা চলছে। তবে ঘাড়ে রয়েছে দেনার বোঝা। সমাজের বিত্তবানেরা আমাকে সহযোগিতা করলে অনেক উপকার হবে।’

হাসানের স্ত্রী রজনী খাতুন বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা না পেয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি হতে হয়। তাতে অনেক টাকা চলে যায়। আল্লাহ আমার তিন সন্তান নিয়ে গেছে, একটি বেঁচে আছে। সবাই আমার সন্তানটির জন্য দোয়া করবেন, আল্লাহ যেন বাঁচিয়ে রাখে।’ 

তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা বিশ্বাস বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত এবং ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে যতটুকু পারি পরিবারটিকে সহযোগিতা করব।’

গাংনী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আরশাদ আলী বলেন, প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের শাখা রয়েছে। সেখানে যোগাযোগ করলে তিনি সহযোগিতা পাবেন। তা ছাড়া তিনি সন্তানের চিকিৎসার জন্য আবেদন করলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রীতম সাহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পরিবারের পক্ষ থেকে একটি আবেদন পেয়েছি। পরিবারটিকে সহযোগিতা করা হবে। আর সন্তান হারানোর বেদনা যে বাবা-মায়ের জন্য কত কষ্টের, তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। যে সন্তানটি বেঁচে আছে, তার সুস্থতা কামনা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত