Ajker Patrika

মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র: পাঁচটি বন্ধ, নয়টি চলে ঝিমিয়ে, ২০০ কোটিতে একটির উন্নয়ন

  • বন্ধের পেছনে ভুল পরিকল্পনা বা প্রাকৃতিক কারণ
  • বন্ধগুলো কাজে লাগানোর ‘চিন্তাভাবনা চলছে’
  • আধুনিকায়নের ব্যয় বিফলে যাবে না: প্রকল্প পরিচালক
সাইফুল মাসুম, ঢাকা 
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৫, ১৪: ৩২
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সারা দেশে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) ২০টা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বা ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে নানা জটিলতায় ৫টির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ৯টি চলছে টেনেটুনে। ভালোভাবে চলছে মাত্র ৬টি অবতরণ কেন্দ্র। এমন প্রেক্ষাপটে ২৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি আধুনিকায়নের প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিএফডিসি

মাছ ধরা ট্রলার বা নৌকা থেকে মাছ নামিয়ে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে রাখা হয়। সেখানে মাছ বিক্রির জন্য প্রক্রিয়াকরণ বা সংরক্ষণ করা হয়। এটি মৎস্যজীবীদের সুবিধার্থে সাধারণত সমুদ্র বা নদীর কাছাকাছি স্থানে স্থাপিত হয়।

বিএফডিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিএফডিসির বিদ্যমান অবতরণ কেন্দ্রগুলোর কোনোটির কার্যক্রম ভুল পরিকল্পনা আবার কোনোটি প্রাকৃতিক কারণে বন্ধ রয়েছে। বিএফডিসির বন্ধ হওয়া কেন্দ্রগুলো হচ্ছে কিশোরগঞ্জের ভৈরব মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, লক্ষ্মীপুরের রামগতি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, পটুয়াখালীর মহীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, বরিশালের মৎস্য অবতরণ ও পাইকারি মৎস্য বাজার এবং নারায়ণগঞ্জের পাগলা মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণন কেন্দ্র।

এ নিয়ে জানতে চাইলে মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের চেয়ারম্যান সুরাইয়া আখতার জাহান আজকের পত্রিকা'কে বলেন, অবতরণকেন্দ্রগুলো বন্ধের পেছনে স্থান নির্বাচনের ভুল এবং প্রাকৃতিক উভয় ধরনের কারণ আছে। কিছু এলাকায় নদীর খাত সরে যাওয়ায় বা নতুন চর ওঠায় অবতরণ কেন্দ্র কাজে আসছে না। লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে স্থান বাছাইয়ে ভুল ছিল। পুরোনো মার্কেট ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় নতুন জায়গায় অবতরণ কেন্দ্র করা হয়েছিল। পরে নদী ভাঙন রোধ হওয়ায় পুরোনো মার্কেটটি রয়ে গেছে। এ কারণে নতুন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটির প্রয়োজন পড়েনি। চেয়ারম্যান বলেন, ‘বন্ধ অবতরণ কেন্দ্রগুলো কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে চিন্তা করছি।’

ঝিমিয়ে অলাভজনকভাবে চলছে এমন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বা ইউনিটের সংখ্যা ৯টি। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের মনোহরখালী মৎস্য অবতরণ, সংরক্ষণ এবং বিতরণ কেন্দ্র। ১৯৯৪ সালে জাপানি অনুদানে ৫৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর উত্তর তীরে স্থাপন করা হয় এটি। কর্ণফুলী নদীতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ক্যাপিটাল ড্রেজিং এবং নদীকূল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের ফলে মনোহরখালী ইউনিটের মুখ ও নদীর তীর বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে মৎস্য অবতরণ ও বরফ বিক্রয়সংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। বিএফডিসির কর্মকর্তারা বলেছেন, নদীর মুখ বন্ধ হওয়ায় ইউনিটটির কার্যক্রম আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

টেনেটুনে চলা অন্য মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে পটুয়াখালীর আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, খুলনা মৎস্য অবতরণ ও পাইকারি মৎস্য বাজার, পিরোজপুরের পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, সুনামগঞ্জের (ওয়েজখালী) মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র, বাগেরহাটের (দ্বিগরাজ, মোংলা) মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ ও বিপণন কেন্দ্র।

এমন পরিস্থিতিতে কক্সবাজারের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও পাইকারি মৎস্য বাজারকে আধুনিক করতে ‘কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আধুনিকায়ন প্রকল্প’ হাতে নিয়েছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। বাঁকখালী নদীর পশ্চিম তীরে ১৯৬৫-৬৬ সালে ৩ দশমিক ৭০ একর জমিতে কেন্দ্রটি স্থাপিত হয়েছিল। আধুনিকায়নের প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। ২৩২ কোটি টাকার প্রকল্পটিতে যৌথভাবে অর্থায়ন করছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা ও বাংলাদেশ সরকার

বিএফডিসির তথ্য অনুসারে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রত্যক্ষভাবে ২ হাজার এবং পরোক্ষভাবে মোট ২ লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। মৎস্য অবতরণের পরিমাণ বার্ষিক ৭ হাজার টন থেকে দ্বিগুণ হয়ে ১৪ হাজার টনে উঠবে। বরফ উৎপাদনও বছরে ৫ হাজার থেকে বেড়ে সাড়ে ৭ হাজার টন হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. রাজিবুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রকল্পের অবকাঠামো উন্নয়নকাজ এপ্রিল থেকে শুরু হবে। আধুনিকায়নে ব্যবহার করা হবে জাপানের উন্নত প্রযুক্তি। আধুনিক অবতরণ কেন্দ্র ব্যবহারের জন্য মৎস্যজীবীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রকল্পে ব্যয় করা অর্থ বিফলে যাবে না।’

প্রকল্পসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে অভিমত জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও বিএফডিসির সাবেক চেয়ারম্যান সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার এর প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, সামাজিকসহ নানাবিধ কারণে কিছু অবতরণ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। কিছু ক্ষেত্রে আড়তদারদের সিন্ডিকেট দায়ী। কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হওয়ার পর আর সংস্কার করা হয়নি। কেন্দ্রটির আধুনিকায়ন হলে মৎস্যজীবীরা সুফল পাবেন। তবে জেলেদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। এ ছাড়া কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আশপাশে কিছু জায়গা বেদখল আছে। সেগুলো উচ্ছেদ করে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়া কিছুটা চ্যালেঞ্জের হবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুষ্টিয়ার ৪টি আসন

ভোটের মাঠে: ভোটার টানতে মরিয়া দুই দল

  • সব কটি আসনেই বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন ঘিরে অস্থিরতা।
  • মনোনয়নবঞ্চিতদের পক্ষে তৎপর তাঁদের অনুসারীরা।
  • বিএনপির বিরোধে ফায়দা তুলতে চায় জামায়াত।
দেবাশীষ দত্ত, কুষ্টিয়া 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে কুষ্টিয়ার চারটি আসনের সব কটিতেই প্রাথমিক মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী।

তবে চার আসনেই বিএনপির মনোনয়ন ঘিরে চলছে অস্থিরতা। বিক্ষোভ-সমাবেশের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থীর প্রতি নিজেদের অনাস্থার জানান দিচ্ছে নেতা-কর্মীদের একাংশ। মনোনয়নবঞ্চিতদের নেতাদের পক্ষে আন্দোলনে নেমেছেন তাঁদের অনুসারীরা। বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধকে কাজে লাগিয়ে ভোটের মাঠে ফায়দা তুলতে তৎপর জামায়াত।

কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের উপজেলা সভাপতি রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের আহ্বায়ক শরিফ উদ্দিন জুয়েলও এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পর তিনি দলের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানালেও এখনো সভা-সমাবেশের মাধ্যমে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। ফলে চাপের মুখে পড়েছেন বাচ্চু মোল্লা। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী দৌলতপুর থানার আমির বেলাল উদ্দিন। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হতে পারেন মুফতি আমিনুল ইসলাম। খেলাফত মজলিসের মনোনয়ন পেতে পারেন শরীফুল ইসলাম। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে আসাদুজ্জামান, এনসিপি থেকে নুসরাত তাবাসসুম জ্যোতি এবং গণঅধিকার পরিষদ থেকে শাহাবুল মাহমুদ প্রার্থী হতে পারেন।

কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী। তবে তাঁকে মেনে নিতে রাজি নন দলের আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুল ইসলামের সমর্থকেরা। এতে স্থানীয় বিএনপিতে বিভাজন দেখা দিয়েছে। রাগীব রউফ চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শহীদুল ইসলামের অনুসারীরা। তাঁদের অভিযোগ, দল শহীদুলের দীর্ঘদিনের কাজের মূল্যায়ন করেনি। বিএনপির মিত্র হিসেবে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব ও সাবেক এমপি আহসান হাবীব লিংকনও এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর। বিএনপি ও তার মিত্রদের দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে তিনি ফায়দা তুলতে পারেন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ইসলামী আন্দোলন থেকে মোহাম্মদ আলী, খেলাফত মজলিস থেকে মো. আব্দুল হামিদ ও এনসিপি থেকে নয়ন আহমেদের নাম শোনা যাচ্ছে।

কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার। তবে তাঁর মনোনয়নে ক্ষুব্ধ আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক এমপি অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিনের অনুসারীরা। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী ইসলামি বক্তা মুফতি আমির হামজা। গণঅধিকার পরিষদ থেকে আব্দুল খালেক, খেলাফত মজলিস থেকে সিরাজুল হক, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস থেকে আবদুল লতিফ খান এবং ইসলামী আন্দোলন থেকে আহম্মদ আলী প্রার্থী হতে পারেন।

কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী। তবে তাঁর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র নুরুল ইসলাম আনসার প্রামাণিকের অনুসারীরা। জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ সাদী, কৃষক দলের হাফেজ মো. মঈনউদ্দিনও এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। ফলে তাঁদের অনুসারীরাও আসনটিতে প্রার্থী পরিবর্তন চান। জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন। বিএনপির অন্তঃকোন্দলে এখানে জয়ের আশা দেখছেন জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। খেলাফত মজলিস থেকে আলী আশরাফ, ইসলামী আন্দোলন থেকে আনোয়ার হোসেন খান, গণঅধিকার পরিষদ থেকে শাকিল আহমেদ মনোনয়ন পেতে পারেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২২ ইঞ্জিনের ১৬ টিই মেয়াদোত্তীর্ণ, ঝুঁকি

  • প্রয়োজন কমপক্ষে ৩০টি, আছে ২২টি; ১৬টিই মেয়াদোত্তীর্ণ।
  • চারটির ৫০, আটটির ৩৫, দুটির ৩০ ও দুটির ২০ বছর আগে মেয়াদ শেষ।
খোরশেদ আলম সাগর, লালমনিরহাট ও আজিনুর রহমান আজিম, পাটগ্রাম
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়ে বিভাগ লালমনিরহাটের অধীনে প্রতিদিন ২০ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন ঢাকাসহ বিভিন্ন রুটে চলাচল করে। এই সেবা নির্বিঘ্নে পরিচালনায় প্রয়োজন কমপক্ষে ৩০টি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন)। কিন্তু লালমনিরহাট রেল বিভাগে রয়েছে মাত্র ২২টি; এর মধ্যে ১৬টিই দীর্ঘদিন ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ। এ ছাড়া মেয়াদ রয়েছে এমন ছয়টির মধ্যে একটি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বহুদিন দিনাজপুরের পার্বতীপুরে কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানায় (সিএলডব্লিউ) পড়ে আছে।

রেলওয়ে ডিভিশনাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, লালমনিরহাটের লোকোমোটিভ রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকি কার্যালয়ের তথ্যমতে, মেয়াদোত্তীর্ণ ১৬টি লোকোমোটিভের মধ্যে চারটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ৫০ বছর আগে, আটটির ৩৫, দুটির ৩০ এবং দুটির ২০ বছর আগে। এমন পরিস্থিতিতে ১০ জোড়া আন্তনগর, ৮ জোড়া মেইল এবং ২ জোড়া লোকাল ট্রেন এখনো চলছে এসব পুরোনো লোকোমোটিভের ওপর নির্ভর করে। ঝুঁকি মাথায় নিয়েই ট্রেন চালাতে হচ্ছে লোকোমাস্টারদের।

লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক লোকোমাস্টার বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ লোকোমোটিভ নিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চালানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ইঞ্জিন মাঝেমধ্যে শক্তি হারালে ট্রেন মাঝপথে বিকল হয়ে পড়ার শঙ্কা থাকে। চরম দুশ্চিন্তা নিয়ে ট্রেন চালাতে হয়। নিয়মিত শিডিউল ঠিক থাকে না, সময়মতো ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছানো অনেক সময় সম্ভব হয় না। বহুবার নতুন লোকোমোটিভের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

জানতে চাইলে লালমনিরহাট স্টেশনে কর্মরত রেলওয়ের কর্মচারী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘লালমনিরহাট রেল বিভাগ বরাবরই উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার। উত্তরাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য অংশের ট্রেন পরিচালিত হয় এখান থেকে, অথচ মেয়াদোত্তীর্ণ লোকোমোটিভ দিয়েই সেবা চালানো হচ্ছে। লোকোমোটিভের সংকটের কারণে বেশ কয়েকটি মেইল ও লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়ে গেছে।’

বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটির সভাপতি মনিরুজ্জামান বলেন, ‘সরকার একাধিকবার নতুন লোকোমোটিভ কিনেছে, কিন্তু লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগকে একটি নতুন ইঞ্জিনও দেওয়া হয়নি।’

এ বিষয়ে লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার (ডিএম-লোকো) ধীমান ভৌমিক বলেন, ‘পুরো দেশেই লোকোমোটিভ সংকট রয়েছে। তবে লালমনিরহাটে সংকটটা তুলনামূলক বেশি। এ জন্য আমরা নিয়মিত চাহিদাপত্র পাঠাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ লোকোমোটিভ দিয়ে ট্রেন চালানোয় আমাদেরও দুশ্চিন্তা হয়।’

বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) আহমেদ মাহবুব চৌধুরী বলেন, ‘সারা দেশে লোকোমোটিভ সংকট চলছে। ৩০টি নতুন আধুনিক লোকোমোটিভ কেনার পরিকল্পনা রয়েছে, তবে কবে কেনা হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। লোকোমোটিভের পাশাপাশি দক্ষ জনবল তৈরিও জরুরি; আমরা সে দিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র: প্রকল্প স্থানান্তরে ক্ষোভ

বিশ্বজিত রায়, সুনামগঞ্জ
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

২০২৩ সালে অগ্রসরমাণ এলাকায় ৫০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) স্থাপনে প্রকল্পের অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এর মধ্যে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় টিটিসি প্রকল্প ছিল। কিন্তু তাহিরপুরের প্রকল্পটি জেলার জগন্নাথপুর উপজেলায় স্থানান্তর করা হয়। এতে উপজেলাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন।

জানা গেছে, কৃষিনির্ভর তাহিরপুরে আড়াই লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। এখানে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতাও রয়েছে। শিক্ষা, যোগাযোগ, কর্মসংস্থান—সব দিক থেকেই পিছিয়ে থাকা তাহিরপুরে টিটিসি নির্মাণের খবরে সবাই খুশি হয়েছিলেন। সেটিও অন্যত্র স্থানান্তর করায় এখানের মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের আওতায় ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট একনেকের সভায় ‘উপজেলা পর্যায়ে ৫০টি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্প অনুমোদন হয়। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ৩ হাজার ৭৫১ কোটি ৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়সীমা রয়েছে ২০২৮ সালের মার্চ পর্যন্ত।

জানা গেছে, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের কাছে ১ দশমিক ৫০ একর জমির প্রস্তাব করা হয়।

তাহিরপুর টিটিসি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক মেহেদী হাসান উজ্জ্বল ও সদস্যসচিব সোহেল আলম বলেন, এখানে শিক্ষার হার ৩১ দশমিক ২ শতাংশ। প্রকল্পটি বাতিল করায় তাহিরপুরবাসী হতাশ।’

সুনামগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বলেন, তাহিরপুরের প্রকল্পটি প্রথম পর্যায়ে ছিল, এখন আছে দ্বিতীয় পর্যায়ে।

‘উপজেলা পর্যায়ে ৫০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্পের পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, তাহিরপুরের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প জগন্নাথপুরে স্থানান্তরের বিষয়টি প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে একনেকের পরিকল্পনা কমিশন।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি যেন স্থানান্তর না হয়, সে ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যমুনা অয়েল: ৬ দায়িত্বে এক কর্মকর্তা, দুর্নীতির অভিযোগ

  • সর্বশেষ ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি।
  • আগে থেকে মহাব্যবস্থাপক ও কোম্পানি সচিবের দায়িত্বে আছেন।
  • লোভনীয় বিটুমিন বরাদ্দ কমিটিরও আহ্বায়ক তিনি।
সবুর শুভ, চট্টগ্রাম    
মো. মাসুদুল ইসলাম
মো. মাসুদুল ইসলাম

রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল কোম্পানি যমুনা অয়েলে ছয় দায়িত্বে রয়েছেন একজন কর্মকর্তা। সর্বশেষ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব দেওয়া হয় মো. মাসুদুল ইসলাম নামের এই কর্মকর্তাকে। তার আগে থেকেই মহাব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ ও বিপণন) এবং কোম্পানি সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এর বাইরে কোম্পানির সবচেয়ে লোভনীয় বিটুমিন বরাদ্দ কমিটি ও চেম্বার বরাদ্দ কমিটিরও আহ্বায়ক তিনি। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার সরকারি ডিপো থেকে ডিজেল গায়েব ও সিবিএ নেতা আবুল হোসেনের কারাগার থেকে অফিসে হাজিরার মতো ঘটনায় তাঁর নাম এসেছে। এমন একজন কর্মকর্তার একসঙ্গে এত দায়িত্বে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানান, সামনে বিটুমিনের ভরা মৌসুম। মূলত এ কারণেই বিটুমিনের দায়িত্ব নিয়েছেন মাসুদুল ইসলাম। সামগ্রিক বিষয়ে কথা বলতে ফোনে কয়েক দফায় যোগাযোগের চেষ্টা করেও মাসুদুল ইসলামকে পাওয়া যায়নি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে তাঁর একসঙ্গে এত দায়িত্ব পালনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে পাঠানো বার্তার কোনো জবাব দেননি তিনি।

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার সরকারি ডিপো (যমুনা অয়েল) থেকে পৌনে চার লাখ লিটার ডিজেল গায়েবের তথ্য প্রকাশিত হয়। ওই ডিপোর ২২ ও ২৩ নম্বর ট্যাংক রি-ক্যালিব্রেশনে (পুনঃপরিমাপ) ওই ঘটনা সামনে আসে। সেখানে বছরের পর বছর ধরে ডিজেল চুরির অন্যতম হাতিয়ার ছিল অনিয়মের মাধ্যমে প্রস্তুত করা ক্যালিব্রেশন শিট। ট্যাংকে যত পরিমাণ তেল ঢালা হতো, হিসাবের খাতায় তার চেয়ে কম দেখানো হতো। বিষয়টি সামনে এলে গত ২৮ সেপ্টেম্বর যমুনা অয়েল কর্তৃপক্ষ ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির প্রতিবেদনে উঠে আসে, ক্যালিব্রেশন শিটে ট্যাংকের ধারণক্ষমতা কম দেখিয়ে বছরের পর বছর লুটে নেওয়া হয় লাখ লাখ লিটার জ্বালানি তেল।

চলতি বছরের ২০ জুলাই নগরের ইপিজেড থানার সিমেন্ট ক্রসিং এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন চট্টগ্রাম যমুনা অয়েল কোম্পানির শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি মো. আবুল হোসেন। পরে ভাঙচুরের মামলায় তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু এর মধ্যেই গত ৯ আগস্ট পর্যন্ত ২০ দিন তাঁকে কর্মস্থলে হাজির দেখানো হয়। যদিও তিনি এখনো কারাগারে। অথচ কোনো সরকারি কর্মচারী কারাগারে গেলে নিয়ম অনুযায়ী তিনি সাময়িক বরখাস্ত হন; কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি।

সুজনের চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী জানান, এক কর্মকর্তা যদি এতগুলো দায়িত্বে থাকেন, তাহলে সেখানে অনিয়ম ও দুর্নীতি হবেই।

বিপিসি সচিব শাহিনা সুলতানা জানান, যমুনা অয়েলের সচিব মাসুদুল ইসলামকে কোম্পানির এমডির রুটিন দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত