Ajker Patrika

শিকলে বাঁধা শিশু জুনায়েদের ‘জার্নি বাই প্লেন’

শেখ জাবেরুল ইসলাম, গোপালগঞ্জ
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১০: ২৩
শিকলে বাঁধা শিশু জুনায়েদের ‘জার্নি বাই প্লেন’

গোপালগঞ্জের পারইহাটি এখন সবারই চেনা গ্রাম। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন সেই গ্রামের দিকে ছুটছে, ইউটিউবার আর ভিডিওগ্রাফারদের ভিড় তো লেগেই আছে। সবাই আসছে এক শিশু ‘সুপারম্যান’কে দেখতে। জুনায়েদ মোল্লা নামের ১২ বছর বয়সী সেই শিশুর বাস সেই গ্রামে, যে পুরো বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে কড়ে আঙুল দেখিয়ে উঠে বসেছিল কুয়েতগামী উড়োজাহাজে।

কিন্তু জুনায়েদের বিধি বাম, স্বপ্নের উড়োজাহাজ ডানা মেলার আগেই তাকে ধরা পড়তে হয়। এরপর নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে নামিয়ে আনেন, সেখান থেকে থানায়।

তবে জাহাজে উড়তে না পারলেও তাতে বেশ লাভই হয়েছে তার। আগে বাড়িতে তাকে রাখা হতো পায়ে শিকল বেঁধে। এখন মানুষের আনাগোনায় পায়ের শিকল খুলে দিয়েছেন বাড়ির লোকেরা। ঘরের ভেতরের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েছে দ্বাদশবর্ষীয় দুরন্ত বালক। পুকুরে সাঁতার কাটছে, গোসল করছে, নৌকা নিয়ে বিলে ঘুরছে, খেলাধুলা করছে। এক নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে জুনায়েদ।

দেশের আর সব স্বাভাবিক শিশুর মতো এ রকমই শৈশব হওয়ার কথা ছিল জুনায়েদের, কিন্তু তার ভাগ্যের চাকা ঘোরেনি। ১৮ মাস বয়সে  ফেলে চলে যায় মা। এরপর থেকে নিজের মতো করে বড় হয় জুনায়েদ। আদর বলতে কী, তা তার ভাগ্যে জোটেনি।

জুনায়েদের গ্রামটি পড়েছে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে। বাবা ইমরান মোল্লা পাশের উজানী বাজারের সবজি বিক্রেতা। বাড়িতে জুনায়েদের সৎমা। সেই ঘরে আরও আছে এক ভাই, এক বোন।

ছোটবেলায় জুনায়েদকে বাড়ির পাশের খাঞ্জাপুর দারুল উলুম কারিয়ানা কওমি মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয়। সেখানে পড়ার সময় বেশ কয়েকটি অঘটন ঘটায়। এরপর মাদ্রাসা ছাড়তে হয়। পরে আরও কয়েকটি মাদ্রাসা বদল করে সে। এমন হতো যে দু-তিন মাস পরপর সে মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে যেত। সর্বশেষ মাস ছয়েক আগে উজানী আজিজিয়া দাখিল মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয় জুনায়েদকে। মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে বাড়ি আসার পর সেখানেও তাকে জেরার মুখে পড়তে হয়।

এরপর সে বাড়ি থেকে পালাতে শুরু করে। এভাবে কয়েকবার পালিয়ে যায়। একবার এসেছিল ঢাকায়, একবার মোংলা বন্দরে। পালিয়ে একবার রাজবাড়ী জেলায়ও চলে গিয়েছিল। সেখানে এক সরকারি কর্মকর্তার কাছে রাতে আশ্রয় নেয়। বিষয়টি জানতে পেরে জুনায়েদের বাবা ও চাচা সেখানে যান। কিন্তু তাঁরা আনতে গেলে সেই কর্মকর্তার কাছ থেকেও পালিয়ে যায় সে। প্রায় দুই ঘণ্টা খোঁজার পর পাওয়া যায়। এরপর রাজবাড়ী থেকে তাকে বাড়িতে আনা হয়।

এ বছরের শুরুর দিকে মাদ্রাসায় যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে ঢাকায় চলে আসে জুনায়েদ। সেখান থেকে দু-তিন দিন পর ফিরে আসে। বাড়িতে আসার পর তার চাচাতো ভাইয়ের টাকা চুরি করে আবার পালিয়ে যায়। পরে তাকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থেকে ধরে এনে ঘরের ভেতরে পায়ে বেড়ি পরিয়ে তালা দিয়ে রাখা হয়। কয়েক দিন পর জুনায়েদ তার দাদির কাছে কান্নাকাটি করে বলে, সে আবার মাদ্রাসায় যাবে, আবার পড়াশোনা করবে। দাদি তার কথা বিশ্বাস করে তালা খুলে দেন। এরপর সে আবার পালানোর ফন্দি আঁটে।

৯ সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে ১ হাজার টাকা চুরি করে একটি ইজিবাইকে করে জুনায়েদ আসে মুকসুদপুর উপজেলার ভাবরাসুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে। সেখানে তার দাদির বাড়ি। সেখানে দুই দিন থাকার পর ১১ সেপ্টেম্বর সকালে না খেয়ে, কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে পড়ে। প্রথমে যায় তার মায়ের কাছে আগদিয়া গ্রামে। মা তাকে বাড়ি ফিরে যেতে বলেন।

এরপর সে বের হয়ে ইজিবাইকে করে চলে আসে মুকসুদপুর কলেজ মোড়ের বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে ঢাকাগামী একটি বাসে উঠে পড়ে। বাসের সুপারভাইজার তাকে কোথায় যাবে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, ঢাকায় যাব। ভাড়া চাইলে জুনায়েদ বলে, সে গরিব, তার কাছে কোনো টাকা নেই। বিনা পয়সায় সে ঢাকার সায়েদাবাদে আসে। এরপর সেখান থেকে ফার্মগেটগামী একটি বাসে উঠে আসে পান্থপথে, বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে। সেখানেও আসে ভাড়া না দিয়ে। বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সে গিয়ে কিছু সময় ঘোরাঘুরি করে। একটি খাবারের দোকান থেকে হালিমও খায়। তবে টাকা দিতে হয়নি। এক লোক তার খাবারের টাকা দিয়ে দেন।

বসুন্ধরা থেকে বের হয়ে জুনায়েদ এয়ারপোর্টে যাওয়ার বাসে উঠে পড়ে। এয়ারপোর্টের সামনে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। প্রথমে বিমানবন্দরের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। সেখানে ঢুকতে ব্যর্থ হলে সে উল্টো পথে উঠে আসে। এরপর নানা কৌশলে উড়োজাহাজ পর্যন্ত চলে যায়।

উড়োজাহাজের সিটে বসে সুপারম্যানের সিনেমাও দেখে জুনায়েদ। প্রায় আধা ঘণ্টা থাকার পর এক ব্যক্তি এসে বলেন, ওটা তাঁর সিট। পরে উড়োজাহাজের ক্রুরা তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, ‘আমার সঙ্গে বাবা আছে।’ প্রথমে উড়োজাহাজের ভেতরে তার বাবাকে খোঁজা হয়। এরপর তাকে নামিয়ে আনা হয়। পরদিন সকালে এয়ারপোর্ট থানায় জুনায়েদকে হস্তান্তর করা হয়। এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

ফুটবলে নব্বইয়ের দশকের উন্মাদনা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি: আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পাবনায় ট্রাকচাপায় দুই শিক্ষার্থীসহ নিহত ৩

পাবনা প্রতিনিধি
পাবনায় ট্রাকচাপায় তিনজন নিহত হয়। রোববার সকালে পাবনা সদরের ডাঙ্গাবাড়িয়া এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
পাবনায় ট্রাকচাপায় তিনজন নিহত হয়। রোববার সকালে পাবনা সদরের ডাঙ্গাবাড়িয়া এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

‎পাবনায় বাঁশবোঝাই ট্রাকের চাপায় দুই স্কুলশিক্ষার্থীসহ তিনজন নিহত হয়েছে। এই ঘটনায় আরও দুজন গুরুতর আহত হয়েছে। ‎রোববার (২৬ অক্টোবর) সকাল ৭টার দিকে পাবনা সদর উপজেলার গয়েশপুর ইউনিয়নের বাঙ্গাবাড়িয়া এলাকায় ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। ‎নিহত ব্যক্তিরা হলো পাবনা কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী তাসমিয়া আক্তার, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র আবু তোহা ও ভ্যানের চালক আকরাম হোসেন।

‎মাধপুর হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ‎

‎‎জানা গেছে, সকাল ৭টার দিকে ৮-১০ জন শিক্ষার্থী ভ্যানগাড়িতে করে পাবনার জালালপুর এলাকার ক্যাডেট কলেজিয়েট স্কুল অ্যান্ড কলেজে যাওয়ার পথে ঢাকা থেকে পাবনাগামী একটি বাঁশবোঝাই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই দুই ছাত্র-ছাত্রী ও ভ্যানচালক নিহত হয়। এ সময় গুরুতর আহত হয়েছে আরও দুজন পথচারী। স্থানীয় বাসিন্দারা মাধপুর হাইওয়ে থানা-পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করে। ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। মহাসড়কে যান চলাচল সাময়িক বন্ধ রয়েছে।

ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ভ্যানের ড্রাইভারসহ তিনজন নিহত ও চায়ের দোকানে থাকা দুই ব্যক্তি আহত হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।‎

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

ফুটবলে নব্বইয়ের দশকের উন্মাদনা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি: আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সিরাজদিখানে ১৪৩ দিনে কোরআন মুখস্থ করল ৯ বছরের শিশু আরফান

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
মোহাম্মদ আরফান হোসাইন। ছবি: সংগৃহীত
মোহাম্মদ আরফান হোসাইন। ছবি: সংগৃহীত

অভূতপূর্ব এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কুচিয়ামোড়া গ্রামের ৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ আরফান হোসাইন। মাত্র ১৪৩ দিনে পুরো পবিত্র কোরআন মুখস্থ করে হাফেজ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে সে। আরফানের এই অসাধারণ সাফল্যে পরিবার, শিক্ষক ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আনন্দ ও গর্বের আবহ বিরাজ করছে।

আরফান বর্তমানে ইসলামপুর কামিল কওমি মাদ্রাসার ছাত্র। এর আগে সে কুচিয়ামোড়া দারুন্নাজাত মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করেছে। অল্প বয়সে এমন সাফল্য অর্জন করে স্থানীয়ভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

আরফান কেয়াইন ইউনিয়নের কুচিয়ামোড়া গ্রামের বিশিষ্ট আলেম ও শিক্ষক হাফেজ আব্দুল্লাহ আল মাসরুরের (লাভু হুজুর) ছেলে। লাভু হুজুর বর্তমানে কুচিয়ামোড়া দারুন্নাজাত মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ এবং কুচিয়ামোড়া মিত্রপাড়া বাইতুন নূর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিন ভাইবোনের মধ্যে আরফান সবার ছোট। মাত্র ১৪৩ দিনে সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্থ করে সে তার পরিবারসহ পুরো এলাকাকে গর্বিত করেছে।

ইসলামপুর কামিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক ফখরুদ্দীন রাজি বলেন, ‘আরফান আমাদের মাদ্রাসার গর্ব। ১৪৩ দিনে কোরআন মুখস্থ করা আমাদের মাদ্রাসার ইতিহাসে এই প্রথম। এটি এক বিরল দৃষ্টান্ত। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

ফুটবলে নব্বইয়ের দশকের উন্মাদনা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি: আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাবিতে ঘাস কাটার মেশিন ভেঙে যুবকের মাথায় ঢুকল ব্লেড

জাবি প্রতিনিধি 
হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে আহত যুবককে। ছবি: আজকের পত্রিকা
হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে আহত যুবককে। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ঘাস কাটার যন্ত্র (মেশিন) ভেঙে ব্লেড ছিটকে মাথায় ঢুকে সুমন মিয়া (২৬) নামের এক যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন। তিনি সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা এবং জাবি স্পোর্টস ক্লাব আয়োজিত তিন দিনব্যাপী নাইট ফুটবল টুর্নামেন্ট উপলক্ষে বরাদ্দ স্টলে কাঁকড়া ফ্রাই বিক্রি করতেন।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। ঘটনার পরপরই তাঁকে প্রথমে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও সংশ্লিষ্ট একাধিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২৩ অক্টোবর থেকে জাবি স্পোর্টস ক্লাবের ব্যবস্থাপনায় তিন দিনব্যাপী নাইট ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হয়। শনিবার ছিল খেলার শেষ দিন। টুর্নামেন্টে ক্লাবের সভাপতি আরশাদ হাবিব বিশালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এক বন্ধু একটি স্টল বরাদ্দ নেন, যেখানে সুমন মিয়া ও জাবির এক হোটেল কর্মচারী কাজ করতেন।

এদিকে বিশালের অনুরোধে অনানুষ্ঠানিকভাবে মাঠ প্রস্তুতের কাজ করতেন শারীরিক শিক্ষা অফিসের কর্মচারী আবুল হোসেন। গতকাল শেষ দিন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে এসে মাঠ প্রস্তুতের কাজ শেষে হাতে সময় থাকায় মেশিন দিয়ে ঘাস কাটা শুরু করেন তিনি। ঘাস কাটার সময় মেশিনের ব্লেড মাটিতে থাকা একটি ইটে লেগে ভেঙে যায়। ব্লেডের সেই অংশ ছিটকে গিয়ে পাশের স্টলে দাঁড়িয়ে থাকা সুমন মিয়ার মাথায় ঢোকে।

সুমন মিয়ার পাশের স্টলে পিঠার দোকান ছিল নাদিয়া মীম নামের সিটি ইউনিভার্সিটির সাবেক এক শিক্ষার্থীর। নাদিয়া বলেন, সুমন স্টলে দাঁড়ানো অবস্থায় ব্লেড ছিটকে এসে লাগার সঙ্গে সঙ্গে ঢলে পড়ে যান। প্রথমে ভয়ে কেউ তাকে উঠায়নি। পরে বিশাল এসে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য মোটরসাইকেলে উঠিয়ে দেন।

কর্মচারী আবুল হোসেন বলেন, ‘হাতে একটু সময় থাকায় ঘাস কাটছিলাম। মেশিনে ইট লেগে এত বড় দুর্ঘটনা ঘটবে, এটা ভাবতে পারছি না।’

শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক নাসরিন বেগম বলেন, ‘আজ ছুটির দিন থাকায় আমি অফিসে ছিলাম না। আমাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীরাও ছুটিতে ছিল। তবে জাবি স্পোর্টস ক্লাবের নাইট ফুটবল টুর্নামেন্ট চলমান থাকায় তিনি সেখানে ছিলেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত আহত ব্যক্তিকে এনাম মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাই। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। রাত ১টার দিকে তার অপারেশন শুরু হয়।’

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আহত সুমনের মাথায় অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। তবে তিনি আশঙ্কামুক্ত নন। ৭২ ঘণ্টা অবজারভেশনে থাকবেন তিনি। নিবিড় পরিচর্যার পরামর্শ থাকলেও এখন পর্যন্ত তার ব্যবস্থা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

ফুটবলে নব্বইয়ের দশকের উন্মাদনা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি: আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি টেকনাফের বসতবাড়ি ও দোকানে, নারী আহত

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি 
মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি ও ছিদ্র হয়ে যাওয়া টেকনাফের একটি ঘরের বেড়া। ছবি: আজকের পত্রিকা
মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলি ও ছিদ্র হয়ে যাওয়া টেকনাফের একটি ঘরের বেড়া। ছবি: আজকের পত্রিকা

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষের জেরে ছোড়া গুলি বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় এসে পড়েছে। এই ঘটনায় কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের তেচ্ছি ব্রিজ সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় এক নারী গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন। এ ছাড়া গুলিতে একটি বসতবাড়ি ও একটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল ৫টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। আহত নারীর নাম ছেনুয়ারা (২৭)। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার বিকেলের দিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ভয়াবহ গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। কিছু সময় পর ওপার থেকে ছোড়া দুটি গুলি বাংলাদেশ সীমান্তের তেচ্ছি ব্রিজ এলাকার একটি বসতবাড়ি ও কম্পিউটারের দোকানে এসে লাগে। এতে ঘরের টিন ও দেয়াল ছিদ্র হয়ে যায়।

ঘটনার পর সীমান্ত এলাকায় চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় অনেক পরিবার শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে।

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, ‘মিয়ানমারের দিক থেকে ছোড়া গুলি এপারে এসে পড়ায় একজন নারী আহত হয়েছেন। সীমান্তের মানুষ এখন চরম আতঙ্কে রয়েছে। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

নুর আহমেদ আনোয়ারী আরও বলেন, যদি দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে সীমান্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোটের ভোটেও দলীয় প্রতীক: বিএনপির আপত্তি যে কারণে, এনসিপির উদ্বেগ

বড়াইগ্রামের একটি গুদামে ১৩ টন গুলির খোসা নিয়ে চাঞ্চল্য

মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জেরে বাবার হাতে খুন হলো নিষ্পাপ দুই শিশু

আবারও পুরান ঢাকায় প্রেমিকার বাসার সিঁড়িতে প্রেমিকের লাশ

ফুটবলে নব্বইয়ের দশকের উন্মাদনা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি: আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত