Ajker Patrika

সাভার পৌরসভা

৭০ শতাংশ কাজ হাতিয়ে নেন মেয়রের ছেলেরা

  • প্রায় সব কাজে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের সামগ্রী। চুক্তি অনুযায়ী রড ব্যবহার করা হয়নি। নির্মাণ বা সংস্কারের কয়েক মাসের মধ্যে অনেক সড়ক ও ড্রেন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
  • দুদকের অনুসন্ধানেও শিকদার কনস্ট্রাকশনের কাজে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে।
অরূপ রায়, সাভার 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঢাকার সাভার পৌরসভায় ২০১৬ সাল থেকে ৯ বছরে শতকোটি টাকার উন্নয়নকাজের ৭০ কোটির কাজই করেছেন সাবেক মেয়রের ছেলেরা। এসব কাজের অধিকাংশই নিম্নমানের হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে বেশির ভাগ কাজের বিলও তুলে নিয়ে গেছেন তাঁরা।

পৌরসভা থেকে জানানো হয়েছে, ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট পর্যন্ত টানা প্রায় ৯ বছর সাভার পৌরসভার মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল গনি। এ সময় পৌর এলাকায় ১০১ কোটি টাকার ড্রেন ও সড়ক উন্নয়নের কাজ হয়েছে। এর মধ্যে মেসার্স শিকদার কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড বিল্ডার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৬৯ কোটি টাকার কাজ করেছে, যা ওই সময়ের মোট কাজের প্রায় ৭০ শতাংশ।

শিকদার কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড বিল্ডার্সের লাইসেন্সে কাজ হলেও মূলত এই বিপুল অঙ্কের টাকার কাজ করেছেন মেয়রের বড় ছেলে আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হাসান তুহিন, মেজ ছেলে কামরুল হাসান শাহীন ও ছোট ছেলে মেহেদী হাসান তুষার।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাভার পৌরসভার এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, শিকদার কনস্ট্রাকশন যেসব কাজ করেছে, তার প্রায় সব কটিতে ব্যবহার করা হয়েছে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী। অধিকাংশ কাজে চুক্তি অনুযায়ী রড ব্যবহার করা হয়নি। এ কারণে নির্মাণ বা সংস্কারের কয়েক মাসের মধ্যে অনেক সড়ক ও ড্রেন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর পরও মেয়র ও তাঁর ছেলেদের কারণে শিকদার কনস্ট্রাকশনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানেও শিকদার কনস্ট্রাকশনের কাজে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে।

তথ্য অধিকার আইন ব্যবহার করে শিকদার কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড বিল্ডার্সের বিভিন্ন কাজের তথ্য চেয়ে আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে আবেদন করা হয়। আবেদনের পর পৌরসভা থেকে বেশ কিছু তথ্য সরবরাহ করা হয়।

সরবরাহ করা তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত ১০১ কোটি টাকার ড্রেন ও সড়কের উন্নয়নকাজ হয়েছে। এর মধ্যে মেসার্স শিকদার কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড বিল্ডার্স ৭০ কোটি ২৫ লাখ ৪২ হাজার ৫৫৬ টাকার কাজ পেয়েছে। এসব কাজের কোনোটার পুরো এবং কোনোটার আংশিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

সরবরাহ করা তথ্য অনুযায়ী, শিকদার কনস্ট্রাকশন গত ৯ বছরে ৬৬ কোটি ৯১ লাখ ৯ হাজার ২৩৫ টাকায় ৬৮টি ড্রেন ও সড়কের আংশিক বা পুরো কাজ করে বিলের অধিকাংশই উত্তোলন করে নিয়েছে। মেয়রের ছেলেদের মনোনীত কোনো ব্যক্তি শিকদার কনস্ট্রাকশনের মালিক এ কাদের শিকদারের কাছ থেকে লিখিত ক্ষমতা নিয়ে বিল উত্তোলন করে নেন।

তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একটি প্যাকেজে ৪টি কাজের মধ্যে একটি ড্রেন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ওই প্যাকেজের কোনো কাজের বিল দেওয়া হয়নি। আর বাকি ৫টি কাজের আদেশ দেওয়া হয়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ নগরকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের (আইইউআইডিপি) আওতায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১ কোটি ৮৩ লাখ ৭০ হাজার টাকায় রেডিওকলোনি এলাকায় ৩৩৭ মিটার আরসিসি ড্রেন, রাজাসন এলাকায় সড়কসহ ১১০ মিটার আরসিসি ড্রেন এবং গেণ্ডা এলাকায় ১৭৬ মিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণের কাজ পায় শিকদার কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড বিল্ডার্স।

কার্যাদেশের পর ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। কাজ শুরুর পাঁচ মাস পর গত ৭ এপ্রিল দুদকের অনুসন্ধানে রেডিওকলোনিতে ৩৩৭ মিটার ড্রেন নির্মাণে বড় ধরনের অনিয়ম ধরা পড়ে। ড্রেনটিতে রডের দুটি জালি ব্যবহার করার কথা থাকলেও একটি জালি ব্যবহার করেই প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ শেষ করা হয়।

টানা পাঁচ মাস এই অনিয়ম চলে এলেও কাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী ও কার্যসহকারী কোনো ব্যবস্থা নেননি।

দুদকের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আরিফ আহম্মেদ বলেন, ‘ড্রেন নির্মাণের কাজে পুরোটাই অনিয়ম হয়েছে। যার চাক্ষুষ প্রমাণ পাওয়া গেছে। একই প্যাকেজে বাকি তিনটি কাজেও অনিয়ম হয়েছে বলে আমার ধারণা। তবে ওইসব কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় তা খতিয়ে দেখা যায়নি।’

জানতে চাইলে রেডিওকলোনির ৩৭৭ মিটার ড্রেন নির্মাণকাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী বাপ্পী শাহরিয়ার বলেন, ‘আমাকে একসঙ্গে অনেক কাজ তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয়। যে কারণে একার পক্ষে সব কাজের তদারকি করা সম্ভব হয় না। এভাবেই হয়তোবা ড্রেন নির্মাণের কাজে অনিয়মের বিষয়টি আমার নজর এড়িয়ে গেছে।’

শুধু ড্রেন নির্মাণে নয়, অনেক কাজে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে শিকদার কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড বিল্ডার্সের বিরুদ্ধে। কিন্তু মেয়র আর তাঁর ছেলেদের প্রভাবে পৌরসভার প্রকৌশল বিভাগ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।

আরসিসিস ঢালাই ও ঢালাইয়ের দুপাশে ইউনিব্লক দিয়ে পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের ভাটপাড়া গুদারাঘাট থেকে কালভার্ট হয়ে শুকুরজান স্কুল পর্যন্ত ৩১০ মিটার সড়কের উন্নয়ন করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কাজটি করে মেসার্স শিকদার কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড বিল্ডার্স।

সম্প্রতি ওই সড়কে গিয়ে দেখা যায়, কালভার্টের পূর্ব পাশে সড়কের বেশ কিছু অংশ দেবে গেছে। অনেক জায়গায় ইউনিব্লক উঠে গেছে।

এ বিষয়ে জানতে আত্মগোপনে থাকা এক নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রমজান আহম্মেদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের পাশাপাশি চুক্তি অনুযায়ী রড না দেওয়ায় কাজ শেষ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে তা দেবে যায়।’

রমজান আহম্মেদ আরও বলেন, ‘শিকদার কনস্ট্রাকশন আমার ওয়ার্ডে যেসব ড্রেন ও সড়কের কাজ করেছে, সবই নিম্নমানের কাজ হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক সড়কের বিভিন্ন স্থান দেবে গেছে। ড্রেনের স্লাব ও ম্যানহোলের ঢাকনা ভেঙে গেছে।’

যোগাযোগ করা হলে মেসার্স শিকদার কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড বিল্ডার্সের মালিক এ কাদের শিকদার বলেন, ‘মেয়র আবদুল গনির ছেলেরা আমার লাইসেন্সে কৌশলে সব কাজ হাতিয়ে নিতেন। আর নিম্নমানের কাজ করে এবং কাজে অনিয়ম করেও বাবার সুবাদে বিল পেয়ে যেতেন। এখন সেসবের খেসারত দিতে হচ্ছে আমাকে।’

হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে মেয়র আবদুল গনির বড় ছেলে আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক হাসান তুহিন বলেন, ‘আমার দুই ভাই ও আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে, তা সত্য নয়। আমি ঠিকাদারি করেছি গণপূর্ত অধিদপ্তরে। আর আমার ভাইয়েরা অন্য পেশায় জড়িত ছিলেন।’

তবে সাভার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বলেন, ‘শিকদার কনস্ট্রাকশনের লাইসেন্সে যত কাজ হয়েছে সব কাজ করেছেন সাবেক মেয়র আবদুল গনির ছেলেরা। যে কারণে কাজে অনিয়ম হয়ে থাকলেও বলার কিছু ছিল না।’

কাজে অনিয়ম এবং শিকদার কনস্ট্রাকশনের নামে ৭০ কোটি টাকার কাজের প্রসঙ্গে সাভারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সাভার পৌরসভার প্রশাসক মো. আবুবকর সরকার বলেন, ‘আমি পৌরসভার দায়িত্ব পাওয়ার আগে কী হয়েছে, তা আমার জানা নেই। কার লাইসেন্সে কে কাজ করেছেন, তাও আমি জানি না। তবে দুদক যে কাজে অনিয়ম পেয়েছে, তা আমার নজরে এসেছে। বিষয়টি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিটের (সিপিটিইউ) বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের মহাপরিচালককে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চীনা নাগরিককে ছুরিকাঘাত করা যুবক পালাল পুলিশকে ছুরিকাঘাত করে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরে চীনা নাগরিককে ছুরিকাঘাত করে পালানোর সময় গণধোলাইয়ে আহত ছিনতাইকারী এবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশকে ছুরিকাঘাত করেছে। তবে ঘটনার পর পুলিশের একাধিক দলের সাঁড়াশি অভিযানে ছুরিকাঘাতকারী ওই যুবকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাতে চমেক হাসপাতালের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে পাহারায় নিয়োজিত এক কনস্টেবলকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায় ইমাম হোসেন আকাশ (৩০) নামের ওই যুবক। তিনি আনোয়ারার দিঘীরপাড় বরুমছড়া এলাকার মো. আনোয়ার হোসেনের ছেলে এবং বন্দর এলাকার আজাদ কলোনির বাসিন্দা। পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার তাঁর দুই সহযোগীর নাম এখনো জানা যায়নি।

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলায়মান আজকের পত্রিকাকে বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পুলিশ সদস্যকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যাওয়া ছিনতাইকারী ও তাঁর সহযোগীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই বিষয়ে একটি ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।

পাঁচলাইশ থানা-পুলিশের একটি সূত্র জানায়, চমেক হাসপাতালে পুলিশের পাহারায় ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন অভিযুক্ত ছিনতাইকারী ইমাম হোসেন আকাশ। ওই দিন রাতে ইমামের সঙ্গে দুজন নারীসহ তিনজন দেখা করতে আসেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ইমাম হোসেন রাজু সেখানে দায়িত্বরত একজন কনস্টেবলকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর ওই দিন রাতেই নগর পুলিশের একাধিক টিম ওই ছিনতাইকারীকে ধরতে মাঠে নামে। পরে আজ বুধবার (২২ অক্টোবর) সকালে সীতাকুণ্ডের কুমিরা এলাকা থেকে তাঁকে দুই সহযোগীসহ আটক করা হয়।

গত মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতর সিপিআর ৫ নম্বর গেট-সংলগ্ন ব্রিজের সামনে এক চীনা নাগরিক ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন। দুই-তিনজন ছিনতাইকারী ওই চীনা নাগরিককে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে তাঁর সঙ্গে থাকা পাসপোর্ট, ভিসা, নগদ অর্থ ও নথিপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় সেখানে উপস্থিত জনতা ধাওয়া দিয়ে দুই ছিনতাইকারীদের ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে।

বন্দর থানার পুলিশ জানায়, ঘটনার পর পুলিশের হাতে আটক দুই ছিনতাইকারীদের মধ্যে ইমাম হোসেন আকাশ গুরুতর আহত থাকায় তাঁকে পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। শাহাদাত হোসেন (২৫) নামের আরেক ছিনতাইকারীকে হাজতে রাখা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘নির্যাতন সইতে না পেরে’ কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন, গৃহবধূর মৃত্যু

ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি 
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া মিতু বেগম। ছবি: সংগৃহীত
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া মিতু বেগম। ছবি: সংগৃহীত

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুনের ঘটনায় দগ্ধ এক গৃহবধূ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। যৌতুকের জন্য স্বামী ও শাশুড়ির নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মারা যাওয়া নারীর নাম মিতু বেগম (২০)। গায়ে আগুন দেওয়ার পাঁচ দিন পর গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকার জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মিতু বেগম ফরিদগঞ্জের উত্তর হাঁসা গ্রামের অটোরিকশাচালক রাকিবের স্ত্রী।

জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মিতু তাঁর স্বামীর বসতঘরে পারিবারিক কলহের জেরে শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ঘটনায় তাঁর মা পারভীন বেগম ফরিদগঞ্জ থানায় মিতুর স্বামীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। এতে যৌতুকের জন্য চাপ ও নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়।

পারভীন বেগম বলেন, ‘তিন বছর আগে আমার মেয়ের বিয়ে হয়। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। কিন্তু বিয়ের পর থেকে জামাতা ও তার পরিবার আমার মেয়েকে যৌতুকের জন্য চাপ দেয় এবং শারীরিক নির্যাতন করে আসছিল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ও আমার মেয়েকে মারধর করলে নির্যাতন সইতে না পেরে নিজ শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। পাঁচ দিন পর আমার মেয়ের মৃত্যু হয়। আমি থানায় অভিযোগ করেছি। এ ঘটনায় উপযুক্ত বিচার চাই।’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মিতু বেগমের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর স্বামী রাকিব ও পরিবারের সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন।

ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অগ্নিদগ্ধ মিতু ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় তাঁর মায়ের অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ময়মনসিংহে হত্যা মামলায় দুই ভাইয়ের মৃত্যুদণ্ড

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে জহিরুল ইসলাম মিঠু হত্যা মামলায় আসামি দুই ভাইয়ের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার দুপুরে ময়মনসিংহের বিশেষ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফারহানা ফেরদৌস মামলার রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন জেলার গৌরীপুর উপজেলার বাড়িওয়ালাপাড়ার এলবার্ট ডেবিট বাদলের দুই ছেলে এলবার্ট ডেবিট রকি (২৫) ও এলবার্ট ডেবিট সেন্টু (৪০)। তাঁরা পলাতক রয়েছেন। আদালত পরিদর্শক পিএসএম মোস্তাছিনুর রহমান মামলার রায়ের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গৌরীপুর পাটবাজারে টিপু সুলতান জুয়েলার্সে সোনার দরদাম নিয়ে রকি ও সেন্টুর সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এ সময় দোকানির চাচাতো ভাই জহিরুল ইসলাম মিঠু বিষয়টি সমাধানে এগিয়ে এলে সেন্টু বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে মিঠুর বুকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান।

স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় মিঠুকে প্রথমে গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা মিঠুকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন জহিরুল ইসলাম মিঠুর বাবা মো. মোখলেছুর রহমান বাদী হয়ে গৌরীপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের অনুদান দেয় বিআরটিএ, জানেন না ইউএনও

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সভায় বক্তব্য দেন বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সভায় বক্তব্য দেন বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ। ছবি: আজকের পত্রিকা

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবার ও আহত ব্যক্তিরা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ট্রাস্টি বোর্ড থেকে অনুদান পেতে পারেন। নিহত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দেওয়া হয় ৫ লাখ টাকা আর আহত বিবেচনায় দেওয়া হয় ১ থেকে ৩ লাখ টাকা। এ টাকা দেওয়ার জন্য প্রতিবেদন প্রস্তুত করে প্রথম সুপারিশটি করে থাকেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। অথচ রাজশাহীর বাগমারার ইউএনও মাহবুবুল ইসলাম এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না।

বিআরটিএর ট্রাস্টি বোর্ড থেকে ২০২৩ সাল থেকে এই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস উপলক্ষে আজ বুধবার সকালে রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে এই অনুদানের ব্যাপারে কথা বলেন বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ। এ সময় তিনি সভায় উপস্থিত বাসচালক, হেলপার, শ্রমিক নেতা ও পরিবহনমালিকদের কাছে জানতে চান, তাঁরা এই অনুদানের বিষয়ে কিছু জানেন কি না। এ সময় বেশ কিছু ব্যক্তি উচ্চস্বরে জানান, তাঁদের জানানো হয়নি।

তখন বিভাগীয় কমিশনার উপস্থিত বিআরটিএ কর্মকর্তাদের বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে বলেন। তখন বিআরটিএর একজন কর্মকর্তা বলতে থাকেন, ‘উপজেলা অফিসারেরা উপজেলা থেকে সুপারিশ পাঠান...।’ তখন তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘উপজেলা অফিসার কে? উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলতে পারেন না?’ এ সময় পাশ থেকে আরও একজন বিআরটিএর কর্মকর্তা বলতে শুরু করলে তিনিও ‘ইউএনও’ বলতে ভুল করেন। তাঁকেও থামিয়ে দিয়ে বিভাগীয় কমিশনার বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলা পর্যায় থেকে আহত-নিহত ব্যক্তিদের তথ্য জেলা প্রশাসককে পাঠাবেন। তারপর ট্রাস্টি বোর্ডে যাবে।

এ সময় বিভাগীয় কমিশনার জানতে চান, গত ২৪ আগস্ট জেলার বাগমারায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দুজনকে এই অনুদান দেওয়া হয়েছে কি না। তিনি বাগমারার ইউএনওকে ফোন করতে বলেন। জেলা প্রশাসনের একজন নারী কর্মকর্তা বাগমারার ইউএনও মাহবুবুল ইসলামকে ফোন করে বিভাগীয় কমিশনারকে কথা বলতে দেন। বিভাগীয় কমিশনার মোবাইল ফোনে লাউড স্পিকার দিয়ে সেটি মাইক্রোফোনের সামনে ধরে কথা বলেন।

কমিশনার বলেন, ‘মাহবুবুল ইসলাম, তোমার ওইখানে মাস দু-এক আগে যে একটা অ্যাকসিডেন্টে মা মারা গেল দুইটা বাচ্চা রেখে, সেখানে গেছিলা তুমি, সেই বাড়িতে?’ ইউএনও বলেন, ‘জি স্যার।’ কমিশনার জানতে চান, ‘সেই বাচ্চাদের অবস্থা কী?’ ইউএনও বলেন, ‘বাচ্চাদের অবস্থা এখন ভালো স্যার। আর দুজনকে স্যার ৫০ হাজার ৫০ হাজার করে এক লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।’ বিভাগীয় কমিশনার জানতে চান, ‘এই টাকা তুমি কই পাইলা?’ ইউএনও জানান, উপজেলা পরিষদের অপ্রত্যাশিত ব্যয় থেকে এটা দেওয়া হয়েছে।

এরপর বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘বিআরটিএর যে এই ধরনের অনুদানের খাত রয়েছে, এটা তুমি জানো?’ এ সময় কিছুটা থেমে ইউএনও বলেন, ‘জি স্যার, এইটা জানা ছিল না আমার।’ বিভাগীয় কমিশনার বলেন, ‘এইটা তুমি জানো না, এইটা কেউই জানে না। এখন আমরা বিআরটিএর অনুষ্ঠান থেকে তোমাকে ফোন দিচ্ছি। সমস্ত সাংবাদিক ভাইয়েরা আছেন। মালিক সমিতি, আমাদের বিভিন্ন ধরনের লোকজন আছে। বিআরটিএতে এই ধরনের ফান্ড করা হয়েছে। যদি কেউ মৃত্যুবরণ করেন, তাঁর পরিবার ৫ লাখ টাকা পাবে, কেউ আহত হলে সর্বনিম্ন ১ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা পাবেন। অতএব, তুমি ওই পরিবারকে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করার জন্য বলো। আর যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, জেলা প্রশাসনকে বলছি—সকল কেস, কোনো কেস যেন বাদ না পড়ে। সবাই আবেদন করবে।’

বিভাগীয় কমিশনার জানান, সড়ক দুর্ঘটনার এক মাসের মধ্যে অনুদানের জন্য আবেদন করতে হয়। তবে এক মাসের নয়, রাজশাহীতে যেন এক বছর পর্যন্ত আবেদন নেওয়া হয়, সেই নির্দেশনা দেন তিনি। এ ব্যাপারে তিনি বিআরটিএর চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান।

সভায় রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম হেলাল বলেন, ‘প্রতিটা গাড়ির যখন আমরা ফিটনেস সনদ নিই, তখন কিন্তু এই টাকা আমাদের মালিকদের কাছ থেকে নেওয়া হয়। প্রতিটি গাড়ির জন্য ১ হাজার ৭০০ টাকা দিতে হয়। এই টাকাটা সবাইকে দেওয়ার জন্য আমরা খুব আন্তরিকভাবে চেষ্টা করি। কিন্তু তাদের প্রচারটা খুব কম। অনেক মানুষ জানেই না, কীভাবে কার কাছে আবেদন করবে। এখন সবাই জানলেন।’ এক বছর পর্যন্ত আবেদনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য তিনি বিভাগীয় কমিশনারকে ধন্যবাদ জানান।

জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএর রাজশাহী সার্কেল এ সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার। এর আগে দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। এতে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, বিআরটিএর রাজশাহী সার্কেলের সহকারী পরিচালক ফয়সাল হাসানসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা অংশ নেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত