Ajker Patrika

নবীগঞ্জে রাস্তা নিয়ে দ্বন্দ্বে বারবার সংঘাত: সমঝোতায় মেলেনি সমাধান

ছনি চৌধুরী, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) 
নবীগঞ্জে রাস্তা নিয়ে দ্বন্দ্বে বারবার সংঘাত: সমঝোতায় মেলেনি সমাধান

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার তাড়ালিয়া গ্রামে চলাচলের রাস্তা নিয়ে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে। একাধিক বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে উভয় পক্ষ। কেটে ফেলা হয় চলাচলের রাস্তাও। দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা করেও হয়নি কোনো সুরাহা। বারবার সমঝোতার চেষ্টা করেও ব্যর্থ স্থানীয় লোকজন ও প্রশাসন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের তাড়ালিয়া গ্রামে সরেজমিনে ঘুরে কথা হয় গ্রামবাসীর সঙ্গে। এ নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত। তবে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চান এলাকাবাসী।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় তিন যুগ পূর্বে তাড়ালিয়া গ্রামের ৪৫ শতাংশ জমি কিনে বসবাস শুরু করেন জহুরুল হক ও শওকত আলী নামে দুই ভাই। একই মালিকের কাছ থেকে বেশ কিছু জায়গা ক্রয় করেন ওই গ্রামের সুধীর গোপ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সত্যেন্দ্র গোপ। ওই সময় থেকে জহুরুল হক ও শওকত আলীর পরিবারসহ কয়েকটি পরিবার বাড়ির উত্তর অংশে বিরোধপূর্ণ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতেন।

২০২০ সালে জহুরুল হক ও শওকত আলীর বসবাসকৃত বাড়ির অংশে সুধীর গোপের জায়গা রয়েছে বলে দাবি করেন। সুধীর গোপের দাবির প্রেক্ষিতে ওই বছর সালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে গজনাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুলও উপস্থিত ছিলেন। সালিস-বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুধীর গোপের দাবি করা জায়গা ছেড়ে দেন জহুরুল হক ও শওকত আলীর পরিবার। ওই সময় জহুরুল হক ও শওকত আলীসহ কয়েকটি পরিবারের বাড়ি থেকে বের হওয়ার জন্য বিরোধপূর্ণ রাস্তা সংস্কারে সম্মতি দেন সুধীর গোপ ও সত্যেন্দ্র গোপের পরিবার। অনুষ্ঠিত সালিস-বৈঠকে উভয় পক্ষের মনোনীত দুজন করে মোট চারজন ব্যক্তিকে রাস্তা সংস্কারের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা হলেন সুধীর গোপের মনোনীত শুকুর গোপ, ইরেশ গোপকে এবং জহুরুল হক পক্ষের মনোনীত টনু মিয়া, মুসলিম মিয়া। উভয় পক্ষের মনোনীত চারজন ব্যক্তি ওই রাস্তা সংস্কারকালে জহুরুল হক ও সুধীর গ্রুপের কোনো লোকজন উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে সিদ্ধান্ত হয়। উভয় পক্ষই ওই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়।

২০২০ সালের ২০ মে রাস্তা সংস্কার করতে যান জহুরুল হক ও সুধীর গোপ মনোনীত চারজন ব্যক্তি। এ সময় জহুরুল হক ও সুধীর গোপ সালিস-বিচারের নির্দেশ অমান্য করে উক্ত রাস্তা সংস্কারের স্থানে উপস্থিত হন। একপর্যায়ে রাস্তা সংস্কারকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা ও পরে সংঘর্ষ হয়। এতে দু-পক্ষের ৮-১০ জন আহত হন। এরপর বারবার জহুরুল হকের লোকজন রাস্তা সংস্কার করলে সুধীর গোপের লোকজন রাস্তা কেটে ফেলেন। ফলে কয়েক দফায় উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। একই ঘটনা নিয়ে ফৌজদারি তিনটি ও দেওয়ানি দুটি মামলা রয়েছে।

এ নিয়ে এলাকায় বেশ কয়েকবার পর্যায়ক্রমে তৎকালীন বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরীর কার্যালয়ে ও গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদে সালিস বৈঠক হয়। কিন্তু মেলেনি সমাধান। মামলা চলমান অবস্থায় সম্প্রতি উভয় পক্ষের মধ্যে আবারও উত্তেজনা দেখা দেয়। এ বিষয়ে নবীগঞ্জ থানাকে জানানো হলে বাহুবল-নবীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল খয়ের সমঝোতার চেষ্টা করেন।

গত ২১ মে উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীর নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনের বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে উভয় পক্ষকে নিয়ে গোপলার বাজার তদন্ত কেন্দ্রে সালিস-বৈঠক হয়। সভায় সমঝোতার মধ্য দিয়ে মানবিক দৃষ্টিকোণ ও সার্বিক দিক বিবেচনায় রাস্তাটি বহাল থাকার ব্যাপারে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়। তবে সালিস-বৈঠকেই সুধীর গোপের লোকজন ওই সিদ্ধান্ত মেনে নেয়নি বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল খয়ের। পরে উভয় পক্ষকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি না ঘটিয়ে আইনিভাবে মোকাবিলা করার জন্য বলা হয়। জহুরুল হক রাস্তার অংশের জায়গাটি কিনে নিতে চাইলেও তাতে সুধীর গ্রুপের লোকজনের সম্মতি ছিল না বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। 

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের হবিগঞ্জ জেলা শাখার একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেএদিকে এ ঘটনার পর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজির বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন শুভ্র গোপ। তাতে প্রশাসনের সহযোগিতা না করার অভিযোগ তোলা হয়।

রাস্তার অংশের জায়গাটি কিনে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রভ গোপ বলেন, জমি কিনে নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। কখনো বলা হয়নি যে উনি (জহুরুল হক) টাকার বিনিময়ে জায়গা নিবেন। বারবার বলা হয়েছে যে উনি আড়াই শ থেকে তিন শ বছর এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে আসছে, সে হিসেবে এইটা ওনার অধিকার। গত ১৭ মার্চ যে হামলার ঘটনা বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল বলেন এইটা ওনার (জহুরুল হক) স্বাধীনতা। চেয়ারম্যান এই স্বাধীনতা তাঁদের (জহুরুল) দিয়ে দিছেন।’  

এ সংক্রান্ত অডিও রেকর্ড তাঁর কাছে আছে বলে দাবি করেন শুভ্র গোপ।

অন্যদিকে জহুরুল হক জানান, গত ৩ জুন (শুক্রবার) জুম্মার নামাজের সময় সুধীর গোপ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বিরোধপূর্ণ রাস্তাটি পুনরায় কেটে ফেলেন। বিষয়টি জানাজানি হলে জুম্মার নামাজ শেষে তিনি ও শওকত আলীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সুধীর গোপ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সংঘাত হয়। এ সময় তাঁর পক্ষের সৈয়দুন নেছা (৫০), রুপজান বিবি (৪৫), শাবানা বেগম গুরুতর আহত হন বলে জানান তিনি। 

এ হামলায় সুধীর গোপের পক্ষের গুরুতর আহত হন সীতা রানী গোপ (৫০), সুধীর চন্দ্র গোপ (৬৫) ও শুভ্র গোপ (২৭)। উভয় পক্ষ নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। ঘটনার খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানা-পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
 
এ ঘটনায় গত রোববার (৫ জুন) নবীগঞ্জ থানায় জহুরুল হক মামলা দায়ের করেন। এতে প্রতিপক্ষের সাতজনকে আসামি করা হয়। একইদিন সুধীর গোপের ছেলে সুচিত্র গোপ বাদী হয়ে জহুরুল হক ও শওকত আলীসহ সাতজনকে আসামি করে থানায় পাল্টা একটি মামলা করেন। উভয়ের মামলা রুজু করে পুলিশ।

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের হবিগঞ্জ জেলা শাখার একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এতে উপস্থিত ছিলেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের হবিগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক শংকর পাল, হবিগঞ্জ জেলা পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শঙ্খ শুভ্র রায়, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের হবিগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিপুল রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক বিপ্লব রায় সুজন, হবিগঞ্জ জেলা ছাত্র ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক কৌশিক আচার্য্য পায়েলসহ একটি প্রতিনিধি দল নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের তাড়ালিয়া গ্রাম সরেজমিনে পরিদর্শন করে উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। 

উভয়ের প্রতিবেশী টনু মিয়া বলেন, ‘আমরা এলাকাবাসী তাদের দু-পক্ষের বিরোধ মীমাংসায় একাধিক বার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কিন্তু তাঁরা আমাদের কথা শোনেনি, আমরা অতি দ্রুত এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান চাই।’ 

এ বিষয়ে সুধীর গোপের ছেলে শুভ্র গোপ বলেন, ‘জহুরুল ও তাঁর লোকজন গজনাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুকুলের মদদে আমাদের জায়গার ওপর দিয়ে জোরপূর্বক দখল করে রাস্তা নির্মাণ করার চেষ্টা করলে আমরা বাধা দেই। এতে তাঁরা আমাদের ওপর একাধিকবার হামলা করে এবং মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করে আসছে। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের কোনো সহযোগিতা পাইনি। আমরা দ্রুত আমাদের জায়গা উদ্ধার ও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।’

সুধীর গোপের বাড়িএ প্রসঙ্গে জহুরুল হক বলেন, ‘এই রাস্তা প্রায় দু শ বছরের পুরোনো রাস্তা। আমরা প্রায় তিন যুগ ধরে এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে আসছি। আমাদের কেউ মারা গেলে এই একমাত্র রাস্তা দিয়েই বের হতে হয়। রাস্তার উভয় পাশে সুধীর গোপের জায়গা থাকায় উক্ত রাস্তা সুধীর গোপের জায়গায় বলে দাবি করে বারবার পুরোনো এই রাস্তাটি কেটে ফেলেন। একাধিক বার উপজেলা প্রশাসন পুলিশ প্রশাসন স্থানীয় চেয়ারম্যান, সনাতন ধর্মাবলম্বীর নেতৃবৃন্দসহ সালিস-বৈঠক করা হলেও সুধীর গোপ ও তাঁর ছেলেরা সালিস-বৈঠকে রায় না মেনে আমাদেরকে হয়রানি করে আসছে। সুধীর গোপের অত্যাচারে আমরা সংখ্যালঘুদের মতো বসবাস করছি। এ বিষয়ে প্রশাসনসহ প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করছি।’

এ বিষয়ে গজনাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমদাদুর রহমান মুকুল বলেন, ‘এখানে কেউ জায়গা দখল করেনি। ওই রাস্তা দিয়ে যুগ যুগ ধরে জহুরুল হকসহ কয়েকটি পরিবার চলাচল করে আসছে। তবে রাস্তাটি রেকর্ডীয়ভাবে রাস্তা না। আমরা এ বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য একাধিক বার প্রশাসনসহ বসেছি। কিন্তু সমাধান আসেনি। আমিও চাই ওই বিষয়টি মীমাংসা হউক।’

তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমাকে জড়িয়ে তারা ফেসবুকে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে লেখালেখি করতেছে, যা দুঃখজনক।’ 

নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ডালিম আহমেদ বলেন, ‘মূলত রাস্তা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে এ দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। কিছুদিন পরপরই তাঁদের মধ্যে সমস্যা হয়। পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও এলাকার বিশিষ্টজনদের নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করলেও সমাধান করা যাচ্ছে না। উভয় পক্ষই থানায় দুটি মারামারি মামলা করেছে। আমরা মামলার প্রেক্ষিতে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করব এবং বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৩ হাজারের তার কেনা হলো ১৬ হাজারে

  • ২৫০ টাকার এলইডি বাল্ব ৩১৮ ও ৭০ টাকার লাইট হোল্ডার কেনা হয়েছে ২১০ টাকায়।
  • ফ্লাডলাইট, হোল্ডার ও সার্কিট ব্রেকারসহ বিভিন্ন ইলেকট্রিক পণ্য কেনাকাটায় বাড়তি মূল্য পরিশোধ।
  • বাড়তি বিল পরিশোধ দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ।
 রিমন রহমান, রাজশাহী
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাজারে এক কয়েল (এক আরএম) তারের দাম ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। রাজশাহীর নওহাটা পৌরসভা এই তার কিনেছে ১৬ হাজার ২০০ টাকায়। শুধু তা-ই নয়, বৈদ্যুতিক বাল্ব, ফ্লাডলাইট, হোল্ডার ও সার্কিট ব্রেকারের মতো ইলেকট্রিক পণ্য কেনাকাটায় বাড়তি মূল্য পরিশোধ দেখানোর অভিযোগ উঠেছে পৌরসভার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।

তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়ায় ১০ শতাংশ ভ্যাট ও ৫ শতাংশ আয়কর ধরা হয়। তাই দাম কিছুটা বেশি হয়। বাজারমূল্যের সঙ্গে বিলের পার্থক্য থাকা অস্বাভাবিক নয়।

জানা গেছে, গত জুলাই-আগস্টে মেসার্স রুমেল এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোটেশনে এসব মালামাল ক্রয় দেখানো হয়। প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা রাজশাহীর রাজপাড়া এলাকায়। তবে অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটিকে দেখিয়ে মালামাল সরবরাহ করেছেন পৌরসভার দুই কর্মকর্তা। তাঁরা বাড়তি বিল পরিশোধ দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। গত জুলাইয়ে মালামাল সরবরাহ দেখিয়ে আগস্টে পৌরসভায় বিল দাখিল করা হয়।

বিলের কাগজে দেখা গেছে, ৫০০ পিছ ১৫ ওয়াটের এলইডি বাল্ব কেনা হয়েছে ৩১৮ টাকা দরে, এই বাল্ব বাজারে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় পাওয়া যায়। তিন কয়েল (১ আরএম) তার কেনা হয়েছে ৪৮ হাজার ৬০০ টাকায়। প্রতি কয়েল তারের দাম পড়ে ১৬ হাজার ২০০ টাকা। অথচ বাজারে এই তার ২ হাজার ৬০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় পাওয়া যায়।

বিলে দেখা যায়, ১০০টি লাইট হোল্ডার কেনা হয়েছে প্রতিটি ২১০ টাকা দরে। স্থানীয় বাজারে এই হোল্ডার বিক্রি হয় ৭০ টাকায়। ১০০ ওয়াটের ১৩টি ফ্লাডলাইট কেনা হয়েছে ৩ হাজার ৬৪০ টাকা দরে। বাজারে এর দাম ৩ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। অভিযোগ রয়েছে, সরবরাহ করা হয়েছে ৫০ ওয়াটের ফ্লাডলাইট, কিন্তু বিল দেখানো হয়েছে ১০০ ওয়াটের হিসেবে।

স্থানীয় এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, এভাবে বছরের পর বছর পৌরসভায় কেনাকাটার নামে লুটপাট চলছে। এই ইলেকট্রিক পণ্য কেনাকাটা করেছেন দুই কর্মকর্তা। তাঁরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দেখালেও বাস্তবে নিজেরাই মালামাল কিনে সরবরাহ করেছেন। এ কারণে দামও বেশি দেখিয়েছেন।

অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তার একজন পৌরসভার উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম। জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, মালামাল সরবরাহ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। নিয়ম মেনেই দর দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে পৌরসভার প্রশাসক ও পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজ বলেন, কাজটি কোটেশনের মাধ্যমে হয়েছে, এটি দ্রুত ভিত্তিতে ক্রয়ের একটি সরকারি প্রক্রিয়া। বাড়তি মূল্য পরিশোধ করার সুযোগ নেই। এটি হয়েছে কি না খতিয়ে দেখা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভাসমান স্কুল: চলনবিল থেকে বিশ্বমঞ্চে

­­শাহীন রহমান, পাবনা
মোহাম্মদ রেজোয়ান
মোহাম্মদ রেজোয়ান

বাংলাদেশের স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ানের সৌরচালিত ভাসমান স্কুল উদ্যোগ ইউনেসকোর মর্যাদাপূর্ণ কনফুসিয়াস সাক্ষরতা পুরস্কার ২০২৫ পেয়েছে। শিক্ষায় নতুন উদ্ভাবন ও জীবনব্যাপী শিক্ষার প্রসারে এটি বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ সম্মান, যা চীনা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেওয়া হয়। গতকাল ‘সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা’ এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে শত শত মনোনয়নের মধ্যে ইউনেসকো তিনটি উদ্যোগকে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচন করেছে। সেগুলো হলো বাংলাদেশের সিধুলাই ভাসমান স্কুল, আয়ারল্যান্ডের লার্ন উইথ নালা ই-লার্নিং এবং মরক্কোর সেকেন্ড চান্স স্কুল অ্যান্ড ইনক্লুসিভ এডুকেশন প্রোগ্রাম। ২০তম পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানটি গত ২৭ সেপ্টেম্বর চীনের শানডং প্রদেশে কনফুসিয়াসের জন্মস্থান চুফু শহরে অনুষ্ঠিত হয়।

স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ানের সৌরচালিত ভাসমান স্কুল। ছবি: সংগৃহীত
স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ানের সৌরচালিত ভাসমান স্কুল। ছবি: সংগৃহীত

রেজোয়ান তাঁর প্রতিষ্ঠান সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থার পক্ষে ট্রফি ও সনদ গ্রহণ করেন। ছোটবেলায় তিনি চলনবিল এলাকায় বড় হয়েছেন, যেখানে প্রতিবছর বন্যায় স্কুল বন্ধ হয়ে যেত। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ২০০২ সালে তিনি উদ্ভাবন করেন এক অনন্য সমাধান। স্থানীয় নৌকাকে স্কুলে রূপান্তর, যা বিশ্বের সর্বপ্রথম ভাসমান স্কুল হিসেবে পরিচিত। আজও এসব সৌরচালিত নৌকা স্কুল, লাইব্রেরি ও প্রশিক্ষণকেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে, যা বর্ষায় পানিবেষ্টিত গ্রামগুলোতেও বছরজুড়ে শিক্ষা চালিয়ে যেতে সাহায্য করছে।

ইউনেসকো এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেছে, ‘বন্যাপ্রবণ অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্থানীয়ভাবে তৈরি উদ্ভাবনী উপায়ে সাক্ষরতা শিক্ষা পৌঁছে দেওয়াই এ ভাসমান স্কুলের সাফল্য।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সমন্বয়হীনতায় চালু হয়নি খুলনার শিশু হাসপাতাল

  • গণপূর্ত বলছে, কাজ শেষ এখন বুঝে নিতে পারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
  • স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এক পাশে প্রাচীর ও প্রধান ফটক নির্মাণ না হওয়ায় এটি অরক্ষিত।
  • ভবন নির্মাণকাজ শেষে বছর পেরিয়েছে, কেনা হয়নি আসবাব। নিয়োগ হয়নি জনবল।
  • সেবা থেকে বঞ্চিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার শিশু।
কাজী শামিম আহমেদ, খুলনা
খুলনায় বিভাগীয় শিশু হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণের এক বছরের বেশি সময় পার হলেও সেটি চালু হয়নি। ছবি: আজকের পত্রিকা
খুলনায় বিভাগীয় শিশু হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণের এক বছরের বেশি সময় পার হলেও সেটি চালু হয়নি। ছবি: আজকের পত্রিকা

বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত শিশুদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০০ শয্যাবিশিষ্ট খুলনায় বিভাগীয় শিশু হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রথম ধাপে হাসপাতাল ভবনের পঞ্চম তলা পর্যন্ত নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১১৪ কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুনে প্রথম ধাপের কাজও শেষ হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে এক বছরের বেশি সময় পার হলেও হাসপাতালটি চালু করা যায়নি। এতে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার শিশুরা।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথম ধাপের কাজ শেষ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ভবন হস্তান্তরের জন্য তিন দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাতে সাড়া দেয়নি তারা। ফলে ভবন নির্মাণ হলেও হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, কাগজ-কলমে প্রকল্প শেষ দেখানো হলেও হাসপাতাল এলাকার এক পাশে প্রাচীর ও প্রধান ফটক নির্মাণ করা হয়নি। এ কারণে হাসপাতাল ভবন ও স্থাপনা এলাকা অরক্ষিত থাকছে। আর হাসপাতালের কার্যক্রম শুরুর জন্য আসবাবপত্র ও জনবলের ব্যবস্থাও এখনো করা যায়নি।

খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ-জামান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার শিশুদের জন্য হাসপাতালটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণপূর্ত বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের যদি কোনো সমন্বয়হীনতা থাকে, তাহলে তার সমাধান করে দ্রুত হাসপাতালটি চালু করা দরকার।

গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রসারের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে খুলনা বিভাগীয় শিশু হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন মেলে। হাসপাতালটি নির্মাণে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) ময়ূরী আবাসিক এলাকার বিপরীতে সিটি বাইপাস সড়কের পাশে জমি চূড়ান্ত করা হয়। ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসন ৫২ কোটি ২ লাখ টাকায় ৪ দশমিক ৮০ একর জমি অধিগ্রহণ করে গণপূর্ত বিভাগের কাছে হস্তান্তর করে।

গণপূর্ত বিভাগ ২০২০ সালে প্রথম পর্যায়ে হাসপাতালের বেসমেন্ট ও একতলা ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্রে নির্বাচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রৈতি এন্টারপ্রাইজ ২০২০ সালের ১৪ মে কার্যাদেশ পায়। ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ের এ কাজের মেয়াদ ছিল ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত। দ্বিতীয় পর্যায়ে সংশোধিত প্রস্তাবে ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে হাসপাতাল ভবনের দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণের অনুমোদন মেলে। এতে রান্নাঘর, সাবস্টেশন, পাম্পহাউস, সীমানাপ্রাচীর, রাস্তা, নালা ও গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ কাজের মেয়াদ শেষ হয় ২০২৩ সালের জুনে। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের কোনো কাজই নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। বারবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জুনে কাগজ-কলমে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত দেখানো হয়। অন্যদিকে নতুন করে হাসপাতালটির ষষ্ঠ থেকে দশম তলার কাজ শুরু করার জন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে গণপূর্ত বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, ‘হাসপাতালটি নির্মাণে জমি অধিগ্রহণে দেরি হয়েছে। এ কারণে দরপত্র আহ্বানও বিলম্বিত হয়। কাজ শুরুর পর জমির প্রবেশপথ নিয়ে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জটিলতা দেখা দেওয়ায় বেশ কিছুদিন কাজ বন্ধ ছিল। প্রথম ধাপের পঞ্চম তলা পর্যন্ত কাজ শেষ করে জেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে ভবন হস্তান্তরের জন্য তিন দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে; কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি। ফলে ভবন নির্মাণ হলেও হস্তান্তর করা যাচ্ছে না।’

খুলনা সিভিল সার্জন মাহফুজা খাতুন চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘কাগজ-কলমে প্রকল্প শেষ দেখানো হলেও হাসপাতাল এলাকার এক পাশে প্রাচীর ও প্রধান ফটক নির্মাণ করা হয়নি। ফলে হাসপাতাল ভবন ও স্থাপনা এলাকা অরক্ষিতই থাকছে। হাসপাতালের কার্যক্রম শুরুর জন্য আসবাবপত্র ও জনবলের ব্যবস্থাও নেই। গণপূর্তসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

সীমানাপ্রাচীর ও প্রধান ফটক নির্মাণ প্রসঙ্গে গণপূর্ত বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, ‘প্রকল্পে পুরো বাউন্ডারি ওয়াল ও প্রধান ফটকের কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল না। তবে ভবনটি ছয়তলা থেকে দশতলা পর্যন্ত সম্প্রসারণসহ বাকি রাস্তা, বাউন্ডারি ওয়াল, নালা, প্রধান ফটক, নার্স ও স্টাফ কোয়ার্টার নির্মাণে ৯৮ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প গৃহীত হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত এসব কাজ শেষ করা হবে।’

এ বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মুজিবুর রহমান বলেন, সরকারি এ হাসপাতাল নির্মিত হলে শিশুদের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়বে। হাসপাতালকে আরও আধুনিক চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে নির্মাণকাজ দ্রুত সম্পন্ন হওয়া প্রয়োজন। তাহলে অন্য হাসপাতালগুলোরও চাপ কমবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গাইবান্ধায় পাট চাষ: লোকসানে চাষি, লাভে ফড়িয়া

  • মাসখানেক আগে ফড়িয়ারা কৃষকদের কাছ থেকে প্রতি মণ পাট কেনেন ২ হাজার ৫০০ টাকায়।
  • অধিকাংশ কৃষকের কাছে পাট না থাকলেও বাজারদর বেড়ে ৪২০০ টাকায় পৌঁছেছে।
  • ধারদেনা শোধের চাপে থাকা কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে পাট কিনে মুনাফা গুনছেন ফড়িয়ারা।
আনোয়ার হোসেন শামীম, গাইবান্ধা
বিক্রির জন্য চরাঞ্চল থেকে নৌকায় করে পাট নিয়ে আসেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি গাইবান্ধার পুরাতন ফুলছড়ি বাজারের একটি ঘাটে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিক্রির জন্য চরাঞ্চল থেকে নৌকায় করে পাট নিয়ে আসেন কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি গাইবান্ধার পুরাতন ফুলছড়ি বাজারের একটি ঘাটে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জমি বর্গা নিয়ে ও ধারদেনা করে পাট চাষ করেছিলেন কৃষকেরা। তাঁরা দেনা শোধ করার জন্য মাসখানেক আগে খেতের পাটগাছ কেটে সোনালি আঁশ বিক্রি করে দেন। সে সময় ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকা দরে কিনে নেন। এতে কৃষকদের আবাদ ও শ্রমিক খরচও ওঠেনি। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ কৃষকের কাছেই পাট নেই। অথচ প্রতি মণ পাটের দাম বেড়ে ৪ হাজার ২০০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ফলে কৃষকেরা লোকসানে থাকলেও লাভবান হচ্ছেন পাট মজুত করে রাখা মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা।

সম্প্রতি গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এবং পাটের বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে। কৃষকদের অভিযোগ, মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী চক্রের কারণে পাটচাষিরা লোকসানে পড়েন। মৌসুমের সময় তাঁরা কম দামে পাট কিনে এখন চড়া দামে কারখানায় বিক্রি করছেন। প্রতিবছর ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ায় কৃষকেরা পাট চাষ কমিয়ে দিয়েছেন। অনেকে পাটের আবাদই ছেড়ে দিয়েছেন।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ছয় বছর ধরেই পাটের আবাদ কমছে। যদিও গত বছরের তুলনায় এবার কিছুটা বেড়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে জেলায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। পরের বছর ২০২২ সালে তা নেমে আসে ১৪ হাজার ৩১৩ হেক্টরে। ২০২৩ সালে তা পরিবর্তিত ছিল। ২০২৪ সালে এসে আরও কমে দাঁড়ায় ১৩ হাজার ৭৯০ হেক্টর। সর্বশেষ ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৩২ হেক্টর জমিতে আবাদ বাড়লেও এখনো লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি কৃষি বিভাগ।

জেলার বিভিন্ন হাটে দেখা গেছে, প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৯০০ থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকায়; যা এক মাস আগেও ছিল ২ হাজার ৫০০ থেকে হাজার ৭০০ টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে দাম বেড়েছে মণপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে কৃষকদের কাছে পাটের মজুত নেই। এখন বেচাকেনা চলছে মধ্যস্বত্বভোগী ও বড় ব্যবসায়ীদের মধ্যে। ফলে পাটের মূল্য বাড়লেও তা কৃষকদের লাভে আসছে না। কারণ, অধিকাংশ কৃষক আগেই ধারদেনা শোধ করতে কম দামে পাট বিক্রি করে দেন।

কৃষকদের অভিযোগ, বাজারে পাটের দাম নির্ধারণ করেন পাটকলমালিক ও ফড়িয়া সিন্ডিকেট। মৌসুমের শুরুতে তাঁরা কম দামে পাট কিনে মজুত রাখেন। পরে বাজারে চাহিদা বাড়লে দাম বাড়িয়ে দেন। ফলে কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন।

গাইবান্ধার ফুলছড়ির চরাঞ্চলের কৃষক মতি মিয়া বলেন, ‘এখন পাটের দাম ভালো, কিন্তু আমাদের ঘরে তো পাট নাই। কাটার সময় বিক্রি করেছি ২ হাজার ৮০০ টাকায়। তখন বিক্রি না করলে ধারদেনা শোধ হতো না। যাঁরা সেই পাট কিনে মজুত করে রেখেছেন, এখন তাঁরাই লাভ করছেন।’

কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের কৃষক সোবাহান মিয়া বলেন, সার, বীজ, শ্রমিক—সবকিছুতেই খরচ বেশি। আবার ঝুঁকি নিতে হয় বন্যা-খরার। এত কষ্ট করে পাট চাষ করে লাভ হয় না।

একই গ্রামের নাজমুল হোসেন বলেন, ‘সরকার যদি মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকের কাছ থেকে পাট কিনত, তাহলে আমরা লোকসানে পড়তাম না। এখন তো আমরা শুধু সিন্ডিকেটের হাতে মরছি।’

ফুলছড়ি হাটের পাইকারি ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, ‘আমরা স্থানীয়ভাবে পাট কিনি, কিন্তু দাম ঠিক হয় ঢাকার মিলমালিকদের নির্দেশে। আমরা শুধু তাঁদের দেওয়া দামে বেচাকেনা করি।’

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আতিকুল ইসলাম দৈনিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে পাটের বাজার ভালো। পাট চাষে উৎসাহিত করতে এ বছর জেলায় দুই হাজার কৃষককে বিনা মূল্যে বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। তবে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পারলে কৃষকদের পাট চাষে আগ্রহ ফিরবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত