Ajker Patrika

পৌরসভার রাজস্বের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ মেয়র আনিছের

  • জেলা আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় মেয়র আনিছুর রহমানের ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য
  • সরকার পতনের পর আত্মগোপনে। বের হয়ে আসছে দুর্নীতির খতিয়ান
  • আগের অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে পৌরসভার অনেকে জড়িত। এসব প্রতিকারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন: ইউএনও
গাজীপুর প্রতিনিধি
আনিছুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
আনিছুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভা গঠিত হয়েছে ২০০০ সালে। সেই সময় থেকে টানা মেয়র ছিলেন আনিছুর রহমান। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি চলে গেছেন অজ্ঞাতবাসে। এখন খোঁজ নিয়ে দেখা যাচ্ছে, পৌরসভার রাজস্বের কোটি কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজের পকেটে ভরেছেন তিনি। বার্ষিক অডিট প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

৪৬ দশমিক ৯৭ বর্গকিমির শ্রীপুর পৌরসভা ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। বর্তমানে এর জনসংখ্যা ৯২ হাজার ৬৮৩ জন। পৌরসভাটি কাগজ-কলমে প্রথম শ্রেণির। শিল্পকারখানাসমৃদ্ধ পৌরসভাটির রাজস্ব আয় গড়ে প্রতিবছর ৫০ কোটি টাকার বেশি। এই পৌরসভার মেয়র ছিলেন আনিছ। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার সুবাদে মেয়র আনিছ পৌরসভায় ছিলেন একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিপতি। দলীয় ক্ষমতার কারণে সরকারি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেননি। প্রতিবছর পৌরসভার হাট-বাজার ইজারার ভ্যাট, আয়কর ও জামানত বাবদ আদায় করা টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে রাজস্ব আত্মসাৎ করেছেন। বিভিন্ন অর্থবছরের অডিট প্রতিবেদনে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।

সর্বশেষ শ্রীপুর পৌরসভার ২০২২-২৩ অর্থবছরের অডিটেও রাজস্ব খাতের প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে আত্মসাতের চিত্র উঠে এসেছে। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন অধিদপ্তরের অডিটের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, হাট-বাজারে ইজারাসংক্রান্ত নথি, আদায় রেজিস্টার, ক্যাশ বই, রসিদ বই ইত্যাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, হাট-বাজারের ইজারার বিপরীত আদায়কৃত মোট আয় থেকে সরকারি বিধি অনুযায়ী কেটে রাখা আয়কর, ভ্যাট বাবদ প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়নি।

এ বিষয়ে শ্রীপুর পৌর সচেতন নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমরা বহু বছর ধরে পৌরসভার নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে আসছি। অনিয়মের কারণে পৌরবাসী নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কোথাও উন্নয়ন হচ্ছে না। আমরা প্রত্যাশা করি, যারা এসব অনিয়ম দুর্নীতিতে যুক্ত, তাদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।’

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের হাট-বাজার ইজারার প্রাপ্ত অর্থ থেকে আদায়কৃত ভ্যাট সরকারি কোষাগারে জমা না করায় ৬ লাখ ৭৬ হাজার ২০০ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। একই খাতের মোট মূল্যের বিপরীতে ১০ শতাংশ হারে আদায়কৃত আয়কর সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে সরকারের সাড়ে ৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

অডিট প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার বিভাগের ২০১১ সালে জারিকৃত ৮৭০ নম্বর পরিপত্র অনুযায়ী, হাট-বাজার ইজারা থেকে প্রাপ্ত অর্থের ৫ শতাংশ সেলামিস্বরূপ আদায়ের টাকা অদ্যাবধি জমা না করায় সরকারের প্রায় সোয়া ২ লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। একই খাতের বিধান অমান্য করে হাট-বাজার ইজারা থেকে প্রাপ্ত অর্থের ৪ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ তহবিলে জমা না করায় আর্থিক ক্ষতি ৪ লাখ টাকার বেশি। একই অর্থবছরে পৌরসভা কর্তৃক বিভিন্ন বিল প্রদানের সময় ভ্যাট কর্তন করা হয়েছে। তবে তা সরকারি কোষাগারে জমা হয়নি। এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে ৫ লাখ টাকার বেশি।

অপর দুটি অডিট আপত্তিতে বলা হয়েছে, পূর্ত কাজের নথি রেজিস্টার, পরিশোধিত বিল, ভাউচার ও অন্যান্য রেকর্ড পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঠিকাদারদের বিল থেকে নির্দেশনা মেনে সরকারিভাবে ভ্যাট কর্তন করা হয়েছে। কিন্তু নির্দেশনা মেনে ঠিকাদারদের বিল থেকে কর্তনকৃত মূসক সরকারি কোষাগারে জমা না করায় সরকারের প্রায় ১৮ লাখ টাকা এবং অপর একটি আপত্তিতে প্রদত্ত বিভিন্ন বিলের বিপরীতে কেটে রাখা ভ্যাট জমা না করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৭ লাখ টাকা। এ ছাড়া ২০১৯-২০২০ ও ২০২২-২৩ অর্থবছর মিলিয়ে এমন আরও দুই কোটি টাকা আত্মসাতের তথ্য পাওয়া গেছে অডিটে।

মেয়রের সহযোগী বহাল তবিয়তে

২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের টাকা পৌর তহবিলে জমা না দিয়ে ১ কোটি ৬০ লাখ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। মেয়রের যোগসাজশ থাকায় তিনি বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে বাধ্য হয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। সেই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে পৌরসভার কর আদায়কারী শফিউল আলম রায়হান ১ কোটি ৬ লাখ, সহকারী কর আদায়কারী ফাহিমা সানজিদ ৫২ লাখ টাকা এবং জান্নাতুল ফেরদৌস ২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। তদন্ত কমিটি এ ঘটনায় বিভাগীয় মামলার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু মেয়রের কারণে পরে শুধু শফিউল রায়হান বরখাস্ত হলেও অপর দুই সহযোগী ফাহিমা ও জান্নাতুল ফেরদৌস এখনো বহাল তবিয়তে আছেন।

অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে শ্রীপুর পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হাসান বলেন, ফাহিমা সানজিদ ও জান্নাতুল ফেরদৌস টাকা ফেরত দিয়েছেন। তাঁদের বিষয়টি নিষ্পত্তি হওয়ায় তাঁরা চাকরিতে বহাল আছেন। আর শফিউল আলম রায়হান পলাতক।

এসব দুর্নীতি প্রসঙ্গে শ্রীপুর পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সজিব আহমেদ বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর পৌরসভার অনিয়ম দূর করা চেষ্টা করছি। সব সেবা ডিজিটাল করার চেষ্টা হচ্ছে। আগের অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে পৌরসভার অনেকে জড়িত। এসব প্রতিকারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদির ওপর হামলাকারীরা সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছে কি না—তা শতভাগ নিশ্চিত নয় বিজিবি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা

বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ঢাকায় শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলি বর্ষণকারী ব্যক্তিরা ময়মনসিংহ সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে পালিয়েছে কি না—তা এখনো শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

সোমবার ময়মনসিংহ নগরীর খাগডহর বিজিবি ক্যাম্পে তিনি আরও জানান, শুক্রবার ৯টার মধ্যে বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশনায় সম্ভাব্য পাচারের রুটগুলো চিহ্নিত করে টহল এবং চেকপোস্ট বসানো হয় সীমান্তের অধিকাংশ স্থানে। পরদিন অর্থাৎ শনিবারে পুলিশ এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। ঢাকা থেকে আগত পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বিজিবি ময়মনসিংহ সেক্টর কমান্ডারের নিয়মিত যোগাযোগ এবং অপারেশন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আলোচনায় দুটি স্থানে একসঙ্গে অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। সন্দেহভাজন হিসেবে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে অবস্থানরত ফিলিপ স্নালকে আটকের পরিকল্পনা করা হয়। পুলিশের আরেকটি টিম হালুয়াঘাট এলাকায় অপারেশনের প্ল্যান করে। হালুয়াঘাটে অপারেশনের বিষয়ে বিজিবির সোর্স এবং অন্যান্য বিষয়ে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করেছে। অপর দিকে নালিতাবাড়ীর বারোমারি এলাকায় অপারেশন পরিচালিত হয় বিজিবির নেতৃত্বে এবং ঢাকা হতে আগত ও হালুয়াঘাট থানার পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে। কিন্তু ফিলিপকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী ডেলটা চিরান, শ্বশুর ইয়ারসন রংডি এবং মানব পাচারকারী লুইস লেংমিঞ্জাকে আটক করা হয়। তাদের বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেলও উদ্ধার করা হয়।’

তাঁদের পরিবারের তিনজনসহ এ পর্যন্ত বিজিবি চারজনকে আটক করেছে। এঁদের মধ্যে সোমবার সকালে মানব পাচারকারী বেঞ্জামিন চিরামকে আটক করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরগুনায় স্বামীকে গলা টিপে হত্যা, স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিক আটক

বরগুনা প্রতিনিধি
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত

বরগুনার বামনা উপজেলায় পরকীয়া প্রেমের জেরে এক প্রবাসফেরত স্বামীকে গলা টিপে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আব্দুল জলিল (৪৫)। তিনি উপজেলার রামনা ইউনিয়নের ঘোপখালী গ্রামের বাসিন্দা।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫) ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিক আলামিনকে (৩০) আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুজনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে আব্দুল জলিলের নিজ বাড়িতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর ধরে একই এলাকার আবু খতিবের ছেলে আলামিন নিহতের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে নাজমা বেগমের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় ১৫ দিন আগে প্রবাস থেকে বাড়িতে ফিরে স্ত্রীর সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন আব্দুল জলিল।

অভিযোগ রয়েছে, রোববার বিকেলে স্ত্রী ও ওই গৃহকর্মী মিলে ঘুমন্ত অবস্থায় আব্দুল জলিলকে গলা টিপে হত্যা করেন।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে বামনা থানায় নিয়ে যায়। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের স্ত্রী ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিককে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা দুজনই হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলা দায়েরের পর আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মহান বিজয় দিবসে মেট্রোরেল সাময়িক বন্ধ থাকবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আগামী ১৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) মেট্রোরেল চলাচল সাময়িক বন্ধ থাকবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় প্যারাজাম্প অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে প্যারাট্রুপারদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ডিএমটিসিএল ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছে, আগামী ১৬ ডিসেম্বর দুপুর ১১টা ৫০ মিনিট হতে ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত, অর্থাৎ মোট ৪০ মিনিটের জন্য মেট্রোরেল চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।

ডিএমটিসিএল সাময়িক অসুবিধার জন্য যাত্রীসাধারণের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। যাত্রীদের এই সময়সূচি মেনে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয়মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত

বাসায় আটকে রেখে ইডেন কলেজের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গায়ক নোবেলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর ডেমরা থানার উপপরিদর্শক এসআই মুরাদ হোসেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) ইলামনি আজ সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আগামী ২৮ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্রটি উপস্থাপন করা হবে। পরে এ সংক্রান্ত মামলা বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে।

নোবেলের আইনজীবী মোসতাক আহমেদ জানান, এই ধর্ষণ মামলার বাদীকে বিয়ে করেছেন নোবেল। তাঁরা সংসার করছেন।

গত ১৯ মে নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন ইডেন কলেজের ওই ছাত্রী। নোবেলকে গ্রেপ্তার করার পর কারাগারে পাঠানো হলে বিয়ের শর্তে তিনি জামিন পান। ১৯ জুন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বসে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে নোবেল ওই ছাত্রীকে বিয়ে করেন।

এই মামলায় অভিযোগ করা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ছাত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় নোবেলের। এরপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নোবেল তাঁর স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ছাত্রীকে ডেমরার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে আটকে রাখেন, মোবাইল ফোন ও টাকা কেড়ে নেন। এরপর ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করেন। কথামতো না চললে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ও দেখান।

অভিযোগে বলা হয়, ওই তরুণীকে ছয় মাস ধরে ডেমরার ওই বাসায় আটকে রাখা হয়, মারধর করা হতো প্রায়ই। দু-তিন জনের সহায়তায় বাদীকে চুল ধরে টেনেহিঁচড়ে একটি কক্ষে আটকে রাখেন নোবেল। ওই ঘটনার ভিডিও ছড়ালে বাদীর বাবা-মা তাঁকে চিনতে পারেন। এরপর পরিবার পুলিশের সহায়তায় তাঁকে ১৯ মে উদ্ধার করে এবং পুলিশ নোবেলকে গ্রেপ্তার করে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নোবেল বাদীকে আটক রেখে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে রাখেন। বাসায় না থাকলে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। নোবেল নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে তাঁকে মারপিট করেছেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, বাদীর অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামি নোবেল জামিনে আছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে আরও বলেছেন, বাদীকে মারধর ও ধর্ষণে আসামিকে আরও কয়েকজন সহযোগিতা করেছেন। তবে তাঁদের নাম-ঠিকানা উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে তাঁদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা সম্ভব হলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

এখন কী হবে:

নোবেলের আইনজীবী বলেছেন, নোবেল মামলার বাদীকে বিয়ে করে সংসার করছেন। তাই এই অভিযোগপত্রে নোবেলের কোনো সমস্যা হবে না। বিচারিক ট্রাইব্যুনালে বাদী আপসনামা দেওয়ার পর মামলা নিষ্পত্তি হবে। খালাস পাবেন নোবেল।

উল্লেখ্য, ভারতের সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান ‘সা রে গা মা’ দিয়ে পরিচিতি পান এই গায়ক। এর আগে মাদকে আসক্ত হয়ে সংগীত ছেড়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও শ্রোতাদের সামনে হাজির হন। সেবার নোবেল জানিয়েছিলেন, তিনি আর কখনো দর্শকদের হতাশ করবেন না। সব অতীত পেছনে ফেলে নিয়মিত গান উপহার দেবেন।

কিন্তু ২০২৩ সালে অগ্রিম টাকা নিয়ে গান গাইতে না যাওয়ায় প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল থানায় নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়। জানা যায়, ওই বছর ১৬ মে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ২০১৬-এর অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়ার প্রতারণায় অভিযোগে আটক হয়েছিলেন। সে সময় একদিন রিমান্ডেও ছিলেন এই গায়ক। পরে আপসের মাধ্যমে ওই মামলা থেকে অব্যাহতিও পান নোবেল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত