Ajker Patrika

ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর নামে আছে, কাজে নেই

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর নামে আছে, কাজে নেই

করোনার মধ্যে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও আশঙ্কা বাড়াচ্ছে। প্রতিদিনই দু’শতাধিক ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। এদিকে গত দুই দশকে দেশে মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর এ সময়ে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১২ লাখ মানুষ। অথচ মশক নিবারণী দপ্তরটি একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এ দপ্তরে কর্মরত অধিকাংশই ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশনে দায়িত্ব পালন করছেন। দপ্তরটি প্রতি মাসে শুধু কর্মীদের বেতন-ভাতা তৈরি করছে।

ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকার ১৯৮০ সালে পুরান ঢাকার পলাশী এলাকায় এক একর ৩৯ শতাংশ জমির ওপর মশক নিবারণী দপ্তর চালু করে। দপ্তরটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হতো। দপ্তরে মোট জনবল ছিল ৪১৭ জন। কিন্তু ১৯৮৪ সালে দপ্তরটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে যায়। পরে জনবল কমিয়ে ৩৯৬ জন করা হয়। বর্তমানে ১৩৭টি পদ শূন্য রয়েছে।

জানা গেছে, মশক নিবারণী দপ্তরের ২০ কাঠা জমি ঢাকা ওয়াসাকে দেওয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরকে দেওয়া হয়েছে ১৩ কাঠা জমি। অবশিষ্ট জমিতে একটি দোতলা ভবন তৈরি করা হয়েছে। এই দপ্তরে বর্তমানে ২৫৯ জন কর্মরত থাকলেও ২৪৭ জনই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দায়িত্ব পালন করছেন। দপ্তরে কর্মরত আছেন মাত্র ১২ জন। এই ১২ জনের দায়িত্ব হচ্ছে সবার বেতন-ভাতা তৈরি করা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা।

দপ্তরে কর্মরতরা জানান, এই দপ্তরটি মূলত ঢাকা শহর কেন্দ্রিক মশা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। তবে অধিদপ্তরে রূপান্তর করা হলে তারা সারা দেশে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবেন বলে মনে করছেন।

জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মশক নিবারণী দপ্তর একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটিকে পুনর্গঠন করা যেতে পারে অথবা ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, মশা নিয়ন্ত্রণ করা তাঁদের দায়িত্ব নয়। অথচ মশার কামড়ে অসুস্থ ও মৃত্যুর জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে দায়ী করা হয়। স্বাস্থ্য বিভাগ শুধু চিকিৎসাসেবার কাজ করছে। আর মশক নিধন ও নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

মশক নিবারণী দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুমেরী জামান বলেন, ‘সরকার দপ্তরটিকে ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট বিভাগ করার চিন্তা করছে। এতে সব ধরনের বাহকবাহিত রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।’  দেশে গত তিন বছর ধরে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে গেছে। ২০০০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৩৯ হাজার ৭১১ জন ও মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৭৬ জন। আর চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৭৫০ জন এবং মারা গেছেন ৩৫ জন।

ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যু সম্পর্কে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)  সূত্রে জানা গেছে, ২০০০ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দুই দশকে দেশে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯ লাখ ২৪ হাজার ১৪ জন। একই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ১০৯ জনের।

চিকুনগুনিয়া সম্পর্কে আইইডিসিআর জানায়, ২০১৭ সাল পর্যন্ত চিকুনগুনিয়া ও পরবর্তী আথ্যালজিয়ায় আক্রান্ত হন ১৩ হাজার ৮১৪ জন। ২০১৩-২০১৪ সালে ১৯ জেলায় ৪৩ হাজার ৭০৮ ফাইলেরিয়া রোগী শনাক্ত হন। দেশে ৪৩ হাজার ৫০০ বিকলাঙ্গ রোগী রয়েছেন।

রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা সূত্রে জানা গেছে, মশাবাহিত রোগ মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি গ্লোবাল ফান্ড অর্থায়ন করছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের টার্গেট অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া থেকে মুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এদিকে ২০২৮ সাল থেকে গ্লোবাল ফান্ডের অর্থ আসা বন্ধ হয়ে যাবে। কাজেই ওই সময়ের মধ্যে এসব রোগ নির্মূল করা না গেলে পরে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে তা মোকাবিলা করতে হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতিহাস দরজায় কড়া নেড়ে বলছে, ১৯৭১ থেকে পাকিস্তান কি শেখেনি কিছুই

‘আমাদের মরদেহ বাড়িতে নিয়ো না’

কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের খামারবাড়ি অবরোধের ঘোষণা

মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীর পিঠে পাড়া দিয়ে অটোরিকশায় শহর ঘোরাল ছাত্রদল, সঙ্গে উচ্চ স্বরে গান

যশোরে আত্মগোপনে থাকা আ.লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বাড়িতে পুলিশের অভিযান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত