Ajker Patrika

ভোটের আগের রাতে আপ্যায়ন: প্রতিমন্ত্রী ও এমপির দুই প্রার্থীই বিজয়ী

যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২২, ০৯: ৩৭
ভোটের আগের রাতে আপ্যায়ন: প্রতিমন্ত্রী ও এমপির দুই প্রার্থীই বিজয়ী

যশোরে জেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ ওঠা প্রতিমন্ত্রী ও এমপির সেই দুই সদস্য প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এ নিয়ে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একাধিকবার দুই উপজেলার ওই দুই জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিলেও সে ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগেই আজ সোমবার ভোটগ্রহণ হয়েছে এবং দুই প্রার্থী বিজয়ীও হয়েছেন। 

দুই প্রার্থী হলেন—মনিরামপুর উপজেলার সদস্য প্রার্থী গৌতম চক্রবর্তী ও বাঘারপাড়ার সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলা। গৌতম চক্রবর্তীর পক্ষে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছিলেন তাঁর মামা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য এমপি। আর সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলার পক্ষে প্রচারণা চালান বাঘারপাড়া-অভয়নগর আসনের সংসদ সদস্য রণজিৎ কুমার রায়। 

বাঘারপাড়া ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী রাকিব হাসান শাওন ও মনিরামপুর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী শহিদুল ইসলাম তাঁদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ দেন। 

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গতকাল রোববার রাতে ভোটারদের হোটেলে নিয়ে বিশেষ আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছিলেন যশোর–৪ আসনের সংসদ সদস্য (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) রণজিৎ কুমার রায়। তিনি সন্ধ্যায় বাঘারপাড়ার অর্ধশত ভোটারকে শহরের অভিজাত ওরিয়ন হোটেলে নিয়ে আপ্যায়ন ও রাত্রিযাপনের ব্যবস্থা করেন। আজ সকালে তাঁরা হোটেল থেকে বাঘারপাড়ায় গিয়ে ভোট দিয়েছেন। রাতেই বাঘারপাড়ার ভোট স্থগিতের আবেদন করেন সদস্য প্রার্থী রাকিব হাসান শাওন। তিনি নির্বাচনে তালা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। 

গতকাল রাতে গণমাধ্যমকর্মীরা হোটেলটিতে গেলে ৮ তলার ৭ নম্বর কক্ষে সংসদ সদস্য রণজিৎ রায় সমর্থিত সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলার পক্ষে বৈঠক চলতে দেখা যায়। হোটেলের নিচে এমপি ও পৌরসভার মেয়র কামরুজ্জামান বাচ্চুর গাড়ি পার্ক করা দেখা গেছে। এমপি রণজিৎ কুমার রায় দাওয়াত দিয়ে এনেছেন—সে কথা স্বীকারও করেছেন একাধিক ভোটার। 

ওই সময় বাঘারপাড়া পৌরসভার কাউন্সিলর তাসলিমা খাতুন জানিয়েছিলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে বাঘারপাড়ার মোট ভোটার ১৩৩ জন। এর মধ্যে ৫০ জনের বেশি সদস্য হোটেল ওরিয়নে এসেছেন। এমপি রণজিৎ কুমার রায় তাঁর সদস্য প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলার পক্ষে কাজ করার জন্য বলেছেন। 

সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলা বিজয়ী ঘোষিত হলে আজ বিকেলে যশোর সার্কিট হাউসে এমপি রণজিৎ রায়কে ফুলের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আপ্যায়িত হওয়া ভোটারেরা। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সার্কিট হাউসের সভাকক্ষে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সমালোচনা করছেন ওই ওয়ার্ডের পরাজিত প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকেরা। 

পরাজিত সদস্য প্রার্থী রাকিব হাসান শাওন বলেছেন, ‘হোটেল ওরিয়ন থেকে ভোটার জামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য তোরাব মোল্লা তাঁকে ফোনে বলেছেন, এমপি রণজিৎ কুমার রায় তাঁদের যশোরের হোটেলে এনে রেখেছেন। তাঁদের সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলার পক্ষে কাজ করতে বলছেন। ভোট বাতিলের দাবিতে জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ দিয়েছিলাম। নির্বাচন কমিশন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি ভোট বর্জন করেছেন।’ 

গতকাল রাতে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি রণজিৎ কুমার রায় বলেন, ‘আমি কাউকে ডেকে আনিনি। কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘনও করেনি। ভোটারেরা কী জন্য হোটেলে এসেছেন তা তাঁরাই ভালো বলতে পারবেন।’ 

অপরদিকে, গত ৮ অক্টোবর মনিরামপুর ওয়ার্ডের সদস্য প্রার্থী গৌতম চক্রবর্তীর পক্ষে যশোর সার্কিট হাউসে ইউপি চেয়ারম্যানদের ডেকে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছিলেন তাঁর আপন মামা পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য।’ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শহিদুল ইসলাম মিলন ওই দিনই জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রীর ছেলে সুপ্রিয় ভট্টাচার্য গৌতম চক্রবর্তীর হয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে ভোটারদের নগদ টাকা দিয়েছেন বলেও অভিযোগ শহিদুল ইসলামের। 

এ অভিযোগ প্রসঙ্গে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় আরেক প্রার্থীর এসব অভিযোগ করেছেন। ভাগনে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। জনপ্রিয়তার কারণেই সে বিজয়ী হয়েছে।’ 

ভোটের আগের রাতে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ভোলার পক্ষে হোটেলে ভোটারদের আপ্যায়ন করেন এমপি রণজিৎ কুমার রায়এ ছাড়া ঝিকরগাছা উপজেলা আসন থেকে সদস্য পদে তালা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা ইমামুল হাবিব জগলুও উপজেলার চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছিলেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী টিউবওয়েল প্রতীকের রফিকুল ইসলাম বাপ্পীর হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ভোট নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ভোটারদের শাড়ি, লুঙ্গি ও নগদ টাকা বিতরণ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন ইমামুল হাবিব। 

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম। নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান আচরণবিধি লঙ্ঘন করে যার পক্ষে লড়েছিলেন সেই রফিকুল ইসলাম বাপ্পীও বিজয়ী হয়েছেন। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা রিটার্নিং অফিসার জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা পরিষদ নির্বাচনে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের যে সমস্ত অভিযোগগুলো রয়েছে সেগুলো খতিয়ে দেখেছি। সবগুলো পরীক্ষা করেছি। তথ্যভিত্তিক ভাবে প্রমাণিত হলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।’ 

প্রসঙ্গত, আজ যশোর জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যানের একটি, ৮টি সাধারণ ওয়ার্ড এবং তিনটি সংরক্ষিত (মহিলা) ওয়ার্ডসহ মোট ১২টি পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। চেয়ারম্যান পদে দুইজনসহ মোট ৫১ প্রার্থী ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। জেলার ৮টি কেন্দ্রে ১৬টি ভোট কক্ষে এক হাজার ৩১৮ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিতাসে অস্ত্র-গুলিসহ ৪ নারী গ্রেপ্তার

হোমনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি 
উদ্ধার হওয়া গুলি ও অস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত
উদ্ধার হওয়া গুলি ও অস্ত্র। ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার তিতাসে যৌথ বাহিনীর অভিযানে অস্ত্র-গুলিসহ চার নারীকে গ্রেপ্তার হয়েছে। গতকাল শনিবার (২৫ অক্টোবর) দিবাগত রাত থেকে আজ রোববার ভোর পর্যন্ত উপজেলার মজিদপুর ইউনিয়নের শাহপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।

তিতাস-অস্ত্র২
তিতাস-অস্ত্র২

গ্রেপ্তার নারীরা হলেন শাহপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের স্ত্রী ফারজানা (২৯), জসিমের স্ত্রী আমিনা (৩৭), জহিরের স্ত্রী জুবেদা (৩৩) ও আব্দুল কাদিরের স্ত্রী শান্তি বেগম (৬০)।

থানা সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিতাস থানা-পুলিশের একাধিক টিম শাহপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় সেখান থেকে ১টি বিদেশি রিভলবার, ৬টি গুলি, ১টি এলজি বন্দুক, ২টি পাইপগান উদ্ধারসহ তিন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পরে সেনাবাহিনীর সহায়তায় একই রাতে একই এলাকার আব্দুল কাদিরের বাড়িতে পৃথক অভিযান চালিয়ে ১০টি সিসা কার্তুজ ও ৫টি ধারালো দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার এবং আরও এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে তিতাস থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। আজ দুপুরে তাঁদের কুমিল্লা আদালতে পাঠানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডিমলায় টিকা নিতে গিয়ে পিকআপের ধাক্কায় নানি-নাতনি নিহত

ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি 
উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের গয়াবাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজসংলগ্ন ঘোড়ামারা রোড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা
উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের গয়াবাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজসংলগ্ন ঘোড়ামারা রোড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নীলফামারীর ডিমলায় টিকা নিতে যাওয়ার পথে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় নানি তাঁর ১৪ দিনের নবজাতক নাতনিসহ নিহত হয়েছেন। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের গয়াবাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজসংলগ্ন ঘোড়ামারা রোড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন উপজেলার গয়াবাড়ী ইউনিয়নের শুটিবাড়ি বাজারসংলগ্ন এলাকার আব্দুস ছাত্তার খানের স্ত্রী মোছা. সূর্য খাতুন (৫৫) এবং তাঁর নাতনি সামিয়া আক্তার (১৪ দিন) একই এলাকার বাসিন্দা বাবুল হোসেনের মেয়ে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সকালে সূর্য খাতুন নাতনি সামিয়াকে নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন। রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগতির একটি মালবাহী পিকআপ তাঁদের ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই নবজাতক সামিয়া মারা যায়। স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় সূর্য খাতুনকে উদ্ধার করে ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

দুর্ঘটনার পর পিকআপের চালক পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।

নিহত নবজাতকের স্বজনেরা বলেন, নানি তাঁর নাতনিকে নিয়ে টিকা দিতে গিয়েছিল। সকালবেলায় হাসিখুশি ছিল সবাই। কিন্তু মুহূর্তেই সব শেষ হয়ে গেল।

স্থানীয়রা জানান, ওই সড়কে বেপরোয়া গতির কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।

ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করেছে। পিকআপের চালককে শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্টেশনমাস্টারের দুর্নীতি-স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধন

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি 
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধন। ছবি: আজকের পত্রিকা

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টার খাদিজা খাতুনের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধন করা হয়েছে। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে আক্কেলপুর রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে ‘আক্কেলপুরবাসী’র ব্যানারে এই মানববন্ধন হয়। এতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার অর্ধশতাধিক মানুষ অংশ নেন।

মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, খাদিজা খাতুন ২০ বছরের বেশি সময় ধরে আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সান্তাহার জংশনের দায়িত্বেও আছেন। স্থানীয় যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া এবং তাঁর মনগড়া প্রতিবেদনের কারণে চিলাহাটী এক্সপ্রেস ট্রেনের আক্কেলপুরে যাত্রাবিরতি বন্ধ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন বক্তারা। তাঁকে দ্রুত এখান থেকে অপসারণের দাবি জানান তাঁরা।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন আক্কেলপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও চিলাহাটী এক্সপ্রেসের যাত্রাবিরতির সমন্বয়ক আব্দুর রউফ মাজেদ। বক্তব্য দেন পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম চপল, তিলকপুর ইউপির সদস্য মামুনুর রশিদ পিন্টু, কলেজশিক্ষক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম তুহিন, মাসুদ চৌধুরী, ছাত্রদল নেতা আরমান হোসেন কানন প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, আক্কেলপুর, ক্ষেতলাল, নওগাঁর বদলগাছী-পত্নীতলা এবং বগুড়ার দুপচাঁচিয়া এলাকার যাত্রীরা এই স্টেশন ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করে। চিলাহাটী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রাবিরতি পেলে মানুষের ভোগান্তি অনেকটা কমবে। কিন্তু স্টেশনমাস্টার খাদিজা খাতুনের মনগড়া প্রতিবেদনের কারণে তা বন্ধ রয়েছে।

এ বিষয়ে আক্কেলপুরের স্টেশনমাস্টার খাদিজা খাতুন বলেন, ‘আমি চিলাহাটী এক্সপ্রেসের যাত্রাবিরতির বিরোধিতা করে কোনো মৌখিক বা লিখিত প্রতিবেদন দিইনি। ২০২৪ সাল থেকে সান্তাহার জংশনের অতিরিক্ত দায়িত্বও পালন করছি। এক বছর তিন মাসে কোনো যাত্রী আমার দ্বারা হয়রানির শিকার হয়নি। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। একটি স্বার্থান্বেষী মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বন্য প্রাণী সংরক্ষণের নতুন আইনে জামিনের সুযোগ না রাখার প্রস্তাব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।  ফাইল ছবি
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। ফাইল ছবি

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণে নতুন করে যে আইন করা হচ্ছে, তার খসড়ায় জামিনের সুযোগ না রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন যেটা নতুন ড্রাফট করেছি, সেখানে কগনিজেবল (পুলিশ যেখানে আদালতের অনুমতি ছাড়াই গ্রেপ্তার ও তদন্ত শুরু করতে পারে) এবং নন-বেইলেবল (জামিন অযোগ্য) অপরাধ যুক্ত করেছি, যা এখনো খসড়া আকারে রয়েছে এবং ক্যাবিনেটে যায়নি।’

আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বন ভবনে ‘আন্তর্জাতিক মিঠাপানির ডলফিন দিবস ২০২৫’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘বন্য প্রাণী রক্ষায় শুধু আইন নয়, মনস্তাত্ত্বিক ও আচরণগত পরিবর্তন জরুরি। যদি মানুষ নিরীহ প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুর হয়, তা সমাজের মূল্যবোধের অবক্ষয়ের প্রতিফলন। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর মেছো বিড়াল নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা করলাম। মেছো বিড়ালকে শুধু শুধুই আমরা মেছো বাঘ বলি। বাঘ বলে একটা ভীতি সঞ্চার করি। নিরীহ একটা প্রাণীকে মেরে ফেলি। মারি যে, লজ্জাও পাই না। মেরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা প্রকাশ করি। বন্য প্রাণী আইন বলেন, বিধিমালা বলেন, বন বিভাগ বলেন, সব যদি সক্রিয় হয়; কিন্তু মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন যদি না আসে, তাহলে এই প্রাণীগুলোকে বাঁচানো যাবে না। এই নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে সমাজকে দাঁড়াতে হবে।’

অনুষ্ঠানে ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির কান্ট্রি ডিরেক্টর ও ডলফিন বিশেষজ্ঞ ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দেশের ৪৫টি বড় নদীতে জরিপ করে ৩৯টি নদীতে ২ হাজার ৮২টি ডলফিনের সংখ্যা নির্ণয় করা হয়েছে। আমাদের প্রায় ২৫০টি ডলফিন মারা যাওয়ার তথ্য আছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ আমরা দেখেছি কারেন্ট জাল অথবা ফাঁস জালে আটকে মারা গেছে।’

এ বিষয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘ডলফিনগুলোকে বাঁচানোর জন্য বা বংশবৃদ্ধি করার জন্য যা প্রয়োজন, তা একটা সভ্য সমাজের মানদণ্ডের নির্ণায়ক। আপনি যদি বলেন, শুশুক বা আমাদের ডলফিন থাকবে পরিষ্কার পানিতে, তাহলে যেকোনো সভ্য জাতিও থাকবে পরিষ্কার পানির পাশেই। যে জাতি নিজেকে সভ্য দাবি করবে, সে জাতি তার নদীগুলোকে আবার দূষিত করবে—দুটো একসঙ্গে হতে পারে না। দুটো সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে।’

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘যখন ডলফিনের সংখ্যা বাড়বে, তখন বুঝতে হবে, নদীদূষণ আমরা নিয়ন্ত্রণ করছি। যখন আমার ডলফিনের সংখ্যা কমবে, তখন আমি বুঝব, নদীগুলোকে আমি ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলছি। নদী মানুষের জন্য যখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়, তখন তা ডলফিনের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। নদী যখন ডলফিনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, তখন তা মানুষের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ।’

ডলফিন নদীর ‘সুস্থতার প্রতীক’ উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, যেখানে ডলফিন টিকে থাকে, সেখানে নদীও টিকে থাকে। আর নদী টিকে থাকলেই মানুষ বাঁচে। ডলফিন নিয়ে কথা বলা মানে আমাদের বেঁচে থাকার কথাই বলা। কারণ নদীর পানি যদি দূষিত হয়, তাহলে তা যেমন ডলফিনের জন্য বিপদ, তেমনি মানুষের জন্যও। নদী পরিষ্কার রাখাই মানুষের ও ডলফিনের জীবনের অন্যতম শর্ত।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি আশা করি, দেশের প্রতিটি জেলায় বন বিভাগকে সহায়তা করার জন্য স্বেচ্ছাসেবী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে। এতে প্রাণী উদ্ধার ও সুরক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হবে। বন্য প্রাণী রক্ষায় যাঁরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করছেন, তাঁদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বন সংরক্ষক মো. ছানাউল্যা পাটওয়ারী, বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত