Ajker Patrika

কুয়েটে অচলাবস্থা: গাড়ি ফেরত পাঠালেন ভিসি, অনাস্থা ঘোষণা শিক্ষক সমিতির

খুলনা প্রতিনিধি
কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. হযরত আলী। ছবি: সংগৃহীত
কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. হযরত আলী। ছবি: সংগৃহীত

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. হযরত আলী কুয়েটের যে গাড়িতে চড়ে ঢাকায় গিয়েছেন, সেই গাড়ি ফেরত পাঠিয়েছেন। ফলে তিনি আর ক্যাম্পাসে ফিরছেন না বলে মনে করা হচ্ছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. হযরত আলীর পদত্যাগের এক দফা ঘোষণাসহ তাঁর প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছে কুয়েট শিক্ষক সমিতি। আজ বুধবার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. ফারুক হোসেন দাবি করেন, কুয়েটের যে গাড়িতে ভিসি ঢাকায় গেছেন, সেটি ফেরত পাঠিয়েছেন। রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত দিয়ে ভিসি তাঁর দায়িত্ব পালনে অপারগতার কথা জানিয়েছেন।

গত তিন দিন ধরে উপাচার্যবিহীন অবস্থায় রয়েছে কুয়েট। শিক্ষকদের আন্দোলন ও প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

আজ বুধবার জরুরি সভা শেষে সাংবাদিক সম্মেলন করে কুয়েটের শিক্ষক সমিতি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বুধবার জরুরি সভা শেষে সাংবাদিক সম্মেলন করে কুয়েটের শিক্ষক সমিতি। ছবি: আজকের পত্রিকা

আজ দুপুরে শিক্ষক সমিতির জরুরি সভা শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে অধ্যাপক ড. হযরত আলীর পদত্যাগের দাবিসহ তাঁর প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ‘কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন ভিসি দায়িত্ব পালনে অক্ষম। কুয়েটের যে গাড়িতে তিনি (ভিসি) ঢাকায় গিয়েছেন, সেই গাড়িটি ফেরত পাঠিয়েছেন। রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত দিয়ে ভিসির দায়িত্ব পালনে অপারগতার কথা জানিয়েছেন। সুতরাং এখন শিক্ষকদের একমাত্র দাবি তাঁর পদত্যাগ। পাশাপাশি একজন যোগ্য ভিসি নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক’।

কুয়েটের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় শিক্ষক সমিতির ব্যানারে মানববন্ধন করা হবে বলেও জানান ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, এখন শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার দাবি ক্লাস শুরু করা হোক। কিন্তু এমন অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন ভিসি কাউকে কিছু না জানিয়েই খুলনা ছেড়েছেন। প্রথমে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে সংকট সমাধানের দাবি জানানো হয়। এরপর পরপর দুদিন ২৪ ঘণ্টা করে ৪৮ ঘণ্টার সময় দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকেরা। কিন্তু এর মধ্যেই ভিসি কাউকে কিছু না বলে গত সোমবার ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, এ জন্য তৃতীয় দিনের মতো শিক্ষকেরা আজ দুপুরে অবস্থান কর্মসূচি পালন ছাড়াও জরুরি সাধারণ সভা করে ভিসির পদত্যাগের এক দফা ঘোষণা করেছেন। শিক্ষক সমিতির এই নেতা বলেন, যিনি পারবেন তাঁকে এখানে দায়িত্ব দেওয়া হোক। এই মুহূর্তে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন ভিসির পদত্যাগই একমাত্র দাবি উল্লেখ করে তিনি সরকারের কাছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন ভিসি পদায়নের দাবি জানান।

এদিকে ভিসির লিখিত দিয়ে দায়িত্ব পালনের অপারগতা জানানোর ব্যাপারে রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আনিছুর রহমান ভুঞা কোনো মন্তব্য করেননি। এ ব্যাপারে তাঁর মন্তব্য জানতে আজ মোবাইলে কল দেওয়া হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদের ডিন এবং গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘গত রোববার রাতে ভিসি স্যার আমাকে মোবাইল ফোনে বলেন যে তিনি ঢাকায় যাবেন। সোমবার সকালে তিনি বলেন, তিনি ঢাকা যাচ্ছেন, পরদিন ফিরবেন। আমি তখন জিজ্ঞেস করি, কাকে দায়িত্ব দিলেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘রূপসা নদী পার হচ্ছি। কাল ফিরব।’’ এদিকে ভিসির গাড়ি ফেরত পাঠানোর প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের যান্ত্রিক শাখায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাতে কোনো সাড়া মিলেনি।

এর আগে টানা ৭৫ দিন বন্ধ থাকার পর ৪ মে কুয়েটের ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও শিক্ষক লাঞ্ছিতের বিচার চেয়ে শিক্ষকেরা ক্লাস বর্জন করেন। ৫ মে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা শেষে সাত কর্মদিবসের আলটিমেটাম দিয়ে দাবিতে অটল থাকেন শিক্ষকেরা। পক্ষান্তরে ১৮ ফেব্রুয়ারি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনা ও শিক্ষকদের সঙ্গে সব ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য তিন দফায় ক্ষমা প্রার্থনা করা হয় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরাও দ্রুত ক্লাস শুরুর দাবি জানান। কিন্তু এরই মধ্যে কুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরাও ফুঁসে ওঠেন। কিন্তু একপর্যায়ে শিক্ষক আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন শিক্ষার্থীরা অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েন।

সর্বশেষ গত সোমবার ও গতকাল শিক্ষকদের সঙ্গে কুয়েটের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এক হয়ে দ্রুত ক্লাস শুরুর দাবি জানান। কিন্তু গত সোমবার সকালেই খুলনা ত্যাগ করেন অন্তর্বর্তীকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. হযরত আলী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফুলবাড়ীর আশ্রয়ণ প্রকল্প: ঘর আছে, বাসিন্দা নেই

  • ঘর বরাদ্দে স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ
  • অধিকাংশ আশ্রয়ণে রয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট
  • বরাদ্দ পাওয়া বেশির ভাগ পরিবার সেখানে থাকে না
  • আবাসন থেকে মূল সড়কে যাওয়ার রাস্তা নেই
  • জমি থাকার পরও ঘর বরাদ্দ নিয়ে থাকলে ব্যবস্থা: ইউএনও
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি 
দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো। সম্প্রতি ফুলবাড়ীর বাসুদেবপুরে। ছবি: আজকের পত্রিকা
দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো। সম্প্রতি ফুলবাড়ীর বাসুদেবপুরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা সদর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে পাকা সড়কে দাঁড়িয়ে তাকালে ফসলি মাঠ পেরিয়ে ছোট ছোট রঙিন ঘর চোখে পড়ে। আশ্রয়ণের এসব ঘর দেখে যে কারও মন জুড়িয়ে যাবে। তবে দুঃখের বিষয়, গৃহহীনদের পুনর্বাসনের জন্য নির্মিত এসব ঘরের অধিকাংশই এখন ফাঁকা। সুবিধাভোগীরা না থাকায় নষ্ট হয়ে গেছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, আশ্রয়ণ থেকে মূল সড়কে যাওয়ার রাস্তা নেই। নেই মসজিদ বা প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। তাই অনেকেই বরাদ্দ পেয়েও থাকছেন না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘর বরাদ্দে স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক প্রভাব ও অনিয়ম হয়েছে। অনেকে ঘর বরাদ্দ নিয়েও অন্যত্র বসবাস করছেন; কেউ কেউ ঘর অন্যের কাছে দেখাশোনার জন্য দিয়ে গেছেন। কিছু ঘরে হাঁস-মুরগি বা গরু-ছাগল পালন ছাড়া আর কোনো ব্যবহার নেই। বরাদ্দ পাওয়া বেশির ভাগ পরিবার সেখানে থাকে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত সরকারের আমলে ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের’ আওতায় ফুলবাড়ী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে চার ধাপে নির্মিত হয় ১ হাজার ২৭০টি বাড়ি। এতে ব্যয় হয় ২৫ কোটি ৫ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ভূমিহীন পরিবারকে দুই শতক জমির ওপর দুই কক্ষবিশিষ্ট আধপাকা ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। প্রথম পর্যায়ে প্রতিটি ঘরের ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ লাখ ৯০ হাজার, তৃতীয় পর্যায়ে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৫০০ এবং চতুর্থ পর্যায়ে ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এভাবে চার ধাপে নির্মিত ঘরগুলো এখন অযত্নে পড়ে আছে।

আলাদীপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামে ১৬৫টি বাড়ি নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৫০টি পরিবার বসবাস করছে, বাকিগুলোতে ঝুলছে তালা। সেখানকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, আশ্রয়ণ গ্রাম থেকে মূল সড়কে যাওয়ার রাস্তা নেই। যা আছে, তা কাঁচা ও কাদাময়, বিশেষ করে বর্ষায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। নেই মসজিদ বা প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। তাই অনেকেই বরাদ্দ পেলেও এখানে থাকতে আগ্রহী নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অধিকাংশ আশ্রয়ণে ঘর বরাদ্দ দেওয়ার সময় সঠিক যাচাই-বাছাই করা হয়নি। নির্মাণের পর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্পের স্থানগুলোতে যাতায়াত ও জীবিকার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাও নেই। নেই মসজিদ। সুপেয় পানির সমস্যাও প্রকট। এসব সমস্যা বাসিন্দাদের জীবনযাপন কঠিন করে তুলেছে।

বাসুদেবপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘিরে গড়ে তোলা সমবায় সমিতির সদস্য হানিফ শেখ, হাফিজুল ইসলাম ও জাকির হোসেন বলেন, ‘১৬৫টি ঘরের মধ্যে প্রায় ১১৫টি খালি। মালিক আছেন, কিন্তু তাঁরা আসেন না।’

আশ্রয়ণের বাসিন্দা মানিক মিয়া বলেন, ‘এখানে বিভিন্ন এলাকার মানুষ বাড়ি পেয়েছেন। তবে অনেকে স্থায়ীভাবে থাকতে চান না। রাস্তা ও মসজিদ নেই। এ ছাড়া এখানে কোনো কাজকর্ম নেই। আমাদের অনেক কষ্ট হয়।’

উপজেলার খয়েরবাড়ি ইউনিয়নের বালুপাড়া আবাসনে ২৪৪টি বাড়ি রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ১০০টি ঘরে মানুষ বসবাস করছে। বাকিগুলো খালি। ওই আশ্রয়ণের বাসিন্দা মহসিনা ও আমজাদ বলেন, ‘অনেকেই ফুলবাড়ী পৌর এলাকার মানুষ। এখানে কোনো কাজ না থাকায় তাঁরা থাকেন না। মাঝে মাঝে এসে ঘর দেখে যান।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বালুপাড়া আবাসনের এক বাসিন্দা বলেন, ‘১০০টিতে বাসিন্দা থাকলেও এর মধ্যে অনেক বাড়ির মূল মালিক নেই। কিছু বাড়ি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকায় গোপনে বিক্রি বা হস্তান্তর হয়েছে। আবার কেউ কেউ বছরে একবার এসে দখল নিশ্চিত করে চলে যান।’

অন্যান্য আশ্রয়ণেও একই চিত্র। উপজেলার কাজিহাল ইউনিয়নের পুকুরি মোড় আবাসনে ৮টি বাড়ির মধ্যে মাত্র ৩টিতে পরিবার থাকছে। এলুয়াড়ী ইউনিয়নের শিবপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩৪টি ঘরের মধ্যে ৫টি বাদে সব ফাঁকা। বাসিন্দারা জানান, কেউ কেউ মৌসুমভিত্তিক কাজের জন্য ঢাকাসহ অন্যান্য এলাকায় চলে যান, আবার ফিরে আসেন।

এ বিষয়ে উপজেলার খয়েরবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শামীম হোসেন বলেন, ‘আমার জানামতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোতে অনেকেই বসবাস করেন না। কেউ অন্যত্র কাজ করেন, অন্যকে থাকার জন্য দিয়ে চলে গেছেন। তদন্ত করে এসব ঘর প্রকৃত ভূমিহীনদের কাছে হস্তান্তর করা গেলে তারা উপকৃত হবে।’

সার্বিক বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসাহাক আলী বলেন, ‘অতীতে যাঁরা ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন, তাঁরা যাচাই-বাছাই করেই দিয়েছেন। তবে কিছু লোক হয়তো গার্মেন্টসে কাজ করে বা কাজের জন্য অন্যত্র গেছে, তাই ফাঁকা আছে। কেউ জমি থাকার পরেও ঘর বরাদ্দ নিয়ে থাকার তথ্য পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভাঙাচোরা সড়কে ঢাকাজুড়ে ভোগান্তি

সৈয়দ ঋয়াদ ও জয়নাল আবেদীন, ঢাকা
দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কের পিচ-পাথর উঠে গেছে আগেই। সামান্য বৃষ্টিতেই কাদায় একাকার। সম্প্রতি রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কের পিচ-পাথর উঠে গেছে আগেই। সামান্য বৃষ্টিতেই কাদায় একাকার। সম্প্রতি রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

খিলগাঁও ফ্লাইওভারের ওপর দীর্ঘ সারিতে আটকে থাকা গাড়ির ফাঁক গলে পড়িমরি করে ছুটছিলেন এক তরুণ। সঙ্গে থাকা লাগেজ থেকে মনে হচ্ছিল, বিদেশগামী যাত্রী। জিজ্ঞেস করতেই তাঁর সঙ্গে থাকা একজন তা নিশ্চিত করলেন। জানালেন, ফ্লাইট ধরা নিয়ে তাঁরা চরম উৎকণ্ঠায় আছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ফ্লাইওভার থেকে নামার মুখেই সড়কে পানি থাকা এক গর্তে পিকআপের চাকা ফেঁসে গিয়ে এই পরিস্থিতি। রাজধানীজুড়ে নানা কারণে সড়কে এমন জনভোগান্তি নৈমিত্তিক বিষয়। এতে লাখো নাগরিকের মানসিক দুর্ভোগের পাশাপাশি অসংখ্য কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়ে জাতীয় অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে বিস্তর।

খানাখন্দ, পরিষেবার জন্য সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ি, যত্রতত্র পার্কিং, হকার-দোকানিদের দখল ইত্যাদি কারণে ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়কে চলাচল করা দুর্ভোগের আরেক নাম হয়ে উঠেছে। যাত্রাবাড়ী থেকে উত্তরা ছাড়িয়ে অনেক দূর পর্যন্ত সড়কপথের স্থানে স্থানে এই চিত্র দেখা যাবে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতায় থাকা ডেমরা, মাতুয়াইল, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, মানিকনগর, মুগদা, কমলাপুর, মালিবাগ, রামপুরা, বাসাবো, মান্ডা এবং উত্তর সিটির (ডিএনসিসি) খিলখেত, উত্তরা, আবদুল্লাহপুর, আশকোনা, উত্তরখান, দক্ষিণখান, কাওলাসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।

আশপাশের বড় সড়কগুলো ছাড়াও ডিএসসিসির ৬৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাতুয়াইল মুসলিম নগর বাদশা মিয়া সড়ক, ডেমরা বালুরঘাট থেকে ডেমরা বাজার লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের পেছনের সড়ক, ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার থেকে ডেমরা থানা হয়ে ৪ নম্বর গেট, ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়ক, পাইটি ওয়াসা রোড খানাখন্দে ভরা। যানজট ও দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। সংস্কারকাজ চলছে ঢিমেতালে। ডেমরার ডগাইর শাপলা চত্বর থেকে পশ্চিম সানারপাড় পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তার সংস্কারকাজের মন্থর গতিতে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে এলাকাবাসী।

লতিফ বাওয়ানী জুট মিলের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বললেন, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি ভাঙাচোরা। সামান্য বৃষ্টিতেও দুর্ভোগ কয়েক গুণ বেড়ে যায়।

মানিক নগর-মুগদা ওয়াসা রোড, বাসাবো, নন্দীপাড়া এবং গোড়ানের অনেক সড়কের অবস্থাও একই রকম। দীর্ঘ সময় পার হলেও ড্রেনেজ ও সড়ক মেরামতের কাজ শেষ হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, সিটি করপোরেশন ও ঠিকাদারদের অবহেলায় দক্ষিণের ৬, ৭১, ৭২—এই তিনটি ওয়ার্ডের লক্ষাধিক মানুষ রয়েছে চরম বিপাকে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় থাকা স্টাফ কোয়ার্টার থেকে রামপুরা সড়কটির অবস্থাও খুব খারাপ।

ঢাকা মহানগর উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতায় থাকা ৫৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে গুলশান, বনানী, বারিধারার মতো অভিজাত আবাসিক ও ডিপ্লোমেটিক এলাকা ছাড়া অনেক সড়ক নাজুক। ওয়ার্ডভিত্তিক ছোট ছোট সড়কের পাশাপাশি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরা থেকে আবদুল্লাহপুর হয়ে ধউর বেড়িবাঁধ পর্যন্ত রাস্তাও ভালো নয়।

দক্ষিণখানের কসাইবাড়ী রেলগেট থেকে উত্তরখানের কাঁচকুড়া বাজার পর্যন্ত, দোবাদিয়া ব্রিজ থেকে কাঁচকুড়া বাজার পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য খুঁড়ে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন।

কাঁচকুড়ার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা রাজধানীতে বাস করি। এটা ছবি দেখিয়ে কাউকে বললে বিশ্বাসই করবে না।’

এ ছাড়া দক্ষিণখানের গণকবর স্থান সড়ক, আশকোনা থেকে কাওলা সংযোগ সড়ক, খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ-২ এর সরকারবাড়ী থেকে নাগরিক টিভি-সংলগ্ন সড়ক হয় ভাঙাচোরা কিংবা ধীরগতিতে সংস্কারকাজ চলছে।

ডিএনসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফারুক হাসান মো. আল মাসুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইউটিলিটি লাইন, অবৈধ দখলের কারণে কাজের ধীরগতি থাকতে পারে। গড়ে ৩০ শতাংশ জনবল নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। ঠিকাদারের গাফিলতি থাকলে চুক্তি অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।’

ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেসব সড়কে পানি জমে থাকে, সেগুলোর কাজ করছি। গুলশান লেক এলাকায় হাঁটা যেত না, আমরা সেই কাজটা করেছি। তেজগাঁও, উত্তরখান, দক্ষিণখানেও কাজ চলছে।’

এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জোন-৮-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহেব হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘টেন্ডার হয়ে যাওয়া সড়কের কাজ চলছে। অন্যান্য রাস্তার বিষয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাজেটের স্বল্পতায় আমরা অনেক কাজ করতে পারছি না। নির্বাচিত সরকার না থাকার কারণেও কিছুটা প্রভাব পড়েছে। চেষ্টা করছি, সংস্কারকাজগুলো যেন আটকে না থাকে।’

ঢাকা জেলা সড়ক ও জনপথ দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘ঢাকা নগরে আমাদের অল্প কিছু সড়ক আছে। ডেমরার রাস্তাটি কিছুটা খারাপ আছে। ইটের সোলিং করা আছে। শিগগির মেরামতের কাজে হাত দেব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি ও নগর-পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘নগরের সড়কে বর্তমানে যে সংকট, তা মূলত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি না থাকার কারণে হচ্ছে। আন্তদপ্তর সমন্বয়হীনতার সমাধানও করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিষিদ্ধ গাছ বিক্রি টেন্ডার ছাড়াই

আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা
কাটা গাছ ট্রাকে করে সরিয়ে নিচ্ছেন শ্রমিকেরা। গত শুক্রবার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শাখাহার ইউনিয়নের কামদিয়া-পানিতলা সড়কে। ছবি: আজকের পত্রিকা
কাটা গাছ ট্রাকে করে সরিয়ে নিচ্ছেন শ্রমিকেরা। গত শুক্রবার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শাখাহার ইউনিয়নের কামদিয়া-পানিতলা সড়কে। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে টেন্ডার ছাড়াই সরকারি রাস্তার ছয় শতাধিক নিষিদ্ধ ইউক্যালিপটাসগাছ কাটা হচ্ছে প্রকাশ্যে। গাছ কাটার খবর পেয়েও প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। তিন দিন ধরে উপজেলার শাখাহার ইউনিয়নের শালপাড়া থেকে মিরিপুকুর পর্যন্ত এবং কামদিয়া-পানিতলা রাস্তা থেকে শালপাড়া পর্যন্ত এলাকায় এসব গাছ কাটা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শালপাড়া যুব উন্নয়ন ক্লাব ও শালপাড়া এম এ মান্নান ক্লাবের সদস্যদের না জানিয়ে সভাপতি মাহমুদ হাসান ইউএনওর কথিত ‘মৌখিক অনুমতি’ দেখিয়ে স্থানীয় কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে ঠিকাদারের কাছে গাছগুলো বিক্রি করেন ২৮ লাখ টাকায়। অথচ বন বিভাগের তালিকায় এসব গাছের দাম ধরা হয়েছে মাত্র সাড়ে ১২ লাখ টাকা।

জানা গেছে, ২০০৬ সালে শালপাড়া যুব উন্নয়ন ক্লাব ও শালপাড়া এম এ মান্নান ক্লাবের সদস্যরা প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকায় ৬০০টির বেশি ইউক্যালিপটাসগাছ রোপণ করেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী, গাছ বিক্রির সময় বিক্রয়মূল্যের ২০ শতাংশ ইউপি ও ১০ শতাংশ জমির মালিক পাবেন। এর মধ্যে সমিতির সভাপতি মাহমুদ ও বেলাল নামের দুজনে গোপনে চেয়ারম্যানের কাছে গাছ কাটার আবেদন করলে চেয়ারম্যান বিষয়টি ইউএনওকে জানান।

নিয়ম অনুযায়ী, মূল্য নির্ধারণের পর গাছগুলো বিক্রির জন্য টেন্ডারের সব ব্যবস্থা করবেন ইউপির চেয়ারম্যান। কিন্তু এ বিষয়ে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘সব কাজ ক্লাবের সভাপতি করেছেন।’

গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্রমিকেরা ট্রাক ও ট্রলিতে করে দ্রুতগতিতে কাটা গাছ সরিয়ে নিচ্ছেন। সকাল থেকে বেলা ৩টার মধ্যে তিন শতাধিক গাছ কাটা হয়। ক্লাবের সভাপতি মাহমুদ ও তাঁর সহযোগী বেলাল সেখানে উপস্থিত ছিলেন। ক্লাবের সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছিল গাছ ১২ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন দাম ২৮ লাখ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। আমরা টাকা পাইনি, তিনি আমাদের সঙ্গে জালিয়াতি করেছেন। আমরা এর শাস্তি চাই।’

জানতে চাইলে গাছ বিক্রির সঙ্গে জড়িত বেলাল হোসেন বলেন, ‘যেখানে কাগজপত্র দেখানোর, সেখানে দেখানো হবে। না হলে মামলা করুক।’ গাছ ক্রেতা এমরান জানান, ‘সব কাগজপত্র সভাপতির কাছে আছে। আমি তাদের কাছ থেকেই গাছ কিনেছি। দাম প্রায় ১৮ লাখ টাকার মতো।’

অন্য ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি ২৫ লাখ টাকা অফার করেছিলাম। কিন্তু সভাপতি আরও বেশি দাম আশা করায় বিক্রি করেননি।’ ক্লাবের সদস্য মুনছুর আলী বলেন, নিয়ম না মেনে গাছ বিক্রি করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ ও জমির মালিক কেউই টাকার অংশ পায়নি। টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি হলে দাম আরও বেশি পাওয়া যেত।

সভাপতি মাহমুদ হাসান বলেন, ‘ইউএনওর মৌখিক নির্দেশে গাছ বিক্রি করেছি। বন বিভাগের মূল্য অনুযায়ী দাম ১২ লাখ টাকা। ২৮ লাখ টাকায় বিক্রির অভিযোগ সঠিক নয়।’ এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ সামাজিক বনায়ন বিভাগের ফরেস্টার মিজানুর রহমান বলেন, দাম কমবেশি হতে পারে; কিন্তু সরকারি জায়গার গাছ টেন্ডারের বাইরে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।

গোবিন্দগঞ্জ ইউএনও ইয়াসমিন সুলতানা বলেন, ‘উপজেলা সমন্বয় সভায় গাছ বিক্রির অনুমোদনের কথা বলা হয়েছিল। তবে পরবর্তী সময়ে তাঁরা কীভাবে গাছ কাটছেন, তা আমার জানা নেই।’

এ বিষয়ে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহমদ বলেন, ‘সরকারি জায়গার গাছ বিক্রি করতে হলে অবশ্যই টেন্ডারের মাধ্যমে করতে হবে। এ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে ইউএনওকে বলে দিচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শুঁটকি উৎপাদনে দস্যু-আতঙ্ক

  • সুন্দরবনের দুবলাসহ বিভিন্ন চরে আজ থেকে ৪ মাস শুঁটকি তৈরি শুরু
  • সুন্দরবনে ১৪টি জলদস্যু বাহিনী সক্রিয়, ৬ মাসে অস্ত্রসহ আটক ১৮
সুমেল সারাফাত, মোংলা (বাগেরহাট) কাজী শামিম আহমেদ, খুলনা
সুন্দরবনের দুবলারচরে শুঁটকি তৈরি করতে যাওয়ার জন্য জাল, খাদ্য ও নির্মাণসামগ্রী নিয়ে নৌকায় জেলেদের অপেক্ষা। গতকাল বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার পশুর নদে। ছবি: আজকের পত্রিকা
সুন্দরবনের দুবলারচরে শুঁটকি তৈরি করতে যাওয়ার জন্য জাল, খাদ্য ও নির্মাণসামগ্রী নিয়ে নৌকায় জেলেদের অপেক্ষা। গতকাল বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার পশুর নদে। ছবি: আজকের পত্রিকা

সুন্দরবনের দুবলারচরে আজ রোববার থেকে শুঁটকি উৎপাদনের মৌসুম শুরু হচ্ছে। বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় বিভিন্ন চরের উদ্দেশে গতকাল শনিবার মধ্যরাত থেকে শত শত ট্রলারে যাত্রা করেন জেলেরা। আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার মাস সামুদ্রিক মাছ আহরণ করে সেগুলো দিয়ে শুঁটকি তৈরি করবেন জেলে ও শ্রমিকেরা। তবে কয়েক মাস ধরে সুন্দরবনকেন্দ্রিক জলদস্যুরা বেপরোয়া হয়ে ওঠায় জেলেরা আতঙ্কে রয়েছেন। শুঁটকি মৌসুম ঘিরে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিতে কোস্ট গার্ডের কাছে চিঠিও দিয়েছে বন বিভাগ।

কোস্ট গার্ডসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনে বর্তমানে ১৪টি জলদস্যু বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে দুলাভাই বাহিনী, মজনু বাহিনী, অয়ন কোম্পানি, আবু সালেহ কোম্পানি, হোসেন কোম্পানি, শহিদুল কোম্পানি, কামরুল কোম্পানি, বিপুল কোম্পানি, মিন্টু কোম্পানি, রিয়াসাদ কোম্পানি, খোকন কোম্পানি ও শাহীন কোম্পানি বেপরোয়া।

বিকাশ কোম্পানি মজনু ডাকাতের ঘনিষ্ঠ হিসেবে বেশ আলোচিত। বিকাশ মারা যাওয়ার পর কোম্পানিটির ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ এখন তাঁর স্বজনদের হাতে। এ ছাড়া ইলিয়াস বাহিনীর প্রধান ইলিয়াস মারা যাওয়ার পর দলের দায়িত্ব নিয়েছেন তাঁর বোনের স্বামী রবিউল; যিনি দুলাভাই নামে পরিচিত।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তালিকায় চিহ্নিত মজনু, করিম শরীফ, দয়াল, রবিউল, আবদুল্লাহ, মামা-ভাগনে, আসাবুর, দুলাভাই, আল-আমীন, জাহাঙ্গীর, আফজাল, কাজল-মুন্না, রাঙ্গা ও ছোট সুমন বাহিনী জেলেদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেছে। এর মধ্যে সাতটি বাহিনী নতুন।

কোস্ট গার্ডের একটি সূত্র জানিয়েছে, বনদস্যু আল-আমীন আত্মসমর্পণ করেছিলেন। কিন্তু গত ১৮ এপ্রিল তিনি অস্ত্রসহ কোস্ট গার্ডের হাতে ধরা পড়েন। এরপর জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার দস্যুতায় নামেন। একইভাবে ২০১৮ সালে আত্মসমর্পণ করা করিম শরীফও আবার বনে সক্রিয় হয়েছেন। সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জের আত্মসমর্পণকারী মিলন পাটোয়ারী মজনু বাহিনীর সঙ্গে দস্যুতায় ফিরেছেন। শ্যামনগরের গাবুরার খোকাবাবুও আবার দস্যুতায় নেমেছেন।

দস্যুতায় ফেরা আসাবুর বাহিনীর প্রধান আসাবুর সানাসহ দুই ডাকাতকে গত বছরের ১২ নভেম্বর সুন্দরবনের ঠাকুরবাড়ি ঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে কোস্ট গার্ড। তবে জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারও অস্ত্র হাতে বনে নেমেছেন তাঁরা। গত ৪ আগস্ট সুন্দরবনের শিবসা নদীর শরবতখালী এলাকা থেকে আসাবুরের দুই সহযোগীকে আটক করা হয়। তবে তিনি পালিয়ে যান।

কোস্ট গার্ডের তথ্য অনুযায়ী, গত ৬ মাসে সুন্দরবনে অভিযান চালিয়ে ১৮ দস্যুকে গ্রেপ্তার এবং ১৬টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ২২৮টি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। মামলা করা হয়েছে ১২টি।

ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে গতকাল শনিবার দুপুরে নৌকা নিয়ে জেলে ও শ্রমিকদের সুন্দরবনসংলগ্ন বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মোংলা নদী ও পশুর নদে এসে জড়ো হতে দেখা যায়।

এ সময় বাগেরহাটের রায়েন্দার জেলে মহাজন আবুল হোসেন বলেন, ‘২০১৮ সালে সুন্দরবনের দস্যুরা আত্মসমর্পণ করার পর কয়েক বছর সুন্দরবন ও সাগরে খুব একটা জলদস্যুর ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকে আবার জলদস্যুতা বেড়ে গেছে। গত বছরও আমার জেলেদের জিম্মি করে পৌনে ৩ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়েছে। আমাদের ভয় এসব জলদুস্যকে নিয়ে।’

জেলে আবদুর জব্বার বলেন, ‘আগামী চার-পাঁচ মাস মাছ ধরে যে আয় হবে, তা দিয়ে আমাদের পুরো বছরের সংসার চলবে। কিন্তু এখন বনে বাঘের উপদ্রব বেড়েছে। বেড়েছে দস্যুতা। তাই আমরা আতঙ্কে আছি। জানি না, আমাদের ভাগ্যে কী আছে।’

দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘শুধু জলদস্যুতা নয়, রাজনৈতিক পরিচয়ে কতিপয় ব্যক্তি অবৈধ সুবিধা নিতে দুবলারচরে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে সুন্দরবনে দস্যুতা বেড়েছে। তাই আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কোস্ট গার্ডের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ২৬ অক্টোবর থেকে দুবলারচরে শুঁটকি মৌসুম শুরু হচ্ছ, শেষ হবে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি। এ মৌসুমের চার মাস ধরে জেলেরা দুবলারচর, আলোরকোল, অফিসকেল্লা, নারকেলবাড়িয়া ও শেলারচরে অবস্থান করবেন। চরগুলোতে জেলেদের থাকার জন্য ৯০০টি ঘর ও ৮০টি দোকান তৈরির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মাছ বেচাকেনার জন্য ডিপোর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ১০০টি। তবে এ সবের জন্য কোনোভাবেই বনের গাছ কাটা ও ব্যবহার করা যাবে না।

রেজাউল করিম চৌধুরী, গত মৌসুমে শুঁটকি থেকে বন বিভাগের ৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিল। এবার ৭ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কোস্ট গার্ডের গণমাধ্যম কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বলেন, বর্তমানে সুন্দরবনের ভেতরে সক্রিয় দস্যুদের রুখে দেওয়ার পাশাপাশি দস্যু নির্মূলে ধারাবাহিক ও নিয়মিত অভিযান চলছে। এরই মধ্যে অপহৃত বহু জেলে ও বাওয়ালিকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘গত বছর শুঁটকি মৌসুম ঘিরে সাগরে জলদস্যুদের উপদ্রব বেশি ছিল। বিষয়টি মাথায় রেখে বন বিভাগের প্রস্তুতির পাশাপাশি আমরা কোস্ট গার্ডকে চিঠি দিয়েছি; তারা যেন নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়। এ ছাড়া মৌখিকভাবে র‍্যাবেরও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬২০ টাকায় গরুর মাংস, মাইকিং করেও মিলছে না ক্রেতা

গ্রেপ্তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকা শিশুকে পুলিশের সামনেই চড়, সমালোচনার ঝড়

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিলে রাইফেল দেখিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি, গ্রেপ্তার ১

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত