Ajker Patrika

পরপর দুই বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত ইরা: স্বপ্ন, পরিশ্রম আর পরিবারের অনুপ্রেরণার ফসল

তাজিন জান্নাত ইরা। ছবি : সংগৃহীত
তাজিন জান্নাত ইরা। ছবি : সংগৃহীত

চুয়াডাঙ্গার সদর উপজেলার কুলচারা গ্রামের মেয়ে তাজিন জান্নাত ইরা। পরপর দুটি বিসিএসে চূড়ান্ত সুপারিশপ্রাপ্তির মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন—দৃঢ় মনোবল আর পারিবারিক সমর্থন থাকলে কোনো বাধাই গন্তব্যে পৌঁছানোর পথে বাধা হতে পারে না। ৪৪তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে এবং সর্বশেষ ৪৫তম বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্তির গৌরব অর্জন করেছেন তিনি।

মৃত আলী হোসেন এবং মোছা. সেলিনা বেগমের বড় মেয়ে ইরা বর্তমানে আলমডাঙ্গা থানার শ্যামপুর গ্রামের মো. খাদেমুল ইসলাম জনির স্ত্রী। তার এই সাফল্যের পেছনের গল্প, প্রস্তুতি কৌশল ও অনুপ্রেরণা নিয়েই এই বিশেষ প্রতিবেদন।

আকর্ষণীয় একাডেমিক ফলাফলের অধিকারী ইরা তার শিক্ষাজীবনের শুরু থেকেই ছিলেন উজ্জ্বল। তিনি বলেন, ‘আমি এসএসসিতে ৪.৭৫, এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছি। এলএলবি ও এলএলএমে আমার সিজিপিএ ছিল ৪। শিক্ষাজীবনে দুটি স্বর্ণপদক পেয়েছি। কবিতা লেখা এবং আবৃত্তির প্রতি আমার ঝোঁক ছিল, যার জন্য জেলাভিত্তিক এবং বিভাগভিত্তিক বেশ কিছু পুরস্কার ও সার্টিফিকেট অর্জন করেছি।’

ইরা তার বিসিএস-এর স্বপ্নযাত্রার শুরুটা তুলে ধরেন গভীর আবেগ নিয়ে। তার বাবা চাইতেন, তার মেয়ে আরও দশটা মেয়ের আদর্শ হবে। বাবা বলতেন, ‘মানুষ ছেলের পেছনে টাকা বিনিয়োগ করে, আর আমি মেয়েকে মানুষ করে দেখাবো মেয়েরাও পারে’।’ কিন্তু খুব ছোটবেলায় বাবাকে হারানোর পর সেই স্বপ্নের হাল ধরেন তার মা।

তাজিন জান্নাত ইরা বলেন, ‘আমার মা বাবার স্বপ্নটা আমার চোখে আঁকতেন। যা আমি পারি না, মা সেটাও বলে আমার মেয়ে পারবেই। আমার প্রতি মায়ের বিশ্বাস এবং আমাদের জন্য করা কষ্টগুলো আমাকে পড়াশোনায় উৎসাহী করে তুলতো। এইচএসসির রেজাল্টের পর বিয়ে হয়, যখন স্বামীকে আমার স্বপ্নের কথা জানাই, তখন অনেকেই তাকে নিরুৎসাহিত করতো। তবুও কারো কথা কানে না নিয়ে সে পাশে থেকেছে। সে শুধু আমার জীবনসঙ্গী না, সে আমার সহযোদ্ধা। আমার প্রতি মা এবং স্বামীর বিশ্বাস আমাকে আরও দৃঢ় পরিশ্রমী করে তুলেছিল এবং আমি জানতাম আমাকে পারতেই হবে।”

ইরা তার প্রস্তুতিতে লিখিত পরীক্ষাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি জানান, ‘পছন্দের ক্যাডার পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার ওপর নির্ভর করে।’ প্রথমে তিনি সিলেবাস ভালোভাবে বুঝে নিয়ে গুরুত্বের ভিত্তিতে একটি রুটিন তৈরি করেন। বাংলা ও ইংরেজি গ্রামারের ভিত্তি শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন তিনি। নিয়মিত অল্প অল্প করে ভোকাবুলারি পড়তেন এবং নোট করতেন, যা পরের দিন রিভাইজ দেওয়ার মাধ্যমে ঝালাই করতেন। পড়া ভুলে যাওয়ার সমস্যা কাটাতে তিনি প্রচুর লিখতেন। কঠিন বিষয়গুলো কয়েকবার দেখে দেখে লিখলেই মুখস্থ হতে থাকতো। ভুল হলে আবার দেখে নিতেন। যে বিষয়গুলো বুঝতে সমস্যা হতো, সেগুলোর জন্য ইউটিউবকে বিকল্প মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতেন। টপিক ধরে সার্চ করে ভালো লেকচার দেখে ধারণাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে নিতেন।

তিনি নিজেকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখার কারণ হিসেবে জানান, ‘অনার্স প্রথম বর্ষ থেকেই তিনি বিসিএস-এর জন্য অল্প অল্প করে পড়তেন। তাই চতুর্থ বর্ষের আগেই তার সিলেবাস মোটামুটি শেষ হয়েছিল। এর ফলে তিনি লিখিত প্রস্তুতির দিকে বেশি মনোযোগ দিতে পেরেছিলেন, যা লেখার গতি বৃদ্ধি এবং ভুল বুঝতে সহায়ক হয়েছে।’

বিসিএস-এর আগে তাজিন জান্নাত ইরা বাংলাদেশ ব্যাংক এডি (সহকারী পরিচালক) পদে কেবল একটি চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। এবং তিনি সেই পরীক্ষায় সফল হয়ে চাকরিও পেয়েছিলেন। নবীন বিসিএস প্রার্থীদের জন্য ইরার পরামর্শ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে বিষয়টি পড়া শেষ হলো, সেইটা নিয়মিত রিভাইজ দিতে হবে। নিয়মিত নিজে নিজেই ঘড়ির টাইম ধরে পরীক্ষা দিতে হবে। এতে পরীক্ষাতে সময়ের ব্যাপারটা আয়ত্ব হবে, আবার ভুলগুলোও বুঝতে পারবেন। কয়েকদিন পড়াশোনা না করে একদিন ১০-১২ ঘণ্টা পড়ে হবে না, নিয়মিত ৫-৬ ঘণ্টা পড়তে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ