Ajker Patrika

দুই কলেজের অধ্যক্ষ জাহিদুলের তুঘলকিকাণ্ড, বহিষ্কারের পর তদন্ত কমিটি গঠন

­যশোর প্রতিনিধি
যশোর টেকনিক্যাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ জাহিদুল ও তাঁর স্ত্রী নাসরীন পারভীন তানিয়া। ছবি: সংগৃহীত
যশোর টেকনিক্যাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ জাহিদুল ও তাঁর স্ত্রী নাসরীন পারভীন তানিয়া। ছবি: সংগৃহীত

যশোর টেকনিক্যাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বানিয়ে নজিরবিহীন অনিয়ম-দুর্নীতি করার অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ১৪ বছর ধরে কর্মস্থলে না গিয়ে একই সঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ হিসেবে বেতন ভাতা উত্তোলন করেছেন। স্ত্রীকে হিসাব সহকারী পদে নিয়োগ দিয়ে প্রায় ১৪ বছর ধরে ঘরে বসে বেতন তুলেছেন।

স্বামী-স্ত্রীর অনিয়ম দুর্নীতির পথ সহজ করতে প্রতিষ্ঠাকাল থেকে পালাক্রমে সভাপতি পদে বসিয়েছেন বোন ও ভগ্নিপতিকে। তাঁরাই অধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলামের দুর্নীতির সহযোগী হিসেবেই থেকেছেন।

সম্প্রতি তাঁদের দুর্নীতির বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় অধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলামকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আর অবস্থা বেগতিক দেখে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘মডেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের’ অধ্যক্ষ পদ থেকে সরে গেছেন তিনি।

লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত যশোর টেকনিক্যাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজটির অধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলাম। তিনি একই সঙ্গে ২০১০ সাল থেকে মডেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই প্রতিষ্ঠানে ১৪ বছর ধরে নিয়মিত কর্মরত থাকলেও যশোর টেকনিক্যাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজে যান না। কিন্তু মাস শেষে দুই প্রতিষ্ঠান থেকেই বেতন ভাতা উত্তোলন করেন। যা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ এর স্পষ্ট লঙ্ঘন।

এমপিও নীতিমালার ১১/১৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক-কর্মচারী একই সঙ্গে একাধিক কোনো পদে/চাকরিতে বা আর্থিক লাভজনক কোনো পদে নিয়োজিত থাকতে পারবেন না।’

বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের হাত করে বহাল তবিয়তে চাকরি টিকিয়ে রেখেছেন অধ্যক্ষ জাহিদুল। শুধুই নিজেই অসম্ভবকে সম্ভব করেননি। ২০১০ সালে স্ত্রী নাসরিন পারভীন তানিয়াকে হিসাব সহকারী পদে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনিও হেঁটেছেন স্বামীর পথেই। ২০২৩ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত সাড়ে ১৩ বছর কর্মস্থলে না গিয়েও তুলেছেন নিয়মিত বেতন-ভাতা।

অধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলাম নিজের অনিয়ম, দুর্নীতি ঢাকতে প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই বোন জাহিদা ইদ্রিস ও ভগ্নিপতি আরাফাত ইদ্রিসকে পর্যায়ক্রমে পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে বসিয়েছেন। কলেজে না এসেও বছরের পর বছর বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা, সরকারি অংশের বেতন, বিল ও আনুষঙ্গিক বিল দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করার অভিযোগ রয়েছে।

এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৬ অক্টোবর অধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা)। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়িত্ব দেন কলেজের সিনিয়র শিক্ষক ডিএম তবিবর রহমানকে। অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।

যশোর টেকনিক্যাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজ। ছবি: আজকের পত্রিকা
যশোর টেকনিক্যাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজ। ছবি: আজকের পত্রিকা

এরপর অভিযোগের প্রমাণ লোপাটে ব্যস্ত হয়ে পড়েন জাহিদুল ইসলাম। গত ১২ নভেম্বর ভোর ৫টা ৪৫ দিকে কলেজে প্রবেশ করে প্রয়োজনীয় ও গোপনীয় কাগজপত্র ব্যাগে ভর্তি করে নিয়ে গেছেন বলে থানায় জিডি করেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।

ম্যানেজমেন্ট কলেজের একাধিক শিক্ষক জানান, এমপিওভুক্ত কলেজের অধ্যক্ষ হয়ে তিনি শিক্ষকতা ও দায়িত্ব পালন করেন মডেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। ২০১০ সালের পর থেকে তিনি নিয়মিত এমপিওভুক্ত কলেজে আসেন। কলেজের প্রধান নিয়মিত কর্মস্থলে না আসায় কলেজটির কার্যক্রম খুঁড়িয়ে চলছে। কলেজের উন্নয়ন ফান্ড নেই। অভ্যন্তরীণ কোনো কমিটি নেই। স্বামী অধ্যক্ষ ও স্ত্রী হিসাব সহকারী হওয়ায় ঘরে বসে তারা ইচ্ছামতো খরচের বিল উত্তোলন করেন। কলেজের বোন ও ভগ্নিপতি কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে পর্যায়ক্রমে সভাপতির দায়িত্ব পালন করায় অধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলাম অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজের হিসাব সহকারী ও অধ্যক্ষ জাহিদুলের স্ত্রী নাসরীন পারভীন তানিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কলেজের শিক্ষকেরা ষড়যন্ত্র করছেন। আমরা স্বামী-স্ত্রী নিয়মিত কলেজে যাই। হাজিরা খাতায় সাক্ষরও করা আছে।’

এ বিষয়ে যশোর টেকনিক্যাল অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে সহকর্মীরাই। আমি নিয়মিত কর্মস্থলে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেসরকারি মডেল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের আমাদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। আমি সেখানকার অধ্যক্ষ নই, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হিসেবে আছি। এ জন্য সেখানে যাতায়াত আছে।’

মডেল পলিটেকনিক্যাল কলেজের বিভিন্ন দাপ্তরিক কাগজপত্রে তার সাক্ষর ও অধ্যক্ষ উল্লেখ করা রয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার জন্য ওসব উল্লেখ করা হয়েছিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পাবনায় ট্রাকচাপায় দুই শিক্ষার্থীসহ নিহত ৩

পাবনা প্রতিনিধি
পাবনায় ট্রাকচাপায় তিনজন নিহত হয়। রোববার সকালে পাবনা সদরের ডাঙ্গাবাড়িয়া এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
পাবনায় ট্রাকচাপায় তিনজন নিহত হয়। রোববার সকালে পাবনা সদরের ডাঙ্গাবাড়িয়া এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

‎পাবনায় বাঁশবোঝাই ট্রাকের চাপায় দুই স্কুলশিক্ষার্থীসহ তিনজন নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় আরও দুজন গুরুতর আহত হয়েছে। ‎রোববার (২৬ অক্টোবর) সকাল ৭টার দিকে পাবনা সদর উপজেলার গয়েশপুর ইউনিয়নের বাঙ্গাবাড়িয়া এলাকায় ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ‎নিহত ব্যক্তিরা হলো পাবনা কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তাসমিয়া আক্তার, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আবু তোহা ও ভ্যানের চালক আকরাম হোসেন।

‎মাধপুর হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ‎

‎‎জানা গেছে, সকাল ৭টার দিকে ৮-১০ জন শিক্ষার্থী ভ্যানগাড়িতে করে পাবনার জালালপুর এলাকার ক্যাডেট কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজে যাওয়ার পথে ঢাকা থেকে পাবনাগামী একটি বাঁশবোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই ছাত্র-ছাত্রী ও ভ্যানচালক নিহত হয়। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছে আরও দুজন পথচারী। স্থানীয় বাসিন্দারা মাধপুর হাইওয়ে থানা-পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করে। ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। মহাসড়কে যান চলাচল সাময়িক বন্ধ রয়েছে।

ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভ্যানের ড্রাইভারসহ তিনজন নিহত ও চায়ের দোকানে থাকা দুই ব্যক্তি আহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।‎

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সিরাজদিখানে ১৪৩ দিনে কোরআন মুখস্থ করল ৯ বছরের শিশু আরফান

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
মোহাম্মদ আরফান হোসাইন। ছবি: সংগৃহীত
মোহাম্মদ আরফান হোসাইন। ছবি: সংগৃহীত

অভূতপূর্ব এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কুচিয়ামোড়া গ্রামের ৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ আরফান হোসাইন। মাত্র ১৪৩ দিনে পুরো পবিত্র কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে সে। আরফানের এই অসাধারণ সাফল্যে পরিবার, শিক্ষক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আনন্দ ও গর্বের আবহ বিরাজ করছে।

আরফান বর্তমানে ইসলামপুর কামিল কওমি মাদ্রাসার ছাত্র। এর আগে সে কুচিয়ামোড়া দারুন্নাজাত মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করেছে। অল্প বয়সে এমন সাফল্য অর্জন করে স্থানীয়ভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

আরফান কেয়াইন ইউনিয়নের কুচিয়ামোড়া গ্রামের বিশিষ্ট আলেম ও শিক্ষক হাফেজ আব্দুল্লাহ আল মাসরুরের (লাভু হুজুর) ছেলে। লাভু হুজুর বর্তমানে কুচিয়ামোড়া দারুন্নাজাত মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ এবং কুচিয়ামোড়া মিত্রপাড়া বাইতুন নূর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিন ভাইবোনের মধ্যে আরফান সবার ছোট। মাত্র ১৪৩ দিনে সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্থ করে সে তার পরিবারসহ পুরো এলাকাকে গর্বিত করেছে।

ইসলামপুর কামিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক ফখরুদ্দীন রাজি বলেন, ‘আরফান আমাদের মাদ্রাসার গর্ব। ১৪৩ দিনে কোরআন মুখস্থ করা আমাদের মাদ্রাসার ইতিহাসে এই প্রথম। এটি এক বিরল দৃষ্টান্ত। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাবিতে ঘাস কাটার মেশিন ভেঙে যুবকের মাথায় ঢুকল ব্লেড

জাবি প্রতিনিধি 
হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে আহত যুবককে। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে আহত যুবককে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ঘাস কাটার যন্ত্র (মেশিন) ভেঙে ব্লেড ছিটকে মাথায় ঢুকে সুমন মিয়া (২৬) নামের এক যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা এবং জাবি স্পোর্টস ক্লাব আয়োজিত তিন দিনব্যাপী নাইট ফুটবল টুর্নামেন্ট উপলক্ষে বরাদ্দ স্টলে কাঁকড়া ফ্রাই বিক্রি করতেন।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ঘটনার পরপরই তাঁকে প্রথমে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট একাধিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৩ অক্টোবর থেকে জাবি স্পোর্টস ক্লাবের ব্যবস্থাপনায় তিন দিনব্যাপী নাইট ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হয়। শনিবার ছিল খেলার শেষ দিন। টুর্নামেন্টে ক্লাবের সভাপতি আরশাদ হাবিব বিশালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এক বন্ধু একটি স্টল বরাদ্দ নেন, যেখানে সুমন মিয়া ও জাবির এক হোটেল কর্মচারী কাজ করতেন।

এদিকে বিশালের অনুরোধে অনানুষ্ঠানিকভাবে মাঠ প্রস্তুতের কাজ করতেন শারীরিক শিক্ষা অফিসের কর্মচারী আবুল হোসেন। গতকাল শেষ দিন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে এসে মাঠ প্রস্তুতের কাজ শেষে হাতে সময় থাকায় মেশিন দিয়ে ঘাস কাটা শুরু করেন তিনি। ঘাস কাটার সময় মেশিনের ব্লেড মাটিতে থাকা একটি ইটে লেগে ভেঙে যায়। ব্লেডের সেই অংশ ছিটকে গিয়ে পাশের স্টলে দাঁড়িয়ে থাকা সুমন মিয়ার মাথায় ঢোকে।

সুমন মিয়ার পাশের স্টলে পিঠার দোকান ছিল নাদিয়া মীম নামের সিটি ইউনিভার্সিটির সাবেক এক শিক্ষার্থীর। নাদিয়া বলেন, সুমন স্টলে দাঁড়ানো অবস্থায় ব্লেড ছিটকে এসে লাগার সঙ্গে সঙ্গে ঢলে পড়ে যান। প্রথমে ভয়ে কেউ তাকে উঠায়নি। পরে বিশাল এসে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য মোটরসাইকেলে উঠিয়ে দেন।

কর্মচারী আবুল হোসেন বলেন, ‘হাতে একটু সময় থাকায় ঘাস কাটছিলাম। মেশিনে ইট লেগে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটবে, এটা ভাবতে পারছি না।’

শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক নাসরিন বেগম বলেন, ‘আজ ছুটির দিন থাকায় আমি অফিসে ছিলাম না। আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীরাও ছুটিতে ছিল। তবে জাবি স্পোর্টস ক্লাবের নাইট ফুটবল টুর্নামেন্ট চলমান থাকায় তিনি সেখানে ছিলেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত আহত ব্যক্তিকে এনাম মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাই। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। রাত ১টার দিকে তার অপারেশন শুরু হয়।’

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আহত সুমনের মাথায় অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত নন। ৭২ ঘণ্টা অবজারভেশনে থাকবেন তিনি। নিবিড় পরিচর্যার পরামর্শ থাকলেও এখন পর্যন্ত তার ব্যবস্থা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি টেকনাফের বসতবাড়ি ও দোকানে, নারী আহত

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি 
মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি ও ছিদ্র হয়ে যাওয়া টেকনাফের একটি ঘরের বেড়া। ছবি: আজকের পত্রিকা
মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি ও ছিদ্র হয়ে যাওয়া টেকনাফের একটি ঘরের বেড়া। ছবি: আজকের পত্রিকা

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের জেরে ছোড়া গুলি বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় এসে পড়েছে। এই ঘটনায় কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের তেচ্ছি ব্রিজ সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় এক নারী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। এ ছাড়া গুলিতে একটি বসতবাড়ি ও একটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। আহত নারীর নাম ছেনুয়ারা (২৭)। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেলের দিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ভয়াবহ গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। কিছু সময় পর ওপার থেকে ছোড়া দুটি গুলি বাংলাদেশ সীমান্তের তেচ্ছি ব্রিজ এলাকার একটি বসতবাড়ি ও কম্পিউটারের দোকানে এসে লাগে। এতে ঘরের টিন ও দেয়াল ছিদ্র হয়ে যায়।

ঘটনার পর সীমান্ত এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় অনেক পরিবার শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে।

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, ‘মিয়ানমারের দিক থেকে ছোড়া গুলি এপারে এসে পড়ায় একজন নারী আহত হয়েছেন। সীমান্তের মানুষ এখন চরম আতঙ্কে রয়েছে। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

নুর আহমেদ আনোয়ারী আরও বলেন, যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে সীমান্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি ‘সুস্পষ্টভাবে’ বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে তুলে ধরব: ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত