Ajker Patrika

খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসের শঙ্কায় ৩৫ হাজার পরিবার

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি 
খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসের শঙ্কায় ৩৫ হাজার পরিবার

দুই দিনের টানা ভারী বর্ষণে খাগড়াছড়িতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. জাকির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বৃষ্টি হলে পাহাড়ধস এবং ধস হলে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আমরা গতকাল ও আজ বুধবার সকাল থেকে লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে মাইকিং করছি।’

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, খাগড়াছড়িতে ৩৫ হাজার পরিবার পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। এর মধ্যে পৌর এলাকার ৩০টি স্থানে বাস করছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পরিবার।

কয়েকটি এলাকায় পাহাড় ধসের সম্ভাব্য ঝুঁকি চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। ঝুঁকিপূর্ণ এসব এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যেতে বলেছে জেলা প্রশাসন। তবে এখন পর্যন্ত পাহাড় ধসের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে সকালে খাগড়াছড়ি মাটিরাঙা উপজেলার সাপমারা এলাকায় একটি গাছ উপড়ে পড়ে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম-ঢাকা সড়কে এক ঘণ্টারও বেশি যান চলাচল বন্ধ থাকে। সৃষ্টি হয় যানজট।

সদরের গোলাবাড়ী এলাকায় তিন বছর ধরে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে বসবাস করছেন মিথিলা মারমা। তিনি বলেন, ‘তিন বছর আগে বড় পাহাড় ধসে পড়ে ঘরের ওপর। আর জায়গা নেই, তাই ঝুঁকি জেনেও বসবাস করছি।’

প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজন চন্দ্র রায় জানান, শালবাগান, কলাবাগান ও সবুজবাগ এলাকায় তিন শতাধিক পরিবার পাহাড়ের ঢালে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে।

টানা বৃষ্টির কারণে যেকোনো সময় পাহাড় ধসের শঙ্কা রয়েছে। তাই আগাম প্রস্তুতি হিসেবে তাঁদের শালবাগান প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিশু প্রাইমারি স্কুলে স্থানান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে, যাতে পরিস্থিতি খারাপ হলে দ্রুত সবাইকে নিরাপদে সরানো যায়।

খাগড়াছড়ি পৌর প্রশাসক ও জেলা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক নাজমুন আরা সুলতানা বলেন, মাইকিং চলছে এবং আশ্রয়কেন্দ্রও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গতকাল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাতে প্রায় এক হাজার মানুষকে খাবার দিয়েছেন। আজকেও এই ব্যবস্থা থাকবে।

জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, ‘অতি ভারী বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকা পরিবারগুলোকে অনুরোধ করেছি নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে। আমরা সেখানে খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও থাকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রেখেছি। এ ছাড়া শিশুদের জন্য দুধ, ওষুধ ও প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম রাখা হয়েছে। পাশাপাশি নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা নিরাপত্তাব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’

টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত

টানা ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়িতে নদী ও ছড়া-খালের পানি দ্রুত বাড়ছে। চেঙ্গি, মাইনি ও ফেনী নদীর পানি বেড়ে নিচু এলাকায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে।

খাগড়াছড়ি সদরের মেহেদীবাগ, কালাডেবাপাড়া, ফুটবিল, মেম্বারপাড়া, দক্ষিণ গোলাবাড়ী, উত্তর গঞ্জপাড়া, দক্ষিণ গঞ্জপাড়া, মুসলিমপাড়াসহ অসংখ্য নদীর পাড়ের গ্রামে পানি উঠেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ধান, ফল বাগান ও সবজিখেত।

দীঘিনালা মেরুং ইউনিয়ন ও রামগড় উপজেলায় বন্যায় নিম্ন অঞ্চল তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া দীঘিনালা-লংগদু উপজেলা সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় লংগদুর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়েছে।

মেহেদীবাগ এলাকার বাসিন্দা মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘গতকাল সারা দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে আমাদের গ্রামসহ আশপাশের গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। বাড়িতে কোমরসমান পানি, আমরা আতঙ্কে আছি।’

দক্ষিণ গঞ্জপাড়ার বাসিন্দা বাবলু খন্দকার বলেন, ‘আমি সকালে কাজে বের হই। বাড়ি থেকে সকালে ফোন করে বলে, ঘরে পানি ঢুকেছে। বাড়ি গিয়ে দেখি, রাস্তায় পানির স্রোত। ঘরে অর্ধেক পর্যন্ত পানি এবং সবকিছু পানিতে ভাসছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০০ কোটি রুপির ব্যবস্থা করেন নরেন্দ্র মোদি

আরপিও সংশোধন থেকে সরলে লন্ডন বৈঠকের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া মনে করবে এনসিপি: আখতার

আজকের রাশিফল: মেজাজ সামলে রাখুন, ফেসবুকে দার্শনিকতা বন্ধ করুন

বাড়ি ফেরার পথে লালনশিল্পীকে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত

সিনেমায় কাজ করতে চান সাফা, তবে ভয়ও পাচ্ছেন

এলাকার খবর
Loading...