Ajker Patrika

খুলনায় দুই শিশু ও নানির লাশ: জমির বিরোধে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে হত্যার অভিযোগ

খুলনা প্রতিনিধি
খুলনায় জমির বিরোধে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে দুই শিশু ও নানিকে হত্যার অভিযোগ। ছবি: আজকের পত্রিকা
খুলনায় জমির বিরোধে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে দুই শিশু ও নানিকে হত্যার অভিযোগ। ছবি: আজকের পত্রিকা

খুলনা নগরীর লবণচরায় তিন খুনের ঘটনায় থানা-পুলিশের পাশাপাশি সিআইডি, গোয়েন্দা পুলিশ, র‍্যাব ও পিবিআই ছায়া তদন্ত শুরু করেছে। আজ সোমবার বিকেল পর্যন্ত নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো মামলা হয়নি। তবে রাতে মামলা দায়েরের কথা রয়েছে।

জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে। মুরগির খামারে থাকা ইট দিয়ে থেঁতলে নাতি, নাতনি ও নানিকে হত্যা করা হয়। হত্যাকারীদের এলাকার একটি সন্ত্রাসীগোষ্ঠী সহযোগিতা করেছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে তিনটি মরদেহ গ্রামের বাড়ি রূপসা উপজেলার বাগমারা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানেই দাফন করা হবে। গতকাল রোববার রাতে নগরীর লবণচরা দরবেশ মোল্লা গলির এক বাড়ির মুরগির খামার থেকে নানি মহিদুন্নেছা (৫৫), নাতি মুস্তাকিম (৮) ও নাতনি ফাতিহার (৬) ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

আজ সরেজমিনে দেখা যায়, দরবেশ মোল্লা গলির সরু পথটিতে একটি বাড়িকে ঘিরে কিছু উৎসুক মানুষের ভিড়। সেখানে ওই মানুষগুলো জানার চেষ্টা করছেন—কীভাবে গতকাল ট্রিপল মার্ডার সংঘটিত হয়েছে। প্রতিবেশীরা হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

ওই বাড়ির বিপরীতে অন্য এক বাড়ির শাহীনার বেগমের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, রুবি আক্তার দম্পতির দুজনই চাকরিজীবী। তাঁরা সকালে কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। রুবি আক্তার বাগেরহাট জেলার রামপার উপজেলার ভূমি অফিসে কর্মরত আছেন। তাঁর স্বামী সেফার আহমেদ খুলনা চেম্বার অব কমার্স বিল্ডিংয়ে কর্মরত।

তাঁদের নাবালক দুই ছেলেমেয়ে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। দুপুরে সেফার আহমেদ দুই বাচ্চাকে মাদ্রাসা থেকে বাড়িতে দিয়ে চলে যান। এশার আজানের পর রুবি আক্তার কর্মস্থল থেকে ফিরে বাড়ির গেটে একাধিকবার তাঁর মাকে ডাকতে থাকেন। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তিনি পেছন থেকে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে সবকিছু এলোমেলো দেখতে পেয়ে চিৎকার করেন। প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে তিনি সবকিছু বুঝতে পারেন।

শাহীনার বেগম আরও জানান, জমিটি এই দম্পতি জনৈক মুনসুর সাহেবের কাছ থেকে চার বছর আগে কেনেন। এরপর তাঁরা সেখানে একতলা বাড়ি নির্মাণ করেন। বাড়ির একটি রুমে দেশি মুরগি পালতেন রুবি আক্তার। সেই কক্ষে তিনি কখনো তালা দিতেন না। রুবি আক্তার ওই ঘরের মধ্যে মাসহ দুই সন্তানের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে মূর্ছা যান। দুপুর পর্যন্ত তারা তিনজন সুস্থ ছিল। ট্রিপল হত্যাকাণ্ডটি প্রতিবেশীরা স্বপ্নে দেখার মতো মনে করছেন। কারণ, এ রকম হত্যাকাণ্ড তাঁদের গলিতে ঘটেনি।

এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রুবি দম্পতি কাজের সুবাদে কারও সঙ্গে তেমন একটা চলাফেরা করতেন না। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় বাইরে থেকে তালা মেরে যেতেন। বাড়ির চারপাশে দেয়াল দিয়ে ঘেরা। ওই দেয়াল লোহা দিয়ে সুরক্ষিত করে রাখা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে এ রকমের হত্যাকাণ্ড এলাকার মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে।

তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, ‘বাড়ির পেছনে একটি রাস্তা রয়েছে, ওই রাস্তা দিয়ে লোহার ওপর চটের বস্তা দিয়ে হত্যাকারীরা প্রবেশ করে প্রথমে নানি মহিদুন্নেছাকে ইট দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে, পরে ওই দুই শিশু হত্যাকারীদের চিনে ফেলায় তাদেরও দুনিয়া থেকে চিরবিদায় করে দেয় খুনিরা। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার চাই। হত্যাকারী যে-ই হোক না কেন, তাদের ফাঁসি চাই।’

খুলনায় জমির বিরোধে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে দুই শিশু ও নানিকে হত্যার অভিযোগ। ছবি: আজকের পত্রিকা
খুলনায় জমির বিরোধে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে দুই শিশু ও নানিকে হত্যার অভিযোগ। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৃত দুই শিশুর চাচা সাব্বির জানান, ময়নাতদন্ত শেষ হলে রূপসা উপজেলার বাগমারা এলাকার আল আকসা জামে মসজিদে জানাজা হবে। পরে তাদের ওই গ্রামে দাফন করা হবে।

হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে সাব্বির এ প্রতিবেদককে বলেন, রূপসা উপজেলার পালেরহাট ইউনিয়নে তাঁদের একটি জমি নিয়ে আত্মীয়দের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ডটি ঘটতে পারে।

একই অভিযোগ করেছেন রুবি আক্তার ও সেফার আহমেদ। তাঁদের ধারণা, বিরোধপূর্ণ জমির দলিল লুট করে নিয়ে যাওয়ার জন্য হত্যাকারীরা বাড়িতে এসেছিল। আর বাড়িতে সিসি ক্যামেরা থাকতে পারে—এমন ধারণায় হত্যাকারীরা বাড়ির বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে পুরো বাড়ি অন্ধকার করে দেয়।

এ বিষয়ে লবণচরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার সানওয়ার হুসাইন মাসুম বলেন, ‘ট্রিপল হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে থানায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। তবে রাতে মামলা হতে পারে। ঘটনাস্থল থেকে আলামত হিসেবে ইট উদ্ধার করা হয়েছে।

‘ওই ইট দিয়ে নানি মহিদুন্নেছা, নাতি মুস্তাকিম ও নাতনি ফাতিহার মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়। লাশ দাফন শেষে পরিবারের সদস্যরা থানায় মামলা করবেন। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমরা তদন্ত করছি। অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে এখন কোনো কিছু বলা যাচ্ছে না।’

ওসি আরও বলেন, ঘটনার পর সিআইডির একটি টিম ঘটনাস্থালে গিয়ে আলামত সংগ্রহ করে। এ ছাড়া দুপুরে ডিবি, র‍্যাব-৬, সিআইডিসহ পুলিশের একাধিক সংস্থা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। পুলিশের পাশাপাশি এসব সংস্থা ছায়া তদন্ত করছে।

কেএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) রোকুনুজ্জামান বলেন, খুনিরা বাচ্চা দুটিকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তাদের মুখের ভেতর থেকে গজ পাওয়া গেছে। ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে দেওয়া হয়েছে। লবণচরা থানা-পুলিশের পাশাপাশি ট্রিপল হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে র‍্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ ও প্রশাসনের একাধিক সংস্থা কাজ করছে। রাতের মধ্যে একটা ফলাফল পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদী।

সালাউদ্দিন হত্যাকাণ্ড

এর আগে একই দিন সন্ধ্যায় নগরীর সোনাডাঙ্গা করিমনগর এলাকায় স্ত্রীর সামনে সালাউদ্দিন মৃধা (৩৫) নামের এক যুবককে গুলি ও গলা কেটে হত্যার ঘটনায় আজ বিকেল পর্যন্ত মামলা হয়নি। এ ঘটনায় কাউকে আটক করাও হয়নি বলে জানায় পুলিশ।

জানতে চাইলে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবীর হোসেন বলেন, বিকেল পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ থানায় আসেনি। তবে রাতে মামলা হবে।

ওসি আরও বলেন, নিহত সালাউদ্দিন মৃধা দীর্ঘদিন মাদক মামলায় কারাগারে ছিলেন। ১০ দিন আগে কারাগার থেকে বের হওয়ার পর দিনমজুরের কাজ করতেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরিশালে যুবকের লাশ হাসপাতালে রেখে পলায়ন, শরীরে পোড়া দাগ, গ্রেপ্তার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বরিশালে যুবকের লাশ হাসপাতালে রেখে পলায়ন, শরীরে পোড়া দাগ, গ্রেপ্তার ৩

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল (শেবাচিম) কলেজ হাসপাতালে যুবকের মরদেহ রেখে পালিয়ে যান চার তরুণ-তরুণী। বুধবার কোতোয়ালি মডেল থানা-পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এর আগে নগরীর ভাটারখাল এলাকার জেলা পরিষদ মার্কেটের একটি কক্ষে মো. বেল্লাল (২৮) নামের ওই যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।

পুলিশ জানায়, নিহত বেল্লাল বরিশাল সদর উপজেলার পশ্চিম চর আইচা গ্রামের শাহ আলমের ছেলে। তিনি ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালাতেন। নিহত বেল্লালের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। বেল্লালের বাবা শাহ আলম পাঁচজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন চরমোনাই ইউনিয়নের গিলাতলী গ্রামের সিরাজ হাওলাদারের ছেলে রনি হাওলাদার (২৮), মায়া চৌধুরী (২৬) ও সাদিয়া (২৪)। পলাতক দুজন হলেন পলাশপুর বস্তির রিপন রানা এবং চরবাড়িয়া ইউনিয়নের সবুজ।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে মার্কেটের তৃতীয় তলা থেকে বেল্লালের লাশ সিঁড়ি বেয়ে নামাচ্ছিলেন এক যুবকসহ চার তরুণ-তরুণী। পরে তাঁরা লাশ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রেখে সরে পড়েন। ঘটনাটি জানাজানি হলে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।

ভাটারখাল এলাকার বাসিন্দা মো. টিপু বলেন, সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা আলাউদ্দিন আলোর ভাড়া করা একটি রুমে প্রতিদিন কয়েকজন মদ্যপান করতেন। মঙ্গলবার রাতে মদ্যপানের একপর্যায়ে বেল্লালকে বেধড়ক মারধর করা হয়। মারধরে তাঁর মৃত্যু হলে লাশ সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যান তাঁরা।

নিহত ব্যক্তির বাবা শাহ আলম বলেন, ‘আমার ছেলেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করে শাস্তি দেওয়া হোক।’

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। বেল্লালের শরীরে মারধর ও পোড়ার স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে। তদন্ত চলছে।’

শেবাচিম হাসপাতালের মর্গ-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, বেল্লালের শরীরে পোড়া দাগ আছে। মনে হচ্ছে, তাঁকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে অর্থ দাবি: রাজনগরে দুজন ভুয়া সাংবাদিক আটক

রাজনগর (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
আটক দুই ভুয়া সাংবাদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা
আটক দুই ভুয়া সাংবাদিক। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে স্থানীয় লোকজন। বুধবার সন্ধ্যায় মনসুরনগর ইউনিয়ন থেকে তাঁদের আটক করে পরে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

সূত্র জানায়, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার রাজনগর গ্রামের মিরাজ উদ্দিনের ছেলে আরিফুর রহমান (২৮) এবং গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার দক্ষিণ কোটালীপাড়া গ্রামের রুকন উদ্দীনের ছেলে তরিকুল ইসলাম (৩৬) নিজেদের একটি জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিক পরিচয় দিতেন। বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে দেখা করে খোঁজখবর নেওয়ার নাম করে তাঁরা আর্থিক সুবিধা চাইছিলেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

চেয়ারম্যানদের সন্দেহ হলে একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের গতিবিধি নজরদারিতে রাখা হয়। পরে মনসুরনগর ইউনিয়নে সুযোগ পেয়ে স্থানীয় লোকজন দুজনকে আটক করে।

খবর পেয়ে রাজনগর থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের থানায় নিয়ে যায়।

রাজনগর থানার এএসআই হৃদয় বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। দোষী প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঝিনাইদহে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
নিহত শিশু সাইমা আক্তার ছাবা। ছবি: সংগৃহীত
নিহত শিশু সাইমা আক্তার ছাবা। ছবি: সংগৃহীত

ঝিনাইদহে পবাহাটি গ্রামে প্রতিবেশীর খাটের নিচ থেকে সাইমা আক্তার ছাবা (৪) নামের এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার রাত ১০টার দিকে পবাহাটি গ্রামের ঈদগাহ পাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত শিশু ওই গ্রামের ভ্যানচালক মো. সাইদুল ইসলামের মেয়ে। এই ঘটনায় সাইদুল ইসলামের প্রতিবেশী আক্তারুজ্জামান মাসুদের স্ত্রী সান্ত্বনা খাতুনকে (৩২) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সায়মা আক্তার ছাবা সকাল থেকে নিখোঁজ ছিল। আশপাশের পুকুর, বাড়িসহ সব জায়গায় খুঁজে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। সারা দিন মাইকিং করা হয়েছে। পরে রাতে সাইদুল ইসলামের প্রতিবেশী সান্ত্বনা খাতুনের বাড়ি থেকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।

নিহত শিশুর বাবা সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে মেয়ে ঘুম থেকে তুলে আমার মুখে চুমু দেয়। আর বলে আব্বু কাজে যাবা না? আমার জন্য মিষ্টি কিনে আনতে হবে না। তার কথা শুনে আমি দ্রুত উঠে পড়ি। পরে ভ্যান নিয়ে কাজে বের হওয়ার সময় মেয়েকে ভ্যানে চড়িয়ে একটু ঘুরিয়ে নামিয়ে দিই। পরে আমার স্ত্রী ফাতেমাকে বলেছে, আম্মু তুমি ভাত রান্না করো। রান্না শেষে আমাকে ডাক দিয়ো, আমি বাইরে খেলছি। পরে আমার স্ত্রী মেয়েকে ডাক দিয়ে আর পায় না; তখন আমার ছেলে আমাকে জানায় ছাবাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি বাড়িতে এসে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে বাড়ির পাশের বিভিন্ন পুকুরসহ আশপাশের সব জায়গায় খুঁজে কোথাও পাইনি। পরে থানায় জিডি করি, মাইকিং করি। তবু মেয়েকে পাই না। পরে আমি প্রতিবেশী আখতারুজ্জামান মাসুদের বাড়িতে মেয়েকে খুঁজতে গিয়েছিলাম। তখন মাসুদের স্ত্রী আমাকে জানায়, আমার মেয়ে তাদের বাড়িতে যায়নি। আমার সন্দেহ হলো। পাড়ার সবাই আমার মেয়েকে খুঁজছে, কিন্তু মাসুদের স্ত্রী আসছে না, কোনো খোঁজও করছে না। পরে রাতে পুকুরপাড়ে আবারও যাই, সে সময় দেখি মাসুদের স্ত্রী একটি বস্তা নিয়ে কোথায় যাচ্ছে; তখন আমি চিৎকার দিলে সে আবার ঘরে দৌড়ে চলে যায়। পরে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে তার ঘরের খাটের নিচ থেকে আমার মেয়ের লাশ উদ্ধার করে।’

ঝিনাইদহ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ হোসেন বলেন, ‘বাচ্চাটা সকাল থেকে নিখোঁজ ছিল। রাতে আমরা খবর পাই সাইদুল ইসলামের প্রতিবেশীর বাড়িতে মরদেহ পাওয়া গেছে। ঘটনা কী ঘটেছে এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। খোঁজখবর নিচ্ছি, তদন্ত চলছে। সম্ভাব্য আসামিকে আমরা হেফাজতে নিয়েছি। মরদেহ পোস্টমর্টেমের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর বিস্তারিত বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মজুতের লোভে থমকে গেল চার দশকের ব্যবসা

ওমর ফারুক, চট্টগ্রাম
মজুতের লোভে থমকে গেল চার দশকের ব্যবসা

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ। দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্য আড়ত। এখানেই চার দশক ধরে গম, ডাল, চাল, ভোজ্যতেলসহ নানা পণ্যের ব্যবসা করে নিজের অবস্থান শক্ত করেছিলেন আবুল বশর চৌধুরী। পাঁচ বস্তা জিরা, পাঁচ বান্ডেল দারুচিনি এবং এক কার্টন এলাচি দিয়ে শুরু করা তাঁর ব্যবসা পরে বাল্ক আমদানিতে ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে ভোগ্যপণ্য আমদানির অন্যতম বড় খেলোয়াড় হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু সেই ব্যবসাই এখন তাঁর প্রতিষ্ঠান রুবি ফুডস ও মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্সের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিভিন্ন ব্যাংকের তথ্যমতে, ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান হলেও ব্যবসায়ী আবুল বশর চৌধুরীর এই রুবি ফুডস ও মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্সের নামে ১৩ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকায়। অথচ দুই বছর ধরে কোনো ভোগ্যপণ্যই আমদানি করছে না প্রতিষ্ঠান দুটি। তবু এসব প্রতিষ্ঠানের নামে গুদামে মজুত রয়েছে তিন বছরের বেশি পুরোনো আমদানি হওয়া পণ্য; যার বড় অংশই এখন অবিক্রীত।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, এই দুই ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানের সংকটের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পণ্যের অতিরিক্ত মজুত রাখার প্রবণতা। আবুল বশর বড় ভলিউমে পণ্য আমদানি করতেন। বাজারে আশানুরূপ দাম না পেলে তা মজুত করে ভবিষ্যতের লাভের আশা করতেন। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে উল্টো, বহুবার দাম বাড়ার বদলে কমেছে। এমনকি মানুষের খাদ্য হিসেবে আমদানি করা ডাল, গম, তেলসহ কিছু পণ্য নষ্ট হওয়ার কারণে পরে সেগুলো পশুখাদ্য হিসেবে বিক্রি করতে বাধ্য হন তিনি। এভাবে মজুতের লোভে বারবার লোকসান জমতে জমতে একসময় থমকে দাঁড়ায় আবুল বশর চৌধুরীর চার দশকের গড়া দাপুটে ট্রেডিং ব্যবসা।

ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে। ঋণখেলাপিতে নাম উঠে যায় রুবি ফুডস ও মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্সের। জানা গেছে, সীতাকুণ্ডের সলিমপুরে অবস্থিত মামিয়া নামের একটি গ্রুপের কারখানায় সংরক্ষিত শত শত বস্তা পণ্য এখনো অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে আছে। ব্যাংকের তথ্যমতে এগুলো কমপক্ষে তিন বছর আগের আমদানি। অথচ দুই বছর ধরে রুবি কিংবা মাসুদ অ্যান্ড ব্রাদার্স কোনো নতুন পণ্যই আমদানি করেনি।

এদিকে ঋণখেলাপির তালিকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)। শুধু রুবি ফুড প্রোডাক্টসের কাছেই তাদের পাওনা ১ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা; অথচ এত বড় ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে রাখা হয়েছে মাত্র ৪০ কোটি টাকার এফডিআর আর ৩ কোটি টাকার জমি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জ শাখা ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ হক আজকের পত্রিকাকে জানান, ঋণটি গত মার্চে শ্রেণীকৃত হয়েছে এবং ব্যাংক এরই মধ্যে অর্থঋণ মামলা করেছে। ব্যাংকের অন্য এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পূর্ববর্তী সরকারের সময় ইউসিবির পরিচালনা পর্ষদে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের পরিবারের প্রভাব ছিল প্রবল। তাদের সঙ্গে কমিশন ভাগাভাগির মাধ্যমে রুবি এত বড় ঋণ তুলেছে বলে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে উঠে এসেছে।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাওনাদার ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছে আবুল বশরের দেনা ৩৯৯ কোটি টাকা—মেসার্স মাসুদ ব্রাদার্সের নামে ২৪৭ কোটি এবং রুবি ফুডসের নামে ১৫২ কোটি। এই ঋণের বিপরীতে ৪০০ শতক জমি জামানত থাকলেও এর বাজারমূল্য মাত্র ১৯১ কোটি টাকা। এই ব্যাংকের ঋণের একটি আলোচিত দিক হলো, ২০২৩ সালে রোজার আগে ২০ হাজার টন ছোলা আমদানির জন্য ঋণপত্র খুললেও ব্যাংক সরবরাহকারীকে ডলার পরিশোধ করতে না পারায় জাহাজ বন্দর থেকে ফেরত যায়। এতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে এক মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে।

এর বাইরে আল-আরাফাহ্‌ ব্যাংকের কাছে ১৯২ কোটি, এনসিসি ব্যাংকের কাছে ১৮৬ কোটি, সাউথইস্ট ব্যাংকের কাছে ১৮৯ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের কাছে ৩২৩ কোটি, পূবালী ব্যাংকের কাছে ৩১২ কোটি ৬৪ লাখ, ট্রাস্ট ব্যাংকের কাছে ২৭৯ কোটি ৬৯ লাখ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের কাছে ১৫৯ কোটি ৫৫ লাখ, মেঘনা ব্যাংকের কাছে ৩৬ কোটি, ঢাকা ব্যাংকের কাছে ৩০ কোটি ৬৯ লাখ, এনআরবি ব্যাংকের কাছে ২২ কোটি এবং মাইডাস ফাইন্যান্সের কাছে ১৪ কোটি টাকা আটকে আছে। প্রতিটি ব্যাংকেই জামানত ঋণের তুলনায় খুবই কম।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, দীর্ঘ সময় ভালো ব্যবসা করায় প্রতিষ্ঠানটি কম জামানতে বড় অঙ্কের ঋণ সুবিধা পেয়েছে। কিন্তু হঠাৎ ব্যবসা সংকটে পড়তেই সব ব্যাংকের ঝুঁকি বেড়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম মনে করেন, ব্যাংকের সংখ্যা বেশি এবং প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ঋণ দেওয়ার প্রবণতাই এমন বিপর্যয়ের প্রধান কারণ। এর দায় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট তদারকি কর্মকর্তাদেরও বহন করতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএসএম গ্রুপের নামে আবুল বশরের বিনিয়োগ রয়েছে আরও কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে—মডার্ন পলি ইন্ডাস্ট্রিজ, মডার্ন ফাইবার লিমিটেড, মডার্ন হ্যাচারি, বিসমিল্লাহ ফ্যাব্রিকস, মুকবুলুর রহমান জুট মিল, বি কে ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি। তবে ঋণ নেওয়া হয়েছে কেবল রুবি ফুডস ও মাসুদ ব্রাদার্সের নামে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ভোগ্যপণ্য আমদানির নামে নেওয়া ওই ঋণের বড় অংশই সরানো হয়েছে অন্য খাতে।

মজুত পণ্য নষ্ট হওয়া, দাম পড়ে যাওয়া, ব্যাংকের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা ও তদারকির দুর্বলতা—সব মিলিয়ে রুবি ফুডসের চার দশকের সাম্রাজ্য এখন ভেঙে পড়ছে। মজুত প্রবণতা ও ঋণ শোধে কোনো উদ্যোগ আছে কি না জানতে চাইলে আবুল বশর চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একটু ঝামেলায় আছি, পরে জানাব।’ দুই সপ্তাহ পরও তাঁর জবাব একই থাকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত