Ajker Patrika

হটলাইনে অভিযোগ পেয়ে বীরগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দুদক, সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ

বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ৩১ মে ২০২৪, ১৮: ১৪
হটলাইনে অভিযোগ পেয়ে বীরগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দুদক, সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার রিপন মণ্ডলের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগে পেয়ে জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অফিসে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুরে জেলা দুদকের সহকারী পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয়।

এলাকাবাসী ও দুদক সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত রিপন মণ্ডল দীর্ঘদিন যাবৎ ঘুষ গ্রহণ ও বিভিন্নভাবে লোকজনকে হয়রানি করে আসছিলেন। হয়রানির শিকার ঠাকুরগাঁওয়ের উত্তর গড়েয়া এলাকার নুরু মিয়ার ছেলে মো. মিজানুর রহমান দুদকের হটলাইন নম্বর ১০৬-এ কল করে অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (৩০ মে) দুপুরে দিনাজপুর জেলা দুনীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে উপ-সহকারী পরিচালক মো. কামরুন নাহার সরকার, সহকারী পরিদর্শক মো. মিজানুর রহমান ও উচ্চমান সহকারী মো. শাহজাহান আলী সমন্বয়ে একটি তদন্ত দল সাবরেজিস্ট্রি অফিসে যান। 

এ সময় দুদক কর্মকর্তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সাব-রেজিস্ট্রারের তল্লী বাহক নকল নবিশ সুমন চন্দ্র রায় ও রশিদসহ আরও কয়েকজন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও প্রমাণাদি সরিয়ে ফেলেন এবং রিপন মণ্ডলের কামরায় তালা ঝুলিয়ে আত্মগোপন করেন। তখন দুদকের তদন্তকারী দল ওই রুমের তালা ভেঙে প্রবেশ করে সাবরেজিস্ট্রার রিপন মণ্ডলকে দীর্ঘসময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় সাংবাদিকদের উপস্থিততেই অভিযোগকারীর দলিল রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়। 

বীরগঞ্জের সাব-রেজিস্ট্রার রিপন মণ্ডলকে তাঁর কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মো. ইসমাইল হোসেন জানান, প্রাথমিক তদন্তে সাবরেজিস্ট্রার রিপন মণ্ডলের বিরুদ্ধে আনীত ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ভুয়া দলিল করতে মাঠ পরচা ও নামজারি থাকার পরেও বাঁটোয়ারা দলিলের অজুহাতে ৭ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করার তথ্য পাওয়া গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে আরও অনেকে মৌখিক অভিযোগ করেছেন এবং সেগুলো আমলে নেওয়া হবে। তদন্ত সাপেক্ষে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্তের স্বার্থে সিসিটিভি ক্যামেরার মেশিনটি জব্দ করা হয়েছে। 

তদন্ত শেষে দুদকের তদন্তকারী দল স্থানত্যাগ করতে চাইলে স্থানীয় উত্তেজিত জনতা রিপন মণ্ডলের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে। একপর্যায়ে বীরগঞ্জ থানা-পুলিশের একটি ফোর্স ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ নেয়। 

বীরগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের সামনে বিক্ষুব্ধ জনতাওইদিন বিকেল ৫টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফজলে এলাহী ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজ কুমার বিশ্বাস। এ সময় ইউএনও বলেন, ‘হঠাৎ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বীরগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে তদন্তে নামার বিষয়টি আমার জানা নেই। সাংবাদিক ও স্থানীয় ছাত্রনেতাদের মাধ্যমে জানতে পেরে ছুটে এসেছি।’ 

একই দিন সন্ধ্যা ৭টায় জেলা রেজিস্ট্রার মো. হেলাল উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। তিনি রিপন মণ্ডলের কাছে কামরার সিসি ক্যামেরার পাসওয়ার্ড জানতে চান। তখন রিপন মণ্ডল পাসওয়ার্ড জানেন না বললে জেলা রেজিস্ট্রার একে দায়িত্বের চরম অবহেলা ও উদাসীনতা বলেন। 

সাব-রেজিস্ট্রার রিপন মণ্ডলকে জিজ্ঞাসাবাদ ও অভিযোগ তদন্তে আসে জেলা দুদকের একটি দল।এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জেলা রেজিস্ট্রার বলেন, ‘ঘটনাটি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছি। বিধিমতো অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত সকলের প্রতি আবেদন, যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না সৃষ্টি হয়।’ 

জেলা রেজিস্ট্রার চলে যাওয়ার পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। এরপর রাত ৮টার দিকে কাউকে না জানিয়ে অফিস থেকে পালিয়ে যান রিমন মণ্ডল। 

অভিযোগকারী মিজানুর রহমান বলেন, ‘সাব-রেজিস্ট্রার রিপন মণ্ডলের সীমাহীন ঘুষ, দুর্নীতি ও হয়রানির শিকার হয়ে দুদকের জরুরি হটলাইন ১০৬-এ অভিযোগ করতে বাধ্য হয়েছি।’ 

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ফজলে এলাহী ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাজ কুমার বিশ্বাস।অপরদিকে মরিচা ইউনিয়নের মহাদেবপুর গ্রামের নুর ইসলামের পুত্র মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রায় ১ মাস পূর্বে আমার একটি জমির সকল কাগজপত্র ঠিক থাকার পরেও রিপন মণ্ডল বেশ কয়েক দিন ঘুরিয়ে ১০ হাজার টাকা নিয়ে জমিটি রেজিস্ট্রি করে দেয়।’ 

এ বিষয়ে বীরগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার রিমন মণ্ডল বলেন, ‘আমি একা দুর্নীতি করি এটি সত্য নয়, এ দুর্নীতির সঙ্গে দলিল লেখকদের রয়েছে একটি বিশাল নেটওয়ার্ক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদির ওপর হামলাকারীরা সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছে কি না—তা শতভাগ নিশ্চিত নয় বিজিবি

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা
বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান । ছবি: আজকের পত্রিকা

বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল সরকার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ঢাকায় শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলি বর্ষণকারী ব্যক্তিরা ময়মনসিংহ সীমান্ত ব্যবহার করে ভারতে পালিয়েছে কি না—তা এখনো শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

সোমবার ময়মনসিংহ নগরীর খাগডহর বিজিবি ক্যাম্পে তিনি আরও জানান, শুক্রবার ৯টার মধ্যে বিজিবি সদর দপ্তরের নির্দেশনায় সম্ভাব্য পাচারের রুটগুলো চিহ্নিত করে টহল এবং চেকপোস্ট বসানো হয় সীমান্তের অধিকাংশ স্থানে। পরদিন অর্থাৎ শনিবারে পুলিশ এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। ঢাকা থেকে আগত পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বিজিবি ময়মনসিংহ সেক্টর কমান্ডারের নিয়মিত যোগাযোগ এবং অপারেশন সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা হয়।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আলোচনায় দুটি স্থানে একসঙ্গে অপারেশনের প্ল্যান করা হয়। সন্দেহভাজন হিসেবে শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে অবস্থানরত ফিলিপ স্নালকে আটকের পরিকল্পনা করা হয়। পুলিশের আরেকটি টিম হালুয়াঘাট এলাকায় অপারেশনের প্ল্যান করে। হালুয়াঘাটে অপারেশনের বিষয়ে বিজিবির সোর্স এবং অন্যান্য বিষয়ে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করেছে। অপর দিকে নালিতাবাড়ীর বারোমারি এলাকায় অপারেশন পরিচালিত হয় বিজিবির নেতৃত্বে এবং ঢাকা হতে আগত ও হালুয়াঘাট থানার পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে। কিন্তু ফিলিপকে পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী ডেলটা চিরান, শ্বশুর ইয়ারসন রংডি এবং মানব পাচারকারী লুইস লেংমিঞ্জাকে আটক করা হয়। তাদের বাড়ি থেকে একটি মোটরসাইকেলও উদ্ধার করা হয়।’

তাঁদের পরিবারের তিনজনসহ এ পর্যন্ত বিজিবি চারজনকে আটক করেছে। এঁদের মধ্যে সোমবার সকালে মানব পাচারকারী বেঞ্জামিন চিরামকে আটক করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বরগুনায় স্বামীকে গলা টিপে হত্যা, স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিক আটক

বরগুনা প্রতিনিধি
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত
আটক পরকীয়া প্রেমিক আলামিন। ছবি: সংগৃহীত

বরগুনার বামনা উপজেলায় পরকীয়া প্রেমের জেরে এক প্রবাসফেরত স্বামীকে গলা টিপে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আব্দুল জলিল (৪৫)। তিনি উপজেলার রামনা ইউনিয়নের ঘোপখালী গ্রামের বাসিন্দা।

এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী নাজমা বেগম (৩৫) ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিক আলামিনকে (৩০) আটক করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুজনই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে আব্দুল জলিলের নিজ বাড়িতে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে।

স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, প্রায় পাঁচ বছর ধরে একই এলাকার আবু খতিবের ছেলে আলামিন নিহতের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে নাজমা বেগমের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রায় ১৫ দিন আগে প্রবাস থেকে বাড়িতে ফিরে স্ত্রীর সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারেন আব্দুল জলিল।

অভিযোগ রয়েছে, রোববার বিকেলে স্ত্রী ও ওই গৃহকর্মী মিলে ঘুমন্ত অবস্থায় আব্দুল জলিলকে গলা টিপে হত্যা করেন।

হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে বামনা থানায় নিয়ে যায়। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের স্ত্রী ও তাঁর পরকীয়া প্রেমিককে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা দুজনই হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলা দায়েরের পর আসামিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মহান বিজয় দিবসে মেট্রোরেল সাময়িক বন্ধ থাকবে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আগামী ১৬ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) মেট্রোরেল চলাচল সাময়িক বন্ধ থাকবে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় প্যারাজাম্প অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে প্যারাট্রুপারদের নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ডিএমটিসিএল ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছে, আগামী ১৬ ডিসেম্বর দুপুর ১১টা ৫০ মিনিট হতে ১২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত, অর্থাৎ মোট ৪০ মিনিটের জন্য মেট্রোরেল চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।

ডিএমটিসিএল সাময়িক অসুবিধার জন্য যাত্রীসাধারণের কাছে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে। যাত্রীদের এই সময়সূচি মেনে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ইডেনের সেই ছাত্রীকে বিয়ের ছয়মাস পর নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চার্জশিট

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত
নোবেল। ছবি: সংগৃহীত

বাসায় আটকে রেখে ইডেন কলেজের এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গায়ক নোবেলের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। গত ২৯ নভেম্বর ডেমরা থানার উপপরিদর্শক এসআই মুরাদ হোসেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) ইলামনি আজ সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আগামী ২৮ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্রটি উপস্থাপন করা হবে। পরে এ সংক্রান্ত মামলা বিচারের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে।

নোবেলের আইনজীবী মোসতাক আহমেদ জানান, এই ধর্ষণ মামলার বাদীকে বিয়ে করেছেন নোবেল। তাঁরা সংসার করছেন।

গত ১৯ মে নোবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, নির্যাতন ও পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করেন ইডেন কলেজের ওই ছাত্রী। নোবেলকে গ্রেপ্তার করার পর কারাগারে পাঠানো হলে বিয়ের শর্তে তিনি জামিন পান। ১৯ জুন ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বসে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে নোবেল ওই ছাত্রীকে বিয়ে করেন।

এই মামলায় অভিযোগ করা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ছাত্রীর সঙ্গে পরিচয় হয় নোবেলের। এরপর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর নোবেল তাঁর স্টুডিও দেখানোর কথা বলে ছাত্রীকে ডেমরার বাসায় নিয়ে যান। সেখানে আটকে রাখেন, মোবাইল ফোন ও টাকা কেড়ে নেন। এরপর ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করেন। কথামতো না চললে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয়ও দেখান।

অভিযোগে বলা হয়, ওই তরুণীকে ছয় মাস ধরে ডেমরার ওই বাসায় আটকে রাখা হয়, মারধর করা হতো প্রায়ই। দু-তিন জনের সহায়তায় বাদীকে চুল ধরে টেনেহিঁচড়ে একটি কক্ষে আটকে রাখেন নোবেল। ওই ঘটনার ভিডিও ছড়ালে বাদীর বাবা-মা তাঁকে চিনতে পারেন। এরপর পরিবার পুলিশের সহায়তায় তাঁকে ১৯ মে উদ্ধার করে এবং পুলিশ নোবেলকে গ্রেপ্তার করে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, নোবেল বাদীকে আটক রেখে ধর্ষণ করেন এবং ধর্ষণের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে রাখেন। বাসায় না থাকলে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। নোবেল নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে তাঁকে মারপিট করেছেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, বাদীর অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামি নোবেল জামিনে আছেন।

তদন্ত কর্মকর্তা অভিযোগপত্রে আরও বলেছেন, বাদীকে মারধর ও ধর্ষণে আসামিকে আরও কয়েকজন সহযোগিতা করেছেন। তবে তাঁদের নাম-ঠিকানা উদ্‌ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে তাঁদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা সম্ভব হলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।

এখন কী হবে:

নোবেলের আইনজীবী বলেছেন, নোবেল মামলার বাদীকে বিয়ে করে সংসার করছেন। তাই এই অভিযোগপত্রে নোবেলের কোনো সমস্যা হবে না। বিচারিক ট্রাইব্যুনালে বাদী আপসনামা দেওয়ার পর মামলা নিষ্পত্তি হবে। খালাস পাবেন নোবেল।

উল্লেখ্য, ভারতের সংগীত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান ‘সা রে গা মা’ দিয়ে পরিচিতি পান এই গায়ক। এর আগে মাদকে আসক্ত হয়ে সংগীত ছেড়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও শ্রোতাদের সামনে হাজির হন। সেবার নোবেল জানিয়েছিলেন, তিনি আর কখনো দর্শকদের হতাশ করবেন না। সব অতীত পেছনে ফেলে নিয়মিত গান উপহার দেবেন।

কিন্তু ২০২৩ সালে অগ্রিম টাকা নিয়ে গান গাইতে না যাওয়ায় প্রতারণার অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল থানায় নোবেলের বিরুদ্ধে মামলা হয়। জানা যায়, ওই বছর ১৬ মে শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ব্যাচ ২০১৬-এর অনুষ্ঠানে গান গাইতে গিয়ে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা অগ্রিম নেওয়ার প্রতারণায় অভিযোগে আটক হয়েছিলেন। সে সময় একদিন রিমান্ডেও ছিলেন এই গায়ক। পরে আপসের মাধ্যমে ওই মামলা থেকে অব্যাহতিও পান নোবেল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত