Ajker Patrika

কালীগঞ্জের নয়াবাজার এখন পুরোনো আসবাবের প্রাণকেন্দ্র

মো. রিয়াদ হোসাইন, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) 
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমুলিয়া ইউনিয়নের নয়াবাজার এখন জমজমাট পুরোনো কাঠের আসবাবপত্রে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমুলিয়া ইউনিয়নের নয়াবাজার এখন জমজমাট পুরোনো কাঠের আসবাবপত্রে। ছবি: আজকের পত্রিকা

একসময় যেখানে সাপ্তাহিক কাঁচাবাজার বসত, সেই গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমুলিয়া ইউনিয়নের নয়াবাজার এখন জমজমাট পুরোনো কাঠের আসবাবপত্রের বাজারে রূপ নিয়েছে। দরজা, জানালা, খাট, চৌকাঠ, এমনকি পুরোনো টিন পর্যন্ত মিলছে এখানে। প্রতিদিন হাজার হাজার টাকার লেনদেনে এই বাজার হয়ে উঠেছে একটি সম্ভাবনাময় অর্থনৈতিক কেন্দ্র।

একটা সময় ছিল, যখন প্রতি রোববার স্থানীয় কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে এই বাজারে বসতেন। সময়ের সাথে সাথে সেই দৃশ্যপট বদলেছে। এখন সপ্তাহে সাত দিনই খোলা থাকে নয়াবাজার। বড় বড় দোকানপাটের ভিড়ে বাজারের চরিত্র বদলালেও সাধারণ মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর স্থান হিসেবে এর গুরুত্ব কমেনি। বরং, পুরোনো আসবাবপত্রের বাজার গড়ে ওঠায় এর পরিধি ও পরিচিতি দুই-ই বেড়েছে বহুগুণ।

ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নয়াবাজারে গড়ে উঠেছে ৫০টিরও বেশি পুরোনো আসবাবপত্রের দোকান। এখানে কী নেই! পুরোনো দরজা, জানালা, চৌকাঠ, জানালার গ্রিল, চেয়ার, টেবিল, সিমেন্টের পাল্লা, এমনকি পুরোনো টিন পর্যন্ত পাওয়া যায়। মূলত নতুন পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় পুরোনো জিনিসের দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই। আর এই চাহিদাকেই পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলেছেন তাঁদের এই বিশাল আয়োজন। শুধু গাজীপুর জেলাই নয়, আশপাশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকেও ক্রেতারা আসছেন এখানে, কম দামে ভালো মানের আসবাবপত্র খুঁজে নিতে।

এই বাজারের একজন পথিকৃৎ ব্যবসায়ী মেজবাহ উদ্দীন। তাঁর হাত ধরেই এখানকার পুরোনো আসবাবের ব্যবসার গোড়াপত্তন। তিনি বলেন, ‘আমিই এই বাজারের সবচেয়ে পুরোনো আসবাব ব্যবসায়ী। প্রথমে শুধু দরজা দিয়ে শুরু করেছিলাম। ক্রেতাদের বিশ্বাস ও সন্তুষ্টি অর্জন করার পর ব্যবসার পরিধি বাড়ানোর প্রয়োজন অনুভব করি। এখন আমার দোকানের পাশাপাশি গ্রাহকের সংখ্যাও দিনে দিনে বাড়ছে।’ তার এই সাফল্যের গল্প বাজারের অন্য ব্যবসায়ীদের জন্যও অনুপ্রেরণা।

ব্যবসায়ী মাহতাব দেওয়ান বলেন, ‘শুরুতে অনেকে বলত, এসব কে কিনবে? কিন্তু এখন নতুন পণ্যের চড়া দামের কারণে মানুষ পুরোনো জিনিসেই ভরসা রাখছে। ভালো মান আর কম দাম—এটাই আমাদের মূল আকর্ষণ।’

নরসিংদীর পলাশ থেকে আসা ৭০ বছরের হাসমত আলী বলেন, ‘ছেলেরা ঘর তুলে দিয়েছে, কিন্তু আসবাব কেনার সামর্থ্য ছিল না। এখানে এসে ভালো দরজা-জানালা কিনতে পারলাম কম দামে।’

ক্রেতা শামসুল ইসলাম বলেন, ‘পুরোনো দরজা-জানালার সঙ্গে সঙ্গে একটি নতুন ডাইনিং টেবিলও কিনেছি। এত কম দামে ঘর সাজাতে পারব, ভাবিনি।’

পুরোনোর পাশাপাশি নতুনের চাহিদাও রয়েছে। বাজারে এখন আধুনিক যন্ত্রপাতি সংবলিত নতুন ফার্নিচারের দোকানও গড়ে উঠছে। এসব দোকানে ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী ডিজাইন করে আসবাব তৈরি করা হয়। এতে কাঠশিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগর ও ব্যবসায়ীরাও লাভবান হচ্ছেন।

গাজীপুরের কালীগঞ্জের তুমুলিয়া ইউনিয়নের নয়াবাজার এখন শুধু একটি হাট নয়, এটি সাশ্রয়ী দামে গৃহসজ্জার স্বপ্নপূরণের ঠিকানা। প্রতিদিনের কর্মচাঞ্চল্য আর ক্রেতা-বিক্রেতার ব্যস্ততায় মুখর এই বাজার যেন বলে দেয়—পুরোনো মানেই ফেলনা নয় বরং পুরোনোতেই লুকিয়ে থাকে নতুন সম্ভাবনার বীজ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নারায়ণগঞ্জে এক বাসায় বিস্ফোরণ, শিশুসহ দগ্ধ ৪

ঢামেক প্রতিবেদক
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

আগারগাঁওয়ে সরকারি কোয়ার্টারে গ্যাস বিস্ফোরণের পর এবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকার একটি বাসায় বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। এ বিস্ফোরণে একই পরিবারের চারজন দগ্ধ হয়েছেন। তাদের জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, গ্যাসের চুলা থেকে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

আজ শনিবার (৬ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে সোনারগাঁওয়ের পাটাত্তা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। দগ্ধরা হলেন, আলাউদ্দিন (৩৫), তাঁর দুই মেয়ে শিফা আক্তার (১৪) ও সিমলা আক্তার (৪) এবং আলাউদ্দিনের মা জরিনা বেগম (৬৫)।

দগ্ধ আলাউদ্দিনের বোন সালমা আক্তার জানান, তাঁর মা, ভাই ও ভাইয়ের দুই মেয়ে ওই বাসার নিচতলায় ভাড়া থাকে। ভোরে তাঁর ভাই আলাউদ্দিন ওয়াশরুমে যায়। এ সময় তাদের রান্না ঘরে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। তাঁর ভাই রুমে ঢুকতেই আগুনে ঝলসে যায়। এ সময় ঘরে থাকা তিনজন দগ্ধ হয়। পরে তাঁদের চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে উদ্ধার করে বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসে।

সালমা আরও বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, রান্না ঘরে গ্যাসের চুলা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানান, সকালে নারায়ণগঞ্জের একটি বাসায় গ্যাসের চুলার আগুন থেকে ৪ জন দগ্ধ হয়ে বার্ন ইনস্টিটিউটে এসেছে। এদের মধ্যে আলাউদ্দিনের ৪০ শতাংশ, শিফার ১২ শতাংশ, শিমলার ৩০ শতাংশ ও জরিনা বেগমের ২০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। চারজনকে ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাগুরায় পেট্রলবোমা হামলায় দুই সরকারি অফিসে অগ্নিকাণ্ড

মাগুরা প্রতিনিধি 
মাগুরা সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় ও সরকারি সাবরেজিস্ট্রার অফিসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাগুরা সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় ও সরকারি সাবরেজিস্ট্রার অফিসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাগুরায় আলাদা স্থানে পেট্রলবোমা হামলায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্ত দপ্তর দুটি হলো মাগুরা সদর উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় ও সরকারি সাবরেজিস্ট্রার অফিস। শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীরা পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে আগুন লাগিয়ে দেয়।

সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসমা আক্তার বলেন, রাতের আঁধারে দুষ্কৃতকারীরা অফিসের পেছনের জানালা ভেঙে ভেতরে পেট্রলবোমা ছোড়ে। এতে নিচতলায় থাকা কম্পিউটার, আসবাবসহ জমি-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল ও নথিপত্র পুড়ে যায়।

অন্যদিকে শহরের ইসলামপুর পাড়ার সাবরেজিস্ট্রার অফিসেও একইভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সাবরেজিস্ট্রার শুভ্রা রানী দাস বলেন, পেট্রলবোমায় রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে দলিল লেখকদের ঘর এবং নিচতলা পুড়ে গেছে। এতে জমি-সংক্রান্ত দলিল, প্রয়োজনীয় নথি ও দলিল লেখকদের কাগজপত্র ছাই হয়ে গেছে।

মাগুরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন লিডার মো. আলিম মোল্লা বলেন, শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে পরপর দুটি স্থানে অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে তাঁরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করেই আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‎টঙ্গীতে ছিনতাকারীর ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত

টঙ্গী (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গাজীপুরের টঙ্গীতে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে এক যুবক নিহত হয়েছেন। শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল পৌনে ৮টার দিকে বিআরটি প্রকল্পের উড়ালসেতুর বাটাগেট এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

‎নিহত ব্যক্তির নাম সিদ্দিকুর রহমান (৫৭)। তিনি বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ থানার মৃত ইসমাইল ফকিরের ছেলে। সিদ্দিক টঙ্গীর মধুমিতা এলাকার একটি ভাড়া বাসায় পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে বসবাস করতেন।

‎‎থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠিয়েছেন।

‎‎স্থানীয় বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, সিদ্দিকুর রহমান ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকায় বিদ্যুৎ বিভাগে চাকরি করতেন। শনিবার সকালে অফিসে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হন তিনি। সিদ্দিকুর বিআরটি প্রকল্পের উড়ালসেতুর ওপর বাসের অপেক্ষায় ছিলেন। এ সময় কয়েকজন ছিনতাইকারী তাঁর কাছে থাকা নগদ টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তারা তাঁকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

‎ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। ‎‎টঙ্গী পূর্ব থানা-পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আতিকুর রহমান বলেন, এই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে বাবা-ছেলে আটক

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
গতকাল রাতে উত্তেজিত জনতা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বাড়ি ঘেরাও করে। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল রাতে উত্তেজিত জনতা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বাড়ি ঘেরাও করে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মুন্সিগঞ্জ শহরের গণকপাড়া রাঢ়ীবাড়ি এলাকায় বাবা-ছেলেকে আটক করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত ১১টার দিকে পুলিশ ও যৌথ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে এই দুজনকে আটক করে। আটক ব্যক্তিরা হলেন ওই এলাকার মো. শফিউল বাসার হাসিব (৪০) ও তাঁর বাবা

মো. রবিউল আউয়াল জসিম ওরফে খোকন (৬৫)।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ৩ ডিসেম্বর রাত পৌনে ৩টার দিকে মো. শফিউল বাসার হাসিব নিজ বসতঘরে কোরআন শরিফে আগুন দেন। ঘটনাটি তাঁর ফুফু হোসনেয়ারা হাসনাত (৫৬) প্রত্যক্ষ করেন। পরে সকালে হাসিবের বাবা মো. রবিউল আউয়াল জসিম কোরআন শরিফের পোড়া পৃষ্ঠা ও ছাই পাশের ডোবায় ফেলে দেন।

ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শুক্রবার রাতে মুসল্লি ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। রাতেই উত্তেজিত জনতা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বাড়ি ঘেরাও করলে পরিস্থিতি চরমে ওঠে। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাসদস্যরা যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করে হেফাজতে নেন।

সদর থানার ওসি এম সাইফুল আলম বলেন, হোসনেয়ারা হাসনাতের অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও দাঙ্গা সৃষ্টির অভিযোগে মুন্সিগঞ্জ থানায় মামলা হয়েছে। আটক দুই আসামিকে শনিবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।

সাইফুল আলম জানান, বর্তমানে এলাকায় পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে এবং নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত